:sl:
রমজানে সুস্থতার শিক্ষা
মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
ইবাদত-আত্মশুদ্ধির মাস ‘রমজান’। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৪ শাবান রমজানের ফরজ রোজাসংক্রান্ত আয়াত নাজিল হয়।
এ মাস অন্তত চারটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র মর্যাদার দাবিদার :
(ক) এ মাসে কোরআন নাজিল হয়।
(খ) এ মাসেই রয়েছে হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ‘লাইলাতুল কদর’।
(গ) এ মাসে শয়তান বন্দি থাকে।
(ঘ) এ মাস মহান আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মহিমায় সমুজ্জ্বল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কিছু মানুষ রমজানে বেশি কেনাকাটা, ‘ভোজন রসিকতা’য় মেতে ওঠে। ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। অথচ রোজা সংযমের মাধ্যমে খাদ্য-পুষ্টি ও সুস্থতার শিক্ষা দেয়। সুস্থতা ও অবসর মহান আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। ‘মানুষের মধ্যে কে উত্তম’—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যার হায়াত দীর্ঘ হয় ও আমল ভালো হয়।’ (তিরমিজি)
সুস্থ দেহের অধিকারী সুন্দর-সক্ষম মানবগোষ্ঠী বিনির্মাণে চিকিৎসা ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাসের বিকল্প নেই। রোগের প্রতিকার, প্রতিরোধ সম্পর্কেও উল্লেখ আছে পবিত্র কোরআনে : ‘আমি কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করি, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ৮২)
ইসলামে ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়’ জীবন কাম্য নয়। বরং বিশ্ব প্রতিপালকের ঘোষণা হলো, ‘ভূপৃষ্ঠের সব প্রাণীর জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিজে গ্রহণ করেছেন।’
( সুরা : হুদ, আয়াত : ০৬)
কিন্তু মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও বঞ্চনার জন্য দায়ী মানুষের দায়িত্ব অসচেতনতা, সুষম বণ্টনব্যবস্থা। তাই সমাজের একাংশের ভোগ-আকাঙ্ক্ষা অন্য অংশের ভোগান্তির কারণ। এটি ইসলাম সমর্থন করে না। অনগ্রসরদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইসলামের ইবাদতমুখী চেতনা। সম্পদের সুষম বণ্টন প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের সম্পদে দরিদ্র ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ১৯)
প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘সে প্রকৃত ইমানদার নয়, যে পেট ভরে খায় আর তার প্রতিবেশী না খেয়ে রাত যাপন করে।’ (বায়হাকি)
প্রিয় নবী (সা.)-এর আদর্শ উত্তরাধিকারী খলিফা ওমর (রা.) এ জন্যই রাতের আঁধারে ঘুরে ঘুরে মানুষের খোঁজ নিতেন এবং বলতেন, ‘ফোরাতের কূলে যদি একটি প্রাণীও না খেয়ে মরে, তার জন্য আমি ওমরকে জবাবদিহি করতে হবে।’
অধিক ভোজন ড়নবংরঃু বা স্থূলতার কারণ। প্রিয় নবী (সা.) মুমিন ও কাফেরের মনোতুষ্টিগত পার্থক্য বোঝাতে বলেন, ‘মুমিন খায় এক পাকস্থলীতে আর কাফের খায় সাত পাকস্থলীতে।’ (বুখারি)
অতিভোজনে খাদ্যের অপচয় হয়। এ জন্যই প্রিয় নবী (সা.) খাদ্য গ্রহণে সামাজিক সম্প্রীতি ও সুষম বণ্টন নিশ্চিতকরণের শিক্ষা দিয়ে বলেন, ‘দুইজনের খাবার তিনজনের জন্য যথেষ্ট, তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট।’ (বুখারি)
মানুষ না খেয়ে মরে না; বরং বেশি খেয়ে, অখাদ্য-কুখাদ্য খেয়ে কষ্ট পায়। মানুষ খাওয়ার জন্য বাঁচে না, বরং বাঁচার জন্যই খায়। বুঝতে হবে, মানুষের রিজিক শেষ না হলে তার মৃত্যু হয় না।
আসলে অপরিমেয় ও অপরিকল্পিত খাদ্য গ্রহণের পথ ধরেই আসে অ্যাজমা, ব্লাডপ্রেশার, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস বা অ. ই. ঈ. উ আদ্যক্ষরের ঘাতক ব্যাধি। অন্যদিকে মেদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষেত্রভেদে মানুষের মেধা কমতে থাকে। আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞানীরা স্থূলতা হ্রাসের জন্য ১০০ শতাংশ ইচ্ছাশক্তি, ধৈর্য, খাদ্যতালিকা, খাদ্য পরিকল্পনা ও ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেন। পবিত্র রমজান এ জন্য আদর্শ সময়। পরিশেষে মহান আল্লাহর শাহি দরবারে প্রিয় নবী (সা.)-এর ভাষায় মোনাজাত : ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে সুস্বাস্থ্য কামনা করি।’ (বায়হাকি)
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর
prof.ershad92@gmail.com
- See more at:
http://www.kalerkantho.com/online/is....Nteffqkb.dpuf