/* */

PDA

View Full Version : বিশ্বনবীর সেই চিঠিগুলো কোথায়



Muslim Woman
12-03-2017, 03:13 AM
:sl:


বিশ্বনবীর সেই চিঠিগুলো কোথায়

মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়তি জীবনের বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে রাষ্ট্র পরিচালনা ও বৈদেশিক যোগাযোগের সোনালি অধ্যায়। তিনি মক্কা-মদিনার বিস্তৃত জনপদে যেমন পৌঁছে দিয়েছেন হেদায়েতের বাণী, তেমনি তাঁর আদর্শের বাণী নিয়ে মুসলিম দূতরা পৌঁছে গেছেন দেশ-দেশান্তরে।



ফলে পূর্ণাঙ্গতা ও আদর্শিক ব্যাপ্তিতে ইসলাম একটি আন্তর্জাতিক ধর্ম, তথা ‘বিশ্বধর্ম’।
হিজরি ষষ্ঠ সালে ঐতিহাসিক হুদাইবিয়ার সন্ধির ফলে মক্কা-মদিনার মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ স্থগিত থাকে। সে সুযোগে প্রিয় নবী (সা.) ইসলাম প্রচারের কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন। শান্তি, সহযোগিতা, সহাবস্থান ও সংহতির বার্তা নিয়ে প্রিয় নবী (সা.)-এর পবিত্র পত্রাবলি, আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক স্থাপন ও ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেয় বিভিন্ন জনপদে। মিসরীয় গবেষক ড. হামিদুল্লাহর মতে, প্রিয় নবী (সা.) যাঁদের কাছে পত্র পাঠিয়েছিলেন, তাঁদের সংখ্যা প্রায় দুই থেকে আড়াই শ। তাঁদের কয়েকজনের নাম হলো—ইয়ামামার গভর্নর হাওয়া বিন আলী, বাহরাইনের গভর্নর মুনজির বিন সাওয়া, ওমানের গভর্নর জাফর বিন জুলান্দি, দামেস্কের গভর্নর হারিস বিন আবি শামর গাসসানি, আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাসি, মিসররাজ মাকাওকাস, ইরানের শাহানশাহ কিসরা খসরু পারভেজ ও রোম সম্রাট (কায়সার) হিরাক্লিয়াস।



আবিসিনিয়ার অধিপতি নাজ্জাসির কাছে প্রিয় নবী (সা.) যে পত্র লিখেছিলেন, তার অংশবিশেষ হলো :



‘পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি। এ পত্র আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পক্ষ থেকে হাবশার শাসকের উদ্দেশে প্রেরিত হচ্ছে—আপনি শান্তিতে থাকুন! সেই আল্লাহর প্রশংসায় আপনার কাছে লিখছি, যিনি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই। যিনি রাজাধিরাজ, পবিত্র শান্তির আধার, নিরাপত্তা বিধানকারী ও নিরাপদে রাখার মালিক।



আমি স্বীকার করছি, মরিয়ম তনয় ঈসা (আ.) রুহুল্লাহ-কালিমাতুল্লাহ—যা� �কে সেই পবিত্র আত্মা মরিয়মের গর্ভে গর্ভস্থ করা হয়; যিনি ছিলেন পাপমুক্ত। মহান আল্লাহ তাঁকে (ঈসা আ.) তাঁর আপন আত্মা ও কুদরতি ফুঁ থেকে ঠিক তেমনিভাবে সৃষ্টি করেছেন, যেমনিভাবে তিনি আদম (আ.)-কে নিজে সৃষ্টি করেছেন...। আল্লাহর যে বার্তা আমি নিয়ে এসেছি, তার প্রতি বিশ্বাস করা আপনার কর্তব্য বলে মনে করছি। আমি তাবলিগ ও নসিহতের দায়িত্ব পালন করলাম। এখন আপনার কর্তব্য হলো তা কবুল করা। তাঁদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, যাঁরা হেদায়েতের দিকে আসে। —মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। ’



প্রিয় নবী (সা.) নাজ্জাসির কাছে একাধিক পত্র পাঠিয়েছিলেন। উদ্ধৃত পত্রটি
তার মধ্যে দ্বিতীয়। পত্রটির বাহক ছিলেন বিশিষ্ট বাগ্মী সাহাবি আমর ইবনু উমাইয়া আজ-জামারি (রা.)।

আবিসিনিয়ার শাসনকর্তা নাজ্জাসির কাছে প্রেরিত পত্রটি ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ‘জি আর এসল্লন’ কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছিল।
মিসরের শাসনকর্তা মাকাওকাসের কাছে প্রেরিত মূল পবিত্র পত্রটিই ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে মিসরের এক গির্জার মোতায়াল্লির কাছে পাওয়া গেছে এবং বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষায় ওই পত্রকে প্রিয় নবী (সা.)-এর আসল পত্র হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়।

ড. হামিদুল্লাহ তাঁর ‘আল-ওসায়েকুস সিয়াসিয়াহ’ নামের বিখ্যাত গ্রন্থে এ পবিত্র পত্রের প্রতিলিপি প্রকাশ করেছেন।



ইরানের সম্রাট কিসরার কাছেও রাসুল (সা.) পত্র প্রেরণ করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে আবু উবাইদা বলেন, ‘রাসুল (সা.) ইরানের কিসরার কাছে একটি পত্র লিখেছিলেন এবং বাহরাইনের ইরানীয় শাসনকর্তার মারফতে তা পৌঁছাতে (বাহককে) বলেছিলেন। শাসনকর্তা তা কিসরার কাছে পেশ করেন। কিসরা যখন পত্রটি পাঠ করলেন, তখনই তা ক্রোধে ছিঁড়ে ফেলেন। ’ (কিতাবুল আমওয়াল, পৃ. ২৩)
এই পবিত্র পত্রটিও ১৯৬২ সালের নভেম্বর মাসে লেবাননের সাবেক উজির হেনরি লুজের ব্যক্তিগত পাঠাগারে পাওয়া যায়। ১৫ ইঞ্চি লম্বা ও আট ইঞ্চি চওড়া এই পবিত্র পত্র একটি কোমল চামড়ায় লিখিত হয়েছিল।

নিচে প্রিয় নবী (সা.)-এর ‘সিলমোহর’ অঙ্কিত ছিল। পত্রটির মধ্যভাগ ছেঁড়া ছিল। (দৈনিক কুহিস্তান, লাহোর, ২১ জুন, ১৯৬৩ ইং)



প্রিয় নবী (সা.) তাঁর নবুয়তকালের সমসাময়িক রাজন্যবর্গের মধ্যে সর্বাধিক প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছেও অকপটে দ্বিনের দাওয়াত পৌঁছে দেন। অত্যন্ত দৃঢ় ও স্পষ্ট ভাষায় লিখিত একটি পত্র প্রিয় নবী (সা.) রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে পৌঁছান। এ পবিত্র পত্র অত্যন্ত সুদর্শন সাহাবি হজরত দেহইয়া বিন খলিফা কালবি (রা.) সম্রাটের হাতে অর্পণ করেন। পত্রের বিষয়বস্তু ছিল নিম্নরূপ : ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
আল্লাহর বান্দা ও রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর পক্ষ থেকে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস বরাবর।



ন্যায়ের পথের অনুসারীদের প্রতি সালাম। অতঃপর আমি আপনাকে ইসলামের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। যদি শান্তি লাভ করতে চান, তবে ইসলামে দীক্ষিত হোন। যদি আপনি ইসলাম গ্রহণ করেন, তবে আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ প্রতিফল দেবেন। আর যদি প্রত্যাখ্যান করেন, তবে আপনার সব প্রজাসাধারণের ভ্রষ্টতার দায় আপনার ওপর বর্তাবে।



হে আহলে কিতাব, বিতর্কিত সব বিষয় স্থগিত রেখে আসো, আমরা এমন এক বিষয়ে (অর্থাৎ তাওহিদের বিষয়ে) ঐকমত্যে পৌঁছি, যাতে তোমাদের ও আমাদের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য নেই। আর তা হচ্ছে, আমরা এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করব না... যদি এ বিষয়গুলো আপনি অস্বীকার করেন, তবে শুনে রাখুন, সব অবস্থায় আমরা আল্লাহর একত্বের বিশ্বাসে অবিচল থাকব। —মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (বুখারি)’
প্রিয় নবী (সা.)-এর পবিত্র পত্র পাঠে রোম সম্রাটের মনোজগতে ঝড় বইতে শুরু করে। তিনি প্রিয় নবী (সা.)-এর নবুয়তের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে বলেছিলেন, ‘হায়! আমি যদি তাঁর কাছে পৌঁছতে পারতাম! তবে আমি তাঁর (সা.) পা ধুয়ে দিতাম। ’ (বুখারি) শুধু তা-ই নয়, তিনি রাজপ্রাসাদে রোমের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সামনে ঘোষণা করলেন : ‘হে রোমবাসী! তোমরা কি কল্যাণ, হেদায়েত ও তোমাদের রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব চাও? তাহলে এই নবীর আনুগত্য (বায়াত) গ্রহণ করো...। ’ (বুখারি) প্রিয় নবী (সা.)-এর পত্রের প্রতিক্রিয়ায় হিরাক্লিয়াস আরো বলেছিলেন, ‘শিগগিরই তিনি (সা.) আমার এ দুই পায়ের নিচের জায়গার (রোম সাম্রাজ্য) মালিক হবেন। আমি নিশ্চিত জানতাম, তাঁর (সা.) আবির্ভাব হবেই...। ’ (বুখারি)



তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, হিরাক্লিয়াস ক্ষমতা হারানো ও গণরোষের ভয়ে ইসলাম গ্রহণ করেননি।



হিরাক্লিয়াসের কাছে পাঠানো পত্রটি ছিল হজরত আবু বকর (রা.)-এর পবিত্র হাতে লিখিত। স্বয়ং প্রিয় নবী (সা.) তাতে সিলমোহর লাগিয়েছিলেন। হিজরি ষষ্ঠ শতাব্দীর বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ইতিহাসবিদ আল্লামা সুহাইলি (রহ.) এই পবিত্র পত্র দেখেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। হিজরি সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত পবিত্র পত্রটি স্পেনে সংরক্ষিত ছিল। বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকারী আল্লামা কুস্তালানি (রহ.) লিখেছেন, মালিক মনসুর কালাদুন সালেহি স্পেনের একজন শাসক আল-ফানসুর কাছে একজন দূত প্রেরণ করেছিলেন। আল-ফানসু মালিক মানসুরের দূত সাইফুদ্দিন ক্বালাজিকে পবিত্র পত্রটি দেখিয়েছিলেন। পত্রটি একটি স্বর্ণের বাক্সে সুসংরক্ষিত ছিল। আল-ফানসু বলেন, এটিই রাসুল (সা.)-এর ওই পত্র, যা তিনি আমাদের পূর্বপুরুষ রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে প্রেরণ করেছিলেন। (কুস্তালানি) ইতিহাসের ক্রমধারায় প্রিয় নবী (সা.)-এর পবিত্র পত্রটি আজও আবুধাবির জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।



প্রিয় নবী (সা.) কাইসারের কাছে যে পত্র লিখেছিলেন, তা অল্প কিছুকাল আগেও বিদ্যমান ছিল বলে মিসরীয় গবেষক ড. হামিদুল্লাহ তাঁর ‘রাসুলে আকরাম কী সিয়াসি জিন্দেগি’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। পত্রটি বর্তমানে কোথায় আছে, কার কাছে আছে—এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।



প্রিয় নবী (সা.) প্রতিটি জাতি ও সভ্যতার সম্মান ও নিরাপত্তার প্রতি অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন। তাই তিনি সব দেশ ও ধর্মের মানুষের কাছে মহান আল্লাহর বাণী ও বিধান পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। প্রিয় নবী (সা.)-এর পত্রগুলোর মধ্যে বেশ কিছু সংগৃহীত হয়েছে, আছে তা সসম্মানে সুরক্ষিত অবস্থায়। এগুলো নিয়ে চলছে গবেষণা ও বিশ্লেষণ।



লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ কাপাসিয়া, গাজীপুর।

http://www.kalerkantho.com/print-edi...7/12/01/572175

Reply

Hey there! Looks like you're enjoying the discussion, but you're not signed up for an account.

When you create an account, you can participate in the discussions and share your thoughts. You also get notifications, here and via email, whenever new posts are made. And you can like posts and make new friends.
Sign Up

Similar Threads

  1. Replies: 0
    Last Post: 12-13-2015, 03:24 PM
British Wholesales - Certified Wholesale Linen & Towels | Holiday in the Maldives

IslamicBoard

Experience a richer experience on our mobile app!