Muslim Woman
12-20-2019, 05:07 PM
রাগ কন্ট্রোল" রিলেটেড খুব মজার একটা টপিক, পড়ে দেখতে পারেন!
এক মূহুর্তের রাগ, সারা জীবনের কান্না!
আল্লাহ্ ﷻ বলেছেন – “তোমরা রাগকে গিলে ফেলো” (সূরা আলে ইমরান:১৩৪)।
রাগ যদি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায় তাহলে রাগের মাথায় আমরা এমন কিছু করে বসতে পারি, বা বলে বসতে পারি যার জন্য আজীবন অনুশোচনা করতে হবে।
রাগ-নিয়ন্ত্রণ তাই অতীব গুরুত্বপূর্ন একটি স্কিল।
এই লেখায় আমি রাগ-সংক্রান্ত ৪টি হাদিস শেয়ার করব - এই চারটি হাদিস থেকে দেখব কেউ যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে রাগিয়ে দেয়ার মতো আচরণ করতেন, তখন তিনি ﷺ কিভাবে তা হ্যান্ডল করতেন।
১) আনাস (রা) ছিলেন ৭-৮ বছরের ছোট্ট একটা ছেলে। আনাস (রা) এর মা, আনাস (রা) কে রাসূলুল্লাহ (স:) এর কাছে গিফট করেছিলেন তাঁর ( স:) সেবা করার জন্য।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বিভিন্ন ছোট-খাটো কাজ করে দিতেন আনাস (রা); যতটা না কাজ করতেন তারচেয়ে বেশী দুষ্টামীই করতেন!
একদিন রাসূলুল্লাহ (স:) আনাস (রা) কে বাইরে পাঠালেন। যাওয়ার পথে রাস্তার মধ্যে আনাস (রা) কিছু ছেলেকে দেখলেন তারা খেলা করছে। তাদেরকে দেখে কাজের কথা ভুলে ছোট্ট আনাসও (রা) খেলায় মজে গেলেন।
খেলার ঘোরে কতক্ষণ কেটে গেছে।
আনাসেরও আর খেয়াল নাই, এমনি এক সময় আনাস (রা) হঠাৎ ফিল করলেন বিশাল সাইজের কোন এক খেলোয়াড় তাকে পেছন থেকে ঘাড় চেপে ধরেছে! আনাস(রা) মাথা ঘুরিয়ে দেখেন – একি! এ যে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ এক মুখ হাসি নিয়ে উপস্থিত!
রাসূলুল্লাহ ﷺ আনাস (রা)কে জরুরী
কোন কাজেই কিন্তু পাঠিয়েছিলেন। অনেক সময় পার হওয়ার পরেও আনাস (রা) যখন ফিরলেন না, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য রেগে যাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তিনি আনাস (রা) এর উপর তো রাগলেনই না, বরং প্র্যাক্টিকাল জোক করলেন!
আমাদের সাথে যখন রেগে যাওয়ার মতো কিছু ঘটে, তখন লক্ষ্য করলে আমরা দেখব ঘটনাটার একটা হিউমেরাস দিকও আছে। আমাদের উচিত হবে ঘটনার রাগের অংশটি উপেক্ষা করে হিউমেরাস অংশটির দিকে মনযোগ দেয়া।
টিপস #১: রাগকে হিউমার দিয়ে পরিবর্তন করুন।
২) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর স্ত্রীদের মধ্যে আয়েশা (রা) খুব ভালো রান্না করতে
পারতেন না। রান্নার জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন সাফিয়াহ (রা) ও উম্মে সালামাহ (রা)।
একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন অন্য সাহাবাদের নিয়ে আয়েশার (রা) ঘরে বসে আলাপ করছিলেন, তখন উম্মে সালামাহ (রা) তাঁর রান্না করা খাবার নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন। এতে আয়েশা (রা) ভীষণ জেলাস ফিল করলেন!
ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে -
– আমার রান্না কি এতই খারাপ যে অন্য ঘর থেকে খাবার আনতে হবে? আয়েশা (রা) রেগে গিয়ে এক বাড়িতে খাবারের প্লেটটাই ভেঙ্গে ফেললেন!
ভেবে দেখুন, অতিথির সামনে আপনার স্ত্রী যদি এমন আচরণ করে বসে তো আপনি কি করবেন?
একটু হলেও হয়তো “উফ” বলে উঠবেন। অন্তত এটুকু হয়তো বলে উঠবেন – “একি! এটা কি করলে তুমি?”
রাসূলুল্লাহ ﷺ সেরকম কিছু বললেন না। ভেঙে যাওয়া প্লেট এর টুকরোগুলো কুড়াতে কুড়াতে বাকী
সাহাবাদেরকে বললেন – “তোমরা তোমাদের খাবার খেয়ে নাও”।
তারপর তিনি ﷺ বাকী সাহাবাদের সামনে আয়েশা (রা) কে প্রোটেক্ট করার সুরে বললেন “তোমাদের মা
জেলাস ফিল করেছেন।”
রাসূলুল্লাহ ﷺ এমনভাবে কথাটা বললেন যে এটাতো কোন ব্যাপারই না, সব মানুষই তো কম- বেশী জেলাস ফিল করে। শুধু তাই না – তিনি
সাহাবাদের মনে করিয়ে দিতে চাইলেন আয়েশা (রা) এর মর্যাদা, তাই তিনি আয়েশা (রা) কে নাম ধরে না
ডেকে “তোমাদের মা” বলে সম্বোধন
করেছেন।।
টিপস #২: কেউ রেগে গেলে তার প্রতি পাল্টা রাগ না করে তাকে প্রোটেক্ট করুন।
৩) একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ দেখলেন
এক মহিলা কবরের সামনে বেজায় কান্নাকাটি করছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন –
“আল্লাহকে ﷻ ভয় করো এবং ধৈর্য্য
ধরো।” মহিলা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে
চিনতে না পেরে রেগে-মেগে বলে উঠলো
– “যান এখান থেকে! আমার মত বিপদ তো আর আপনার হয়নি!” জবাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ রেগে গেলেন না, তাকে আরেকবার বুঝানোর
চেষ্টাও করলেন না, বললেন না – “আমি হলাম আল্লাহ্র ﷻ রাসূল, আর আমার মুখে মুখে কথা!”, অথবা বললেন না- “আমি বললাম ভালো কথা আর তুমি কি না আমার সাথে এমন ব্যবহার করলে!”
না, তিনি এরকম কিছুই করলেন না। তিনি চুপচাপ কিছু না বলে সেই স্থান থেকে চলে গেলেন।
টিপস #৩: রেগে থাকা মানুষকে বুঝাতে যাবেন না, সে বুঝবে না। তাকে শান্ত হওয়ার জন্য সময় দিন।
৪) রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “যে
ব্যক্তি তর্ক করা ছেড়ে দিবে, সে যদি ভুলের পক্ষেও হয় তবুও সে জান্নাতের প্রান্তে বাড়ী পাবে। আর যে ব্যক্তি সঠিক হওয়ার পরেও তর্ক ছেড়ে দিবে, সে জান্নাতের মাঝখানে বাড়ী
পাবে। আর যে ব্যক্তি নিজের চরিত্রের উন্নয়ন করবে সে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে বাড়ী পাবে।”
ভেবে দেখুন – কি লাভ আরেকজনের সাথে তর্কাতর্কি করে, রাগারাগি করে, নিজের মেজাজ খারাপ করে, যুক্তির উপর যুক্তি তৈরী করে শুধুই এটা
প্রমাণ করা যে - “আমি সঠিক, তুমি ভুল”?
এর মাধ্যমে না পাওয়া যায় নিজের মনে শান্তি, না করা যায় অন্যের
মন জয়। তার চেয়ে চুপ করে থেকে অন্যের ভুল উপেক্ষা করে নিজের জন্য জান্নাতে একটা বাড়ী নির্মান করা কি বুদ্ধিমানের কাজ না?
টিপস #৪: রাগ করার মত কারণ থাকা সত্ত্বেও তা ছেড়ে দিন, আর আল্লাহর ﷻ কাছে প্রতিদানের আশা রাখুন।
পাদটীকা:
১) ইসলামে ব্যক্তিগত কারণে রাগ করার অনুমতি নেই। তবে যেসব কারণে আল্লাহ্ ﷻ ও তাঁর রাসূল ﷺ রাগ করেছেন (যেমন- কাউকে শিরক করতে দেখলে) সে সব কারণে
রাগ করা বৈধ। তবে, এই রাগের বহিঃপ্রকাশও নিয়ন্ত্রিত হতে হবে।
২) লেখাটি পড়ে মনে করবেন না আমি রাগ- নিয়ন্ত্রনে মাষ্টার, বরং উল্টোটা সত্য।
লেখাটি আমি লিখেছি সবচেয়ে বেশী নিজেকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য। এটা যদি অন্য কারো উপকারে
আসে তো আলহামদুলিল্লাহ!
(রেফারেন্স: হাদিস ১: মুসলিম ২৩১০ , হাদিস ২: সুনান আন-নাসাঈ ৩৯৭৩, হাদিস ৩: বুখারী ১২২৩,
হাদিস ৪: তিরমিযী)।
#Collected
ReplyHey there! Looks like you're enjoying the discussion, but you're not signed up for an account.
When you create an account, you can participate in the discussions and share your thoughts. You also get notifications, here and via email, whenever new posts are made. And you can like posts and make new friends.
Sign Up
Powered by vBulletin® Copyright © 2024 vBulletin Solutions, Inc. All rights reserved.