ইনশা আল্লাহ

- জাবীন হামিদ
ছোটবেলায় মোহাম্মদ নাসিউদ্দীনের লেখা হোজ্জার গল্প পড়ে খুব মজা পেয়েছিলাম । হাসির এই বইটি আর চোখে পড়ে না । এই বইয়ের মজার ও শিক্ষামূলক একটি গল্প স্মৃতি থেকে লিখছি ।


নাসিরউদ্দীন হোজ্জা একদিন তার স্ত্রীকে বললো , কাল যদি রোদ থাকে তাহলে মাঠে যাবো কাজ করতে । আর যদি বৃষ্টি হয় তাহলে নদীতে যাবো মাছ ধরতে ।

বউ বললো , জুমার খুতবায় না শুনে এসেছো কিছু করতে চাইলে ইনশাআল্লাহ বলতে হয় । তুমি ইনশাআল্লাহ বললে না কেন ?

হোজ্জার জবাব , কাল হয় রোদ উঠবে নয়তো বৃষ্টি পড়বে - এছাড়া তো আর কিছু হবে না । তাহলে খামোকা ইনশাআল্লাহ বলবো কেন ? বউ আর কিছু বললো না ।

পরদিন সকালে সূর্য আকাশে হেসে উঠলো । হোজ্জা নাস্তা খেয়ে রওনা হলো মাঠের দিকে । পথে দেখা হলো ঘোড়ায় চড়া এক সৈনিকের সাথে । সে হোজ্জাকে দেখে জানতে চাইলো , আমি অমুক জায়গায় যাবো , তুমি কি চেন জায়গাটি ? হোজ্জা বললো , হ্যাঁ । সৈনিক তখন বললো , আমার খুব তাড়া আছে । তুমি আমার সাথে ঘোড়া করে চলো , জায়গাটি চিনিয়ে দেবে ।

হোজ্জা বললো , আমার কাজ আছে , তোমার সাথে এখন আমি যেতে পারবো না ।

শুনে সৈনিক রেগে গিয়ে চাবুক মারলো হোজ্জাকে । তারপর তাকে রশি দিয়ে ঘোড়ার সাথে বেঁধে টেনে হিচড়ে নিয়ে চললো । মাটির সাথে ঘষা খেতে খেতে গায়ের চামড়া উঠে গেল হোজ্জার , সারা গা ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেল । অনেক চিৎকার , কাকুতি মিনতি করেও রেহাই পেল না বেচারা ।

জায়গামতো পৌঁছে সৈনিক অবশেষে মুক্তি দিল হোজ্জাকে । রাগ করে যাওয়ার ভাড়াও
দিল না সে ।

হোজ্জার কাছে গাড়ি ভাড়া তো দূরের কথা , খাবার কিনে খাওয়ার মতো পয়সাও ছিল না । পায়ে হেঁটে ফেরার সময় শুরু হলো তুমুল ঝড় - বৃষ্টি । সাথে ছাতা ছিল না , তাই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আহত , ক্লান্ত , ক্ষুধার্ত হোজ্জা অতি কষ্টে গভীর রাতে বাসায় ফিরলো । দরজায় ধাক্কা দেবার পর বউ জানতে চাইলো , কে ?

জবাব আসলো , আমি হোজ্জা ইনশাআল্লাহ , ফিরে এসেছি ইনশাআল্লাহ , দরজা খুলে দাও ইনশাআল্লাহ ।