ঈদের দিনে আল্লাহর রাসূল صلى الله عليه وسلم ও তাঁর সম্মানিতা স্ত্রীগণ কী করতেন ?


১. তোমাদের নারীদের ঈদগাহে নিয়ে যাও


মেয়েদের মসজিদে যাওয়া ঠিক না , ঈদের সালাত বা যে কোন সালাত তারা ঘরেই আদায় করবেন , এরকম ফতোয়া আমরা বাংলাদেশে সবসময় শুনে থাকি । অথচ আল্লাহর রাসূল হজরত মুহাম্মদ স: আদেশ করেছেন অবিবাহিতা , সাবালিকা নারী , এমন কী যাদের মাসিক হচ্ছে তাদেরকেও ঈদের সালাতে নিয়ে যেতে ।

যাদের মাসিক হচ্ছে তারা সালাতের জায়গা থেকে কিছু দূরে থাকবেন । তবে দুআতে ও অন্য ভাল কাজে সামিল হবেন ( বুখারী ও মুসলিম শরীফ ) ।


ঢাকায় এখন কিছু জায়গায় মহিলারা ঈদগাহে যাওয়ার সুযোগ পান ; তবে ঢাকার বাইরে এই সুযোগ নেই বললেই চলে ।



ঈদ উল ফিতরের সকালে গোসল করে মুহাম্মদ صلى الله عليه وسلم বেজোড় সংখ্যায় খেজুর না খেয়ে ঘর থেকে বের হতেন না । তার একটি বিশেষ ইয়ামানী আলখেল্লা ছিল । সেটা পরে খুশবু বা সুগন্ধী লাগিয়ে তিনি স্ত্রীদের ও কন্যাদের নিয়ে ঈদগাহে যেতেন । সালাত ও খুতবাহ দেয়া শেষ হলে তিনি নারীদের কাছে এসে তাদের উপদেশ দিতেন , আল্লাহর কথা মনে করিয়ে দিতেন ও দান করার আদেশ দিতেন
( বর্ণনায় ইবনে আল কাইয়াম )।

রাসূল صلى الله عليه وسلم এর দানের আদেশের পর নারীরা তাদের কানের দুল , আংটি ইত্যাদি সোনার গয়না দানের চাদরে ফেলে দিতেন
( মুসলিম হাদীস ) । আসুন , আমরও ঈদের দিন সাধ্যমতো দান করার চেষ্টা করি ।

এরপর তিনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে যে পথে ঈদগাহে এসেছিলেন তার বদলে অন্য পথ দিয়ে বাড়ি ফিরতেন ।

২. তাকবীর বলা :

ঈদগাহে যাওয়ার সময় ও সালাত শুরুর আগে পর্যন্ত নীচের তাকবীর পাঠ করতেন :

আল্লাহু আকবর , আল্লাহু আকবর ; লা ইলাহা ইল্লাললাহ , আল্লাহু আকবর , আল্লাহু আকবর ; ওয়ালিললাহিল হামদ
আল্লাহ শ্রেষ্ঠ , আল্লাহ শ্রেষ্ঠ , নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ছাড়া ; আল্লাহ শ্রেষ্ঠ ,
আল্লাহ শ্রেষ্ঠ , সব প্রশংসা শুধু আল্লাহরই জন্য ।



৩. সালাতের আগে ফিতরা আদায় :

ঈদের আনন্দ যেন গরীবরাও ভাগ করে নিতে পারেন ও খুশীমনে সালাত আদায় করতে পারেন , সেজন্য আল্লাহর রাসূল صلى الله عليه وسلم সালাত শুরুর আগেই ফিতরা দিয়ে দিতেন । আমাদের অনেকেই এ বিষয়ে অসাবধান । এবার খেয়াল রাখবেন যেন ভুল না হয় ।


৪.বিনোদন
ইসলামে নির্মল বিনোদন নিষিদ্ধ নয় তবে বিনোদনের নামে হারাম আনন্দ উপভোগ করা যাবে না যেমন বিভিন্ন ক্লাবে , বারে মদ পান করা , নারী – পুরুষের একসাথে নাচ , জুয়া খেলা ইত্যাদি ।

মা আয়শা রাযিআল্লাহু আনহা বলেন , এক ঈদে আফ্রিকান কিছু লোক বর্শা , তরবারী ইত্যাদি দিয়ে খেলা দেখাচ্ছিল । আমার মনে নেই হয় আমিই চেয়েছিলাম দেখতে বা রাসূল صلى الله عليه وسلم আমার কাছে জানতে চান আমি ঐ খেলা দেখতে চাই কি না । আমি হ্যাঁ বললে তিনি দরজার পর্দা একটু ফাঁক করে দাড়ালেন । আমি তার পিছনে দাড়িয়ে তার পিঠের সাথে চিবুক লাগিয়ে খেলা দেখলাম । যতক্ষণ না আমি দেখে ক্লান্ত হলাম তিনি তাদেরকে বললেন , হে আরফিদার গোষ্ঠী , তোমরা খেলা চালিয়ে যাও ।

এরপর রাসূল صلى الله عليه وسلم জানতে চাইলেন , তুমি কি সন্ত্তষ্ট হয়েছো ? আমি হ্যাঁ বললে এরপর তিনি পর্দা ফেলে দেন ।

৫. ঈদের দিনে বালিকাদের কন্ঠে গান :

গান –বাজনা শোনা হালাল না হারাম এ নিয়ে মতভেদ আছে । কিছু হাদীসে ঈদ ও বিয়েতে বাজনসহ গান শোনার কথা এসেছে ।

আয়শা রাযিআল্লাহু আনহা জানান , দুইজন বালিকা ঈদের দিনে আমাকে গান শোনাচ্ছিল । রাসূল صلى الله عليه وسلم এসে বিছানায় শুয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলেন , কিছু বললেন না । একটু পরে আবু বকর رضي الله عنهم এসে রাগ করে বললেন , কী ? আল্লাহর রাসূলের ঘরে শয়তানের বাজনা ?

রাসূল صلى الله عليه وسلم তার দিকে তাকিয়ে বললেন , থাক , কিছু বলো না । আজ আমাদের ঈদের উৎসব । পরে আমি ইশারায় মেয়ে দুটিকে চলে যেতে বললাম ।

৬. ঈদে পিতৃহীন অসহায় বালককে আশ্রয় দান


রামাদান শেষে ঈদের সকালে রাসুল صلى الله عليه وسلم দেখলেন এক বালক রাস্তায় বসে কাঁদছে । তিনি তার কাছে গিয়ে আদর করে জানতে চাইলেন কী হয়েছে । বালক যুহায়ের বিন সাগীর জানায় , তার পিতা শহীদ হয়েছে । মা আবার বিয়ে করেছেন আর সৎ আব্বা তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে । আজ ঈদের দিনে তার কোন নতুন কাপড় নেই , থাকার জায়গা নেই ।



রাসুল صلى الله عليه وسلم শুনে খুব কষ্ট পেলেন । বালককে বললেন , তুমি কি আমার সাথে যাবে ? আমাকে আর আয়শাকে তোমার অভিভাবক হিসাবে তুমি কি পছন্দ করবে ? শুনে বালক তো খুশীতে আত্মহারা । রাসূল صلى الله عليه وسلم
অসহায় এই বালককে ঘরে নিয়ে গিয়ে নতুন কাপড় দিলেন , খাবার দিলেন , আশ্রয় দিলেন । এভাবে তিনি ঈদের খুশী এক গরীব বাচ্চার সাথে ভাগ করলেন ।

রাসুল صلى الله عليه وسلم সবাইকে অসহায় গরীব নারী , শিশু বিশেষ করে ইয়াতিমদের সাথে ভাল ব্যবহার করতে , তাদের প্রতি সদয় হতে উৎসাহ দিয়ে বলতেন , যে ঘরে কোন ইয়াতিমকে প্রতিপালন করে , জান্নাতে সে আর আমি পাশাপাশি থাকবো ।

আসুন , এই ঈদে আমরা এলাকার যে কোন একজন গরীব বাচ্চাকে নতুন কাপড় দেই ; ভাল খাবার খেতে দেই । সম্ভব হলে কোন ইয়াতিমের সারাবছরের খরচ বহন করি । আল্লাহ তওফীক দিন ।


সহায়ক সূত্র: ইন্টারনেট

জাবীন হামিদ

[email protected]