আরবি ইসলামের ভাষা। তাই মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশে বহু আরবি শব্দের ব্যবহার রয়েছে। আরবি ভাষা আমাদের মাতৃভাষা না হওয়ায় এ ভাষার বিভিন্ন শব্দ ব্যবহারে অনেক ক্ষেত্রে ভাষার বিকৃতি দেখা যায়। নামাজের জামাতের আগে যে কাজটি করা হয়, তা হচ্ছে ‘ইকামত’। কিন্তু না জেনে অনেকে এটাকে বলে ‘আকামত’। এটি অশুদ্ধ।
কোনো শব্দের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু বোঝানোর জন্য আরবিতে ‘আল’ ব্যবহার করা হয়। তবে যেকোনো শব্দের শুরুতে ‘আল’ বসে না। নাম কিংবা সম্বন্ধযুক্ত দুটি শব্দের প্রথমটিতে ‘আল’ বসে না। অনেকে না জেনে ‘আল-বিসমিল্লাহ’ বলে। এটি ভুল। কেউ কেউ মনে করে, ‘আল’ শব্দে বরকত বা সম্মানজনক কিছু আছে। তাই তারা ‘আল-সুরেশ্বর’, ‘আল-মক্কা’, ‘আল মাহমুদ’ লিখতে পছন্দ করে। এটা চরম অজ্ঞতার পরিচায়ক।
যেসব শব্দে ‘আল’ বসে, আরবি ভাষার নিয়ম অনুসারে কখনো কখনো ‘লাম’-এর উচ্চারণ হয় না। যেমন—‘আদ্ দ্বীন’, ‘আর্ রশিদ’। তাই ‘আল দ্বীন’ ও ‘আল রশিদ’ অশুদ্ধ।
আমাদের প্রিয় নবীর একটি নাম ‘আহমাদ’। অনেক মুসলমানের নামের অংশ এটি। বিপত্তি হলো, অনেকেই শব্দটির ব্যবহারে ভুল করে। কেউ লেখে ‘আহমেদ’, কেউ লেখে ‘আহাম্মাদ’, আবার কেউ লেখে ‘আহাম্মেদ’। এগুলো শব্দটির অশুদ্ধ ব্যবহার। এর বিশুদ্ধ রূপ হলো ‘আহমাদ’। বাংলায় লিখলে সর্বোচ্চ ‘আহমদ’ লেখা যাবে।
যাদের নাম খাইরুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম বা আশরাফুল ইসলাম, অনেকে তাদের শুধু ‘খাইরুল’, ‘শফিকুল’ ও ‘আশরাফুল’ নামে ডাকে। এটি অশুদ্ধ। এ শব্দগুলোতে ‘আল’ দ্বিতীয় শব্দের অংশ। দ্বিতীয় শব্দ উচ্চারণ না করে শুধু ‘আল’ ডাকা ভুল। একইভাবে আব্দুল্লাহকে ‘আব্দুল’ বলে ডাকা অশুদ্ধ। প্রয়োজনে ‘খাইর’, ‘শফিক’ ও ‘আশরাফ’ ডাকা যাবে।
অনেকে নাম রাখে ‘নবীউল্লাহ’। এর অর্থ আল্লাহর নবী। এভাবে নাম রাখা অন্যায়। কেননা মহানবী (সা.)-এর পর আর কেউ নবী হবে না।
অনেকে আরবি বহুবচনসূচক শব্দ নাম হিসেবে রেখে দেয়। যেমন—‘মুরসালীন’, ‘মুত্তাকীন’, ‘আজমাইন’। নাম হিসেবে এগুলোর কোনো অর্থ দাঁড়ায় না। অনেকে শ্রুতিমধুর বলে নাম রাখে ‘মীম’ কিংবা ‘আলিফ’। শব্দ দুটি আরবি দুটি বর্ণ। এগুলোর কোনো অর্থ নেই।
অনেকের বিশুদ্ধ নাম ‘হিলাল’ কিংবা ‘বিলাল’। বাংলায় সর্বোচ্চ ‘হেলাল’ বা ‘বেলাল’ বলা যায়। কিন্তু অন্যরা না জেনে তাদের ‘হেল্লাল’ বা ‘বেল্লাল-বিল্লাল’ নামে ডাকে। এটি অশুদ্ধ।
অনেকে নাম রাখে ‘নাজমুন নাহার’। এর অর্থ দিনের নক্ষত্র। অথচ দিনের বেলা নক্ষত্র উদিত হয় না।
শব্দের ভুল ব্যবহারের এ ধারা রাষ্ট্রীয় ভাষা প্রতিষ্ঠানেও তা দেখা যায়। আরোগ্য বোঝাতে ‘শিফা’ বা ‘শেফা’ শব্দটি বহুল পরিচিত। অথচ এর বানানে বাংলা একাডেমি লিখেছে ‘শাফা’। ‘গাইরে মুহাররম’-কে লিখেছে ‘গায়র মহরম’।
অনেকে ‘ইনশা আল্লাহ’ আলাদা লিখে থাকে। তখন এর অর্থ হয় ‘আল্লাহকে সৃষ্টি করো’। নাউজুবিল্লাহ! বাংলা একাডেমিও এ কাজ করেছে। শব্দটিকে একত্রে ‘ইনশাআল্লাহ’ বা ‘ইন শা আল্লাহ’ লিখতে হবে।
হাদিস শরিফে কিয়ামতের আগে ইমাম মাহদি আগমণের কথা উল্লেখ আছে। অনেকে তাঁর নাম বলেন—‘ইমান মেহেদি’। কারো কারো নামও আছে ‘মেহেদি’। এটি অশুদ্ধ। আরবিতে ‘মেহেদি’ বলতে কোনো শব্দ নেই। আর ‘মাহদি’ অর্থ সুপথপ্রাপ্ত। তবে বাংলায় ‘মেহেদি’ শব্দের ব্যবহার আছে।
‘সাইয়িদ’ বা ‘সৈয়দ’ পুরুষবাচক শব্দ। শব্দটি নারীদের সঙ্গে যায় না। এ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ হলো ‘সাইয়িদা’ বা ‘সৈয়দা’।
নামাজ পড়লেই যেমন ‘নামাজি সাহেব’ বলা হয় না, তেমনি হজ করলেই ‘হাজি সাহেব’ বা ‘আলহাজ্ব’ বলার কোনো প্রয়োজন নেই। তবু আমাদের দেশে এর প্রচলন হয়ে গেছে। কিন্তু শব্দটি পুরুষবাচক। নারীদের জন্য ‘আলহাজ্ব’ শব্দের ব্যবহার অশুদ্ধ। বলতে হবে ‘আলহাজ্বা’।
‘সেহরি’ শব্দের অর্থ জাদুসংক্রান্ত বিষয়। রমজানের ভোরের খাবার বোঝাতে তাই ‘সাহরি’ শব্দ ব্যবহার করতে হবে।
‘আবু’ শব্দ যোগ করে আমাদের দেশে অনেক নাম আছে। এর অর্থ পিতা। আরবি ভাষায় ‘আবু’ শব্দযোগে কোনো নাম হয় না, হয় উপনাম। তাই আরবীয়দের কাছে ‘আবু তাহের’ বা এ জাতীয় নাম বিব্রতকর।
‘মোসাম্মৎ’ বা ‘মুসম্মাৎ’ শব্দের অর্থ নাম রাখা হয়েছে। নারীদের নামের আগে এ শব্দের ব্যবহার অর্থহীন।
উদাসীনতা বোঝাতে আরবিতে ‘গাফলত’ বা ‘গাফলতি’ শব্দ ব্যবহার করা হয়। ‘গাফিলতি’ বলতে কোনো শব্দ নেই।
তাই এসব শব্দ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমাদের ‘গাফিলতি’ কাম্য নয়।
Hey there! Looks like you're enjoying the discussion, but you're not signed up for an account.
When you create an account, we remember exactly what you've read, so you always come right back where you left off. You also get notifications, here and via email, whenever new posts are made. And you can like posts and share your thoughts.
Sign Up
Bookmarks