প্রশ্ন : জাকাত কার ওপর ওয়াজিব, কখন ওয়াজিব এবং জাকাতের হকদার কারা?
আহনাফ খান পারভেজ, ঢাকা

উত্তর : সাবালক জ্ঞানসম্পন্ন মুসলমান নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হওয়ার পর চন্দ্রমাস হিসেবে ঠিক এক বছরকাল অতিক্রম হলে জাকাত ওয়াজিব হয়ে যায়।
নিসাব বলা হয় : মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ, সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য কিংবা তৎসমমূল্যের নগদ টাকা বা ব্যবসার মালের মালিক হলে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ বা শতকরা আড়াই টাকা হারে জাকাত আদায় করতে হয়।

হকদার : যাদের সঙ্গে দাতার জন্মগত সম্পর্ক আছে, যেমন : পিতা, মাতা, দাদা, দাদি, নানা, নানি প্রমুখ এবং দাতার সঙ্গে যাদের জন্মগত সম্পর্ক, যেমন : ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনি ইত্যাদি। এদের জাকাত এবং ফিতরা দেয়া যাবে না। এমনিভাবে স্বামী তার স্ত্রীকে, স্ত্রী তার স্বামীকে জাকাত দিতে পারবে না। তা এমন গরিব ও ফকির মিসকিনকে দিতে হবে যাদের কাছে নেসাব পরিমাণ মাল নেই। ধর্মীয় কাজে নিয়জিত নিঃস্ব ও দরিদ্র ব্যক্তিদের জাকাত, ফিতরা দান করলে জাকাত দান এবং ধর্মীয় কাজে সহযোগিতা হিসেবে বেশি সওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়।
[ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা ১৮৭; আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ২৫৫]

প্রশ্ন : দরিদ্র বোনকে জাকাতের টাকা দেয়া জায়েজ হবে?
আয়েশা সিদ্দিকা, নোয়াখালী
উত্তর : হ্যাঁ, দরিদ্র বোনকে জাকাতের টাকা দেয়া জায়েজ হবে। এতে জাকাত আদায় হতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে, দরিদ্র বোনকে টাকাগুলো জাকাতের এ কথা না বলে দেয়াই উত্তম।
[বাহরুর রায়েক, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৩৭০; ফাতাওয়ায়ে ওসমানী, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা ১৬১]

প্রশ্ন : জাকাতের হিসাব কী মাস হিসেবে ধরা হবে, বাংলা, আরবি না ইংরেজি?
নাহিদুল ইসলাম রাকিব, মোমেনশাহী
উত্তর : জাকাতের হিসাবের জন্য আরবি মাস তথা চন্দ্রমাস গণনা করতে হবে। রমজান মাসের আগের মাস শাবান। শাবান থেকে শাবান হিসাব করা যেতে পারে। অথবা প্রতিবছর শবেবরাতের আগে হিসাব করলে রমজানে আদায় করা যায়। এতে রমজানে বেশ সওয়াব পাওয়া যাবে। তবে অন্য যে কোনো মাসেই এক বছর পূর্ণ করে হিসাব করা যাবে।
[বাহরুর রায়েক, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৩৫৬; হিদায়া, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ১৭৫; মাহমুদিয়া, খণ্ড : ১৪, পৃষ্ঠা : ৪৯]

প্রশ্ন : মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ধনী ব্যক্তির বালেগ ছেলেকে জাকাতের টাকা দেয়া জায়েজ আছে কি?
ওমর আবদুল আলিম, দোহার
উত্তর : ধনী ব্যক্তির বালেগ ছেলে জাকাতের উপযুক্ত হলে, অর্থাৎ নিজের অর্থসম্পদ না থাকলে, অন্যরা তাকে জাকাত দিতে পারবে। [ইমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১৭; বাহরুর রায়েক, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা ৪২৯]

প্রশ্ন : মাদ্রাসা বা এতিমখানায় গরিব ছাত্রদের খাবার খাওয়ালে জাকাত হবে কি?
হাজী সাদেক আলি, কেরানীগঞ্জ
উত্তর : না, গরিব ছাত্রকে স্বাভাবিকভাবে খাবার খাওয়ালে জাকাত আদায় হবে না। তবে তাদের খাবারের মালিক বানিয়ে দিলে, খাবারের মূল্য পরিমাণ জাকাত আদায় হবে।
[আদ্দুররুল মুখতার, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ২৯১; বাহরুর রায়েক, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৩৫৩]

প্রশ্ন : দোকান, বাসা বা বাড়ি ভাড়ার জন্য প্রদত্ত অ্যাডভান্স দেয়া টাকারও কি জাকাত দিতে হবে?
হাজী সোহেল, আমানিয়া হোটেল
উত্তর : হ্যাঁ, ভাড়াগ্রহীতা ব্যক্তির ওপর জাকাত ফরজ হয়ে থাকলে তার ওপর অ্যাডভান্সে প্রদত্ত টাকার ওপরও জাকাত ফরজ হবে। কেননা প্রদত্ত টাকার মালিক তো সে নিজেই। জমা রাখার কারণে তার মালিকানা শেষ হয়ে যায়নি। কাজেই ভাড়াগ্রহণকারীর ওপর জাকাত আদায় করা জরুরি হবে। এজন্য অন্যান্য টাকার সঙ্গে হিসাব করে এ টাকারও জাকাত দিতে হবে।
[আদ্দুররুল মুখতার, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৩০৫; আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ২৬১]

প্রশ্ন : করজ দেয়া টাকার ওপর কি জাকাত আসবে?
কাওসার হারুন, ইতালি
উত্তর: করজ দেয়া টাকা উসুল হওয়ার পর ওই টাকার জাকাত দিতে হবে এবং বিগত বছরগুলোয় এ টাকার জাকাত না দিয়ে থাকলে সেই জাকাতও দিতে হবে। তবে কেউ যদি করজের টাকা উসুল হওয়ার আগেই প্রতিবছর ওই টাকার জাকাত দিয়ে দেয় তাতেও জাকাত আদায় হয়ে যাবে।
[আদ্দুররুল মুখতার, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা ২৬৬; ফাতওয়ায়ে দারুল উলুম, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা ৪৫-৭৭]

প্রশ্ন : সদকায়ে ফিতর কার ওপর ওয়াজিব?
সাবিহা মুশতারি, উত্তরা
উত্তর : ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদেকের সময় যার কাছে জাকাত ফরজ হওয়ার পরিমাণ অর্থ-সম্পদ থাকে তার ওপর সদকায়ে ফিতির বা ফিতরা ওয়াজিব। তবে জাকাতের নেসাবের ক্ষেত্রে ঘরের আসবাবপত্র বা ঘরের মূল্য ইত্যাদি হিসাব ধরা হয় না। কিন্তু ফিতরার ক্ষেত্রে অন্যান্য আসবাবপত্র, শৌখিন দ্রব্যাদি, খালি ঘর বা ভাড়ার ঘর [যার ওপর জীবিকা নির্ভর নয়] এসব কিছুর মূল্য হিসাবে ধরা হবে।
[আদ্দুররুল মুখতার, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৫৯; ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ২১২]

মুফতি আহসান শরিফ
প্রিন্সিপাল, মাদ্রাসাতুল বালাগ ঢাকা
ফোন করুন : ০১৮৩৭ ৪২৪০৭১
ই-মেইল : [email protected]
http://www.24livenewspaper.com/site/....jugantor.com/