Amanah Matrimony



এক ভাই সেদিন ইনবক্সে তার পাত্রী রিকোয়ারমেন্ট বলছিলেন। ৫ফিট ২ ইঞ্চি এর মতো
হাইট আর সুন্দরী (!) হলে সাতখুন মাফ। কেউবা বলেন, গোলাপী কালারের চেহারার
কোনো পাত্রী আছে কিনা ?




কেউবা আবার উচ্চতা ১ ইঞ্চি এদিক-সেদিক হলেই পাত্রী
রিফিউজ করছেন। আমাদের এখন সব সয়ে গেছে। হরেক রকমের রিকোয়ারমেন্ট দেখে
দেখে। আরো কি কি রিকোয়ারমেন্ট পাই সে-সব নাই বা বললাম। এর চেয়ে বরং কিছু
ভাইদের কথা বলি। যাদের নিয়ে আমরা কাজ করেছি।

এই ছবির ভাই-আপু আমাদের মেট্রিমোনীর প্রথম সফলতা। যেদিন প্রথম উনার
বাবাকে আমি ফোন করলাম। ভাইয়ের জন্য পাত্রীর কথা বললাম।

উনি বললেন, ওর ছোট
ভাইয়েরা এখনো পড়ে। আর চাকুরী করে খুবই সামান্য বেতনে। ভাষ্য ডিরেক্ট না
হলেও অনেকটা অন্যদের মতই, “বিয়ে করে বউকে খাওয়াবে কি?” যাই হোক আঙ্কেলকে
রাজী করাতে পারিনি। তো ভাইকে বললাম, আপনাকেই রাজী করাতে হবে। আমার দ্বারা
সম্ভব হবে না বলেই মনে হচ্ছে। উনি বললেন, আল্লাহ্- ভরসা। রাজী ক্যামনে
করাতে হয় আমি জানি। আপনি মেয়েপক্ষকে টাচে রাখেন। 1f603 1 - গোলাপী কালারের পাত্রী আছে কিনা ?lol 1 - গোলাপী কালারের পাত্রী আছে কিনা ?
.
উনি কিভাবে রাজী করালেন উনি জানেন। কিছু আ’মালের কথা পরবর্তীতে ফেসবুকে
পোষ্টও করেছিলেন। মাসখানেকের মধ্যেই উনার নতুন জায়গায় চাকুরী হল। এবং
উনার ফ্যামিলি পাত্রী দেখার ব্যাপারে রাজী হলো। পাত্রী দেখে উনার মা এবং
খালার পছন্দ হলো। বাকী রইলো হাইট নিয়ে একটা সমস্যা। মেয়ের হাইট ৫ ফুটের
সামান্য একটু কম।
যেখানে এই ভাইয়ের হাইট প্রায় ৬ ফিট (৫ফিট ১১)। ছেলেকে
দেখার ব্যাপারে ফোন দিলেন তারা। ছেলে জানাল হাইট তার কোন সমস্যাই নাই।

মেয়ের ফ্যামেলি এবং মেয়ে দ্বীনদার কি না ! এইদিকে কোন সমস্যা না থাকলে, আগে
বাড়া যায়। আলহামদুলিল্লাহ্-, ঠিক পরের দিই ছোট পরিসরে বিয়ে হয়ে গেল।
দুনিয়ার প্রচলিত সব গুনাহের স্রোতের বিপরীতে গিয়ে পরিপূর্ণ সুন্নাহ মোতাবেক
বিয়ে। জুম্মার নামযের পর, ভরপুর মসজিদে। পাত্রী নানা-ই এই মসজিদের খতিব।
ভাইয়ের নেয় দশ কেজি খুরমা-খেজুর ছিটানো হলো।
.
বিয়ের কিছুদিন পর
ভাই এর সাথে। স্ত্রীসহ বিভিন্ন ছোটখাট জিনিষ কিনছেন। একটু দূরেই আমিসহ
কয়েকজন বসে ছিলাম। এদের একজন বলল, দেখ। উচ্চতায় দু’জনকে কেমন বেমানান
দেখাচ্ছে। আমি বললাম, আমি আমার জীবনের যত সুখী দম্পতি দেখেছি। তাদের মধ্যে
তারা একজন।
.
পরিচিত এক ভাইকে বিয়ে করিয়েছিলাম, অনেক সময় নষ্ট
করে। খুব কষ্ট করে, খুঁজে খুঁজে একজন সুন্দরী আপুর সাথে বিয়ে হল। ভাই এর
একটাই চিন্তা ছিল, সুন্দরী যদি বিয়ে না করতে পারে হয়তো রাস্তাঘাটে উনি
ফিতনায় পড়ে যাবেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই ভাই এর সাথে দেখা।

বিয়ে
পরবর্তী হালচাল জিজ্ঞাসা করতে বলল, আপনাকে অনেক জ্বালিয়েছি ভাই। যে কারণে
সুন্দরী বউ খুঁজেছিলাম। সেটা ছিল নিতান্তই শয়তানের প্রচোরানা। ফিতনা এখন
নতুন রুপে নতুন ভাবে সামনে আসছে। সুন্দরী বউ ঘরে থাকা স্বত্বেও।
.
মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, আমাদের ভাইয়েরা অতিরিক্ত সিনেমা দেখায় দ্বারা
প্রভাবিত। তাই এখনো বুঁদ হয়ে আছে সুদৃশ্য নায়িকাদের সন্ধানে। তাদের চোখে
সুন্দর মানে হচ্ছে, তাদের পছন্দের কোন নায়িকার মত কেউ একজন।




এর চেয়ে একটু
কম হলেও তাদের হবে না। খুঁত ধরার ক্ষেত্রে কমতি নাই। কারো নাক বোঁচা, কেউ
হ্যাংলা কাঠির মত, কারো গাল বাঁকা, কেউ মোটা, কেউ শ্যামলা। হাজারটা
দুনিয়াবী ব্যাহিক খুঁত তারা বের করেন! তাদের মনের মতো সুন্দর কারো চেহারার
মতোই লাগবে! কম করে হলে বাসে দেখা সেই মেয়েটির মতো, কিংবা অফিস শেষে
বাসায় আসতে রিকশায় দেখা মেয়েটির মত! (নজরের হেফাজতের কথা কেউ বলবেন না 1f61b 1 - গোলাপী কালারের পাত্রী আছে কিনা ?tongue 1 - গোলাপী কালারের পাত্রী আছে কিনা ? )
.
ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ বিয়ের ইচ্ছা পোষন করলেন। জনৈকা
আত্মীয়াকে পাঠালেন তারই খোঁজ করে আনা দুই বোনের ব্যাপারে খবর নিয়ে আসতে।
মহিলা খবর নিয়ে এসে বললেন, ছোট মেয়েটা দেখতে সুন্দর।



চুলগুলো কোঁকড়ানো,
অনেক পছন্দনীয়। ইমাম আহমাদ জিজ্ঞাসা করলেন, আর বড় বোনটার কথা তো জানালেন
না। ঐ আত্মীয়া বললেন, বড় মেয়েটা দেখতে তেমন ভাল নয়। তবে দ্বীনদারির
দিকে ছোট বোন থেকে অনেক অনেক গুন বেশী এগিয়ে। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল
সিদ্ধান্ত জানালেন বড় মেয়েকেই বিয়ে করবেন।
.
প্রিয় ভাই ও
আপুরা, শয়তান দুনিয়াকে সবসময় অনেক আকর্ষনীয় লোভনীয় হিসেবে আমাদের সামনে
উপস্থাপন করে। আমি দেখেছি সামান্য খুঁত ধরতে ধরতে, রিজেক্ট করতে করতে
হয়রান হওয়া ভাই-আপুরা এখনও তাঁদের পছন্দের সঙ্গীকে খুঁজে নিতে পারেন নাই।
মাঝখানে নষ্ট হয়েছে অনেকগুলো বছর। দুনিয়া আমাদের জন্য পরীক্ষাগার।
সবকিছু আমাদের দুনিয়াতেই এনসিউর করলে, আখিরাতের জন্য পাওয়ার সম্ভাবনা কি?




আমাদের অনেকের মাঝে অনেক ফ্যান্টাসী। বিশ্বাস করেন ভাই, যেই
চিন্তায় আপনি এখন সুন্দরী খুঁজছেন, সুন্দরী (!) বিয়ে করার পর কিছুদিন
গেলে দেখবেন নিজের বউ এর চেয়ে সুন্দরী আপনার আশে-পাশে ঘুরঘুর করছে।

বিবাহিতদের থেকে জেনে নিতে পারেন। অথচ যে চেহারার ছুতায় আপনি একটা
অপেক্ষাকৃত বেশী দ্বীনদার মেয়েকে অবহেলা করলেন। সেই মেয়েটির কারনেই হয়তো
আপনার জান্নাতে যাওয়া অনেক সহজ হয়ে যেত। আল্লাহ্- আমাদের সবাইকে সহজ বুঝ
দান করুন। আমীন।



- - - Updated - - -



আপা, আমার অনুভূতি নেই হয়ে যাচ্ছে - গ্রুপের একজন দু:খ করে কাল এই মেসেজ
পাঠিয়েছে। যারা শখের ঘটকালি করে , শুধু তারাই বুঝবে কত ঝামেলা পোহালে একজন
এমন কথা লিখে। মেয়ে পক্ষ বিশেষ করে ছেলে পক্ষের নানা অন্যায় আবদারে শুধু
পাগল হওয়া বাকী আমাদের। আল্লাহ সহায় হোন।