মসজিদ কমিটির দায়িত্বে থাকার কারণে বাবাকে হঠাৎ একটা প্রশ্ন করলাম, 'আমাদের মসজিদের হুজুরের বেতন কতো?'
.
বলে রাখা ভালো, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শোভাকলোণীর প্রায় পঞ্চাশ পরিবারের জন্য একটি মসজিদ যেটা সুসজ্জিত, এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ানো এবং এলাকার বাচ্চাদের ধর্মীয় শিক্ষার জন্য একজন হুজুর আছে,
.
ব্যক্তিগতভাবে হুজুর আমার ছোটবেলা থেকে খুব প্রিয়! প্রিয়মুখ রফিক হুজুর! আমি যখন স্কুলে ছিলাম সেই ২০০৩ সালের দিকে হুজুর আমাদের মসজিদের ইমাম হিসেবে জয়েন করেছিলো!
.
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে আমিও একজন চাকরিজীবী, আজ প্রায় পনের বছর পরও হুজুর আমাদের মসজিদে ইমাম হিসেবে আছেন,
.
দীর্ঘ ১৫ বছরে হুজুরের বেতন ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা হয়েছে এমন!
.
বিষয়টি নিয়ে কখনো লিখতাম না কারণ হুজুরকে যখনি জিজ্ঞেস করি তখনি বলে 'প্রতিদান আখেরাতে আল্লাহ দিবে' দুনিয়াতে যা রিজিকে আছে তাতে শুকরিয়া!
.
লিখতে বাধ্য হয়েছি ডাঃ দীপু মণির একটা বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে দেখে, 'হুজুরদের যা বেতন তাতে রাতে যে মুসল্লিদের ঘরে চুরি করতে যায় না সেটা আশ্চর্যের বিষয়!'
.
আমার হুজুরেরও ডায়াবেটিস আছে! সে ও একই দামে ঔষুধ কিনে খায়!
.
হাটহাজারী মাদ্রাসায় পড়ার সময় দেখতাম হুজুরকেও ইয়া বড় বড় কিতাব নিজের টাকা দিয়ে কিনতে হতো,
.
হুজুর যে বাজার থেকে মাছ কিনে আমরাও সেই বাজারের ক্রেতা!
.
মোবাইলে রিচার্জ করলে হুজুর বলে কেউ এক টাকা কম রাখে না,
.
জনপ্রতি পরিবার একশ টাকা করে বেতন দেয় বলে তারা হুজুরের পান থেকে চুন খসলেই তীর নিক্ষেপ করে!
.
মন খারাপ হয়! আবার কিভাবে যেনো সবার সাথে মিশে যাওয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে জন্ম তাদের!
.
বাসায় বাসায় গিয়ে হুজুরের চার হাজার টাকা বেতন উঠানোর বিশাল সংগ্রামে নিয়োজিত একজন মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ারও আছে,
.
মসজিদ টাইলস হয়! কোণায় কোণায় ফ্যান! সবকিছু নতুন কিন্তু শুধু পুরাতন মানুষটা জারাজীর্ণ খাদেম হয়ে থেকে যায়!
.
কোন এক ফজর নামাযের সময় ঘুম থেকে উঠে দৌড়ে মসজিদ পৌঁছাতে না পারলে সেদিন হুজুরের খবর আছে,
.
শত মানুষের চোখ হুজুরের দিকে, আঙ্গুল উঁচিয়ে তারাও ইমামের উপ্রে ইয়া বড় ইমাম সেজে বসে আছে!
.
একমাত্র হুজুর ছাড়া সবাই আলেম মুফতি মারফতি,
.
তবুও দিনশেষে সব অভিমান ভুলে 'আখেরাতে প্রতিদান আল্লাহ দিবে' মর্মে এভাবে ধর্ম টিকিয়ে রাখছে লক্ষ লক্ষ হুজুররা, এগ্লা সোজা কথা না! কঠিন চ্যালেঞ্জ!
.
লিখেছেন, Abdur Rob Sharif