হুর নিয়ে ইসলামকে ঘিরে যথেষ্ট নোংরা ধারনা বিধর্মীরা পোষণ করে । এমনকি মুসলিম পুরুষদের মাঝে বেশ উত্তেজনা আছে যে তারা জান্নাতে গেলে অনেক হুর পাবে , তাদের সাথে অনেক রংগ তামাশা করবে । তারা মনে করে যে তাদের স্ত্রীরা এই সমস্ত হুরদের রানী হয়ে তাদের স্বামীকে শত শত হুরদের সাথে কেলী করতে দেখবে । এটা একটা Double Standard বৈ কিছুই নয় । পুরুষ শাসিত মুসলিম সমাজে মেয়েদের কে সব সময় কম অধিকার দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায় । এই 'হুর' বিষয়টা এই সত্যতার স্বাক্ষ্য বহন করে ।

যাই হোক , মহান আল্লাহ্- কুরআনে হুর সংক্রান্ত এই সকল নোংরামি ও মিথ্যাচার কে প্রশ্রয় দেননি । নিচের সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে আমরা কুরআনে ‘হুর’ এর সঠিক স্বরূপ জানতে পারব বলে বিশ্বাস রাখি ।

১- কোরানের ব্যবহৃত হুর (حُـورِی) বহু বচন যা স্ত্রী ও পুরুষ – এই দুই অর্থেই ব্যবহৃত হয় । এক বচন অর্থে হুর শব্দটি স্ত্রী বা পুরুষ লিঙ্গে বিভক্ত হতে পারে (হাওরা/ حَوْراء স্ত্রী লিঙ্গ , আহওয়ার/ أحْوَر পুং লিঙ্গ) কিন্তু বহু বচন অর্থে নয় । তাই হুর কে শুধু নারী কল্পনা করা নিতান্তই বাতুলতা ও ভাষাগত ভাবে ভুল । উপরন্তু কুরআনে ইশা (আঃ) এর শিষ্যদেরকে ‘হাওয়ারী/ ْحَوَارِيُّونَ’ (৩.৫২, ৫.১১১, ৬১.১৪) বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে যা ‘হুর’ শব্দ থেকে এসেছে । হাওয়ারী একটি পুং বাচক শব্দ এবং আমরা জানি যে ইশা (আঃ) এর শিষ্যরা বেশির ভাগই পুরুষ ছিলেন । তাই কোরআন থেকে এটা পরিষ্কার যে ‘হুর’ পুরুষও হতে পারে আবার নারীও হতে পারে ।

২- জান্নাতে পুরুষ ও নারী সম-ব্যবহার পাবে বলে মহান আল্লাহ্- নিশ্চিত করেছেনঃ

পুরুষ হোক কিংবা নারী, যে কোন সৎকর্ম করে এবং বিশ্বাসী হয়, তবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রাপ্য তিল পরিমাণ ও নষ্ট হবে না।” (৪.১২৪)

তাই জান্নাতি পুরুষ যদি মেয়ে হুর পাই তবে জান্নাতি নারী অবশ্যই পুরুষ হুর পাবে ।

৩- জান্নাতে হুর কি সবার জন্য ? কুরআন থেকে তা ‘না’ বলে মনে হয় । যদি জান্নাতির পরিবার পরিজনও জান্নাতি হয় , তবে তারা পুরো পরিবার নিয়ে জান্নাতে বসবাস করবে বলে আল্লাহ্- প্রতিশ্রুতি দিয়েছেনঃ

তা হচ্ছে বসবাসের বাগান। তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের সৎকর্মশীল বাপ-দাদা, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানেরা। ফেরেশতারা তাদের কাছে আসবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে।” (১৩.২৩)

তাই জান্নাতি স্বামীর স্ত্রীও যদি জান্নাতি হয় তবে তারা জান্নাতে স্বামী স্ত্রী হিসেবেই অবস্থান করবে ।

বিপত্তি হবে যদি স্বামী বা স্ত্রীর যেকোন একজন জান্নাতে প্রবেশ করলে আর অন্য জন জাহান্নামি হলে সেক্ষেত্রে কি হবে ? এই অবস্থাতে ‘হুর’ এর সাথে তাদের বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে তাদের সঙ্গী/ সঙ্গিনী এর ফাকা স্থান পূরন করা হবে । নিচের আয়াতটি এই বিষয়ে লক্ষ্যনীয়ঃ

তারা শ্রেণীবদ্ধ সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। আমি তাদেরকে আয়তলোচনা/ন হুরদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দেব। ” (৫২.২০)

৫২.২০ থেকে মনে হয় যে , এই সমস্ত জান্নাতি তাদের পরিবার পরিজন বিহীন নিঃসঙ্গ অবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করেছে । তাই তাদের জান্নাতে সংগ দেওয়ার জন্য এই সমস্ত হুরদেরকে তাদের সাথে মিলিয়ে দেওয়া হবে ।

সারাংশঃ
০১) হুর ছেলে বা মেয়ে উভয় লিঙ্গেরই হতে পারে ।
০২) স্বামী ও স্ত্রী যদি উভয়েই জান্নাতি হয় তবে তারা জান্নাতে পৃথিবীর ন্যায় স্বামি-স্ত্রী হিসেবেই অবস্থান করবে । তাদের হুরের দরকার হবে না ।
০৩) নিঃসঙ্গ জান্নাতি পুরুষের জন্য মেয়ে হুর এবং আর নিঃসঙ্গ জান্নাতি মেয়ের জন্য পুরুষ হুর বরাদ্দ থাকবে । তাদের মধ্যে বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে অটুট সম্পর্ক গড়ে তুলা হবে ।

লেখকঃ আবরার শাহরিয়ার ।
ই-মেইল ঃ [email protected]