‘নারীরা পুরুষদের অর্ধেক সম্পত্তি পাবে’ – এইটা কি সত্য ? সুন্নি ধর্মানুসারিরা যদিও তাই বিশ্বাস করে কিন্তু ইসলাম ধর্মের এক মাত্র উৎস কোরআনে মহান আল্লাহ্ এই আইন দেননি । চিরায়ত উপায়ে মোল্লারা আল্লহার কিতাবের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মেয়েদের কে সব সময় পায়ের নিচে রাখতে চেয়েছে । নিচে ইনশাল্লাহ কোরআন থেকে এতদ্বসংক্রান্ত বিষয়ে আমরা আলোচনা করব ।

“আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি তারা দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে, যা সে রেখে গেছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ; আর যদি একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য অর্ধেক। আর তার মাতা পিতা উভয়ের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ সে যা রেখে গেছে তা থেকে, যদি তার সন্তান থাকে। আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং তার ওয়ারিছ হয় তার মাতা পিতা তখন তার মাতার জন্য তিন ভাগের এক ভাগ। আর যদি তার ভাই-বোন থাকে তবে তার মায়ের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। অসিয়ত পালনের পর, যা দ্বারা সে অসিয়ত করেছে অথবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের মাতা পিতা ও তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের মধ্য থেকে তোমাদের উপকারে কে অধিক নিকটবর্তী তা তোমরা জান না। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” (৪:১১)

আয়াতটি থেকে লক্ষনীয়ঃ

১- মেয়েদের কে কেন্দ্র করে মৃতের সম্পদ বন্টনের আইন করা হয়েছে , মেয়ের সংখ্যা ১ ,২ বা ২ এর বেশী হওয়ার সাথে সাথে মেয়েদের কে প্রথমে সম্পদের অংশ বরাদ্দ করা হয়েছে ।

২- এখানে ছেলের সংখ্যা ঊহ্য রাখা হয়েছে । তারমানে ছেলের সংখ্যা যাই হোক না কেন মেয়ের সংখ্যার উপর তাদের সম্পদের অংশ নির্ভর করবে । মেয়েরাই হচ্ছে সম্পদের মূল ভাগীদার ।

৩- এটী একটি Case ভিত্তিক আয়াত Condition ভিত্তিক নয় । অর্থাৎ আয়াতে তুলে ধরা হয়েছে যদি মেয়ের সংখ্যা ১ জন হয় তবে তাঁর অংশ কত হবে বা ২ জন হলে তারই বা কত হবে ইত্যাদি ।

৪-আয়াতে ছেলে মেয়ের দ্বিগুন পাবে বলা হয়নি । দ্বিগুণ এর আরবি দিফাফা (ضِعْفٌ) যা কোরানের বহু জায়াগাতে ব্যবহৃত হলেও এই আয়াতে তা ব্যবহার করা হয়নি । আগেই বলেছি যে এই আয়াতটা কোন Condition ভিত্তিক নয় , তাই আয়াতে ‘ছেলেরা মেয়েদের দ্বিগুণ পাবে’ বলা হয়নি বরং এটাকে একটা Case করা হয়েছে তাই আয়াতে বলা হয়েছে ‘ ছেলের অংশ ২ মেয়ের অংশের সমান ‘ । তাই মেয়ের সংখ্যা যদি ২ না হয়ে যদি অন্য কোন সংখ্যা হয় , তখন ছেলের ভাগেরও পরিবর্তন হবে । নীচের উদাহরণে আমরা এই বিষয়টা আরো বিশদ ভাবে বুঝার চেষ্টা করব ইন শাআ আল্লাহ্- ।

৫- পিতা মাতার জন্য মৃতের সম্পদ বন্টনে বলা হয়েছে যে যদি মৃতের সন্তান থাকে তবে পিতা ও মাতা উভয়ের জন্য সম্পদের ১/৬ ভাগ রয়েছে । এটি কোরআনে একটি Live Example যার দ্বারা প্রমাণিত হয়যে যে নারীরা সর্বদা পুরুষের অর্ধেক অংশ পাবে তা মিথ্যা । তাই যদি সত্য হত মহিলা মা পুরুষ পিতার সমান ভাগ কিভাবে পায় ? ৪:১২ তেও একি ভাবে বলা হয়েছে যে মৃতের ভাই ও বোন সমান অংশ (১/৬) পাবে যদিও তাদের একজন নারী ও অপরজন পুরুষ ।

Case Study :
---------------
ধরা যাক কোন মৃত ব্যক্তি ১০০ টাকার সম্পত্তি রেখে গেছেন । আরো ধরা যাক তাঁর n (n= ১,২,৩….) সংখ্যক ছেলে সন্তান আছে । তাঁর মেয়ের সংখ্যা ১ বা ২ বা ২ এর অধিক হলে নিমোক্ত ভাবে কুরআনের ৪:১১ অনুসারে সম্পদের বন্টন হবেঃ

ক) n ছেলে ও ১ মেয়ে (“....আর যদি একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য অর্ধেক”)ঃ

১ মেয়ে পাবে = ১০০/২= ৫০ টাকা (FIXED)
~১ ছেলে পাবে = ১০০-৫০=৫০ টাকা
~যদি ২ ছেলে থাকে তবে প্রত্যেকে পাবে = ৫০/২=২৫ টাকা
~যদি ৩ ছেলে থাকে তবে প্রত্যেকে পাবে = ৫০/৩= ১৬.৬৭ টাকা
.............................................
খ) n (n= ১,২,৩….) ছেলে ও ২ মেয়ে (“....ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ”)ঃ

২ মেয়ে = n ছেলে (FIXED)
~যদি ১ ছেলে থাকে তবে ১ ছেলে = ২ মেয়ে , তাই
১ ছেলে + ২ মেয়ে = ১০০ টাকা
তাই, প্রত্যেক মেয়ে পাবে =২৫ টাকা ।
এবং ১ ছেলে পাবে = ৫০ টাকা


~যদি ২ ছেলে থাকে তবে ২ ছেলে = ২ মেয়ে , তাই
২ ছেলে +২ মেয়ে = ১০০ টাকা
প্রত্যেক মেয়ে পাবে = ২৫ টাকা
প্রত্যেক ছেলে পাবে = ২৫ টাকা ।

~যদি ৩ ছেলে থাকে তবে ৩ ছেলে = ২ মেয়ে , তাই

৩ ছেলে + ২ মেয়ে = ১০০ টাকা
প্রত্যেক মেয়ে পাবে = ২৫ টাকা
প্রত্যেক ছেলে পাবে =১৬.৬৭ টাকা
.................................................. .........................

গ) n (n= ১,২,৩….) ছেলে ও m (m= ৩,৪,৫….) মেয়ে (“....তবে যদি তারা দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে, যা সে রেখে গেছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ; ”)ঃ

যদি m মেয়ে হয় তবে তাদের জন্য = ১০০ X ২/৩ = ৬৬.৬৭ টাকা
৩ মেয়ে হলে প্রত্যেক মেয়ে পাবে = ৬৬.৬৭/৩ = ২২.২২ টাকা ।
৪ মেয়ে হলে প্রত্যেকে পাবে = ৬৬.৬৭/৪ = ১৬.৬৭ টাকা
.................................................. ....
১ ছেলে পাবে = ১০০-৬৬.৬৭= ৩৩.৩৩ টাকা
যদি ২ ছেলে থাকে তবে প্রত্যেকে পাবে = ৩৩.৩৩/২=১৬.৬৫ টাকা
যদি ৩ ছেলে থাকে তবে প্রত্যেকে পাবে = ৩৩.৩৩/৩ = ১১.১১ টাকা
যদি ৪ ছেলে হয় তবে প্রত্যেকে পাবে = ৩৩.৩৩/৪=৮.৩৩ টাকা
.................................................. ...................

পর্যবেক্ষনঃ

১- নারীরা পুরুষের অর্ধেক সম্পত্তি পাবে – এই আইন কোরআনে নেই ।

২- কোরআনে নারীদের কে সম্পত্তি লাভের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে ।

৩- কোরআনে এমন ভাবে সম্পত্তি বন্টনের হিসাব রাখা হয়েছে যেন সব ক্ষেত্রেই নারীরা পুরুষদের চেয়ে বেশী সম্পত্তি পায় ।

লেখকঃ আবরার শাহরিয়ার
ইমেইলঃ[email protected]