_*➧ উত্তর:*_
কুরবানির পশু কেনার সাথে জিলহজ মাসের চাঁদ উঠার কোন সম্পর্ক নাই। আপনি সারা বছর ধরে কুরবানির পশু প্রতিপালন করতে পারেন বা চাঁদ উঠার আগে যে কোন মাসে তা ক্রয় করতে পারেন।
অনুরূপভাবে কোন কারণে যদি ইতোপূর্বে কুরবানির পশু ক্রয় করা সম্ভব না হয় তাহলে যদি ঈদের দিন অথবা তার পরের দিন অথবা তার পরের তিন..এভাবে জিলহজ মাসের ১৩ তারিখের সূর্য ডোবার কিছুক্ষণ পূর্বেও যদি পশু ক্রয় করে জবেহ করতে পারেন তাহলেও কুরবানি সহিহ হবে ইনশাআল্লাহ। কারণ, কুরবানির দিন ছাড়াও আইয়ামে তাশরিক তথা জিলহজ মাসের ১১, ১২ ও (অধিক বিশুদ্ধ মতে) ১৩ তারিখের সূর্য ডোবা পর্যন্ত যে কোন সময় কুরবানি করা বৈধ। তবে সর্বোত্তম সময় হল, কুরবানির দিন ঈদের সালাতের পর কুরবানি করা।
উল্লেখ্য যে, জিলহজের ১৩ তারিখের সূর্য ডোবার পূর্বে কুরবানির পশু জবেহ করা সম্ভব হলে কুরবানি সহিহ হবে। অন্যথায় কুরবানি নয় বরং তা সাধারণ গোশত খাওয়ার জন্য জবেহকৃত পশু হিসেবে গণ্য হবে।
_*◍ কুরবানির পশু বিক্রয় করা:*_
_*২) প্রশ্ন: কুরবানির পশু কি বিক্রয় করা জায়েজ আছে?*_
_*➧ উত্তর:*_
কুরবানির উদ্দেশ্যে গরু-ছাগল ইত্যাদি ক্রয় করা পর যদি তার পরিবর্তে এমন আরেকটি পশু কুরবানি করার নিয়ত করা হয় যা আগেরটার চেয়ে মোটা-তাজা, দামী ও ভালো তাহলে তাতে কোন সমস্যা নাই। অন্যথায় তা বিক্রয় করা জায়েজ নাই।
قال شيخ الإسلام ابن تيمية رحمه الله
ويجوز أن يُبْدِل الأضحية إذا أوْجَبَها بِخَيرٍ منها . اهـ
_*◍ ঈদুল আজহার দিন গোশত ক্রয় বা শুধু গোশত খাওয়ার জন্য অন্য পশু জবেহ করা:*_
_*৩) প্রশ্ন: ঈদুল আজহার দিন গোশত ক্রয় করার ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?*_
_*➧ উত্তর:*_
ঈদুল আযহার দিন প্রয়োজনবোধে গোশত ক্রয় করা, বিক্রয় করা, কেবল খাওয়ার খাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁস, মুরগি বা অন্য কোন হালাল প্রাণী জবেহ করায় কোন আপত্তি নাই। কারণ ইসলামে এমন কোন নিষেধাজ্ঞা আসে নি।
উল্লেখ্য যে, কুরবানির গোশত বিক্রয় করা জায়েজ নাই।
_*◍ অভাবী মানুষ যদি তার সংগৃহীত কুরবানির গোশত বিক্রয় করতে চায়…*_
_*৪) প্রশ্ন: কোন অভাবী ব্যক্তি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে কুরবানির গোশত সংগ্রহ করে যদি টাকার অভাবে সে মাংস বিক্রয় করতে চায় তাহলে তা জায়েজ কি না বা তার নিকট থেকে গোশত ক্রয় করা জায়েজ আছে কি না?*_
_*➧ উত্তর:*_
অভাবী মানুষ বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত কুরবানির গোশত যদি বিক্রয় করে তাতে কোন আপত্তি নাই। কারণ এ গোশতগুলো তার নিজস্ব কুরবানির গোশত নয়। অন্যের নিকট থেকে যা পেয়েছে সেগুলো এখন সে যা খুশি করতে পারে। ইচ্ছা করলে নিজে খেতে পারে আর যদি প্রয়োজন মনে বিক্রয়ও করতে পারে। তাতে কোন আপত্তি নাই। অনুরূপভাবে কেউ যদি সেগুলো ক্রয় কর চায় তাহলে ক্রয় করতেও কোন আপত্তি নাই।
_*◍ কুরবানির গাভী দোহন করে দুধ পান করা:*_
_*৫) প্রশ্ন: কুরবানির গাভী দোহন করে দুধ খাওয়া যাবে কি না?*_
_*➧ উত্তর:*_
কুরবানি দেয়ার নিয়ত করা হয়েছে এমন গাভীর যদি দুধ হয় তাহলে তা দোহন করে পান করতে ইসলামের দৃষ্টিতে কোন বাধা নেই। কেননা, হাদিসে এমন কোন নিষেধাজ্ঞা আসে নি।
_*◍ শ্বশুর বাড়ি থেকে উপহার দেয়া খাসি দিয়ে কুরবানি করা:*_
_*৬) প্রশ্ন: শ্বশুর বাড়ি থেকে উপহার দেয়া খাসি দিয়ে কুরবানি দেওয়া কি জায়েজ?*_
_*➧ উত্তর:*_
যদি শ্বশুর বাড়ি থেকে জামাইকে স্বেচ্ছায় উপহার হিসেবে কুরবানির খাসি দান করা হয় তাহলে তা দ্বারা কুরবানি করতে কোন বাধা নেই। কিন্তু যদি জামাই চাপ দিয়ে বা জোর করে তা আদায় করে তাহলে এটা দ্বারা কুরবানি করা বৈধ হবে নয়। কারণ তা হারাম ভাবে উপার্জিত।
দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, বর্তমানে আমাদের সমাজের কোন কোন অঞ্চলে ঈদ, কুরবানি ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে সামাজিক কু প্রথার অংশ হিসেবে শ্বশুর বাড়ি থেকে একপ্রকার জোর করে পোশাকআশাক, চাল, ডাল, মাছ, হাঁস, মুরগি, ফল-ফলাদি, কুরবানির খাসি সহ প্রায় সব কিছু আদায় করা হয়।
এটা নি:সন্দেহে হারাম। শ্বশুর বাড়িতে চাপ প্রয়োগ করে বা তাদেরকে বাধ্য করে এমনটি করা হলে তা হারাম ও গুনাহের কাজ বলে পরিগণিত হবে। সুতরাং কোন কোন অঞ্চলে প্রচলিত এই কু প্রথার বিরুদ্ধে সমাজ সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন।
_*◍ ধূমপায়ী ও নেশাখোর ব্যক্তির কুরবানি:*_
_*৭) প্রশ্ন: ধূমপান করে এবং নেশা করে এমন ব্যক্তির কি কুরবানি সহিহ হবে?*_
_*➧ উত্তর:*_
বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, গুল, সীসা, হুঁকো ইত্যাদি গ্রহণ করা হারাম। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও নিকৃষ্ট বস্তু। তা এগুলো বর্জন করে আল্লাহর নিকট তওবা করা জরুরি।
তবে যে ব্যক্তি এগুলো গ্রহণ করে সে যদি তার হালাল পন্থায় উপার্জিত সম্পদ দ্বারা কুরবানি করে তাহলে ইনশাআল্লাহ কুরবানি শুদ্ধ হবে।
_*◍ যারা নিজেরা কুরবানি দিয়েছে তাদেরকে কুরবানির গোশত উপহার দেয়া:*_
_*৮) প্রশ্ন: ধনী প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের মধ্যে যারা কুরবানি করেছে তাদেরকে কুরবানির মাংস হাদিয়া দেওয়া যাবে? আর তাদের না দিলে গরিব প্রতিবেশী এবং ফকির মিসকিন দের একটু বেশি করে দেওয়া যায়।*_
_*➧ উত্তর:*_
কুরবানির গোস্ত ধনী-গরিব যে কাউকে উপহার হিসেবে দেয়া যায়। এতে পারস্পারিক ভালবাসা ও হৃদ্যতা সৃষ্টি হয় এবং গরিব মানুষে মুখে হাসি ফোটে। এভাবে সবার সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়া হয়, চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে ভালবাসা, মানবিকতা ও সহমর্মিতার সৌরভ।
তবে ধনীদেরকে-যারা কুরবানি দিয়েছে-তাদেরকে না দিয়ে যদি গরিব মানুষ-যারা কুরবানি দিতে পারে নি-তাদেরকে বেশি করে দেন তাহলেও কোন আপত্তি নাই।
মোটকথা, কাকে দিলে বেশি ভালো হয় তা আপনার এলাকার গরিব মানুষের সার্বিক অবস্থা এবং পরিবেশ-পরিস্থিতির বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন।
_*◍ হারাম উপার্জনকারী ও পাপাচারে জড়িত ব্যক্তির সাথে ভাগে কুরবানি করা:*_
_*৯) প্রশ্ন: হারাম উপার্জনকারী ও পাপাচারে জড়িত ব্যক্তির সাথে ভাগে কুরবানি দিলে কি অন্যান্য ভাগীদারদের কুরবানি বাতিল হয়ে যাবে?*_
_*➧ উত্তর:*_
ইচ্ছাকৃত ভাবে জেনেশুনে বেনামাজি, হারাম ইনকাম কারী এবং প্রকাশ্য পাপাচারে লিপ্ত ব্যক্তিদের সাথে উট-গরুতে ভাগে কুরবানি দেয়া উচিৎ নয়। কেনান এতে তাকে হারাম অর্থ খরচে সহযোগিতা করা হয়। তাই দ্বীনদার ও ভালো লোক-যাদের আয়-ইনকাম হালাল তাদের সাথে ভাগে কুরবানি দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। তবে যদি অজানা বশত: সাত জনের মধ্যে এমন কেউ থাকে অথবা বিশেষ পরিস্থিতিতে এমন ব্যক্তিকে ভাগে নেয়ার প্রয়োজন হয় যার অর্থ সম্পূর্ণ হালাল নয় (হালাল-হারামের সংমিশ্রণ আছে) তাহলে এটি অন্যান্য ভাগীদারদের উপরে প্রভাব ফেলবে না ইনশাআল্লাহ। কেননা একজনের দায়-দায়িত্ব অন্যজন বহন করবে না। প্রত্যেকেই আল্লাহর নিকট নিজ নিজ কর্মের হিসাব দেবে এবং প্রত্যেকেই তার নিয়ত অনুযায়ী আল্লাহর কাছে সওয়াব পাবে। আল্লাহু আলাম।
_*◍ কুরবানি করার কি কোন ফযিলত নেই?*_
_*১০) এক আলেমের মুখে শুনেছি যে, কুরবানির ফযিলত সংক্রান্ত হাদিসগুলো সহিহ নয়। তাহলে কি কুরবানি করার কোন ফযিলত নেই?*_
_*➧ উত্তর:*_
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, “কুরবানি করার ফযিলতে অনেকগুলো হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সেগুলোর একটিও বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত হয়নি বরং তার সবগুলোই জঈফ (দুর্বল) অথবা মউযূ (জাল)। (ফাতহুল বারী)
মালিকী মাজহাবের বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইমাম ইবনুল আরবি রহ. বলেন,
ليس في فضل الأضحية حديث صحيح وقد روى الناس فيها عجائب لم تصح منها :إنها مطاياكم إلى الجنة - (عارضة الأحوذي شرح جامع الترمذي 6/288)
“কুরবানির ফযিলতে একটিও সহিহ হাদিস নেই। তবে মানুষ এ সম্পর্কে অনেক আজগুবি হাদিস বর্ণনা করেছে যা মোটেও সহিহ নয়। সে সব আজগুবি হাদিসের মধ্যে অন্যতম হল এই কথাটি:
((إنها مطاياكم إلى الجنة))
“উহা তোমাদের জান্নাতে যাওয়ার বাহন স্বরূপ।”
(দ্রষ্টব্য: তিরমিযীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ আরেযাতুল আহওয়াযী ৬/২৮৮)
তবে কুরবানি করার বিষয়টি কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা সু প্রমাণিত। এটি নি:সন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সুতরাং কুরবানি করলে আল্লাহ খুশি হবেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি সুন্নাহ বাস্তবায়ন করা হবে, এতে নেকির পাল্লা ভারী হবে, আল্লার পথে খরচ ও দান-সদকার সাওয়াব হবে, কুরবানির গোস্ত দ্বারা যত মানুষ উপকৃত হবে তাদের কারণে নেকি পাওয়া যাবে ইত্যাদি ইনশাআল্লাহ।
তবে কুরবানির পশুর লোম সমপরিমাণ নেকি হবে, কুরবানির পীঠে চড়ে পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করা যাবে, কুরবানির রক্ত, মাংস, শিং, লোম ইত্যাদিকে নেকিতে পরিণত করে কিয়ামত দিবসে আমলের দাঁড়িপাল্লায় মাপা হবে, কুরবানির খুন মাটিতে পড়ার আগে কুরবানি দাতাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে....এসব কথা যে সব হাদিসে বলা হয়েছে মুহাদ্দিসদের দৃষ্টিতে সনদের বিচারে সেগুলো সহিহ নয়।
[বি:দ্র: ফেসবুকে প্রশ্নকারীদের পক্ষ থেকে কুরবানি সংক্রান্ত ছোট ছোট দশটি প্রশ্ন বাছায় করে এখানে অতি সংক্ষেপে সেগুলোর উত্তর দেয়া হয়েছে। ্এ ক্ষেত্রে দলিল-প্রমাণ পেশ করা হয় নি। সুতরাং উপরোক্ত বিষয়ে কারো সংশয় থাকলে দয়া করে উত্তর দাতার সাথে যোগাযোগ করুন। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান]
FB ID: AbdullaahilHadi
▬▬▬◆◯◆▬▬▬
*উত্তর প্রদানে:*
_*আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল*_
_*দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব*_
কপিকৃত।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
Hey there! Looks like you're enjoying the discussion, but you're not signed up for an account.
When you create an account, we remember exactly what you've read, so you always come right back where you left off. You also get notifications, here and via email, whenever new posts are made. And you can like posts and share your thoughts.
Sign Up
Bookmarks