মাঝে মধ্যেই ভূমিকম্পের ধাক্কায় পৃথিবী কেঁপে ওঠে। তছনছ হয়ে যায় শহর, নগর, বন্দর ও জনপদ। চোখের পলকে মাটির সঙ্গে মিশে যায় স্বপ্ন, সাধনা ও শ্রমে গড়ে তোলা ভুবন।
পবিত্র কোরআনে ভূমিকম্প বিষয়ে ‘যিলযাল’ এবং ‘দাক্কা’ শব্দ দুটি ব্যবহৃত হয়েছে। ‘যিলযাল’-এর অর্থ একটি বস্তুর নড়াচড়ায় আরেকটি বস্তু নড়ে ওঠা। ‘দাক্কা’ এর অর্থ প্রচণ্ড কোনো শব্দ বা আওয়াজের কারণে কোনো কিছু নড়ে ওঠা বা ঝাঁকুনি খাওয়া।
পৃথিবীতে বর্তমানে যেসব ভূমিকম্প ঘটছে, তা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে কঠিন শিলাত্বকে চ্যুতি বা স্থানান্তরের কারণে। কেয়ামতের দিন ফেরেশতা হজরত ইসরাফিল (আ.)-এর সিঙ্গায় ফুৎকারের কারণে চূড়ান্ত ভূমিকম্পে পৃথিবী টুকরো টুকরো হয়ে ধূলিকণায় পরিণত হবে এবং তা হবে ‘দাক্কা’।
যা হবে এক প্রচণ্ড আওয়াজ। পৃথিবীতে মাঝে মাঝে কঠিন শিলাত্বকের স্থানান্তরের কারণে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্প আমাদের এ কথা স্মরণ করে দেয় যে, একদিন ওই ‘দাক্কা’ সংঘটিত হবে, যার নাম কেয়ামত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে কিন্তু তার খেয়ানত করা হবে, জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে কিন্তু মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে, বন্ধুকে কাছে টেনে নিয়ে পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে, মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল হবে, জাতির সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসকরূপে আবির্ভূত হবে, সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হবে নেতা, একজন মানুষ যে খারাপ কাজ করে খ্যাতি অর্জন করবে, তাকে তার খারাপ কাজের ভয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হবে, বাদ্যযন্ত্র এবং নারী শিল্পীর ব্যাপক প্রচলন হবে, মদ পান করা হবে, লোকজন তাদের পূর্ববর্তী মানুষগুলোকে অভিশাপ দেবে, এমন সময় তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে এবং এমন একটি ভূমিকম্প হবে যা সেই ভূমিকে তলিয়ে দেবে [তিরমিজি, হাদিস নং-১৪৪৭]।
আমরা বর্তমান পৃথিবীর দিকে তাকালে এ হাদিসের বাস্তবতা খুঁজে পাই।
আল্লাহ অধিকাংশ জাতিকে ভূমিকম্পের গজব দিয়ে ধ্বংস করেছেন। ভূমিকম্প এমনই একটা দুর্যোগ, যা নিবারণ, প্রতিকার বা প্রতিরোধ করা বা পূর্বাভাষ পাওয়ার মতো কোনো প্রযুক্তি মানুষ অদ্যাবধি আবিষ্কার করতে পারেনি।
সুতরাং এর ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও আশ্রয় প্রার্থনা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
Rabeka Halim Jinia
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
ভূমিকম্প আমাদের নাড়া দিয়ে গেল। চাইলে অনেক ভাবেই বিশ্লেষণ করা যায়। আল্লাহ্- 'আযযা ওয়া জাল্লা যদি চাইতেন আজ আমরা সবাই ঘুমের মধ্যেই হারিয়ে যেতাম কংক্রিটের সমাধির নিচে। রং-গন্ধ-শব্দ- কাঠামোর এই বাস্তবতা মুছে যেত। মুছে যেত তুচ্ছাতিতুচ্ছের পেছনে ছুটে চলার এই জীবন। যেমন পম্পেই হারিয়ে গিয়েছিল, যেভাবে সামুদ ধ্বংস হয়েছিল।
.
আল্লাহ্- 'আযযা ওয়া জাল্লা চাইলেই পারতেন। তাঁর ইচ্ছাই চূড়ান্ত। কিন্তু তার বদলে তিনি সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের জাগিয়ে তুললেন প্রবল প্রকম্পনে, ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়।
.
"তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে নিদ্রাস্থল থেকে উত্থিত করল?"
.
লা হাওলা ওয়ালা কু'আতা ইল্লাহ বিল্লাহ
.
অনেক বিশ্লেষণে যাওয়া যায়। কিন্তু সব শেষে, সব আলোচনা, সব কথার পর থেকে যাওয়া কথা হল, এটা আমাদের জন্য একটা সতর্কতা। ওয়ার্নিং। ওয়ারনিং এবং রিমাইন্ডার আমাদের নিজেদের পরিবর্তন করার জন্য। আর আমরা যদি এ থেকে শিক্ষা না নেই, তাহলে নিঃসন্দেহে আমরা হতভাগ্য ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত। 'ইলম হল 'আমলের জন্য। আ'মল ছাড়া 'ইলমের মূল্য নেই। শত সৌন্দর্যময় কথার ফুলঝুরি, শত উপলব্ধি, শত কান্না, শত আলোচনা আমাদের কাজে আসবে না, যদি না আমরা আমদের 'আমলকে পরিবর্তন না করি।
.
এই প্রবল কম্পনে প্রকম্পিত করা ওয়ার্নিং ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য, ক্বওমের জন্যও । আয়নায় তাকানো উচিৎ, সমাজ ও রাষ্ট্রের দিকেও তাকানো উচিৎ। শিক্ষা ও সতর্কতা গ্রহণ করা উচিৎ দুই ক্ষেত্রেই।
.
আর কতোদিন আমরা আল্লাহ-র হুকুমের বিরোধিতা আমরা করতে থাকবো? আর ভাববো আমাদের জবাবদিহিতা করতে হবে না? আর কতো দিন আল্লাহ্- 'আযযা ওয়া জাল্লা-এর দ্বীনের সাথে যুদ্ধ করবো, তামাশা করবো, বনী ইস্রাইলের মতো ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করবো, আর নিশ্চিন্ত মনে ভাবো, আমার ব্যক্তিগত ইবাদাত, আমার সাদাকাহ, আমার সমাজসেবা আমাকে কিংবা এই ক্বওমকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে পারবে?
.
ধ্বংসপ্রাপ্ত নগরীর নেককার ব্যক্তিরা তাদের ক্বওমকে দূরে থাক নিজেদেরও ধ্বংস থেকে বাঁচাতে পারে নি। আমাদের পারবে এমন মনে করার কোন কারণ নেই।
.
সাহীহ আল-বুখারি, কিতাব ৮৮, হাদিস নং ১৮১
যায়নাব বিনতে জাহাশ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত (হাদীসের তরজমা)
.
রাসূলুল্লাহ ঘুম থেকে উঠলেন রক্তিম চেহারায় এবং বললেন-
.
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আরবদের জন্য ধ্বংস অনিবার্য। অকল্যাণ নিকটবর্তী হয়ে গেছে। ইয়াজুজ-মাজুজের প্রাচীর এই পরিমাণ খুলে দেয়া হয়েছে। এই বলে তিনি হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনি আঙ্গুলি দিয়ে গোলাকৃতি করে। রাসূলুল্লাহকে জিজ্ঞেস করা হলঃ
.
“নেককার ব্যক্তিগন আমাদের মধ্যে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো/আমাদের ধ্বংস হতে পারে?”
.
রাসূলুল্লাহ বললেন: হ্যা, যদি পাপাচার বৃদ্ধি পায়।”
লেখাঃ আসিফ আদনান
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
Hey there! Looks like you're enjoying the discussion, but you're not signed up for an account.
When you create an account, we remember exactly what you've read, so you always come right back where you left off. You also get notifications, here and via email, whenever new posts are made. And you can like posts and share your thoughts.
Sign Up
Bookmarks