-আন্টি আমার কাছে চাল কেনার টাকা আছে।অতিরিক্ত টাকা নেই।
-তোমাকে চাল আমি দিচ্ছি।তার বিনিময়ে তুমি চালের টাকাটা আমাকে দাও।
ভদ্রমহিলা উদ্বিগ্ন দৃষ্টি নিয়ে আমাকে কথাগুলো বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
মুন্নী, তমা,স্বর্ণা আমরা তিনজন এ-ই বাসাতে থেকেই পড়াশোনা করছি।তিনজনের বাসা ভার্সিটি থেকে অনেক দূর।তাই এখানে বাসা ভাড়া নিয়ে আমরা থাকছি।আমরা নিজেদের রান্না নিজেরাই করি।
এ-ই ভদ্রমহিলা আমাদের পাশের বাসাতেই থাকে।উনার ছয় মেয়ে।আমার জানামতে উনার বর খুব সামান্য বেতনের কাজ করে।
কিছুক্ষণপর ভদ্রমহিলা প্রায় তিন কেজি চাল এনে আমার হাতে দিয়ে বললেন,
-মাগো, টাকাটা তাড়াতাড়ি দাও।আমার মেয়ে খুব অসুস্থ, ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
জানিনা তিন কেজি চালের দাম দিয়ে উনি কিভাবে মেয়েকে ডাক্তার দেখাবেন কিংবা ঔষধ কিনবেন।আমার কাছেও অতিরিক্ত টাকা ছিলোনা।
পরেরদিন ভদ্রমহিলার মেয়ের খোঁজ নেওয়ার জন্য উনার বাসায় যাই।গিয়ে দেখি মেয়ে শুয়ে আছে আর ভদ্রমহিলা তার পাশে বসে আছেন।আমাকে দেখে খুব খুশি হয়ে বললেন,
-মাগো,তোমার উপকারের কথা কখনো ভুলবো না।ঐ টাকাটা না পেলে কি যে হতো!
আমি উনাকে বুঝালাম, টাকাটা আমি এমনি দেইনি।বিনিময়ে আপনি চাল দিয়েছেন, সুতরাং এতটা কৃতজ্ঞ হওয়ার কিচ্ছু নেই।
উনি আমাকে মেয়ের পাশে বসিয়ে হুট করে বেরিয়ে গেলেন।আমি বাচ্চাটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,
-কেমন আছো?
-ভালো আছি।
তারপর বাচ্চাটা শোয়া থেকে উঠে বসে বললো,
-জানেন আপু,গতকাল আপনাকে যে চাল দিয়ে মা টাকা এনেছে ওটা আমাদের ঘরের শেষ চাল ছিলো।মা রান্না করতে চাল পাতিলে নিয়েছিলেন।তারপর সেই চাল ই পলিথিনে ঢেলে আপনাকে দিয়ে আসে।
আমাদের ঘরে আজ নিয়ে দুইদিন ভাত রান্না হয়নি।আমি যে এ-ই কথা আপনাকে বলেছি,মাকে বলবেন না।কথাটা বলে বাচ্চাটা আবার শুয়ে পড়ে।
আমি আর ওর পাশে বসে থাকতে পারলাম না।খুব কষ্ট হচ্ছিলো।চোখ মুছতে মুছতে ঘর থেকে বের হয়ে আসলাম।
এ-ই ঘটনাটা প্রায় বিশ বছর আগের।বিশ বছর পর আজ কোনো একটা কাজে আমি সেই বাসার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম।বাসার গেটের সামনে সেই ভদ্রমহিলাকে দেখে থেমে যাই।উনি এখনো এ-ই বাসাতে থাকেন, এটা দেখে অবাক হয়েছি।
আমি রাস্তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে ভদ্রমহিলাকে দেখছি।কোনো পরিবর্তন নেই।সেই একইরকম মাথাভরতি কালো চুল,চেহারা।কাছে গিয়ে সালাম দিয়ে খোঁজখবর নিলাম।কথা বলার একপর্যায়ে উনি আমার মাথায় হাত রেখে বললো,
-সেই দিনের কথা আমার সারাজীবন মনে থাকবে, মা।তুমি হয়তো জানো না।
আমার বাচ্চারা জীবনে প্রথম ঐ সময়ে দুইদিন না খেয়ে ছিলো।আর সেটা আমাকে সহ্য করতে হয়েছে।
অথচ দেখো,আজ আমার কোনো কিছুর অভাব নেই।এ-ই যে বাসাটা, এটা এখন আমাদের নিজের।
আমার সেই মেয়েটা আজ একজন ডাক্তার।
জানো মা,
ধৈর্যশক্তি এমন এক জিনিস,যদি ধরতে পারা যায় তবে বেঁচে থাকতেই এ-র ফল দুনিয়াতে ভোগ করা যায়।
ভদ্রমহিলার হাসিখুশি জীবন দেখে ভীষণ আনন্দ নিয়ে বাসাটা অতিক্রম করি।
হাঁটতে হাঁটতে ভাবছি,জীবন বড় অদ্ভুত! কাকে,কখন, কোথায়, কিভাবে নিয়ে যায় তা কেউ বলতে পারে না।আর এর জন্য জীবনকে সুযোগ এবং সময় দুটোই দিতে হয়।সত্যি দিতে হয়।
Hey there! Looks like you're enjoying the discussion, but you're not signed up for an account.
When you create an account, we remember exactly what you've read, so you always come right back where you left off. You also get notifications, here and via email, whenever new posts are made. And you can like posts and share your thoughts.
Sign Up
Bookmarks