বিসমিল্লাহ

***কপি***

ইমাম আবু হানিফা (রহিমাহুল্লাহ) । আসল নাম নুমান ইবনু সাবিত । আবু হানিফা তাঁর উপাধি ।

আরবি হানিফ শব্দের অর্থ একনিষ্ঠ, খাঁটি । তাঁর পিতা ছিলেন সাবিত এবং দাদা ছিলেন ইব্রাহিম, তাঁর দাদার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল হযরত আলী (রা:) এর ।

ইব্রাহিম তার পুত্র সাবিতকে আলী (রা:) এর কাছে গিয়ে বলেছিলেন,

'আমার এবং আমার ছেলের জন্য দোয়া করে দিন ।'

একথা প্রসিদ্ধ যে ইব্রাহিমের বংশে ইমাম আবু হানিফার জন্ম আলী (রা:) এর দোয়ার ফল ।

ইমাম আবু হানিফার জন্ম ইরাকের কুফা নগরীতে । এবং তিনি একজন তাবিয়ি । তাবিয়ি বলা হয় তাদেরকে যারা অন্তত একজন সাহাবীর সরাসরি সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন । তার সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল সাহাবী আনাস ইবনে মালিক (রা:) এর । আর আনাস ইবনে মালিক (রা:) ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা:) এর খাদেম ।

.

আব্বাসী খলিফা আবু জাফর আল মনসুরের শাসন আমলের কথা । একবার ইমাম আবু হানিফা তার দরবারে যান । খলিফা ইমাম আবু হানিফাকে প্রশ্ন করেন,

আপনি কোথা থেকে ইলম শিক্ষা করেছেন ?

জবাবে ইমাম আবু হানিফা (রহিমাহুল্লাহ) বলেন,

আমি ইলম গ্রহণ করেছি হাম্মাদ ইবনু আবী সোলাইমান থেকে । তিনি গ্রহণ করেছেন ইবরাহীম নাখয়ী থেকে । তিনি গ্রহণ করেছেন ওমর ইবনুল খাত্তাব, আলী ইবনু আবী তালিব, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রহিমাহুল্লাহ) থেকে ।

তা শুনে খলিফা বললেন,

আপনি তো তাহলে ইলমের সবটুকু পেয়েছেন ।

.

এক মসজিদে ইমাম আবু হানিফা এক ইমামের পিছনে ইশার সালাত আদায় করেন -। ইমাম সাহেব তেলোয়াত করেছিলেন সূরা যিলযাল, যার শেষ আয়াত ছিল,

'অতঃপর অণু পরিমান নেক আমলকারী তা দেখতে পাবে ।
আর অণু পরিমাণ পাপ কাজ করলেও সে তা দেখতে পাবে ।'

নামাজ শেষ হয়ে গেল, মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেল সবাই । শুধু রয়ে গেলেন ইমাম আবু হানিফা আর ইশার সালাতের ইমাম ।

ইমাম সাহেব বললেন,

'আমি দেখলাম ইমাম আবু হানিফা গভীর চিন্তায় ডুবে আছেন । বড় বড় শ্বাস নিচ্ছেন এবং কাঁপছেন । এরপর তাকে মসজিদে একা রেখে আমি বের হয়ে গেলাম । ভিতরে একটা তেলের বাতি জ্বলছিল টিমটিম করে ।

এরপর আমি ফজরের সময় মসজিদে এসে দেখি উনি সেই জায়গায় বসে আছেন এবং বিড়বিড় করে একাকী বারবার বলছেন,

হে কণা পরিমাণ সৎ কাজের বিনিময় দাতা সত্তা ।
হে কণা পরিমাণ মন্দ কাজের বিনিময় দানকারী সত্তা । আপনার বান্দা নুমানকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন । আপনার রহমতের ছায়া তলে জায়গা দিন । '

আমি যখন বাতি নিতে গেলাম আমাকে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন,

বাতি কি নিয়ে যাবেন ?

তিনি ভাবছিলেন তখনও রাত বেশি হয়নি ।- আমি বললাম,

ফজর হয়ে গেছে ।

তিনি বললেন,

ও আচ্ছা, যা দেখেছেন তা গোপন রাখবেন ।

কথা রেখেছি, ইমামের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ ঘটনা কাউকে বলিনি ।'

.

ইমাম আবু হানিফার পাণ্ডিত্য এবং জনপ্রিয়তা দেখে তখনকার শাসক আল মনসুর তাকে হাত করার জন্য প্রধান বিচারপতি হওয়ার প্রস্তাব দিল । তিনি তা ফিরিয়ে দিলেন । এভাবে কয়েকবার প্রস্তাব করার পরও ফিরিয়ে দিলেন । অত্যাচারী মানসুর তাঁকে গ্রেপ্তার করে দৈনিক দশবার বেত্রাঘাত করতো ।

অত্যাচার থেকে বাঁচতে প্রায় দশ বছর পালিয়ে তিনি মক্কায় অবস্থান করেন।

খলিফা আবু জাফর আল মনসুর আবারও তাঁকে আবার প্রধান বিচারপতি হওয়ার প্রস্তাব দিল, তিনি বরাবরের মতই ফিরিয়ে দিলেন । আবুল মনসুর তাকে কারাগারে প্রেরণ করে । কারাগারে বিষ খাইয়ে হত্যা করে ।

.

তাদের সাধনা আর ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা গোছানো ইসলাম পেয়েছি । আফসোস মাযহাবের দ্বন্দ্বে আমরা মূর্খরা তাদের সমালোচনা করতে পিছপা হইনা ।

.

রহিমাহুল্লাহ রহমাতান ওয়াসিয়ান ।

/

Golam Rabbii