ভিডিও'টা কেউ একজন আমার কাছে পাঠিয়েছে এবং আমি সে ভিডিও'টি দেখছি।

আমি জানি আজ রাতে আমার ঘুম হবে না। এই ভিডিও দেখে কোন স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে স্থির থাকা সম্ভব নয়।

নোয়াখালী'র বেগমগঞ্জে এক নারী'র সঙ্গে মধ্যযুগীয় বর্বরতা করা হয়েছে। কি কায়দায় বর্বরতা করা হয়েছে; এর পুরো বর্ণনা আমি দেব। কেন দেব; এর ব্যাখ্যা এই লেখার শেষ অংশে করবো।

আমি জানি আমার লেখা বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অনেকে'ই পড়েন। বাবা-মা, সন্তান সহ পরিবারের অনেকেই এক সাথে পড়েন। এরপরও আমি এর বর্ণনা দেব।

ভিডিও'তে দেখা যাচ্ছে এক নারী সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় গোঙাচ্ছে, কাঁদছে; সেই সঙ্গে বলছে

-বাবা গো আমাকে ছেড়ে দে। "আব্বা গো তোর আল্লাহ'র দোহাই ছাড়ি দে!"

আশপাশের ২০-২৫ বছরের ছেলে গুলো হায়েনার মতো হাসছে আর বলছে

-উল্টা, উল্টা, উল্টা!

কারন বিবস্ত্র ওই নারী নিজেকে বাঁচানোর জন্য উপর হয়ে শুয়ে কাঁদছিল আর বলছিল

- এরে আব্বা গো, তোগো আল্লাহ'র দোহাইরে।

এরপর এই হায়েনা গুলো বলছে

- তোর স্বামী'র মায়েরে হোন্দাই (দুঃখিত, এই ভাষা ব্যাবহার করার জন্য, কিন্তু আমাকে পুরোটা লিখতেই হবে)

এরপর আরেকজন বলছে

-হোতা এরে (অর্থাৎ ঠিক মতো শোয়া একে)!

এরপর তিনজন মিলে ধরে মহিলাকে ধরে সোজা করেছে। এর মাঝে একজন বলছে

- এ সা (মানে এই দেখ) মাল সব আটকি রইসে (মাল আঁটকে আছে)।

এই সব কিছু'ই এরা ঠাণ্ডা মাথায় হাসতে হাসতে করছে।

এরপর সম্পূর্ণ উলঙ্গ এই নারী'র পা দুটো উঁচু করে একজন তার যৌনাঙ্গে হাত ঢুকিয়েছে। এরপর লাঠি ঢুকিয়েছে।

আরেকজন পাশ থেকে বলছে - ফেসবুক হবে ফেসবুক। আরেকজন বলছে- লাইভ হবে।

অন্য একজন বলছে

-দুধে হিদ (দুধে মার)।

সব গুলো মিলে এরপর বলছে

- অনো বিষ কমেনো, ক্যা?

মানে হচ্ছে

-এখনো বিষ কমেনি, না?

ভিডিওটা এখানে'ই শেষ হয়েছে।

এই পুরো সময়টায় মহিলা'টা গোঙাচ্ছিল, কাঁদছিল আর বলছিল

- বাবা গো, ছাড়ি দে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার মাধ্যমে ঘটনা'র সত্য'টা নিশ্চিত হতে পেরেছি।

যে লোক এই ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করেছে, তার টাইমলাইনে গিয়ে আমি পুরো ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করেছি। সেখানে অনেকে মন্তব্য করেছে

-এটা বাংলাদেশের ঘটনা না নিশ্চয়।

অর্থাৎ ঘটনার হিংস্রতা দেখে অনেকে হয়ত বিশ্বাস'ই করতে পারছে না, এমন ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে।

অনেকে আবার সেখানে লিখেছে

-এই ভিডিও কেন আপলোড করেছেন। এটা ঠিক হয়নি।

আমিও ভাবছিলাম - এই ভিডিও আপলোড করা ঠিক হয়নি। এরপর আমি আমার মত পাল্টে এই লেখা লিখতে বসেছি।

কী, আমার লেখা উপরের বিবরণ শুন চটি চটি মনে হচ্ছে?

ভাবছেন- ছিঃ, এইসব এভাবে লেখার কি দরকার ছিল?

আমার অনেক লেখা বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশ হয়। বাংলাদেশ প্রতিদিনের মাধ্যমেই আমি নিশ্চিত হয়েছি ঘটনা'টি ২০ থেকে ২৫ দিন আগের।

এই ২০-২৫ দিনে কী কোন আসামী গ্রেফতার হয়েছে? এই ঘটনা নিয়ে কোন মাতামাতি হয়েছে?

না, এর কিছু'ই হয়নি।

আজ যখন ফেসবুকে ওই ভিডিও'টি ভাইরাল হয়েছে; তখন পুলিশ আর প্রশাসনের টনক নড়েছে! তারা নাকি "এক" জনকে গ্রেফতার করেছে।

ভিডিও'টা সেয়ার করা তো আর আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই ঘটনার বিবরণ বরং লিখে প্রকাশ করলাম।

এই ছেলে গুলো এতো সাহস কই থেকে পেয়েছে?

২০-২৫ দিনে কেউ কেন গ্রেফতার হয়নি?

কেন, এতো দিনেও আমরা এই ঘটনার কিছু জানতে পারিনি?

যেই দেশে একজন মন্ত্রী'র নামে সামান্য কিছু লিখলে পুলিশ এসে সুন্দরবনে থাকলেও ধরে নিয়ে যায়; সেই দেশে এমন ঘটনার পরও কারো কোন টনক নড়েনি।

আজ যখন ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। আমার মতো মানুষরা যখন লিখছে, তখন হয়ত দুই-একজন গ্রেফতার হবে। এর বেশি কিছু না।

রাষ্ট্র এদের পালে। পেলে পুষে বড় করে। আর এভাবে ওদের খাবারের ব্যবস্থা করে।

এরপর প্রয়োজন মতো কাজে লাগায়। এটা'ই বাস্তবতা।


©Aminul Islam