মুসলমান ও ইয়াহুদীদের ধর্মগ্রন্থের মধ্যে মিল

কল্পনা করুন , কুরআন বলা হয়েছে ইয়াহুদীরা বিষধর সাপের বংশধর বা বিশ্বাসঘাতক ও বিদ্বেষপরায়ন । পশ্চিমা গণমাধ্যম এক মূহুর্তের জন্যও তাহলে কাউকে এসব ভুলতে দিত না যে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থে স্রষ্টার পবিত্র ভূমির নির্বাচিত মানুষদের সম্পর্কে কী বলা হয়েছে । অথচ এখন কোন গণমাধ্যমেই তাওরাত বা বাইবেলে ইয়াহুদীদের সম্পর্কে যীশু কী বলেছেন , তার কোন সমালোচনা দেখবেন না । কুরআনে ইয়াহুদীদের সম্পর্কে আল্লাহ কত চমৎকার কথা বলেছেন , সেসবের উল্লেখও কোথাও পাবেন না ।


দুই ধর্মের বিশ্বাসীদের ধর্মগ্রন্থই বর্ণনা করে কিভাবে ইয়াহুদীরা আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত হয়েছিল , একইসাথে কিভাবে তারা আল্লাহ কাছ থেকে অভিশাপ ও শাস্তি পেয়েছিল , সেটাও বলা হয়েছে । এরপরেও গণমাধ্যমে অপপ্রচার চলে ও অমুসলিমরা অভিযোগ করে যে কুরআন ইয়াহুদী বিদ্বেষী ও তাদের বিরুদ্ধে অযথাই অত্যন্ত কঠোর ভাষায় নিন্দা করে । এই অভিযোগ ও অপপ্রচার কেন ? কাদের স্বার্থে ?




জানা না থাকলে আন্দাজ করে বলা কঠিন কোন আয়াত কোন ধর্মগ্রন্থ থেকে নেয়া । পাঠক , চেষ্টা করে দেখুন তো বলতে পারেন কি না ।

নবীদের যারা খুন করেছে আপনারা তাদেরই বংশধর
সাপের দল আর সাপের বংশধরেরা! কেমন করে আপনারা নরকের শাস্তি থেকে রক্ষা পাবেন?


ইস্রায়েল জাতির লোকেরা অন্যান্য জাতির সমস্ত লোকদের কাছ থেকে নিজেদের আলাদা করে নিলতারা দাঁড়িয়ে নিজেদের পাপ ও তাদের পূর্বপুরুষদের অন্যায় স্বীকার করল
“…. আমাদের পূর্বপুরুষদের ব্যবহার ছিল অহংকারে পূর্ণ; তারা একগুঁয়ে হয়েছিল আর তোমার আদেশ পালন করে নি
এমন কি, তারা নিজেদের জন্য ছাঁচে ফেলে একটা বাছুরের মূর্তি তৈরী করে বলেছিল, ‘ইনিই তোমাদের ঈশ্বর; মিসর দেশ থেকে ইনিই তোমাদের বের করে এনেছেন।’ এইভাবে যখন তারা তোমাকে ভীষণ অপমান করেছিল
কিন্তু তবুও তারা অবাধ্য হয়ে তোমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল; তোমার আইন-কানুন তারা ত্যাগ করেছিলতোমার যে নবীরা তাদের সতর্ক করতেন যাতে তারা তোমার দিকে ফিরে আসে সেই নবীদের তারা মেরে ফেলেছিল; তারা তোমাকে ভীষণ অপমান করেছিল

তোমার আইন-কানুনের দিকে ফিরে আসবার জন্য তুমি তাদের সতর্ক করেছিলে কিন্তু তাদের ব্যবহার ছিল অহংকারে পূর্ণ; তারা তোমার সব আদেশ অমান্য করেছিলতোমার যে সব নির্দেশ পালন করলে মানুষ বাঁচে তার বিরুদ্ধে তারা পাপ করেছিলতারা একগুঁয়েমি করে এবং ঘাড় শক্ত করে তোমার কথা শুনতে চায় নি

....আমাদের পূর্বপুরুষেরা তোমার আইন-কানুন মেনে চলেন নি; তোমার আদেশ কিম্বা সতর্কবাণী তাঁরা শোনেন নি

আমি নিশ্চিত , অনেক মুসলমান পাঠক ও অমুসলিমদের প্রায় সবাই ভাবছেন এসব আয়াত পবিত্র কুরআন থেকে নেয়া হয়েছে । কিন্ত্ত না ; এসব ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানদের পবিত্র গ্রন্থ থেকে নেয়া ( তৌরাত , নহিমিয়া ৯:১-২৬ ) ( ১ম সিপারা : মথি ২৩: ২৫-৩৩ ) । এরকম আরো অনেক উদাহরণ দেয়া যায় তবে লেখা বড় যাবে বলে দিচ্ছি না । পাঠক ইচ্ছা করলে অনলাইনে বা কিনে তৌরাত , বাইবেল পড়ে দেখে নিতে পারেন : হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ইয়াহুদীদের সতর্ক করে বলেছিলেন ...তিনি তোমাদের বদদোয়া দেবেন ) দ্বিতীয় বিবরণ ; ২৮ :২০ । এছাড়াও পড়ুন ( নবীদের কিতাব ; মিকাহ ৩:১-১২ ) , হোসিয়া ; ৮:১৪ ; হেজকিল ২:৩ ।



নীচে কুরআনের আয়াতগুলি পড়ে দেখুন :


40
হে বনী-ইসরাঈলগণ, তোমরা স্মরণ কর আমার সে অনুগ্রহ যা আমি তোমাদের প্রতি করেছি এবং তোমরা পূরণ কর আমার সাথে কৃত প্রতিজ্ঞা, তাহলে আমি তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ করব। ( সুরা বাকারা ; ২:৪০।

হে বনী-ইসরাঈলগণ! তোমরা স্মরণ কর আমার অনুগ্রহের কথা, যা আমি তোমাদের উপর করেছি এবং (স্মরণ কর) সে বিষয়টি যে, আমি তোমাদেরকে উচ্চমর্যাদা দান করেছি সমগ্র বিশ্বের উপর ( সুরা বাকারা ; ২:৪৭)


কুরআনে ইয়াহুদীদের ভুলের কথা , তাদের অপরাধের কথা মনে করিয়ে তা থেকে তাদের বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে কিন্ত্ত সেটাকে বলা হয় জাতিগত বিদ্বেষ বা ইয়াহুদী বিরোধীতা , এটা দু:খজনক ।



কুরআন বর্ণনা করে কী ঘটেছে অতীতে – যদি এটি ইয়াহূদীদের বিরুদ্ধে কঠোরতা প্রদর্শন হয় , তবে কেন কেউ বলে না ইয়াহুদীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থেই তাদের বিরুদ্ধে অনেক কঠোর কথা আছে ? তাই কুরআন ইয়াহুদী বিদ্বেষী , এমন অমূলক অভিযোগ দয়া করে আর করবেন না । ইয়াহুদীদের বিরুদ্ধে কঠোর কথা থাকার পরেও যদি তাওরাত ( বাইবেলের পুরাতন নিয়ম ) ও বাইবেলের নতুন নিয়মের বিরুদ্ধে কেউ কিছু না বলে , তবে কুরআনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধ করুন ।আশা করি , ভবিষ্যতে কেউ যদি এই অভিযোগ করে যে কুরআন ইয়াহুদী বিদ্বেষী এক ধর্মগ্রন্থ , তাহলে মুসলমানরা তো বটেই , অমুসলিমরাও এই অভিযোগ খন্ডন করবেন । কুরআন সেটাই বলে যা অতীতে ইয়াহুদীরা করেছে ও যা তাদের নিজের পবিত্র গ্রন্থই সাক্ষ্য দেয়।

সহায়ক সূত্র : http://www.convertstoislam.org

http://www.mechon-mamre.org/p/pt/pt35b09.htm


http://www.christbd.org/component/op...a/view,biblia/