/* */

PDA

View Full Version : আধুনিক জীবনধারায় জাকাতের ব্যবহার মাওলানা আরিফুর রহমান



Muslim Woman
06-16-2017, 03:30 AM
:sl:




জাকাত ইসলামী সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অনন্য প্রতিষ্ঠান। জাকাত একদিকে দরিদ্র, অভাবী ও অক্ষম জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি, অন্যদিকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার।
জাকাত শব্দটি আরবি। এর অর্থ পবিত্রতা, ক্রমবৃদ্ধি, আধিক্য ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থে জাকাত বলতে ধনীদের ধন-মালে আল্লাহর নির্ধারিত অংশকে বোঝায়। জাকাত সম্পদকে পবিত্র করে, বিত্তশালীদের পরিশুদ্ধ করে, দারিদ্র্য মোচন করে, উৎপাদন বৃদ্ধি করে, অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করে ও সমাজে শান্তি আনে। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়টি হচ্ছে জাকাত। ঈমানের পর নামাজ ও তার পরই জাকাতের স্থান। কোরআন মজিদের ৩২ জায়গায় জাকাতের কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে ২৮ জায়গায় নামাজ ও জাকাতের কথা একত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।



জাকাত কার ওপর ফরজ?
জাকাত স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক এমন মুসলিম নর-নারী আদায় করবে, যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে। তবে এর জন্য শর্ত হলো—এক. সম্পদের ওপর পূর্ণাঙ্গ মালিকানা থাকতে হবে। দুই. সম্পদ উৎপাদনক্ষম ও বর্ধনশীল হতে হবে। তিন. নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে। চার. সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পর অতিরিক্ত সম্পদ থাকলেই শুধু জাকাত ফরজ হবে। পাঁচ. জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য ঋণমুক্ত হওয়ার পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা শর্ত। ছয়. কারো কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলেই শুধু ওই সম্পদের ওপর জাকাত দিতে হবে।
জাকাতের নিসাব
ক. সোনা ৭.৫ তোলা=৯৫.৭৪৮ গ্রাম প্রায়। খ. রুপা ৫২.৫ তোলা=৬৭০.২৪ গ্রাম প্রায়। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৩৯৪, আল ফিকহুল ইসলামী : ২/৬৬৯)
দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও ব্যবসায়িক পণ্যের নিসাব নির্ধারণে সোনা-রুপা হলো পরিমাপক। এ ক্ষেত্রে ফকির-মিসকিনদের জন্য যেটি বেশি লাভজনক হবে, সেটিকে পরিমাপক হিসেবে গ্রহণ করাই শরিয়তের নির্দেশ। তাই মুদ্রা ও পণ্যের বেলায় বর্তমানে রুপার নিসাবই পরিমাপক হিসেবে গণ্য হবে। তাই যার কাছে ৫২.৫ তোলা সমমূল্যের দেশি-বিদেশি মুদ্রা বা ব্যবসায়িক পণ্য মজুদ থাকবে, তার ওপর জাকাত ওয়াজিব হবে। যে সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ, তার ৪০ ভাগের এক ভাগ (২.৫০ শতাংশ) জাকাত দেওয়া ফরজ। সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করে শতকরা আড়াই টাকা বা হাজারে ২৫ টাকা হারে নগদ অর্থ কিংবা ওই পরিমাণ টাকার কাপড়চোপড় বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে দিলেও জাকাত আদায় হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৭২; সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬২৩)
যেসব সম্পদে জাকাত ফরজ
সব ধরনের সম্পদে জাকাত ফরজ হয় না। শুধু সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, পালিত পশু (নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী) এবং ব্যবসার পণ্যে জাকাত ফরজ হয়।
সোনা-রুপার অলংকার সব সময় বা কালেভদ্রে ব্যবহৃত হোক কিংবা একেবারেই ব্যবহার না করা হোক, সর্বাবস্থায় তার জাকাত দিতে হবে। (আবু দাউদ শরিফ : ১/২৫৫; নাসায়ি, হাদিস : ২২৫৮)


অলংকার ছাড়া সোনা-রুপার অন্যান্য সামগ্রীর ওপরও জাকাত ফরজ। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭০৬১)
মৌলিক প্রয়োজন থেকে উদ্বৃত্ত টাকা-পয়সা নিসাব পরিমাণ হলে এবং এক বছর স্থায়ী হলে বছর শেষে তার জাকাত আদায় করা ফরজ। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭০৯১)
ব্যাংক ব্যালান্স, ফিক্সড ডিপোজিট, বন্ড, শেয়ার সার্টিফিকেট ইত্যাদিও নগদ টাকা-পয়সার মতোই। এসবের ওপরও জাকাত ফরজ।
টাকা-পয়সা ব্যবসায় না খাটিয়ে এমনি রেখে দিলেও তাতে জাকাত ফরজ। (আদ্দুররুল মুখতার : ২/২৬৭)
হজের উদ্দেশ্যে কিংবা ঘরবাড়ি নির্মাণ, ছেলে-মেয়ের বিয়েশাদি ইত্যাদি প্রয়োজনের জন্য যে অর্থ সঞ্চয় করা হয়, তাতেও জাকাত দিতে হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ১০৩২৫)
দোকানপাটে যা কিছু বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে রাখা থাকে, তা বাণিজ্যিক পণ্য। এর মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে জাকাত আদায় করা ফরজ। (সুনানে আবু দাউদ : ১/২১৮)
ব্যবসার নিয়তে কোনো কিছু ক্রয় করলে তা স্থাবর সম্পত্তি হোক যেমন—জমিজমা, ফ্ল্যাট কিংবা অস্থাবর সম্পত্তি যেমন—মুদিসামগ্রী, কাপড়চোপড়, অলংকার, নির্মাণসামগ্রী, গাড়ি, ফার্নিচার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, হার্ডওয়্যার সামগ্রী, বই-পুস্তক ইত্যাদি, তা বাণিজ্যিক পণ্য বলে গণ্য হবে এবং মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে জাকাত দিতে হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭১০৩)
যদি সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্যিক পণ্যের মধ্যে কোনোটি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু এসবের একাধিক সামগ্রী এ পরিমাণ রয়েছে, যা একত্র করলে সাড়ে ৫২ তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে এ ক্ষেত্রে সব সম্পদ হিসাব করে জাকাত দিতে হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭০৮১)



ভূমি বা প্লটের জাকাত
ভূমি বা প্লটের জাকাতের বিধান নিম্নরূপ :
এক. যদি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ভূমি বা প্লট ক্রয় করা হয়, তাহলে প্রতিবছর ভূমি বা প্লটের বাজারমূল্য বিবেচনা করে জাকাত দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ—কেউ যদি পাঁচ লাখ টাকায় পাঁচটি প্লট ক্রয় করে। তারপর এক বছরের মাথায় ওই প্লটের বাজারমূল্য সাত লাখ হয়ে যায়, তাহলে তাকে সাত লাখ টাকার জাকাত দিতে হবে।
দুই. যদি নিজের বসবাসের জন্য ক্রয় করা হয়। তাহলে ওই প্লটের জাকাত দিতে হবে না। তা ছাড়া ব্যবসা বা বসবাসের উদ্দেশ্য ছাড়া এমনিতে ক্রয় করলেও ওই জমি বা প্লটের জাকাত দিতে হবে না।
(আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৮৪)



দোকানের পণ্যের জাকাত
দোকানের ডেকোরেশন, আলমারি, তাক ইত্যাদি মূল্যের ওপর জাকাত ফরজ নয়, বরং সেল বা বিক্রি করার জন্য যেসব পণ্য বিদ্যমান, তার মূল্য যদি নিসাব পরিমাণ হয়, তাহলে তাতে জাকাত ফরজ হবে। জাকাত হিসাব করার পদ্ধতি হলো—বছরের একটা সময় দিন-তারিখ নির্ধারণ করে দোকানে বিদ্যমান পণ্যের মূল্যের হিসাব করে দেখা গেল, পাঁচ লাখ টাকার পণ্য আছে। অতঃপর ওই বছর অতিবাহিত হওয়ার পর আবার আনুমানিক পণ্যের মূল্য ধরে দেখা গেল, শুরুতে যেই পরিমাণ সম্পদ ছিল, তা নিসাব পরিমাণ। আবার এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর যে পণ্য আছে, তা-ও নিসাব পরিমাণ, তাহলে সমুদয় সম্পদের আড়াই শতাংশ জাকাত দিতে হবে। (তাতারখানিয়া : ৩/১৬৯, হিন্দিয়া : ১/১৮০, দুররুল মুখতার : ৩/১৮২)






ব্যাংকে সঞ্চয়কৃত টাকার জাকাত
কোনো ব্যক্তি সঞ্চয়ের জন্য যদি ব্যাংকে টাকা জমা রাখে, তাহলে ঋণমুক্ত অবস্থায় যেদিন তার জমাকৃত টাকা নিসাব পরিমাণ হবে, সেদিন থেকে এক বছর পূর্ণ হলে ওই টাকার ওপর জাকাত দিতে হবে। (ফাতাওয়া আলমগিরী : ১/২৭০; মাহমুদিয়া : ৩/৫৭)


দোকান বা গাড়ি ভাড়ার অ্যাডভান্স টাকায় জাকাত
বর্তমানে গাড়ি বা দোকান ভাড়া নেওয়ার সময় মোটা অঙ্কের টাকা অ্যাডভান্স রাখতে হয়, অ্যাডভান্সের এই টাকা গাড়ি বা দোকানের মালিকের হয়ে যায় না। বরং যিনি ভাড়া নিচ্ছেন, তার মালিকানায় এ টাকা রয়ে যায়। তাই নিসাবের পরিমাণ হলে ওই টাকাসহ জাকাত দিতে হবে। দোকান বা বাড়ি ভাড়া গ্রহণকারী ব্যক্তির জন্য ওই টাকার জাকাত আদায় করা জরুরি। (আদদুররুল মুখতার : ৩/১৮৪; ফাতাওয়া দারুল উলুম : ৬/৭৭, আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/২৬১)
প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর জাকাতের বিধান
সরকারি কর্মচারীদের বেতন থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য বাধ্যতামূলক যে পরিমাণ টাকা কর্তন করে রাখা হয়, সে পরিমাণ অর্থ উত্তোলনের আগে কর্মচারীর মালিকানায় আসে না। তাই সরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডে অর্থ থাকাকালীন তার ওপর জাকাত দিতে হবে না। এ কারণে ওই ফান্ডের টাকা পাওয়ার পর বিগত বছরের জাকাতও দিতে হবে না। তবে যদি কর্মচারী ওই প্রভিডেন্ট ফান্ডের সঞ্চিত অর্থ অন্য কোনো ইনস্যুরেন্স কম্পানিতে স্থানান্তর করিয়ে নেয়, সে ক্ষেত্রে ওই অর্থ স্বতন্ত্রভাবে বা অন্য জাকাতযোগ্য মালের সঙ্গে যোগ হয়ে নিসাব পরিমাণ হলে যথানিয়মে তার ওপর জাকাত ওয়াজিব হবে। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/২৬০ পৃষ্ঠা, ফাতাওয়া শামি : ২/৩০৬)


গরু, বকরি ও মুরগির ফার্মের ওপর জাকাত



ব্যবসার জন্য গরু, বকরি বা মুরগির ফার্ম করা হয়। ওই ফার্মের লালিত প্রাণী একপর্যায়ে প্রাণী বিক্রি করা হয়। এসব প্রাণীর বিক্রিমূল্য যদি নিসাব পরিমাণ হয়, তাহলে তার জাকাত দেওয়া আবশ্যক। (ফাতাওয়া উসমানি : ২/৩৯)


বীমা কম্পানিতে জমাকৃত টাকার জাকাত



বীমায় যে পরিমাণের টাকা কাজে লাগানো হয়েছে, তার ওপর জাকাত ওয়াজিব। প্রতিবছর জাকাত আদায় করার সময় নিজ সম্পদের হিসাব করতে হবে। (ফাতাওয়া উসমানি : ২/৩৯)


কম্পানির শেয়ারের ওপর জাকাত ওয়াজিব
কম্পানির অংশ ক্রয় করা এই শর্তে জায়েজ আছে যে তার লেনদেন যদি বৈধ হয়। এ ক্ষেত্রে তার অংশের মূল্যের ওপর জাকাত ওয়াজিব হবে। (ফাতাওয়া উসমানি : ২/৩৯)


যাদের জাকাত দেওয়া যাবে না

এক. কাফির। দুই. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক। তিন. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের নাবালক সন্তান। চার. বনু হাশেমের লোক। পাঁচ. মা, বাবা, দাদা, দাদি, নানা, নানি—একইভাবে যত ওপরের স্তরের দিকের কাউকে জাকাত দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ যাদের মাধ্যমে দুনিয়ায় এসেছ, তাদেরসহ ওপরের স্তরের কাউকে জাকাত দেওয়া যাবে না। ছয়. নিজের মাধ্যমে যারা দুনিয়ায় এসেছে, অর্থাৎ ছেলে-মেয়ে ও তাদের সন্তানাদি একইভাবে তাদের সন্তানদের জাকাত দেওয়া যাবে না। সাত. স্ত্রী ও স্বামী একে অন্যকে জাকাত দিতে পারবে না। আট. মসজিদ-মাদরাসা, পুল, রাস্তা, হাসপাতাল বানানোর কাজে ও মৃতের দাফনের কাজে জাকাতের টাকা দেওয়া যাবে না। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৮৮, ১৮৯; তাতারখানিয়া : ৩/২০৬; আদদুররুল মুখতার :৩/২৯৪, ২৯৫)


ভাই-বোন, ফুফু-ফুফা, খালা-খালু, মামা-মামিকে জাকাত দেওয়ার বিধান



সহোদর ভাই-বোন, ফুফু-ফুফা, খালা-খালু, মামা-মামি যেহেতু উসুল বা ফুরু—অর্থাৎ জাকাতদাতার মূল বা শাখা নয়। তাই তাদের জাকাত দেওয়া যাবে, যদি তারা জাকাত গ্রহণের উপযোগী হয়। এমনিভাবে জাকাতের টাকা দিয়ে কাপড় কিনে দিলেও জাকাত আদায় হয়ে যাবে। অন্তরে জাকাতের নিয়ত রেখে মুখে তা উল্লেখ না করে দিয়ে দিলেও জাকাত আদায় হয়ে যাবে। (হিদায়া : ১/২০৬, বাদায়ে : ২/৪৯)


জাকাতের অর্থ জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করার বিধান



জাকাতের অর্থ শুধু গরিবদের ব্যক্তিমালিকানায় দিয়ে দিলেই জাকাত আদায় হয়। সুতরাং মসজিদ, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, কালভার্ট ও হাসপতাল নির্মাণের ক্ষেত্রে জাকাতের অর্থ খরচ করা যাবে না। কারণ এসব ক্ষেত্রে জাকাতের অর্থ ব্যয় ব্যক্তিবিশেষকে মালিক বানিয়ে দেওয়া হয় না। (তাতারখানিয়া : ৩/১৯৮, ২০৮; দুররুল মুখতার : ৩/১৭১-১৭৩)


লেখক : শিক্ষক, দারুল আরকাম
টঙ্গী, গাজীপুর
Reply

Hey there! Looks like you're enjoying the discussion, but you're not signed up for an account.

When you create an account, you can participate in the discussions and share your thoughts. You also get notifications, here and via email, whenever new posts are made. And you can like posts and make new friends.
Sign Up

Similar Threads

British Wholesales - Certified Wholesale Linen & Towels | Holiday in the Maldives

IslamicBoard

Experience a richer experience on our mobile app!