/* */

PDA

View Full Version : চরণ সমাচার: .



Muslim Woman
02-12-2018, 07:07 AM
:sl:


চরণ সমাচার:
.
৪৮বছর বয়সী রোগী নাজমা ইসলাম।পেশায় গৃহিনী,ছোট্ট একটা সুন্দর বিভাগীয় শহরে যার বাস।গত ১২-১৪বছর থেকে ডায়াবেটিসে ভোগছেন।কিন্তু সংসারের রোগ শোক জড়া উনাকে বেশী প্রভাবিত করতে পারে না,কারণ উনি এসবে মন দিলে যে পরিবারের সার্ভিসটা ব্যাহত হবে।

এক সন্ধ্যায় রোগীর বড় সন্তানের কাছে বাসা থেকে ফোন আসে রোগিনীর খুব জ্বর।বড় সন্তান ডিউটিতে ছিল।রাতে বাসায় ফিরে জ্বর আসার কারণ অনুসন্ধান করে জানা যায় জ্বরের সাথে ডান পায়ের পাতায় প্রচন্ড ব্যাথা আর বৃদ্ধাঙ্গুলির নীচে ছোট্ট একটি ছিদ্র যা থেকে অল্প অল্প কষ পড়ছে।কি করে এটা হল জানতে চাইলে জানালেন পাঁচ ছয়দিন আগে প্রতিদিনের তুলনায় বেশী হাঁটার কারণে পায়ের নীচে ফোস্কা পড়ে।সন্তান জিগ্যেস করে- এতদিন বলেন নাই কেন?

রোগীর সোজাসাপটা নির্বিকার উত্তর-"এতদিন তো কোন সমস্যা করে নাই।"রাতে জ্বর আরো বাড়তে থাকে।পরদিন সকালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রোগীকে।ডায়াবেটিস� � আনকন্ট্রোল।একদিক� � ইনফেকশনের কারণে জ্বর আর ডায়বেটিস কমছে না,অন্যদিকে ডায়বেটিসের কারণে ইনফেকশন কন্ট্রোল হচ্ছে না।সবচেয়ে দামী আর পাওয়ারফুল অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়ার পরেরদিন ডান পায়ে Cellulitis (ইনফেকশনের সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্হা,ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়া) ডেভোলাপ করে।রোগীর অবস্হা খারাপ দেখে রেফার করা হয় বিশেষায়িত হাসপাতাল বারডেম এ।বারডেমে Excision Debridement (পায়ের তলার অনেকখানি জায়গা কেটে ভেতরের ময়লা ও পোঁজ পরিষ্কার করা হয়)ও ড্রেসিং করা হয়। সে কি অমানুষিক কষ্ট!রোগীর জ্বর কমে ৮-১০দিন পর।১৫ দিন পর বারডেম থেকে নিয়মিত দুইবেলা ড্রেসিং এর পরামর্শ দিয়ে রিলিজ দেয়া হয়।এক একটা ড্রেসিং, এক একটা কষ্টের উপাখ্যান।ছয় সাত মাসের মাথায় সমস্ত পায়ের পাতার নীচই ভরাট হয়ে শুকিয়ে আসে শুধু বুড়ো আঙ্গুলের কাছে একটা ছোট্ট জায়গা ছাড়া।পরে ডাক্তারের পরামর্শে এ জায়গায় তিনবার Skin graft (অন্য জায়গা থেকে চামড়া এনে লাগানো) করা হয় কিন্তু খুব একটা লাভ হয় নি।তারপর বিশেষজ্ঞ ডাক্তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুল কেটে ঐখানের চামড়া দিয়ে graft করার কিন্তু পরামর্শ দেন এর আগে উনাদের চেয়ে সিনিয়র একজন প্রফেসরের অভিমত নেয়ার জন্য।আরো বড় ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার জন্য বড় সন্তান মাকে নিয়ে আবারও ছোটে ঢাকার উদ্দেশ্যে।বিধি বাম থেকে আরো বাম।সব কাগজপত্র দেখে আরো বড় ডাক্তার অভিমত দেন অনেকদিন ডায়াবেটিস আনকন্ট্রোল থাকার কারণে পায়ের পাতায় রক্ত সন্ঞ্চালন প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে,খালি বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে খুব একটা লাভ হবে না, below knee amputation (হাঁটুর নীচ থেকে কেটে ফেলা) লাগবে।এক সমুদ্র বিভীষিকাময় দুঃস্বপ্ন নিয়ে মা আর সন্তান ফিরল বাসায়।
এই গল্প একটু পরে শেষ করব।তার আগে যে বিষয় নিয়ে এত গৌরচন্দ্রিকা তা আগে বলি।

ডায়াবেটিস এখন পৃথিবী জুড়ে মহামারী। এক পোষ্টে ডায়াবেটিসের বিষদগার করা সম্ভব না।খালি উপরে যে বিভীষিকাময় দুঃস্বপ্নের বর্ণনা দিলাম তা এড়িয়ে চলতে আপনার করণীয় মানে ডায়বেটিস রোগীর পায়ের যত্নে করণীয় সম্পর্কে একটু জানানোর চেষ্টা করছি-

১.ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে আছে কিনা নিয়মিত চেক করুন।কারণ ডায়াবেটিসের ঘুণপোকা শরীরের প্রতি অঙ্গ কুটকুট করে কাটতে থাকে।পায়ের মতো সবচেয়ে বেশী যে দুটি অঙ্গ ডায়াবেটিস ভালবাসে তা হল আপনার চোখ ও কিডনি।তাই নিয়মমত ঔষধ সেবন করুন,লাইফ স্টাইল চেঞ্জ করুন,খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে সর্তক হোন।বাসায় একটা ভাল খাবার আনলে কাউকে রেখে খেলে আসলে কতটা খারাপ লাগে তা আমি জানি । ডায়াবেটিস কিন্তু এই ইমোশনের মূল্য চরমভাবেই নিবে।


২.দৈনিক একটা নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নিন নিজের পা দুটো দেখে নেয়ার জন্য।কোন কাটা,ফোস্কা,লাল দাগ,ফোলা,নখে কোন সমস্যা কিংবা অন্য অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পাচ্ছেন কি না।মানুষ তো কত পয়সা আর সময় খরচ করে রূপচর্চা করে।নিজেকে সুস্হ রাখার জন্য একটু সময় খরচ করলেনই বা, আর এটাই হয়তো অনেক বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে আপনাকে।পায়ের পাতার নীচ তো নিজে দেখা যায় না,দেখে দেয়ার কেউ না থাকলে কিংবা কারো সাহায্য নিতে না চাইলে আয়না ব্যবহার করতে পারেন।কোন অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।


৩. উষ্ঞ গরম পানিতে প্রতিদিন একবার করে পা দুটো ধুঁয়ে ফেলুন।পানিতে পা দেয়ার আগে ছোট বাচ্চাকে গোসল করানোর আগে যেমন পানি কতটুকু গরম চেক করে নেন ঠিক সেভাবে পানি কতটুকু গরম দেখে নিন। কারণ ডায়াবেটিস রোগীদের নিউরোপ্যাথির(নার্� ��ের বা স্নায়ুর সমস্যা)কারণে সেনসেশন কমে যায় পরে দেখা যাবে ভালো করতে যেয়ে বেশী গরম পানিতে পা ডুবিয়ে পুড়ে বসে আছেন। পা পরিষ্কার করার সময় বেশী ঘষাঘষি করবেন না।


৪.পা ধোয়া হয়ে গেলে পা তুলে আলতো করে ভালভাবে মুছে ফেলুন।যাতে একেবারে শুকনো হয়ে যায়।দুই আঙ্গুলের ফাঁকে বিশেষভাবে নজর দিন যাতে ভেজা না থাকে।তারপর ময়েশ্চারাইজিং লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করুন।দুই আঙ্গুলের মধ্যবর্তী ফাঁকে এসব লাগাবেন না।
৫.সাবধনতার সহিত নখ কাটুন।বেশী ছোট করে কাটবেন না।নখ কাটার পর কোনাগুলো ফাইলিং করুন।
৬. যত ছোটখাট কোন সমস্যাই হউক না কেন ডাক্তারের শরনণাপন্ন হোন নিজে নিজে বাথরুম সার্জারী করতে যাবেন না।

৭.ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আজকাল আলাদা ধরনের ভাল জুতা মোজা পাওয়া যায় সেসব ব্যবহার করুন।জুতা মোজা সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
৮.বেশী ঠান্ডা পরলে হিটিং প্যাড কিংবা হট ওয়াটার বোতলের পরিবর্তে মোজা ব্যবহার করুন।
৯.জুতা পরিধানের পূর্বে জুতা ঝাকিয়ে পরিষ্কার করে নিন এবং জুতার ভেতরটা ভাল করে দেখে নিন।কারণ হয়তো জুতার ভিতরে থাকা শস্যদানার মতো ছোট কোন বস্তুই আপনার ভবিষ্যত জীবনের ভাল থাকায় পেরেক ঠুকে দিতে পারে।
১০.কখনও খালি পায়ে হাটবেন না,এমনকি ঘরের মধ্যেও না।
১১.নিয়মের চেয়ে একবারে বেশী হাটবেন না।
১২.নিকোটিন হচ্ছে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মরার উপর খাড়ার ঘাঁ।ধূমপায়ীরা আল্লাহর ওয়াস্তে সিগারেটকে চিরতরে বনবাসে পাঠান।
১৩.বছরে অন্তত একবার নিজের অধমাঙ্গ মানে পা ডাক্তারকে দেখিয়ে আসুন।
.
গল্পের শেষটা বলব এখন।রোগীর পা টা গত দুইবছর ধরে আগের অবস্হাতেই আছে।শুকিয়েছে মোটামুটি।ডাক্তার� �া বলেছেন এমন যতদিন থাকে সার্জারীতে ডিলে করলে তেমন প্রবলেম নেই।কিন্তু সমস্যা করলে অবশ্যই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।বারডেমে চিকিৎসার পর রোগীর ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিটি বাঁকা হয়ে গিয়েছে।পছন্দসই কোন জুতা এখন পরতে পারেন না।

অনুমতি ছাড়া পেশেন্টের প্রোফাইল ডিসক্লোজড করা ডাক্তারদের নীতিবিরুদ্ধ।উপরে যে মহিলা রোগীর কথা বলে শুরু করেছিলাম উনার অনুৃমতি ছাড়াই আমি উনার প্রোফাইল ডিসক্লোজড করেছি।অনুমতি না নিয়েই কিছু মানুষকে সচেতন করার অভিপ্রায়ে যে পেশেন্টের প্রোফাইল ডিসক্লোজড করলাম তিনি আমার পরম আত্মীয়,তার থেকে অনুমতি না নিলে তিনি আমার উপর রাগ করবেন না।

রোগীর বড় সন্তান তখন সদ্য পাশ করা ডাক্তার।ডায়বেটিস সম্পর্কে বই খাতায় পড়া,আর এক আধটু চোখে দেখা তা যে এত বিভীষিকাময় হয়ে তার পরিবারে জানান দিবে কখনও ভাবে নি।ভাবলে হয়তো এতক্ষণ যা আপনাদের করণীয় বললাম সেও এ বিষয়ে তার মাকে আরো সতর্ক করতো।নিজেও মায়ের আরো খেয়াল নিত।
নাজমা ইসলাম আমার মা, আর আমি তার দুর্ভাগা বড় সন্তান।।জুতার দোকানে গেলে আমার মায়ের পায়ের কথা ভাবলে এখন আর আমার সুন্দর জুতা কিনতে ইচ্ছা করে না।আম্মুর একটু জ্বর আসলে ভয়ে কুকড়ে থাকি পরিবারের সবাই। আমরা ভাইবোন অনিশ্চয়তার দিন গুনছি ডায়াবেটিসের অভিশাপ মাথায় নিয়ে আর প্রার্থনা করছি আমাদের আম্মুর জীবনে কখনই যেন বড় ডাক্তারের দেয়া সিদ্ধান্ত আল্লাহ চূড়ান্ত হিসেবে অনুমোদন না করেন...

https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=1835117466507249&id=72354 7167664290

Reply

Hey there! Looks like you're enjoying the discussion, but you're not signed up for an account.

When you create an account, you can participate in the discussions and share your thoughts. You also get notifications, here and via email, whenever new posts are made. And you can like posts and make new friends.
Sign Up
British Wholesales - Certified Wholesale Linen & Towels | Holiday in the Maldives

IslamicBoard

Experience a richer experience on our mobile app!