/* */

PDA

View Full Version : প্রচলিত বোরখা কি কোরআনের হুকুম ?



Abrars
02-10-2021, 09:06 AM
‘হিজাব’ (حِجَابٌ) শব্দ দ্বারা মুসলিম নারীদের সারা শরীর ঢেকে রাখার জন্য ব্যবহৃত পোশাককে বোঝায়। কুরআনের ৮ টি আয়াতে এই আরবি শব্দটা ব্যবহৃত হয়েছে (৭:৪৬, ১৭:৪৫, ১৯:১৭, ৩৩:৫৩, ৩৮:৩২, ৪১:৫, ৪২:৫১, ৮৩:১৫) । একটি বারের জন্য হিজাব কোরআনের মুসলিম নারীর পোষাক বোঝাতে ব্যবহৃত হয়নি । আয়াত গুলোতে এর অর্থ করা হয়েছে দ্বিবিভাজনকারি বাধা ( যেমনঃ জান্নাত ও জাহান্নামিদের মাঝে হিজাব , যারা বুঝেনা তাদের হৃদয়ে হিজাব ইত্যাদি) । যাই হোক , মহান আল্লাহ্- কুরআনে নারীদের পোষাক কেমন হবে সে বিষয়ে বিষদ আলোচনা করেছেন । ইনশাল্লাহ আমরা নিচে তা আলোচনা করব ।

প্রথমেই আমদের দেখা উচিৎ যে মহান আল্লাহ্- পোশাকের উদ্দেশ্য কি , সেই সম্বন্ধে কি বলেছেনঃ

“হে আদাম সন্তান! আমি তোমাদেরকে পোষাক-পরিচ্ছদ দিয়েছি তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করার জন্য এবং শোভা বর্ধনের জন্য। আর তাকওয়ার পোশাক হচ্ছে সর্বোত্তম পোশাক। ওটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। ” (৭:২৬)

উপরের আয়াতটি নারী ও পুরষ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কেননা আয়াতে সকল আদম সন্তান কে উদ্দেশ্য করে কথা বলা হয়েছে ।

আয়াতে পোষাক পরিধানের প্রধান দুটি কারন হচ্ছেঃ

ক) লজ্জা স্থান ঢাকা ।
খ) শোভা বর্ধন করা ।

মানব শরীরের কোন কোন অংশ লজ্জা স্থানের অন্তর্ভূক্ত তা বলার কোন প্রয়োজন এখানে নাই , কারন তা সবারই জানা । শুধু এইটুকু যোগ করতে চাই যে মানব শরীরের হাত , পা, মুখ , চুল কি লজ্জা স্থানের অন্তর্ভূক্ত ? এর উত্তরও সবার জানা । মানব শরীরের ঐ অংশগুল মোটেও লজ্জা স্থানের অংশ নয় , তাই ৭:২৬ এর হুকুম এই অংশগুলোর জন্য প্রযোজ্য নয় ।

লক্ষ্য করুন , কুরআনের ওজু সংক্রান্ত আয়াতে (৫:৬) প্রত্যহ প্রত্যেক মুসলিম নারী ও পুরুষকে সালাতের সময় হলেই নীচের কায়দায় ওযু করতে হয়ঃ

ক) মুখ মণ্ডল ধৌত করা ।
খ) হাতের কনুই পর্যন্ত ধৌত করা ।
গ) মাথা মাসেহ করা ।
ঘ) পায়ের গিড়া পর্যন্ত মাসেহ করা ।

শরীরের যে অংশগুলো ঢাকা থাকলে তা বার বার অনাবৃত করে আল্লাহর হুকুম পালন করা কষ্টকর তা প্রকৃত পক্ষেই যে আল্লাহর হুকুম নয় তা যৌক্তিক ভাবে বোধগম্য ।

তাই আয়াত ৭:২৬ ও আয়াত ৫:৬ পাশাপাশি নিয়ে আসলে সহজেই অনুমিত হয় যে মহান আল্লাহ্- পোষাক পরিধানের হুকুম দিয়েছেন শরীরের শুধু লজ্জা স্থান ঢাকার জন্য , অন্য কোন অংশ ঢাকার জন্য নয় ।

এর পাশাপাশি বিশেষতঃ নারীদের পোষাক রীতি সম্পর্কে কুরআনের ২৪:৩১ ও ৩৩:৫৯ আয়াত দুইটি খুবই গুরুত্বপূর্ন ।

২৪:৩১ বেশ বড় আয়াত , তাই এর শুধু আনুষাঙ্গিক অংশটুকু তুলে ধরলামঃ
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ


“আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। ....... ”

আয়াতে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্নঃ

ক) নারীদের লজ্জা স্থানের হেফাজত করতে হবে । ৭:২৬ ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে পোষাক হচ্ছে লজ্জা স্থান ঢাকার একটা উপায় যা পরিণামে লজ্জা স্থান হেফাজত করে ।
খ) যা সাধারণতঃ প্রকাশযোগ্য – যা কিনা লজ্জা স্থানের অংশ নয় – যা কিনা প্রত্যহ নারীদেরকে ওযুর জন্য প্রকাশ করতে বাধ্য , তা ছাড়া শরীরের বাকী অংশ আবরণযোগ্য ।
গ) আয়াতে ِخُمُر দ্বারা সাধারণ আচ্ছাধন কারি ওড়না বা এক টুকরো কাপড় এর কথা বলা হয়েছে । এই ِخُمُر বেশির ভাগ অনুবাদ ‘ Head Scarf’ করা হয়েছে , যা একটা ডাহা মিথ্যা অনুবাদ । আয়াতের পরের অংশ পরিষ্কার করে দিয়েছে যে কি কারনে এই ওড়না ব্যবহৃত হবে । “بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ” - তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। এখানে মাথা ঢাকার কোন হুকুম এই আয়াতে নেই । আয়াতে ‘جُيُوبِ’ এর মানে যে বক্ষ তা কোরআনের অন্যান্য আয়াত থেকেও জানা যায় (২৭:১২,২৮:৩২)

কুরআনের ৩৩:৫৯ আয়াতেও নারীদের পোষাক সম্বন্ধে আরেকটি গুরুত্ব পূর্ন তথ্য পাওয়া যায়ঃ

“হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের আচ্ছাদনের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”

আয়াতে যা লক্ষ্যনীয়ঃ

ক) শরীরের উপর আচ্ছাদন কে নীচের দিকে ঝুলিয়ে দিতে হবে । আয়াতে يُدْنِينَ দ্বারা নীচের দিকে ঝুলানো বোঝায় (যেমনঃ ৬:৯৯) ।
খ) আচ্ছাদন কে এমন ভাবে ঝুলাতে হবে যেন তাদেরকে চেনা যায় । প্রচলিত বোরখা যেভাবে পড়া হয় যাতে মুখ ঢাকা হয় তাতে এই আয়াতের বিরোধিতা হয় , কেননা মুখ ঢাকলে কারা মুমিনদের স্ত্রী বা কন্যা তা চিনা সম্ভব নয় ।

উপসংহারঃ কুরআনের ৭:২৬ , ৫:৬ , ২৪:৩১ এবং ৩৩:৫৯ কে একত্রে পড়লে নারীদের পোষাক এর বিষয়ে নিম্নোক্ত হুকুমগুল পরিষ্কার হয়ঃ

১- নারীদের লজ্জা স্থান সমূহ উত্তম রূপে আবৃত করতে হবে ।
২- নারীদের বক্ষাদেশ লজ্জা স্থানের অংশ নয় কিন্তু সৌন্দর্যের ও আকর্ষনের অংশ , তাই তা উত্তম রূপে আবৃত করতে হবে ।
৩- যা আপাত আবরণযোগ্য নয় বরং যা প্রকাশ করা যাবে , যেমনঃ মাথা , মুখ , হাতের কনুই পর্যন্ত , পায়ের গিড়া পর্যন্ত তা পর্দার অন্তর্ভূক্ত নয় । এগুলো খোলা রাখলে আল্লাহর হুকুমের খেলাফ হবে না ।
৪- নারীদের পোষাক নীচের দিকে ঝুলিয়ে পড়তে হবে যেন বক্ষদেশ থেকে শুরু করে নিম্নাচলের অংশ সমূহ উত্তম রূপে আচ্ছাদিত হয় ।

কেউ যদি আপাদমস্তক বোরখা পড়েন , হাত মোজা , পা মোজা পড়েন – তা তাদের ব্যক্তিগত এখতিয়ার । তবে এটাও বোঝা দরকার যে উপরের শর্তগুলো মেনে সাল্ওয়ার-কামিজ , শাড়ি , প্যান্ট শার্ট বা স্কার্ট যারা পড়েন তারা যে বেপর্দা এটা ভাবাও ঠিক না । বাকী বেহায়াপনা বা অশ্লিলতা সম্পন্ন পোষাক শুধু ইসলাম কেন সব ধর্মেই নিন্দনীয় বলে আমার বিশ্বাস ।

লেখকঃ আবরার শাহরিয়ার
ইমেইলঃ abrarshahriar95@gmail.com

Reply

Hey there! Looks like you're enjoying the discussion, but you're not signed up for an account.

When you create an account, you can participate in the discussions and share your thoughts. You also get notifications, here and via email, whenever new posts are made. And you can like posts and make new friends.
Sign Up

Similar Threads

British Wholesales - Certified Wholesale Linen & Towels | Holiday in the Maldives

IslamicBoard

Experience a richer experience on our mobile app!