‘আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসুলের’ – এই অতিব গুরুত্বপূর্ণ আজ্ঞাটি মহান আল্লাহ্ তা’আলা কোরআনে কমবেশি ২৫ বার উল্লেখ করেছেন । এই হুকুমটি আমদের জন্য আজও জারী আছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে । প্রশ্ন হল , নবীর তো প্রায় ১৪০০ বছর আগে ওফাত হয়ে গেছে , তার মৃত্যুর পর আমরা এখন কিভাবে তার আনুগত্য করব । বিভিন্ন মাযহাব পন্থীরা তাদের নিজস্ব মাতামত এক্ষেত্রে ব্যক্ত করেছেন যা একে অপরের সাথে বিস্তর ব্যবধান ও সংঘাতের সূচনা ঘটিয়েছে । যাই হোকনা কেন , মহান আল্লাহ্ তা’আলা আমদেরকে কোরানে এই বিষয়ে খুব সহজ সরল দিক নির্দেশনা দিয়েছেন । ইনশাল্লাহ নিচে এই বিষয়ে আমরা আলোচনা করব ।
১. রাসুল/বার্তাবাহক = যে রিসালাত/বার্তা বহন করে ।
=> আনুগত্য কর রাসুলের/বার্তাবাহকের = আনুগত্য কর যে রিসালাত/বার্তা তিনি বহন কর্নজ্ঞ
আর আমরা জানি যে আল্লাহর নবীর বার্তা ছিল আল-কোরান ঃ
৫:৯২. তোমরা আল্লাহর অনুগত হও, রসূলের অনুগত হও এবং আত্মরক্ষা কর। কিন্তু যদি তোমরা বিমুখ হও, তবে জেনে রাখ, আমার রসূলের দায়িত্ব প্রকাশ্য পৌছে দেওয়া (আল্লাহর বাণী) ।
৬৪:১২. তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রসূলুল্লাহর আনুগত্য কর। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমার রসূলের দায়িত্ব কেবল খোলাখুলি পৌছে দেয়া (আল্লাহর বাণী) ।
৫:৬৭. হে রসূল, পৌছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।
৫.৯৯. রসূলের দায়িত্ব শুধু পৌছিয়ে দেওয়া (আল্লাহর বাণী) । আল্লাহ জানেন, যা কিছু তোমরা প্রকাশ্যে কর এবং যা কিছু গোপন কর।
অতএব , আনুগত্য কর রাসুলের = আনুগত্য কর কোরআনের ।
২. মহান আল্লাহ্ তা’আলা কুরাআনে বারংবার উল্লেখ করেছেন যে নবী নিজেই কোরআন পুংনাপুংখ ভাবে অনুসরন করে চলতেন ঃ
৬:৫০. আপনি বলুনঃ আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয় অবগতও নই। আমি এমন বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ ওহীর অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে। আপনি বলে দিনঃ অন্ধ ও চক্ষুমান কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা কর না ?
৭:২০৩. আর যখন আপনি তাদের নিকট কোন নিদর্শন নিয়ে না যান, তখন তারা বলে, আপনি নিজের পক্ষ থেকে কেন অমুকটি নিয়ে আসলেন না, তখন আপনি বলে দিন, আমি তো সে মতেই চলি যে হুকুম আমার নিকট আসে আমার পরওয়ারদেগারের কাছ থেকে। এটা ভাববার বিষয় তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং হেদায়েত ও রহমত সেসব লোকের জন্য যারা ঈমান এনেছে।
১০:১৫. আর যখন তাদের কাছে আমার প্রকৃষ্ট আয়াত সমূহ পাঠ করা হয়, তখন সে সমস্ত লোক বলে, যাদের আশা নেই আমার সাক্ষাতের, নিয়ে এসো কোন কোরআন এটি ছাড়া, অথবা একে পরিবর্তিত করে দাও। তাহলে বলে দাও, একে নিজের পক্ষ থেকে পরিবর্তিত করা আমার কাজ নয়। আমি সে নির্দেশেরই আনুগত্য করি, যা আমার কাছে আসে। আমি যদি স্বীয় পরওয়ারদেগারের নাফরমানী করি, তবে কঠিন দিবসের আযাবের ভয় করি।
৪৬:০৯. বলুন, আমি তো কোন নতুন রসূল নই। আমি জানি না, আমার ও তোমাদের সাথে কি ব্যবহার করা হবে। আমি কেবল তারই অনুসরণ করি, যা আমার প্রতি ওহী করা হয়। আমি স্পষ্ট সতর্ক কারী বৈ নই।
এখন নবীর উপরে যদি কোরআন মেনে চলা ফরয হয়ে থাকে এবং নিঃসন্দেহে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) তা তার জীবদ্দশাতে করে গেছেন , তাহলে আজ উনাকে অনুসরণ করতে হলে আমাদেরকে কোরানেরই অনুসরন করতে হবে । কোরানের অনুসরনের নামান্তরই হল রাসুলের অনুসরন ।
অতএব , আনুগত্য কর রাসুলের = আনুগত্য কর কোরআনের ।
লেখকঃ আবরার শাহরিয়ার
ইমেইলঃ abrarshahriar95@gmail.com