Muslim Woman
04-24-2021, 07:51 AM
প্রফেসর তারেক শামসুর রেহমানের মতো নিঃসঙ্গ করুণ মৃত্যু বাংলাদেশের বেশিরভাগ বাপ মায়ের জন্যই অপেক্ষা করছে। বিশ্বাস করেন বা না করেন।
বাংলাদেশের মিডল ক্লাস ফ্যামিলির প্রতিটা বাপ মা সন্তানকে এমনভাবেই মানুষ করেন। বড় হও, ধনী হও, টাকা কামাও, স্ট্যাটাস বানাও, ক্যারিয়ার বানাও কথাগুলো জপ করতে করতে এই বাপ মায়েরা আমাদের বলতে ভুলে যান, বাবারা এবার একটু থামো, ভালোবাসো। কেউ বলে না। কেউ না।
ছোটবেলা থেকেই এই ছেলেমেয়েদের রেসের ঘোড়া বানানোর প্রক্রিয়া চলতে থাকে।আদর, যত্ন, ভালোবাসার সাথে সাথে বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হয়, তোমাকে কিন্তু "ওর" মতোই হতে হবে। না হতে পারলে কিন্তু আমাদের "মুখ" উজ্জ্বল হবে না।
ছেলে মেয়েও শুরু করে দৌড়। ক্যারিয়ারের জন্য দৌড়, স্ট্যাটাসের জন্য দৌড়, ওর মতো হওয়ার জন্য দৌড়, বাপ মায়ের মুখ উজ্জ্বল করার জন্য দৌড়।
কেউ সে দৌড়ে জিতে, কেউ হারে। যে হারে তাকে বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হয় তুমি পরাজিত, তুমি আমাদের মুখ উজ্জ্বল করতে পারো নাই। আর যে জিতে, তারে নিয়ে বাপ মা শুরু করে গর্ব। দেখেছো, আমার ঘোড়া কত সুন্দর দৌড়ায়? আমরা ঐ ঘোড়ারই সফল বাপ মা।
সমাজে মুখ উজ্জ্বল করার খেলা শেষ হয়। স্ট্যাটাসের খেলা শেষ হয়। ক্যারিয়ার ক্যারিয়ার খেলা শেষ হয়। আত্মীয়দের মধ্যেই জিতে যাওয়ার খেলাটাও শেষ হয়। বাপ মায়ের বয়স হয়। বাপ মা এবার চায় তার বাজির ঘোড়া ঘরে ফিরুক। খেলা তো শেষ হলো, আর কত?
কিন্তু ততদিনে ঘোড়া একলা চলতে শিখে গেসে।ততদিনে ঘোড়াটা আরো জোরে দৌড়াতে শিখে গেসে, সেও এখন ক্যারিয়ার, স্ট্যাটাস, টাকার হিসাব করতে শিখে গেসে। সে দৌড়াতে শিখেছে, কিন্তু সে থামতে শেখেনি।
মানুষ বাপ মায়ের ভালোবাসা, মায়া, দয়ার কথাবার্তা ঐ ঘোড়া সন্তানটি এখন আর বুঝতেই পারে না। বাপ মায়ের ভালোবাসার কথা তার কাছে দুর্বোধ্য মনে হয়।
তাকে তো ছোটবেলা থেকে দৌড়ানো শেখানো হয়েছে, থামতে শেখানো তো হয়
নি!! তাকে ছোটবেলা থেকেই ক্যারিয়ারের অঙ্ক শেখানো হয়েছে, ভালোবাসার উত্তর তো শেখানো হয় নি!!
একটা সময় গিয়ে এই বাপ মায়েরা ঠিকই বুঝতে শুরু করেন, সন্তানের লুক্রেটিভ ক্যারিয়ারের চেয়ে সন্তানকে একটু ছুয়ে দেখা বেশি আনন্দের। ছেলেটার সাথে বিকেলে একটু চা খাওয়া অনেক বেশি মূল্যবান। আত্মীয় স্বজনের কাছে মুখ উজ্জ্বল করার চেয়ে,বিরাট ক্যারিয়ারিস্ট সন্তানের গর্ব করার চেয়ে, এক বিকেলে বারান্দায় বসে মেয়েটার মাথায় তেল দিয়ে দেওয়াটা বেশি আনন্দের। চুলে বেনি করে দেওয়াটা বেশি সুখের।
এক বুক ক্লান্তি নিয়ে কবি হেলাল হাফিজ লিখেছিলেন,
কেউ বলেনি,
ক্লান্ত পথিক,
দুপুর রোদে গাছের নিচে একটু বসে জিরিয়ে নিও....
প্রিয় বাপ মায়েরা, আপনাদের সন্তানেরা দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত। তাদের একটু থামতে বলেন। একটু জিরিয়ে নিতে বলেন। তাদের ঘোড়া বানায়েন না প্লিজ, যান্ত্রিক রোবট বানায়েন না প্লিজ!! তাদের মানুষ বানান। তাদের শুধু ক্যারিয়ার শেখায়েন না, শুধু স্ট্যাটাস আর টাকা শেখায়েন না, তাদের ভালোবাসতেও শেখান।
এতে হয়তো আপনার ছেলে বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানী হতে পারবে না। হার্ভার্ড নাসা কাপাইতে পারবে না। সফলতার হিমালয় জয় করতে পারবে না। কিন্তু বিশ্বাস করেন, সে আপনার কথা বুঝবে। আপনার হাতটা ধরতে পারবে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপনার খোঁজ নিতে, ওষুধটা খাইয়ে দিতে পারবে।
বিশ্বাস করেন, নাসার বিজ্ঞানী সফল রোবট সন্তানের চেয়ে আপনার হাতে হাত রাখা ব্যর্থ মানুষ সন্তান আপনার জন্য অনেক বেশি কাজের।
আপনার সন্তানকে বাজির ঘোড়া নয়, ভালোবাসার মানুষ বানান প্লিজ।
Sadiqur Rahman Khan এর পোস্ট থেকে নেয়া
ReplyHey there! Looks like you're enjoying the discussion, but you're not signed up for an account.
When you create an account, you can participate in the discussions and share your thoughts. You also get notifications, here and via email, whenever new posts are made. And you can like posts and make new friends.
Sign Up
Powered by vBulletin® Copyright © 2024 vBulletin Solutions, Inc. All rights reserved.