প্রথমবারের মতো চেন্নাই যাব- যাওয়ার আগে খোঁজ নিয়ে জেনে নিলাম সেখানে পর্যটক আকর্ষণীয় কী কী আছে। অনেক কিছুই আছে দেখার। জানতে পারলাম সেখানে শহরের ভেতর ১৭ শতকের পুরনো বিগ মসজিদ নামের এক ঐতিহাসিক মসজিদ আছে। যা দেখা যেতে পারে। বিগ মসজিদ চেন্নাইয়ের এক পুরনো স্থাপত্য নিদর্শন এবং পর্যটন আকর্ষণীয় স্থান।
এ মসজিদটি অনেক পর্যটক পরিদর্শন করে থাকে। এক অমুসলিম দেশ তার ওপর চেন্নাই যেখানে শতকরা চার ভাগেরও কম মুসলমানের বাস, সেখানের এত পুরনো মসজিদটির অবস্থা দেখতে যাওয়া জরুরি। আয়োজক সংস্থাকে আমার আগ্রহের কথা জানালাম।
সকালে রওনা হলাম গাড়িতে-প্রথমে মেরিনা বিচ হয়ে বিগ মসজিদে যাব। ড্রাইভার যদিও ঠিকমতো বিগ মসজিদ চেনে না, প্রথমে ড্রাইভার ভুল করে আমাদের আমির প্যালেস নামের এক পুরনো প্যালেসে নিয়ে হাজির করল।
প্রাচীরঘেরা এ বিশাল বাড়িটি আসলে একটি পুরনো মুসলিম জমিদার বাড়ি। পরে ড্রাইভার রাস্তা জিজ্ঞেস করে বিগ মসজিদে নিয়ে হাজির করল সকাল ৯টার দিকে। প্রধান সড়কের প্রায় পাশেই অনেক বড় এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা প্রাচীন এই মসজিদটির সামনে বিশাল শানবাঁধানো চত্বর, প্রাচীরঘেরা। বিশাল গেট পার হয়ে শানবাঁধানো চত্বর হয়ে মূল মসজিদে ঢুকতে হয়। মসজিদটির প্রধান গেটের পাশেই মসজিদটির নাম ও ঠিকানা লেখা আছে ওয়ালিজা বিগ মসজিদ। কায়দে মিল্লাত রোড, ট্রিপলিকেন হাই রোড, চেন্নাই।
গেট থেকে মসজিদটি সুন্দর দেখায়-এখান থেকে মসজিদটির স্পষ্ট ছবি তোলা যায়। খোলা চত্বরে অনেক কবুতর জড়াজড়ি করছে। মূল মসজিদটি ভূমি থেকে প্রায় দুই ফুট উঁচু ভিত্তির ওপর নির্মিত। একতলা মসজিদের সামনের দুই কোনায় সুউচ্চ দুই মিনার, মিনার দুটির কারণে মসজিদটি বেশ আকর্ষণীয় রূপ নিয়েছে। মসজিদের ডান পাশে বেশ কিছু নতুন পুরনো কবর ও মাজার, বামপাশে পানির হাউস ওজু করার জন্য।
মূল মসজিদ ভবনের সামনেও সমান্তরাল এক উঁচু চত্বর, সেখানেও নামাজ পড়া যায়। উঁচু চত্বর পার হয়ে মসজিদের ভেতর ঢুকলাম। মসজিদের ভেতরে মেঝেতে শীতলপাটি পাতা লাইন করে। গুনে দেখলাম ভেতর অংশে সতেরো সারিতে নামাজ পড়া যায়। প্রতি সারিতে গড়ে একশ মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। মসজিদের সামনের উঁচু চত্বরেও অনেকে নামাজ পড়তে পারেন। তা ছাড়া মূল গেটের সামনের চত্বরেও কয়েক হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের মাঝখানে মেহরাব, ওপরে সুন্দর ক্যালিগ্রাফিতে আল্লাহর বাণী লেখা।
ভেতরে বৈদ্যুতিক ফ্যান ও লাইটের ব্যবস্থা আছে। মসজিদের ভেতরের বাম পাশের একটি অংশ বেড়া দিয়ে ঘেরাও করা সেখানে আলমিরাতে প্রাচীন বইপত্র রাখা। তা ছাড়া সেখান থেকেই আজান দেয়া হয়। মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণ বেশ ভালোই মনে হল। এ মসজিদটির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য-মসজিদটি বর্গাকৃতির বেশ বড় বড় ধূসর গ্রানাইট পাথরের ব্লক দিয়ে তৈরি। স্থায়ীত্বের দিক দিয়ে যা কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। কোনো ধরনের কাঠ ও স্টিলের ব্যবহারে এ মসজিদ নির্মাণ করা হয়নি। লোহা বা এ জাতীয় কোনো কিছুর ব্যবহার করা হয়নি।
অনেক দিনের পুরনো হলেও মসজিদটি বেশ মজবুত ও শক্তিশালী বলে মনে হল। মসজিদটির ছাদ বেশ উঁচু। ভেতরে কোনো পিলার নেই। নির্মাণে মধ্যযুগের স্থাপত্য রীতি অনুসরণ করা হয়েছে। এ মসজিদটির নির্মাণ শৈলীতে ভারতীয় ইসলাম ও পারসিয়ান প্রভাবের প্রতিফলন রয়েছে। মসজিদটির ইতিহাস খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ১৭৯৫ সালে নির্মিত এই মসজিদটি চেন্নাইয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা। এ মসজিদটি ওয়ালিজা মসজিদ নামেও পরিচিত। নওয়াব ওয়ালিজার স্মৃতি স্বরূপ তার পরিবার এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। বিগ মসজিদ চেন্নাইয়ের অন্যতম সুন্দর শেরিন হিসেবে বিবেচিত।
এটি দক্ষিণ ভারতের মুসলিম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে তীর্থ যাত্রীদের কাছে আকর্ষণীয়। সারা ভারতে এই মসজিদটি অন্যতম একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এর ঐতিহাসিক গুরুত্বও অনেক। চেন্নাইয়ের বিগ মসজিদ দেখার ইচ্ছা পূরণ হল। এখন আমাদের ফিরতে হবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক
Hey there! Looks like you're enjoying the discussion, but you're not signed up for an account.
When you create an account, we remember exactly what you've read, so you always come right back where you left off. You also get notifications, here and via email, whenever new posts are made. And you can like posts and share your thoughts.
Sign Up
Bookmarks