একজন রাজমিস্ত্রী বাড়ি বানাতে খুবই দক্ষ ছিল । তাকে দিয়ে বাড়ি বানিয়ে সেগুলি চড়া দামে বিক্রি করে তার চাকরিদাতা বাড়ি নির্মাতা ব্যবসায়ী প্রচুর লাভ করতেন । তাই তিনি এই রাজমিস্ত্রীর উপর খুব সন্ত্তষ্ট ছিলেন ।
একদিন সেই রাজমিস্ত্রী এসে জানালো তার শরীর ভাল যাচ্ছে না , তাই সে ঠিক করেছে কাজ ছেড়ে দেবে । শুনে ব্যবসায়ী দু:খ পেলেন । অনুরোধ করলেন , তুমি কি আমাকে আরেকটি সুন্দর বাসা বানিয়ে দেবে ? প্রথমে রাজমিস্ত্রী রাজী হলো না । কিন্ত্ত অনেকদিন যার অধীনে কাজ করেছে , তার বারবার অনুরোধে বাধ্য হয়ে সে রাজী হলো । তবে অন্যবার সে যেমন যত্ন করে বাড়ি বানায় , এবার তা সে করলো না । খুবই দায়সারা কাজ করে কোনমতে বাড়ি বানানো শেষ করলো সে । আসলে সে চাচ্ছিলো নিজ পরিবারে ফিরে গিয়ে বিশ্রাম নিতে , তাই দায়িত্ব ঠিকমত পালন না করেই সে শেষ করলো বাড়িটা ।
মালিককে সে জানালো কাজ শেষ , তাই এখন চলে যাবে সে । মালিক তাকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলে হাতে একটি চাবি ও কাগজ নিয়ে বের হলেন । রাজমিস্ত্রীকে হতভম্ব করে দিয়ে মালিক বললেন , এই বাড়িটি তিনি উপহার হিসাবে তাকে দিচ্ছেন । এই বলে বাড়ির মালিকানা দলিল ও ঘরে ঢোকার চাবি তার হাতে তুলে দিলেন ।
রাজমিস্ত্রীর আফসোসের সীমা থাকলো না । হায় হায় , কী বোকামীই না সে করেছে । যখন তার সুযোগ ছিল সুন্দর করে একটি বাড়ি বানিয়ে তার মালিক হওয়ার , তখন সে সেই কাজে চরম অবহেলা করেছে । এখন যতই দু:খ আর আফসোস করা হোক না কেন , সুযোগ আর ফিরে আসবে না । সেরা বাড়ি বানানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে , এখন ফাঁকি দিয়ে বানানো জোড়াতালির এই বাসাই তার ভাগ্যে থাকলো । ইস , সে যদি আগে জানতে পারতো যে সে এই বাড়ির মালিক হবে , তাহলে কত যত্ন করেই না সে বানাতো বাড়িটা ।
আমাদের জীবনটাও এই রাজমিস্ত্রীর মত । আল্লাহ এই দুনিয়ায় আমাদের পাঠিয়েছেন যেন আমরা বেহেশতে আমাদের প্রাসাদ সুন্দর করে বানাতে পারি । আমরা তা না করে দায়িত্বে অবহেলা করছি । সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আগেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা অনন্তকালের জন্য যেখানে থাকবো , তা কোথায় হবে , কেমন হবে ?
আমরা কি দুনিয়ায় এরকম একটি বাসা পাওয়ার জন্য পাগল নই ?
এরকম প্রাসাদসম একটি বাসার দাম কোটি কোটি টাকা । আমাদের কয়জনের সামর্থ্য আছে এত খরচ করার ? কিন্ত্ত কোটি টাকা খরচ না করেই যদি অতুলনীয় বেহেশতে এসব বাসার থেকেও লক্ষ কোটি গুণ ভাল বাসায় থাকা যায় , তাহলে কেমন হয় ? কেউ যদি এই সুযোগ নষ্ট করে , তাহলে সে কি চরম বোকামী করবে না ? আমরা এই চরম বোকামী করবো না কি সুযোগটা কাজে লাগাবো ?
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন , আমি মানুষ ও জিন্নকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদতের জন্য ( সুরা যারিয়াত ; ৫১ : ৫৬ ) ।
আল্লাহর রাসূল صلىاللهعليهوسلمবলেছেন , যে দিনে –রাতে মোট বারো রাকাত ( সুন্নত ) নামাজ আদায় করবে , তার জন্য বেহেশতে বাড়ি বানানো হবে । (তিরমিযী ৩৮০, সহীহ আল জামি’ ৬৩৬২, হাদিসটি সহীহ)
এই বারো রাকাত সালাত হলো ১ . ফজরের দুই রাকাত ফরযের আগের দুই রাকাত সুন্নত ,
২. যোহরের চার রাকাত ফরযের আগে চার রাকাত ও ফরযের পরের দুই রাকাত সুন্নত ; ৩ . মাগরিবের তিন রাকাত ফরযের পরে দুই রাকাত সুন্নত ,
৪. ইশার চার রাকাত ফরযের পরে দুই রাকাত সুন্নত ।
রোজ এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ( ফরজ , সুন্নতসহ ) আদায় করতে প্রতিবার মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে ।
দুনিয়ায় অল্পদিনের জন্য একটি বাড়ির মালিক হতে মানুষ কত কষ্টই না করে - ব্যাংক থেকে চড়া সুদে ধার নেয় , বন্ধু – আত্মীয়দের কাছে হাত পাতে , জমি – গয়না বন্ধক রাখে বা বিক্রি করে । এই ধার শোধ করতে বা বন্ধকী জিনিষ ফিরে পেতে দিনের পর দিন কত কষ্টই না সহ্য করতে হয় । দু:চিন্তায় অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন , দু:খ করেন কেন সুদে ধার নিলাম । অথচ সুদের পাপ থেকে মুক্ত থেকে ও এরচেয়ে অনেক কম কষ্ট করে আমরা দামী দামী রত্ন বসানো মহামূল্যবান এক বা অনেক প্রাসাদের মালিক চিরকালের জন্য হতে পারি ।
শিরকের মহাপাপ থেকে মুক্ত থেকে এক স্রষ্টার উদ্দেশ্যে রোজ কয়েক মিনিটের ইবাদত আমাদেরকে দোযখের আগুন থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি বেহেশতের এমন সব সম্পদের মালিক বানাবে , যা আমাদের কল্পনাতেও আসবে না ।
মনে রাখবেন , , বেহেশতের এক বিন্দু পরিমাণ জায়গা এই পুরো দুনিয়ার সব সম্পদ বা মহাবিশ্বের থেকেও অনেক মূল্যবান ।
Hey there! Looks like you're enjoying the discussion, but you're not signed up for an account.
When you create an account, we remember exactly what you've read, so you always come right back where you left off. You also get notifications, here and via email, whenever new posts are made. And you can like posts and share your thoughts.
Sign Up
Bookmarks