আপনি একটা কাচের মগ কিনেছেন চা/পানি খাবেন বলে। দুদিন পরে মগটির তলা ফেটে গেল। মগটির স্থান হবে আবর্জনার ঝুড়িতে। কেন? কারণ মগটি তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য রক্ষা করতে পারছে না।
মগটির কোনো কোণা ভেঙে গেলে, এমনকি হাতলটা ভেঙে গেলেও মগটি ব্যবহার করা যায়। কিন্তু মগটিতে যদি তরল না রাখা যায় তবে মগটির অস্তিত্বটাই অদরকারী হয়ে পড়ে।
২. একটা জায়গা তার দিয়ে ঘেরা। তারের জালে লেখা আছে - হাই ভোল্টেজ, একটা খুলির ছবি।
এরপরেও যদি কোনো মানুষ সেই তারের জাল ভেঙে ভেতরে ঢোকে, হাই ভোল্টেজের অংশগুলো স্পর্শ করে তাহলে সে এলেকট্রিক শকে মারা যেতে পারে। এখানে ব্যক্তিস্বাধীনতা� � দোহাই দিয়ে যা খুশি করতে গিয়ে মরে যাওয়ার পরে কেন বিদ্যুৎ প্রাণঘাতী সে প্রশ্ন তোলা অর্থহীন।
মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন আল্লাহর ইবাদাতের জন্য; গৌতম বুদ্ধের মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য না, ঈসা আলাইহিস সালামের কল্পিত ছবি বা মূর্তির সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনা করার জন্য না, দশভূজা প্রতিমাকে পূজা করার জন্য না, মৃত মানুষের কবরে সেজদা করার জন্য না।
যদি কেউ করে তবে সে শির্ক করল, তার অস্তিত্বের উদ্দেশ্যকে মিথ্যা করে দিল। তাকে নানাভাবে সাবধান করার পরেও সে সেই নিষিদ্ধ দাগটা অতিক্রম করল যার শাস্তি চির জাহান্নাম।
এই জিনিসটা বোঝার পরে একজন মানুষের মুসলিম হয়ে একমাত্র আল্লাহর উপাসনা করা ছাড়া অন্য কোনো পথ থাকে না।
হিন্দু-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ-কবরপূজারী -- প্রত্যেকটির পরিণাম জাহান্নাম, ইচ্ছাকৃতভাবে ৪৪০ ওয়াট স্পর্শ করা।
সাবধানবাণী দেখে দূরে সরে যাওয়া মানুষ আর ৪৪০ ভোল্টে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া মানুষ যেমন এক না, তেমন খ্রিষ্ঠান/ইহুদি/বৌদ্ধ/হিন্দু/মুশরিক বনাম মুসলিম সবাই আল্লাহর কাছে সমান নয়।
রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপমা এমন--তিনি একটি সুন্দর প্রাসাদের বাইরে দাঁড়িয়ে মানুষকে ডাকছেন ভেতরে চমৎকার একটি ভোজে অংশগ্রহণ করার জন্য। যারা আসছে তারা সুস্বাদু খাবার পাচ্ছে, যারা আসছে না, হেটে চলে যাচ্ছে; তারা আপন ইচ্ছায় বঞ্চিত হচ্ছে।
টুন করে মিষ্টি একটা শব্দ হলো। ব্যাগ খুলে স্মার্টফোন বের করলো আলো। জেসিকার মেসেজ।
আগামীকাল আসছিস তো?
কোথায়? -রিপ্লাই দিলো আলো।
বাসায়! বিস্মিত হওয়ার ইমো দিলো জেসিকা।
কাল কি বিশেষ দিন?
ও মাই গড! কাল ক্রিসমাস!
ওহ্ শীট! সরি, ভুলে গিয়েছিলাম।
ওকে হানি, সময় মতো চলে আসিস। দেয়ার’স আ লট অফ ওয়ার্ক নাউ। সী ইউ টুমরো। বাই।
কনভারসেশন শেষ হলো। ফোন ব্যাগে রাখলো আলো। আগামীকাল তাহলে বড় পার্টি হবে জেসিকাদের বাসায়। এ উপলক্ষ্যে কিছু শপিং করা দরকার। লাস্ট বার্থডে তে জেসিকা ওকে সারপ্রাইজ গিফট দিয়েছিলো। আগামীকাল ওকে সারপ্রাইজ দিতে চায় আলো। অনেক চকোলেট আর একটা সান্তা ক্লজ কিনলো আলো। বাসায় ফিরে দরজার বাইরে একজোড়া কালো শ্যু দেখতে পেলো ও। ভুরু খানিকটা কোঁচকালো আলো। নিশ্চয়ই তাসনিয়া এসেছে। ওর দেখা না পেয়ে অপেক্ষা করছে।
আচ্ছা? আমি তো জানতাম এটা খ্রিস্টধর্মের অনুসারীরা পালন করে। তুই কবে থেকে পালন করছিস?
তোর সাথে পারা যায় না। এতো ব্যাকডেটেড হলে চলে বল? মনটাকে আরেকটু উদার করতে পারিস। মন্দ হবেনা। আমরা তাদের শুভেচ্ছা জানালে ক্ষতি কি? ইসলাম কিন্তু সম্প্রীতির কথাই বলে। ঈষৎ বিরক্ত কন্ঠে বললো আলো।
তা তো অবশ্যই। আল্লাহ্ বলেছেন-
“আর তোমরা গাল-মন্দ করো না তাদের যাদেরকে তারা আল্লাহর পরিবর্তে ডাকে, ফলে তারা গাল-মন্দ করবে আল্লাহকে, শত্রুতা করে অজ্ঞতাবশত….” (সূরা আন'আমঃ১০৮)
হুম। তবে? আমিও ও তাই বলছি। এতে খারাপ ভাবার কি আছে? হাত নেড়ে বললো আলো।
তাদের উপাস্যকে গালি দিতে নিষেধ করেছেন আল্লাহ্। আবার ওদের সমর্থন করতেও নিষেধ করেছেন। তুই কাল ওদের উইশ করবি, সান্টা ক্লজ পড়ে ওদের সাথে পার্টিতে জয়েন করবি এটা তো সমর্থনই তাই না?
এবার ঠিক সদুত্তর দিতে পারলো না আলো।
সাধারণত জেসাস খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষ্যে বড়দিনের উৎসব পালন করা হয়। জেসাস শব্দটি ঈসা আ এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। খ্রিস্টধর্মের অনুসারী একদল লোক মনে করে এই দিন ঈশ্বরের জন্মদিন আবার অন্যদল মনে করে, ঈশ্বরের পুত্রের জন্মদিন। যদিও পুরো ব্যাপারটাই গোলমেলে। আমি তোকে চ্যালেঞ্জ করছি, কোনো একজন খ্রিস্টান এই দিন পালনের কোন গ্রহণযোগ্য ব্যাখা দিতে পারবে না।
কেনো? এভাবে বলছিস কেনো? অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো আলো।
২৫ শে ডিসেম্বার জেসাস খ্রিস্টের জন্মদিন পালন করা হয় অর্থাৎ ঈসা আ এর। কোরআনে আল্লাহ্ বলেছেন-
“আর তুমি তোমার দিকে খেজুর গাছের কান্ডে নাড়া দাও, তা থেকে তোমার উপর সুপক্ব খেজুর পতিত হবে।“ (সূরা মারঈয়ামঃ২৫)
এই আয়াতের সাথে বড়দিনের কি সম্পর্ক? আজব তো! আকাশ থেকে পড়লো আলো।
জানিস তো, খেজুর গ্রীষ্মকালীন একটি ফল। জুন-জুলাই মাসের দিকে খেজুর পাকে। আর ডিসেম্বারে প্রচন্ড শীত থাকে৷ এই শীতে কি করে মারঈয়াম আ মানে ওরা যাকে মাদার মেরী বলে তার ওপরে কি করে পাকা খেজুর পড়বে? খেজুর তো আরশীতকালীন ফল নয়! আলোর দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচালো তাসনিয়া।
ক্ষনিকের জন্য থমকে গেলো আলো। আঁতিপাতি ভাবতে লাগলো। সহসা কোনো জবাব দিতে পারলো না ও।
আমরা এই উৎসবে ওদের সাথে একাত্নতা পোষণ করবো না তার আরও অনেক কারণ আছে বান্ধবী। হাসলো তাসনিয়া।
যেমন? এবার বেশ আগ্রহী মনে হলো আলোকে।
সূরা ইখলাছ জানিস তো?
হুম।
অর্থ জানিস না?
জানি।
লাম ইয়ালিদ, ওয়ালাম ইউলাদ এর মানে কি? প্রশ্ন করলো তাসনিয়া।
আঁ….. ভাবতে শুরু করলো আলো।
আল্লাহ্ কাউকে জন্ম দেন নি এবং কেউ আল্লাহ্ কে জন্ম দেয়নি। ঠিক না? তাসনিয়া বললো।
হুম। মাথা ঝাঁকালো আলো।
একজন মুসলিম এমন জঘন্য ভাবনা ভাবতেই পারেনা। এটা জঘন্যতম মিথ্যা। আমরা মুখে বলছি- লাম ইয়ালীদ, ওয়ালাম ইউলাদ অথচ আল্লাহর পুত্রের (ওদের বিশ্বাসমতে) জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি! তুই এমন বিষয়কে সমর্থন করবি যা মনে প্রাণে অবিশ্বাস করিস? আবার এমন বিষয় নিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করবি যা একেবারেই মিথ্যা?
সত্যিই তো! ধপ করে বসে পড়লো আলো।
আরও কারণ আছে, আমরা মুসলিম। দুই ঈদ ব্যতীত অন্য কোনো দিবস পালন করাই আমাদের জন্য নিষিদ্ধ। রাসূল সা এর দেখানো পথই আমাদের। অন্য পথ আমাদের জন্য নয়। রাসূল সা বলেছেন-
“যে জাতি কোনো জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য হবে, আর যে যেই জাতিকে ভালোবাসবে, তাদের সাথেই তার হাশর হবে।“ (আবু দাউদ-৪০৩১, মুসনাদে আহমাদ-৫০৯৩)
এবার ভেবে বল, ওদের মতো সেজে বা শুধুমাত্র মৌখিক শুভেচ্ছা জানিয়ে ওদের ত্রিত্ববাদে সমর্থন জানানো কোনো মুসলিমের পক্ষে শোভনীয়? শুধুমাত্র মুখে শুভেচ্ছা জানানোর মানেও দাঁড়ায় যে, ওদের বিশ্বাস সত্য আর সেখানে কোনো মঙ্গল নিহিত আছে। আমরা তাই হাসিমুখে ওদের স্বাগতম জানাচ্ছি। আর ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে করা লাইটিং, ক্রিসমাস ট্রি, এতো এতো পুতুল, খাবার জিনিসের অপ্রয়োজনীয় ছড়াছড়ি এসব আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ মনে হলেও সবই অপচয়। এই টাকা দিয়ে চাইলেই তো জনকল্যাণমূলক কাজ করা যায়। তোর কি মনে হয়? তাসনিয়া প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো।
এভাবে আমি কখনও ভাবিইনি৷ বিস্ফারিত চোখে তাকালো আলো।
ভাববি। বেশী বেশী ভাববি, বুঝলি? মাথায় আঙ্গুল দিয়ে দু'টো টোকা দিলো তাসনিয়া।
This is brain, not show piece.
দ্বীনের জ্ঞান ও ক্রিসমাস
জাকিয়া সিদ্দীকি
#রৌদ্রময়ী_ক্রিসমাস
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
Hey there! Looks like you're enjoying the discussion, but you're not signed up for an account.
When you create an account, we remember exactly what you've read, so you always come right back where you left off. You also get notifications, here and via email, whenever new posts are made. And you can like posts and share your thoughts.
Sign Up
Bookmarks