দেশে সম্প্রতি কয়েকজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হবার পর আমরা সবাই যে প্রচন্ড উদ্বেগ আর আতঙ্কের মধ্যে আছি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্তু, শুধু উদ্বিগ্ন আর আতঙ্কিত না হয়ে, আমরা সবাই নিজেদের, আমাদের ভালোবাসার মানুষগুলো এবং সমগ্র দেশকে রক্ষার জন্য ব্যক্তিগত পর্যায়ে কি কি পদক্ষেপ নিতে পারি সেটার দিকে বোধহয় আমাদের এখন নজর দেয়া উচিত।
মনে রাখবেন, একটি মহামারী প্রতিরোধ করা সরকার কিংবা স্বাহ্যকর্মীদের একার দায়িত্ব নয়। এ দায়িত্ব আমার, আপনার সবার। আপনি বাঁচলে, আপনার পরিবার বাঁচলে - দেশ বাঁচবে, এ দেশের ১৭ কোটি জনগণ বাঁচবে।
আমরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে কি কি করতে পারি?
· বাইরে থেকে আসার পর অবশ্যই খুব ভালো করে, ঘষে ঘষে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। মনে রাখবেন, কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড।
· যত সম্ভব বাইরে কম যাবেন, অর্থাৎ, মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। কারণ, এ রোগ মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে দ্রুত ছড়ায়।
· নিজেরা যদি (আল্লাহ না করুন) আক্রান্ত হন, অবশ্যই নিজেকে সঠিক পদ্ধতিতে -self-quarantine করে রাখুন। প্রয়োজনে হাসপাতালে যান।
পরিবারের সুরক্ষার জন্য কি কি করতে পারি?
· বিনা প্রয়োজনে সবাইকে বাড়ির বাইরে যেতে নিরুৎসাহিত করুন।
· বিশেষ করে বাড়ির বৃদ্ধ ও শিশুদের, কারণ, এরা সবচাইতে vulnerable. (যদিও এ রোগে শিশু মৃত্যুর হার প্রায় শূণ্যের কোঠায়)
· যেহেতু স্কুল-কলেজ বন্ধ, সম্ভব হলে আপনার ড্রাইভারকে ছুটি দিয়ে দিন। কারণ, এরা গণপরিবহনে চলাফেরা করে এবং যাওয়া-আসার পথে বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে আসে, যা আপনার, আপনার পরিবার কিংবা তাদের বিপদের কারণ হতে পারে।
· বাড়ির part timer বুয়াদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সম্ভব হলে বুয়াকে ছুটি দিয়ে নিজ সন্তানদের মধ্যে কাজ ভাগ করে দিন। এতে তারা ব্যস্ত থাকবে এবং কাজ শিখবে।
· বাচ্চারা যেন Private Tutor কিংবা Arabic Teacher এর কাছে online এ পড়তে পারে, সে ব্যবস্থা করে দিন। কারণ, তারা জীবানু নিয়ে আপনার বাসায় প্রবেশ করতে পারে।
· আত্নীয়-স্বজনের সাথে দেখা করা আপাতত বন্ধ করুন।
· ঘরের মেঝে প্রতিদিন সাবান দিয়ে পরিস্কার করুন।
পুরো এ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং এর সুরক্ষার জন্য আমরা কি কি করতে পারি?
· বাড়ির মেইন গেটের সামনে সাবান-পানি, হেক্সিসল কিংবা স্যানিটাইজার রেখে দিন।
· নিয়ম করে দিন, যে বা যারা প্রবেশ করবে (আপনি নিজে সহ), ঢোকার আগে হাত ভাল করে ধুঁয়ে প্রবেশ করবে। কারণ, এ রোগটি আক্রান্ত ব্যক্তি যা যা স্পর্শ করে (fomite borne) তার মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।
· প্রতিরক্ষার দ্বিতীয় পর্যায় হিসেবে, প্রত্যেক অ্যাপার্টমেন্টের মূল দরজার সামনে আর একবার হাত জীবানুমুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে পারেন।
· প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে রাখুন, যেন আপনার বাড়ির কাজের লোক, ড্রাইভার বা দারোয়ানকে টুকিটাকি কেনার জন্য বার বার বাইরে পাঠাতে না হয়।
** মনে রাখবেন, আমাদের মূল লক্ষ্য, disease transmission cycle টাকে বন্ধ করার চেষ্টা করা।
কি কি খাবার আমরা খেতে পারি?
· মনে রাখবেন, যে কোন জীবানু বা রোগের বিরুদ্ধে আমাদের সবচাইতে বড় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হল, আমাদের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (immune system)। এজন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্র্রচুর পরিমান স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান।
আমাদের দেশে তৈরী effervescent (যা পানিতে গুলে যায়) ভিটামিন সি আছে। সেগুলো খেতে পারেন। এগুলো আপনার immune system boost করতে সহায়তা করবে।
· রেসুস্টেরেন্টের খাবার, বিশেষ করে ফাস্ট ফুড, ডিপ ফ্রাইড খাবার বর্জন করুন। এগুলোর ফুড ভ্যালু বা খাদ্যমান খুবই নিম্ন পর্যায়ের।
শেষ কথা:
· আতঙ্কিত হবেন না কিংবা আতঙ্ক ছড়াবেন না।
· জীবনে বিপদ-আপদ আসবেই, এর পূর্বেও পৃথিবীর মানুষের উপর বিপদ এসেছে।
· আমাদের ধৈর্য্য ধরে, মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে তা মুকাবিলা করতে হবে।
· মহান আল্লাহর নিকটে সিজদায় বেশী বেশী দোয়া করুন। কারণ, তিনিই আমাদের একমাত্র বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারেন।
· মনে রাখবেন, বর্তমান পরিস্থিতি একটি “পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সী” – এর অর্থ হল, এখন ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকলকে একসাথে এই পরিস্থিতি মুকাবিলা করতে হবে।
· শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পর্যায়ে এই ছোট ছোট কিছু সর্তকতা অবলম্বন, আমাদের অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে।
· পাবলিক হেলথের ভাষায় একে বলে, “an ounce of prevention is worth a pound of cure” অর্থাৎ, আপনি এক আউন্স সুরক্ষা নেবেন, যা আপনাকে এক পাউন্ড সমপরিমান কার্যকারীতা দেবে।
আল্লাহ আমাদের বিপদে ধৈর্য্য ধারণ করার এবং সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করার তৌফিক দিন। আমীন। ।
লিখেছেন: Fahmida Farhana Khanam,
Student of Masters in Public Health,
Bangladesh University of Health Science.
Date: 17/03/2020
(যদি পোস্টটি উপকারী মনে হয়,তাহলে শেয়ার করুন)
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শরীরে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শ্রবণশক্তিতে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কুফরি ও দারিদ্র্য থেকে। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে। আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই।
আবূ দাউদ ৪/৩২৪, নং ৫০৯২; আহমাদ ৫/৪২, নং ২০৪৩০; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ, নং ২২; ইবনুস সুন্নী, নং ৬৯; বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৭০১। আর শাইখ আল্লামা ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ ‘তুহফাতুল আখইয়ার’ গ্রন্থের পৃ. ২৬ এ এর সনদকে হাসান বলেছেন।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি যে, বাইরে লোকসমাগম অত্যন্ত কমে যাওয়াতে নিম্ন আয়ের মানুষ, যেমন: রিক্সাওয়ালা, সিএনজি চালক, দিনমজুর, ফকির মিসকিন, চা-বিক্রেতা, সবজী বিক্রেতা - এরা সাংঘাতিক বিপদে পড়েছে।
সবার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের ব্যক্তি মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে, আমরা যেটুকু করতে পারি সেটুকুও একেবারে ফেলে দেয়ার মত নয়।
আমাদের যদি একান্ত প্রয়োজনে বাইরে যেতে হয়, তখন রিক্সাওয়ালাকে আমরা বিশ টাকার জায়গায় সাধ্যমত ১০০/৫০০/১০০০ টাকা দিতে পারি।
যে ফকির, সবজী বা চা-বিক্রেতা আমাদের গলির মোড়ে বসে থাকে, তাদেরও অর্থ কিংবা শুকনো খাবার কিনে দিয়ে সাহায্য করতে পারি, যেন পেটের দায়ে তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় বসে থাকতে না হয়।
এটা হয়তো আমাদের কাছে ছোট একটা প্রচেষ্টা মনে হতে পারে। কিন্তু ভেবে দেখুন, যদি লক্ষ মানুষ এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করে, তবে এর ফলাফল কত ব্যাপক হতে পারে।
চলুন আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে আমরা এই অভাবী মানুষগুলোর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই।
এ ভীষণ বিপদের দিনে তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ছোট ছোট পদক্ষেপ নেই।।।
আল্লাহ আমাদের ছোট ছোট প্রচেষ্টাগুলোকে কবুল করে নিন এবং এগুলোকে আমাদের পরকালে মুক্তির পাথেয় করে দিন।। আমীন।।।
যে ব্যক্তি (মহামারীর সময়) নিজ বাড়িতে অবস্থান করে তার জন্য শহীদের সমান প্রতিদান (সওয়াব)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যদি কোন ব্যক্তি মহামারী রোগে আক্রান্ত হয় (বা মহামারী রোগ এসে পৌছে) অতঃপর ঐ অবস্থায় ধর্য ধারণ করে এবং সওয়াবের নিয়্যাতে নিজ বাড়িতে অবস্থান করে এবং ইয়াকীন রাখে যে, ঐইটাই হবে যা আল্লাহ তার ভাগ্যে লিখে রেখেছেন, তবে এইরকম ব্যক্তির জন্যে রয়েছে শহীদের সমান প্রতিদান (সওয়াব) ।
সহীহ বুখারী: 5734 এবং মুসনাদে আহমদ: 24358।
এইটা প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির জন্যে যে ধর্য ধারণ করে এবং নিজ রব্বের নিকট সওয়াবের আশা রাখে ও ভরসাও করে, সে ঐই মহামারী রোগে মৃত্যুবরন করুক বা না করুক ।
ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী রহিমাহুল্লাহ বলেন: যদি কোন ব্যক্তি হাদীসে উল্লিখিত গুনে গুনান্বিত হয়ে যায় আর সেই ব্যক্তি ঐই রোগে মৃত্যুবরণ করুক বা না করুক সে শহীদের সওয়াব পেয়ে গেছে। (ফাতহুল বারী 10/194)
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
"এত সুন্দর আর গোছানো লেখা আমি আর পাইনি। প্লিজ সময় নিয়ে একটু পড়ুন এবং যত বেশী পারুন, কথাগুলো ছড়িয়ে দিন।
আল্লাহ হেফাজতকারী এবং নিশ্চয়ই তিনি ধৈর্যশীলদের পছন্দ করেন।"
কার্টেসি: আরিফ আজাদ
#যেদিন নবিজী সাঃ আবু বাকার রাঃকে সাথে নিয়ে মক্কা ত্যাগ করেন, যে ঊষালগ্নে, সেদিন তাঁরা দুজনে একটা গুহার মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পেছন থেকে শত্রু যখন একেবারে নাকের ডগায় চলে এলো, একেবারে গুহার মুখে, তখন ক্ষণিকের জন্য ভয় পেয়ে যান আবু বকর রাঃ। তিনি বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ সঃ! এই বুঝি তারা আমাদের দেখে ফেললো’। তখন নবিজী সাঃ প্রতিউত্তরে যা বলেছিলেন, তা কুরআনে স্থান পেয়ে গেছে। তিনি বলেছিলেন, ‘হতাশ হয়োনা। নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন’।
#নবিজী সঃ'র ওপর ঘনিয়ে এসেছিলো এক ঘোরতর বিপদ। মক্কার মুশরিকেরা তাঁকে হত্যা করার পাঁয়তারা করছিলো। তখন, আল্লাহর নির্দেশে নবিজী সঃ এই বিপদ এড়াতে মক্কা ছেড়ে মদীনা অভিমুখে রওনা করেন। দেখুন, বিপদ থেকে বাঁচার জন্য নবিজী সাঃ এর কি কোন তাওয়াক্কুল ছিলোনা? তিঁনি কি ভেবেছেন, ‘আরে! আল্লাহ বাঁচালে আমাকে মক্কাতেই বাঁচাবেন। মারলে মক্কাতেই মারবেন। আমি মক্কা ছাড়বো কেনো?’
আর, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালাও কি তাঁকে দিয়ে এমনটা করিয়েছেন? না। তিঁনি বরং নবিজী সঃ'কে মক্কা ছেড়ে চলে যেতে বললেন। নবিজী সঃ'র তো তাকওয়ার কোন ঘাটতি ছিলোনা। তাওয়াক্কুলের কোন কমতি ছিলোনা। এমন ধারণা করাই পাপ হবে। তাহলে কেনো তাঁকে সেদিন মক্কা ছাড়তে হলো? অবশ্যই সতর্কতার অংশ হিশেবে। শত্রুর চোখ এড়াতে কেনো তাঁকে গুহার মধ্যে আশ্রয় নিতে হলো? আল্লাহ তো চাইলে তাঁকে এমনিই বাঁচিয়ে দিতে পারতেন। এটাও সতর্কতা। আর, এই সতর্কতা কখনোই তাওয়াক্কুল পরিপন্থী নয়।
#মুসা আঃ এর কথাই ধরুন। পেছনে ফেরাউনের বিশাল সৈন্যবহর, আর সামনে কূল-কিনারাহীন লোহিত সাগর। এমতাবস্থায় ঘাবড়ে গেলো মূসা আঃ এর সঙ্গীরা। ভাবলো, ‘এই বুঝি তারা আমাদের ধরে ফেললো’। তখন মুসা আঃ শোনালেন অভয় বাণী। বললেন, ‘আল্লাহ সাথে আছেন’।
এমন মুহূর্তে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা মুসা আঃকে কি করতে বললেন? তিঁনি মুসা আলাইহিস সালামকে বললেন তার লাঠি দিয়ে পানিতে আঘাত করতে। মুসা আঃ তা-ই করলেন, আর সাথে সাথে সমুদ্র দুভাগ হয়ে, তাতে তৈরি হয়ে গেলো একটি শুষ্ক রাস্তা। আচ্ছা, কেনোই বা মুসা আঃকে লাঠি দিয়ে পানিতে আঘাত করতে হলো? আল্লাহ কি চাইলে এমনিতেই রাস্তা তৈরি করে দিতে পারেন না? কিন্তু না, আল্লাহ চান বান্দা যেন তার চেষ্টাটুকু করে। বাকিটা আল্লাহর হাতে।
#নূহ আঃএর কথা স্মরণ করুন। যখন তাঁর জাতি একেবারে অবাধ্য, উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠলো, যখন তাদের ওপর আল্লাহর আযাব অত্যাসন্ন হয়ে আসলো, তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা নূহ আঃকে বললেন একটা নৌকা তৈরি করে নিতে। তাঁর জাতির ওপরে যে ভয়ঙ্কর বন্যা আপতিত হবে, তা থেকে বাঁচার জন্যে তারা যেন সেই নৌকায় উঠে পড়ে।
খেয়াল করুন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা কি চাইলে নূহ আঃকে নৌকা বানানো ব্যতীতই সেই বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে পারতেন না? অবশ্যই পারতেন। কিন্তু, তিনি কেনো তাহলে নুহ আঃকে নৌকা তৈরির আদেশ করেছিলেন? ওই যে, আল্লাহ চান বান্দা যেন তার নিজের চেষ্টাটুকু করে। সে যদি আন্তরিক হয়ে নিজের কাজটুকু করে ফেলে, সেটাকে সম্পূর্ণতা আল্লাহ দিয়ে দেন।
#মারঈয়াম আঃ এর কথা স্মরণ করা যায় এখানে। ঈসা আঃকে গর্ভে ধারণ করার পরে যখন তার প্রসববেদনা শুরু হয়, সেদিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা তাঁকে একটা খেঁজুর গাছের ডাল ধরে নাড়া দিতে বলেছিলো। ডাল ধরে নাড়া দিলে খেঁজুর ঝরে পড়বে এবং ওই খেঁজুর তিনি খেতে পারবেন।
দেখুন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা হুকুম করলে গাছ থেকে খেঁজুর কি এমনিই ঝরে পড়তো না মারঈইয়াম আঃ এর জন্য? অবশ্যই পড়তো। কিন্তু তিঁনি তা না করে, মারঈয়াম আঃকে ওই অবস্থায়, যখন তিঁনি প্রসববেদনায় কাতর, তখন বললেন গাছের ডাল ধরে নাড়া দিতে। কেনো বলেছিলেন? আগেই বলেছি, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা চান বান্দা যেন তার নিজের দায়িত্বটুকু, নিজের চেষ্টাটুকু করে, আর বাকিটা আল্লাহর ওপর সোপর্দ করে দেয়।
##আজকে, আমাদের সামনে এসেছে এক ভয়াবহ দুঃসময়। আমরা অবলোকন করছি একটি ভয়ঙ্কর মহামারী কাল। এই দুঃসময় কাটাতে হলে, আমাদের অবশ্যই অবশ্যই আমাদের দায়িত্বটুকু পালন করতে হবে। আমরা যদি আমাদের দায়িত্বটুকু পালন করি, আশা করা যায়, ইন শা আল্লাহ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা এই বিপদ থেকে উত্তরণের পথ আমাদের জন্য সহজ করে দেবেন।
‘'এতো সতর্ক হয়ে কি হবে? আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে দেবেন। আর মরণ থাকলে তো মরতে হবেই'’- এই জাতীয় কথাবার্তা যারা বলছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ নবিজী সাঃ এর ঘটনাটা আরেকবার পড়ার জন্যে। তাঁকে হত্যার চক্রান্ত হচ্ছে জানতে পেরে তিঁনি মক্কা ত্যাগ করেছেন। শত্রুর চোখ এড়াতে তিঁনি গুহার ভিতরে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
বিপদের মুখে তিঁনি, ‘আরে, আল্লাহ বাঁচিয়ে দেবে’ বলে গা ছাড়া ভাব দেখাননি। বরং, বিপদ এড়াতে নিজের যেটুক করা দরকার, তার সবটুকু করেছেন। সাথে রেখেছেন আল্লাহর ওপর অগাধ তাওয়াক্কুল। এটাই তো নববী পদ্ধতি। তাহলে, আমরা কিভাবে এতো উদাসীন হচ্ছি? এতো অসতর্ক থাকছি? ভাবুন তো, এটা কি সত্যিই তাওয়াক্কুলের অংশ কিনা? ঈমানের জজবা কিনা?
মুসা আঃ নিজের চেষ্টা করেননি? নূহ আঃ নিজের চেষ্টা করেননি? মারঈয়াম আঃ প্রসববেদনা নিয়ে নিজের চেষ্টা বাদ রেখেছিলেন? না। তাহলে, কোন ঈমানের বলে, কোন তাওয়াক্কুলের বলে আমরা এমন গা ছাড়া ভাব দেখাচ্ছি আর বলছি- ‘আরে, আমার কিচ্ছু হবেনা?’
নবিজীসঃ'র একটা হাদিস থেকে আমরা জেনেছি, মহামারীতে কোন ঈমানদার ব্যক্তি মারা গেলে তিনি শহিদের মর্যাদা পাবেন। নিঃসন্দেহে খুব ভালো মর্যাদা। কিন্তু, এই হাদিস টেনে যারা বলছেন, '‘আরে, মরলে তো শহিদ হবো। তাহলে এতো ভয় কিসের? শহিদ হওয়ার সাধ নেই মনে?’'
সত্যি? মহামারীতে মরলে শহিদ হবেন- এজন্যে আপনি মহামারীকে পাত্তা দিতে চাইছেন না? শহিদ হওয়ার জন্যে? তাহলে, নবিজী সাঃ যে বলেছেন, মহামারী আক্রান্ত এলাকায় বাইরে থেকে যেন কেউ না ঢুকে, ভিতরের কেউ যেন বাইরে না যায়’- এই হাদিসটাকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? শহিদ হওয়া এতো সহজ হলে তো তিনি উৎসাহ দিতেন বেশি করে মহামারী এলাকায় ঢুকার জন্যে। আর, সেদিন যে ওমর রাঃ এতোগুলো সাহাবিদের নিয়ে মহামারী আক্রান্ত এলাকায় না ঢুকে চলে এসেছিলেন, তাহলে তারা কি শহিদ হয়ে যাওয়ার সুযোগটা হারিয়েছেন? লুফে নেননি? আসলে, আপনি কি শহিদ হতে চাচ্ছেন না আত্মহত্যা করতে চাচ্ছেন, তা আরেকবার ভেবে দেখবেন কি?
হাদিস থেকে জানা যায়, আগুনে পুড়ে মরলেও শহিদ, আর পানিতে ডুবে মরলেও শহিদ। এমনকি, পেটের রোগে অসুস্থ হয়ে মারা গেলেও শহিদের মর্যাদা পাওয়া যাবে। তো, ভাইজানেরা, আপনার বাসায় আগুন লাগলে শহিদ হওয়ার জন্য আপনি কি বাসার মধ্যে বসে থাকবেন? আপনার লঞ্চ ডুবতে থাকলে আপনি কি সাঁতরাবেন না? নিজ থেকেই পানিতে গা এলিয়ে দেবেন? কিংবা, পেটের অসুখে ধরলে ডাক্তারের কাছেও যাবেন না?
ওই যে, যা বলছিলাম, এই মহামারী থেকে বাঁচতে আমাদের সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ বলেছেন, ‘তিনি ওই জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না, যে জাতি নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন না করে’। আপনি আর আমি যদি চেষ্টাই না করি, ভাগ্যটা পরিবর্তন হবে কি করে? আমাদের চেষ্টাটুকু তো করতে হবে, এরপর অপেক্ষা করতে হবে আল্লাহর ফয়সালার জন্যে। চেষ্টা করার পরেও এই মহামারীতে যদি আমাদের মৃত্যু হয়, তখন আমরা শহিদের মর্যাদা লাভ করবো ইন শা আল্লাহ। কিন্তু বিনা চেষ্টায় যদি শহিদ হওয়ার জন্যে হাত-পা ছেড়ে বসে থাকি, তা আত্মহত্যা ছাড়া আর কিছুই হবেনা।
তাহলে, চেষ্টা কিভাবে করবো?
বিশেষজ্ঞরা আমাদের যা জানাচ্ছেন তা-ই করতে হবে। যতোটা সম্ভব একা একা থাকতে হবে। বেশি মানুষ একত্র হয়, এমন স্থানে কোনোভাবেই যাওয়া যাবেনা। সম্ভব হলে, ঘরে বন্দী হয়ে যেতে হবে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে। বাইরে বেরুতে হলে, অবশ্যই মাস্ক, প্রয়োজনে হ্যান্ড গ্লাভস পরতে হবে। বিদেশ থেকে এসেছে, এমন কারো সংস্পর্শে যাওয়া যাবেনা।
বেশি বেশি হাত ধুতে হবে। হাত না ধুয়ে নাক-মুখ-চোখ স্পর্শ করা যাবেনা কোনোভাবেই। পুষ্টিকর খাবার-দাবার খেতে হবে যাতে শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভালো থাকে। একটা পরিবার সতর্ক থাকা মানে একটা পরিবার নিরাপদ থাকা। এভাবে, ব্যক্তিগতভাবে যদি আমরা সতর্ক হই, কতোগুলো পরিবার নিরাপদ হতে পারি, তা কি ভেবেছেন?
আপনার উদ্যোগগুলোকে ছোট ভাববেন না। এই সময়ে, আপনার এই উদ্যোগ দিনশেষে বিশাল প্রতিফল হয়ে ফিরে আসবে, ইন শা আল্লাহ। তাওবা-ইস্তিগফারে বেশি বেশি সময় দিবেন। মোনাজাতে সবার জন্য দুয়া করবেন। মনে রাখবেন, আপনি অন্যের নিরাপত্তা চেয়ে যখন দুয়া করেন, ফেরেশতারা তখন ওই একই দুয়া আপনার জন্যে করে। এই বিপদ হোক আমাদের জন্য আল্লাহর দিকে ফিরে আসার এক অনন্য সুযোগ।
In the time of CORONA, ‘United we fall. Divided we stand’.
সংগৃহীত
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
#বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে মন শান্ত রাখা এবং সময়কে কাজে লাগানোর ব্যাপারে ১২টি দিকনির্দেশনা
-----------------------
প্রশ্ন: বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব বেশি টেনশন হচ্ছে। শান্ত থাকা কঠিন মনে হচ্ছে। কী হবে জানি না। এমন পরিস্থিতিতে দয়া করে মনকে শান্ত রাখার উপায়গুলো বলবেন। আর আমাদের এ সময়গুলোকে কিভাবে কাজে লাগাতে পারি সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিবেন আশা করি। জাযাকাল্লাহু খায়রান।
উত্তর:
وأنتم فجزاكم الله خيرا ...الحمد لله والصلاه والسلام على رسول الله أما بعد:
আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, মুমিন জীবনে বিষন্নতা, হতাশা এবং অস্থিরতার কোনো স্থান নেই। সর্বাবস্থায় সে হবে আল্লাহর প্রতি আস্থাশীল এবং তার লিখিত তাকদীরের প্রতি বিশ্বাসী। কেননা মুমিনগণ বিশ্বাস করে, মহান আল্লাহর লিখিত তাকদীরের বাইরে পৃথিবীতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্� � কোন ঘটনা ঘটে না এবং তার জ্ঞানের বাইরে একটি গাছের পাতাও পড়ে না। এই বিশ্বাস আমাদের মনকে প্রশান্ত রাখতে এবং হতাশা, অস্থিরতা, বিষন্নতা ইত্যাদি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
আরেকটি বিষয় হলো, মুমিনের জীবনে যা কিছু ঘটুক -চাই তা ভালো হোক অথবা মন্দ হোক- প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার জন্য রয়েছে অবারিত কল্যাণের বার্তা এবং শুভ সংবাদ। আর তা হল, সে কোন রোগ-ব্যাধি, সমস্যা-সংকট ও বিপদাপদে পতিত হলে, আল্লাহ তা'আলা এর মাধ্যমে তার মর্যাদা উন্নীত করেন এবং পাপ-পঙ্কিলতা থেকে তাকে পরিশুদ্ধ করেন।
বিশেষ করে হাদিস থেকে জানা যায় যছ, মহামারী ঈমানদারের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত প্রাপ্তি এবং শাহাদাত এর মর্যাদা লাভের কারণ । সুবহানাল্লাহ!
#যাহোক, এ পর্যায়ে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের মানসিক চাপ কমানো, মনকে শান্ত রাখা এবং সময়কে কাজে লাগানোর দশটি উপায় তুলে ধরা হলো:
১) সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রতি সুদৃঢ় আস্থা এবং তাকদীরের প্রতি অবিচল বিশ্বাস রাখুন। বিশ্বাস করুন, মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা ও মহান অধিপতি আল্লাহ তাআলা সবকিছু দেখছেন এবং নিয়ন্ত্রণ করছেন। তার ফয়সালা ও জ্ঞানের বাইরে এ বিশ্বচরাচরে কোন কিছুই ঘটে না।
২) মন শক্ত রাখুন। দুশ্চিন্তা করবেন না। অস্থির হবে না। কেননা এতে মনোবল ভেঙে যায়। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
৩) বেশি বেশি ইস্তেগফার করুন এবং দুআ, তসবিহ, তাহলীল ও জিকির-আজকারে জিহ্বা সচল রাখুন। সকাল সন্ধ্যার অজিফা গুলো পাঠ করুন। বিশেষ করে রোগ-ব্যাধি ও মহামারী-সংক্রান্ত দোয়াগুলো পাঠ করুন।
৪) দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা থেকে মুক্তির জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি বেশী বেশী দুরুদ পাঠ করুন। (একটি সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল)
৫) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সময় মত ঘরেই আদায় করুন। পরিবারের লোকজনের সাথে জামাতে সালাত আদায় করার চেষ্টা করুন।
৬) এই ট্রাজেডিকে জীবনের 'টার্নিং পয়েন্ট' হিসেবে গ্রহণ করুন। অর্থাৎ লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করে বাকি জীবন আল্লাহর পথে পরিচালিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
৭) হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা কালীন অবসর সময়কে
পরিকল্পনা মাফিক কাজে লাগান। যেমন: কুরআন মুখস্থ, কুরআনের তাফসির পাঠ, দোয়া মুখস্থ, হাদিস পাঠ, ভালো আলেমদের লিখিত বই পড়া, ইউটিউব বা ইন্টারনেট থেকে প্রয়োজনীয় কোন কোর্স করা, নতুন কোন কিছু শেখা।
পাশাপাশি স্ত্রীর কাজে সাহায্য করুন এবং পরিবার ও সন্তানদেরকে ভালো কিছু শেখান বা দীনি তারবিয়াত (প্রশিক্ষণ) দিন।
৮) সুশৃংখল জীবন যাপন করুন। অর্থাৎ পরিমিত পুষ্টিকর খাওয়া, যথাসময়ে ঘুমানো, শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম ইত্যাদির প্রতি যত্নশীল হোন।
৯) নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তথ্য নিন। গুজবে কান দেবেন না। কেননা অনির্ভরযোগ্য উৎস থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও পরিসংখ্যান শুনে মনের মধ্যে অতিরিক্ত ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি হবে।
১০) দরিদ্র ও অসচ্ছল লোকদের খোঁজখবর রাখুন এবং যথাসাধ্য তাদেরকে সাহায্য করুন।
১১) আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং বিশ্বস্ত লোকদের সাথে ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইমো ইত্যাদি মাধ্যমে যোগাযোগ রাখুন। প্রয়োজনীয় বিষয়ে বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ লোকদের নিকট পরামর্শ নিন।
১২) এবং পাশাপাশি সতর্কতার সাথে সরকারি বা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন নির্দেশনা ও স্থাস্থবিধি মেনে চলুন।
পরিশেষে দোয়া করি, মহান আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরণের অকল্যাণ থেকে হেফাজত করুন এবং তার সন্তুষ্টির উপর আমাদের বাকি জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
-----------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার সঊদী আরব।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
মে মাসে নক্ষত্রের উদয় ও করোনার বিদায়
<><><><><><><><><><><><><><><><>
আমরা আজ মারাত্মক বিপদের মাঝে। ইতিহাসের খুব মারাত্মক এক বিভীষিকাময় সময় আমরা পার করছি।
লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। আজ সকাল পর্যন্ত এক লক্ষ সত্তর হাজারের ও উপরে মানুষ এই ভাইরাসে প্রাণ দিয়েছে।
মৃত্যুর মিছিল যে আরো কত লম্বা হবে তা আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ আযযা ও জাল্ল ই ভালো জানেন। তবে আমাদের নবীর (সা) দুআর বরকতে আমাদের মারাত্মক ক্ষতি হবে না বলে বিশ্বাস করি আমরা।
আজ একটা হাদীস ফেসবুক পাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তা হলে কৃত্তিকা বা সুরাইয়া নামক এক তারকা নাকি মে মাসের ১২ তারিখ উদয় হতে যাচ্ছে। তার কারণে করোনা বিদায় নেবে।
একটা তারকাপুঞ্জ আছে, যার আরবি নাম সুরাইয়া। যেটাকে বাংলায় কৃত্তিকা বলে, ইংরেজিতে বলে Pleiades (প্লায়েডিয)।
মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এর উদয় ফজরের সময় হয়। এই সময় এই তারকার উদয়ে মানুষের উপর থেকে নানা ব্যাধি বিদায় নিয়ে চলে যেতে পারে বলে একটা হাদীস আছে।
আমার মনে হয় এই হাদীস নিয়ে একটু আলোচনা হওয়া দরকার।
ইমাম আততাহাওয়ী তার “শারহ মুশকিল আল আসার” গ্রন্থে ইমাম আবু হানিফার সনদে একটা হাদীস নিয়ে এসেছেন। এই হাদীসকে তিনি দূর্বোধ্য হাদীস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এবং অত্যন্ত গভীর পান্ডিত্য দিয়ে তার বিশ্লেষণ করেছেন।
হাদীসটাতে আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, “যখন তারাটি উঠবে, তখন প্রতিটি শহরবাসী থেকে ব্যাধি উঠিয়ে নেয়া হবে”।
ইমাম আততাহাওয়ী বলেন, এই হাদীস নিয়ে ভাবতে যেয়ে আমি এই তারকার সন্ধান করা শুরু করলাম। কয়েকটা হাদীস নিয়ে গবেষণা করতে যেয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে উমারের হাদীসের সন্ধান পেলাম।
তিনি বলছেন, ‘মহানবী (সা) ব্যাধি চলে যাওয়ার আগে ফল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন’। বর্ণনাকারী উসমান বলেন, আমি ইবনে উমারের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, কখন যাবে সেই ব্যাধি। তিনি বললেন, ঐটা সুরাইয়া তারকাপুঞ্জ উদয়ের পর।
ইমাম আততাহাওয়ী বলেন, এই হাদীস থেকে আমরা বুঝলাম সুরাইয়া তারকা পুঞ্জ উদিত হলে ব্যাধি চলে যাওয়ার যে কথা বলা হয়েছে, তা হলো খেজুরের ব্যাধি। মূলতঃ গরম আসার আগে বিশেষতঃ বসন্তের সময় খেজুরে রোগের প্রাদুর্ভাব হয়।
ঐটা চলে যায় সুরাইয়া উঠলে। আমি আরো হাদীস গবেষণা শুরু করলাম কোন সময়ে এই সুরাইয়া বা প্লায়েডিয উদয় হয় তার কথা কোন হাদীসে পাওয়া যায় কিনা।
গবেষণায় আবু হুরায়রার বর্ণিত আরেকটা হাদীস পেলাম যেখানে মহানবী (সা) বলছেন, “সকালে তারকাটা উঠলে মানুষদের মাঝে ছড়িয়ে পড়া ব্যাধি আল্লাহ উঠিয়ে নেন, অথবা কমিয়ে দেন”। আমি বুঝলাম যে সুরাইয়ার এই উদয়টা তাহলে ভোর বেলায় বলা হলো।
আমি তখন মিশরীয়ের পঞ্জিকা ঘাটতে থাকলাম। সকালে এই তারকার উদয় তাদের সাল অনুযায়ি বাশান্স মাসে হয়, যেটা তাদের পঞ্জিকায় ঐ মাসের ১৯ তারিখে হয়। এইবার এই ক্লু ধরে ইরাকি পঞ্জিকায় এই মাসকে মিলিয়ে আয়ার (মে)কে পেলাম, এবং এই মে মাসের ১২ তারিখ এই তারা সকালে উঠে বলে জানলাম।
এরপর ইমাম আততাহাওয়ী আবু হুরায়রার আরেকটি হাদীস উল্লেখ করেন যেখানে বলা হচ্ছে, মহানবী (সা) বলেন,
إِذَا طَلَعَتِ الثُّرَيَّا صَبَاحًا رُفِعَتِ الْعَاهَةُ عَنْ أَهْلِ الْبَلَدِ
যখন সকালে সুরায়্যা উঠবে তখন শহরবাসিদের কাছ থেকে ব্যাধি উঠিয়ে নেয়া হবে। শারহ মাআনি আলআসার, ৪/২৩।
এরপরে ইমাম আততাহওয়ী বর্ণিত এই হাদীস গুলো নিয়ে যথেষ্ঠ গবেষণা হয়েছে। আমাদের শায়খ ইমাম আলবানী এই ধরণের ৩টা হাদীস নিয়ে প্রমান করেছেন ৩টা হাদীসই দাঈফ, তথা দূর্বল।
তবে ইমাম তাহাওয়ীর সনদগুলো বিবেচনা করলে হুট করে দাঈফ বলা যায়না। বরং ইমাম আহমাদের মুসনাদের হাদীস, ইমাম মুহাম্মাদের “আলআসার”এর হাদীস, এবং খেজুর বিক্রি সংক্রান্ত সব হাদীস গুলো একত্রে আনলে আবু হুরায়রার হাদীসকে হাসান সাব্যস্ত করা যায়, এবং ইবন উমারের হাদীসকে সাহীহ মানতে হয়।
যা হোক এই হাদীসগুলোর সাধারণ আলোচনা ছিলো একটু ভিন্ন। তা হলো আরব পঞ্জিকায় শীতকাল শুরু হয় ইংরেজির অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে। ঐ সময়ে সুরাইয়া নামের এই নক্ষত্রপুঞ্জ সন্ধ্যার পর উদয় হতে থাকে। রাত গভিরে তখন এই তারা খুব সহজে দেখা যায়।
সৌরাজগতের অনেক তারকার সাথে আমার নানা আমাকে পরিচিত করিয়ে দেন।
এই সুরাইয়াকে তিনি “তিত পুঁটির ঝাঁক” বলতেন। এটা ৬ বা ৭ বা ৯ বা ১১ তারকার একটা পুঞ্জ যা অক্টোবরের আকাশে খালিচোখে সুন্দর ভাবে দেখা যায়। কিন্তু এই পুঞ্জে আছে আরো ২৫০টা সংগী তারকা, যারা এক সাথেই কক্ষপথে “পুঁটি মাছের” ঝাঁক মত বেঁধে চলে। সপ্তদশ শতকে গ্যালিলির টেলিস্কোপে পাওয়া তথ্যে তার গতিময়তার বর্ণনা আছে।
মধ্য ফেব্রুয়ারিতে এই তারকা পুঞ্জ রাত কিছু গভীর হলে উদয় হয়। তখন বেশ বৃষ্টি হয়। আরব দেশ গুলোতে তখনই বসন্তের পূর্ণতার সময়।
এরপর থেকে শুরু হয় নানা রকম ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার প্রাদূর্ভাব। একে তো সূর্যের প্রখরতার অভাব, আরো রাত গুলোর দীর্ঘতা ও দিন গুলোর হ্রস্যতা। এই সব কারণে পৃথিবীতে অনেক ব্যাধির প্রকোপ বেড়ে যায়। কখনো তা মহামারির রূপ নিয়ে ও আসতে পারে। এই সময়টা আসলে খুবই কষ্টের সময়।
আস্তে আস্তে সূর্য তার উদয়স্থল পরিবর্তন করে উত্তর গোলার্ধের দিকে সরতে থাকে, ফলে গাছে গাছে অংকুরোদ্গম হতে থাকে। ঘাষে বনজে বনফুলের সমারোহ শুরু হতে থাকে। আর ভাইরাসের সংক্রমনও বাড়তে থাকে সমান্তরালে।
এপ্রিল আসার পর সূর্য আরব অঞ্চলে মোটামুটি জোর পায়। সুরাইয়ার উদয় হয় তখন শেষ রাতে। এই ভাবে মে মাসের ১২ তারিখের দিকে তার উদয় আসে ফজরের পর। এই সময় আরব দেশে মারাত্মক গরম শুরু হয়। উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে শুরু হয় উষ্ণতার আবহ। ফলে পরিবেশ হয়ে ওঠে অনেকটা ভাইরাস মুক্ত। কারণ গরমে ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়া বাড়তে কষ্ট পায়।
আমাদের নবী (সা) ঐ টাই বুঝিয়েছেন তার হাদীস গুলোতে। তিনি মূলতঃ এখানে দুইটা বিষয়ের অবতারণা করেছেনঃ
১- মে মাসে সুরাইয়ার উদয়কে ফসল সুন্দর হবার ক্ষণ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। ঐ সময় খেজুর বিক্রির জন্য ভাল, কারণ খেজুরে কোন ব্যাধি ও শষ্যে কোন পোকা থাকেনা।
কাজেই মে মাসের পর থেকেই খেজুর কেনা বেচার মওসুম ধার্য্য হলে ক্রেতা বিক্রেতা দুই জনেই সমস্যা মুক্ত হবে।
২- সুরাইয়া যখন সকালে উদয় হওয়া শুরু করে, অর্থাৎ মধ্য মে থেকে সূর্যের তাপ বাড়তে থাকে। সাথে সাথে শীতের কারণে যে সব পরিবেশিক সমস্যার সৃষ্টি হয় তা কমতে শুরু করে।
এই হাদীস গুলো পড়লে আমাদের বর্তমান প্রক্ষিতে করোনার আঘাতে ক্ষত বিক্ষত ও আশাহীন মানবতা অনেক আশার আলো লাভ করে। কারণ গরমের আগমন হচ্ছে, তাই হাদীস অনুযায়ী রোগ বালায়ের প্রাদুর্ভাবও কমতে শুরু করবে। এইটাই হলো ঐ কৃত্তিকা বা প্লায়েডিয নক্ষত্রপুঞ্জ উদয়ের ব্যাপারে হাদীসগুলোর মর্মকথা।
এখানে আমাদের যে জিনিষটা মাথায় রাখতে হবে তা হলো সারা বছর সূর্য, চন্দ্র ও তারকা রাজির আকর্ষণের কারণে জল বায়ূর যথেষ্ঠ পরিবর্তন হয়।
আমি একবার মদীনায় আমার শায়খ ডঃ প্রফেসর যায়দ আলজুহানীর কাছে সৌরজগতের তারাকার অবস্থানের সাথে জল বায়ুর প্রভাব নিয়ে কিছু শেখার চেষ্টা করেছিলাম।
উনি বলেছিলেন, চাঁদ সূর্য ও সূরাইয়ার কক্ষ পথের অবস্থান সমান বিন্দুতে এলে প্রচুর বৃষ্টি হয়। এইটা প্রাকৃতিক সিস্টেমের মধ্যে আল্লাহ দিয়েছেন। যেমন ভাবে দিয়েছেন চাঁদের আকর্ষণে জোয়ারের স্ফিতি, ও তার বিকর্ষণে ভাটার টান।
এই সিস্টেমের প্রভাবের প্রতি বিশ্বাস করলে গুনাহ নেই। কেও যদি বলে চাঁদের আকর্ষণে জোয়ার ভাটা হয়, তা হলে এই কথায় কোন গুনাহ হবে না। কিন্তু যখন বলা হয় আল্লাহ নন, চাঁদই এই কাজটা করে, তখন হয় শিরক।
সপ্তম হিজরিতে মক্কার কাফিরদের সাথে সন্ধির সময় আমাদের নবী (সা) হুদায়বিয়্যাহতে অবস্থান করেন কয়েকদিন। একদিন সকালে ফাজরের সালাত আদায় করলেন। এরপর তিনি সাহাবিগণের দিকে ফিরলেন। ঐ রাতে বেশ বৃষ্টি হয়। তিনি বললেন, আজ তোমাদের রাব্ব আল্লাহ তাআলা কি বলেছেন জানো? সাহাবিগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন। তিনি বললেনঃ
যে বলেছে, আমরা আল্লাহর রহমতে ও তাঁর কৃপায় বৃষ্টি দ্বারা সিঞ্চিত হয়েছি, তারা আমার উপর বিশ্বাসী, এবং তারকায় অবিশ্বাসী। কিন্তু যে বলেছে আমরা ঐ ঐ তারকার জন্য বৃষ্টি পেয়েছি, তারা আমার প্রতি অবিশ্বাসী ও তারকার প্রতি বিশ্বাসী।
এই হাদীসটা আমাদের ঈমানকে শানিত করে। ইনশাআল্লাহ করোনা আক্রমন কমে আসবে।
পৃথিবী থেকে সে বিদায় নেবে। আমাদের অনেক ক্ষতিও করবে।
সামনে গরমের মৌসুম আসতেছে, তখন তার তীব্রতা, তীক্ষ্ণতা ও প্রসার কমে যাবে ইনশাআল্লাহ। তা হবে আল্লাহর রহমতে ও ফদ্বলে। কোন তারকার শক্তিতে নয়, নয় তাদের প্রভাবে।
কপি
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
"করোনায় সন্তান হারানো এক ডাক্তার মায়ের অন্যান্য মায়েদের প্রতি আবেগঘন বার্তা"
গতকাল-আমাদের ডাক্তারি পড়ুয়া মাত্র ২১ বছরের প্রিয়তম সন্তানকে হারিয়েছি। এর চেয়ে বেদনার দিন কোনো মায়ের এই পৃথিবীতে নেই। প্রচন্ড শোকের মাঝে অন্য সব মায়েদের এই বার্তা দেয়ার একমাত্র কারণ হলো- আর কোনো মাকে যেন এইভাবে তার সন্তানকে হারাতে না হয়।
আমি শুধু মা না। আমি একজন ডাক্তার। আমার স্বামীও ডাক্তার। মাত্র ২১ বছরে আমাদের শোকের মাঝে রেখে চিরতরে চলে যাওয়া আমার ছেলেও ম্যাডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী।
আমার ছেলের শারীরিক কোনো সমস্যা ছিলোনা। একজন স্বাস্থ্যবান তরতাজা যুবক ছিলো। প্রচণ্ড মানসিক, শারীরিক শক্তি ছিলো। বন্ধুবৎসল ছিলো। সবসময় প্রাণোচ্ছল ছিলো। পাশাপাশি সে তুখোড় মেধাবী একজন ছাত্র ছিলো। মা-বাবার মতো ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে তার অধ্যয়নে কোনো ঘাটতি ছিলোনা। কিন্তু মাত্র ৭২ ঘন্টার মাঝে আমাদের জীবনের সবকিছু উলটপালট হয়ে গেলো।
লকডাউনে সে কোথাও যায়নি। মাত্র দুবার পাঁচ মিনিটের জন্য নিজের গাড়িতে করে বাইরে যায়। আর ঘরে ফেরার সাথে সাথে নিজের শরীরকে ভালো করে ধৌত করে। সচেতনতার কোনো ঘাটতি ছিলোনা-আমাদের পরিবারে। যেহেতু সে নিজেই ডাক্তারি পড়ছে আর আমরা ডাক্তারি পেশায় আছি।
ঈদের আগের দিন রাতে সে দুই বন্ধুর সাথে - বড়জোড় দুই-আড়াই ঘন্টার জন্য বাইরে যায়। এর পর ঘরে এসে গোসল করে শুতে যায়। পরদিন সকালে সে সামান্য মাথা ব্যথা নিয়ে ঘুম থেকে ওঠে। আমি ওকে Panadol tablet খেতে দেই।
মাথা ব্যথা না কমলে- চারপাশে ঘটা বর্তমান পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে আমি ওর শরীরের তাপমাত্রা নেই। দেখি ৯৯ ডিগ্রি। সাথে সাথে ওকে আমি অন্য একটা ঘরে আলাদা করে দেই। চব্বিশ ঘন্টার ভিতরে ওর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে হয় ১০১ । আমি ওকে Panadol+Brufen দেই। সে তার ঘাড়েও ব্যথা অনুভব করে। আমার Pediatrician স্বামী মনে করেন -ছেলের হয়তোবা Meningitis হতে পারে। কিন্তু ওর কোনো বমি বা বমির কোনো ভাব নেই। আমরা দ্রুত টেস্টের জন্য ব্লাড স্যাম্পল পাঠাই এবং ডাক্তাররা বলেন - ওর Bacterial Meningitis হয়েছে এবং এন্টিবায়োটিকস দেয়া শুরু করি এবং আধ ঘন্টার ভিতরে ওকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করি।
সবসময় আমি ওর সাথে ছিলাম। ওর কোনো ঠাণ্ডা, গলা ব্যথা, কাশি, বুক ব্যথা, পেট ব্যথা এসবের কিছুই ছিলোনা। ডাক্তাররা মনে করছেন-Meningitis ই হয়েছে। নিউরোসার্জন এসে দেখে গেলেন- এবং CT স্ক্যান করা হলো নিশ্চিত হতে আমার ছেলের অন্য কোনো সমস্যা নেই। এ সময় লক্ষ করলাম ওর একটা চোখের কিছু অংশ ফোলা। বুকের এক্সরে করে দেখা যায় ছোট একটা দাগ। ইতোমধ্যে কোভিডের রেজাল্ট আসে। আমার ছেলে করোনায় আক্রান্ত। পরের ৮- ১০ ঘন্টা ছিলো জীবনের দুঃসহ যন্ত্রণার দিন। ওর হার্ট রেট, রেসপাইরেটরি রেট বাড়ছেই, অক্সিজেন লেভেল ড্রপ করছে। প্রতি মুহুর্তে মুহুর্তে ছেলে আমাদের চোখের সামনে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা কেউ কিছুই করতে পারছিনা। কিছু বুঝে ওঠার আগে ছেলে চোখ বন্ধ করে। ও আমাদের ছেড়ে চলে যায়।
ইতোমধ্যে আমার স্বামীরও করোনা পজিটিভ রেজাল্ট আসে। তাকেও আলাদা করা হয়। ম্যাডিকেল প্রসিডিউর অনুযায়ী আমার সন্তান সালমানের যানাজা, দাফন হয়। কাউকে জড়িয়ে ধরে যে কাঁদবো -সেই সুযোগও হয়না। কেউ হাসপাতালে ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছে । কেউ লাশের গাড়িতে করে সরাসরি কবরস্থান, শশ্মানে চলে যাচ্ছে। কারো পাশে কেউ নেই। আমার সন্তানকে তো আমরা হারিয়েছি। এই শোক এই পৃথিবীতে আর কোনোদিনও কাটিয়ে ওঠতে পারবোনা। তাই, নিজের সন্তানকে হারানোর আগে দয়া করে আমার কথাগুলো শুনুন।
এক) ভুলেও মনে করবেন না যে- আপনার করোনা হবেনা। আপনার নিজের না হলেও হয়তোবা আপনি করোনা ভাইরাসের বহনকারী হবেন। আমাদের যেটা মনে হচ্ছে- আমি আর আমার স্বামী প্রতিদিন নিজ নিজ কাজে গেছি। আর হয়তোবা আমরা নিজেরাই আমাদের সন্তানের জন্য বহন করে নিয়ে এসেছি। আর বেচারা ঘরে বসে থেকেই আমাদের কাছ থেকে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
দুই) এখনো সময় আছে সতর্ক হোন। অধৈর্য্য হয়ে ঢিলেঢালা হয়ে চলাটা আপনার জন্য ঠিক মনে করলেও ভাইরাস কিন্তুু সেটা মনে করছেনা। তাই, যাবতীয় জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। এখন, জীবনের তাগিদে যদি কাউকে বাইরে যেতে হয়- সেক্ষেত্রে কি বলা দরকার সেটা আমার জানা নেই।
তিন) একজন ডাক্তার হিসাবে infertility treatment'র জন্য আমি প্রতিদিন ফোন কল পাচ্ছি। আপনাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ দশবছর অপেক্ষা করতে পেরেছেন। সারা জীবন নিজের জন্য বাঁচতে এবং অন্যকে বাঁচাতে কেন মাত্র আরো ছয়টি মাস অপেক্ষা করতে পারছেন না। প্লিজ ধৈর্য্য ধরুন।
চার) সরকারের দেয়া নির্দেশনা খুবই কড়াকড়িভাবে মেনে চলুন। একজন আরেকজনকে দোষারুপ করলে কিছুই হবেনা। নিজ নিজ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক না হলে এই মৃত্যু মহামারী আটকানো যাবেনা। হাসপাতালের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা পেয়ে, নিজে ডাক্তার, নিজের স্বামী ডাক্তার হওয়ার পরও আমাদের সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি।
পাঁচ) আপনাদের মাঝে যারা বলছেন- এসব মিথ্যা। শুধু টাকা আয় করবার কৌশল। তাদেরকে বলছি- আমাদের সব সম্পত্তি দিয়ে দিতে চাই। শুধু আমাদের সন্তানকে একটিবার ফিরিয়ে দিন।
ছয়) যারা মনে করছেন- আমাদের আর করোনা হবেনা। হওয়ার থাকলে এতোদিনে হয়ে যেতো। বিশ্বাস করেন- কিছু বুঝে ওঠার আগেই জীবন শেষ হয়ে যাবে। কিছুই বুঝতে পারবেন না।
জীবন-মরণ আমাদের হাতে না। কিন্তু সাবধান থাকা আমাদের হাতে। তাই, সতর্ক হোন, সাবধান হোন। আর কোনো মাকে যেনো আমার মতো হাহাকার করতে না হয়।
"রাব্বুল আলামীন এই দুঃসময়ে সবার প্রতি সহায় হোন"
বিনীত-
করোনায় মারা যাওয়া সালমান তাহিরের এক দুঃখী মা।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
"করোনায় সন্তান হারানো এক ডাক্তার মায়ের অন্যান্য মায়েদের প্রতি আবেগঘন বার্তা"
গতকাল-আমাদের ডাক্তারি পড়ুয়া মাত্র ২১ বছরের প্রিয়তম সন্তানকে হারিয়েছি। এর চেয়ে বেদনার দিন কোনো মায়ের এই পৃথিবীতে নেই। প্রচন্ড শোকের মাঝে অন্য সব মায়েদের এই বার্তা দেয়ার একমাত্র কারণ হলো- আর কোনো মাকে যেন এইভাবে তার সন্তানকে হারাতে না হয়।
আমি শুধু মা না। আমি একজন ডাক্তার। আমার স্বামীও ডাক্তার। মাত্র ২১ বছরে আমাদের শোকের মাঝে রেখে চিরতরে চলে যাওয়া আমার ছেলেও ম্যাডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী।
আমার ছেলের শারীরিক কোনো সমস্যা ছিলোনা। একজন স্বাস্থ্যবান তরতাজা যুবক ছিলো। প্রচণ্ড মানসিক, শারীরিক শক্তি ছিলো। বন্ধুবৎসল ছিলো। সবসময় প্রাণোচ্ছল ছিলো। পাশাপাশি সে তুখোড় মেধাবী একজন ছাত্র ছিলো। মা-বাবার মতো ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে তার অধ্যয়নে কোনো ঘাটতি ছিলোনা। কিন্তু মাত্র ৭২ ঘন্টার মাঝে আমাদের জীবনের সবকিছু উলটপালট হয়ে গেলো।
লকডাউনে সে কোথাও যায়নি। মাত্র দুবার পাঁচ মিনিটের জন্য নিজের গাড়িতে করে বাইরে যায়। আর ঘরে ফেরার সাথে সাথে নিজের শরীরকে ভালো করে ধৌত করে। সচেতনতার কোনো ঘাটতি ছিলোনা-আমাদের পরিবারে। যেহেতু সে নিজেই ডাক্তারি পড়ছে আর আমরা ডাক্তারি পেশায় আছি।
ঈদের আগের দিন রাতে সে দুই বন্ধুর সাথে - বড়জোড় দুই-আড়াই ঘন্টার জন্য বাইরে যায়। এর পর ঘরে এসে গোসল করে শুতে যায়। পরদিন সকালে সে সামান্য মাথা ব্যথা নিয়ে ঘুম থেকে ওঠে। আমি ওকে Panadol tablet খেতে দেই।
মাথা ব্যথা না কমলে- চারপাশে ঘটা বর্তমান পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে আমি ওর শরীরের তাপমাত্রা নেই। দেখি ৯৯ ডিগ্রি। সাথে সাথে ওকে আমি অন্য একটা ঘরে আলাদা করে দেই। চব্বিশ ঘন্টার ভিতরে ওর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে হয় ১০১ । আমি ওকে Panadol+Brufen দেই। সে তার ঘাড়েও ব্যথা অনুভব করে। আমার Pediatrician স্বামী মনে করেন -ছেলের হয়তোবা Meningitis হতে পারে। কিন্তু ওর কোনো বমি বা বমির কোনো ভাব নেই। আমরা দ্রুত টেস্টের জন্য ব্লাড স্যাম্পল পাঠাই এবং ডাক্তাররা বলেন - ওর Bacterial Meningitis হয়েছে এবং এন্টিবায়োটিকস দেয়া শুরু করি এবং আধ ঘন্টার ভিতরে ওকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করি।
সবসময় আমি ওর সাথে ছিলাম। ওর কোনো ঠাণ্ডা, গলা ব্যথা, কাশি, বুক ব্যথা, পেট ব্যথা এসবের কিছুই ছিলোনা। ডাক্তাররা মনে করছেন-Meningitis ই হয়েছে। নিউরোসার্জন এসে দেখে গেলেন- এবং CT স্ক্যান করা হলো নিশ্চিত হতে আমার ছেলের অন্য কোনো সমস্যা নেই। এ সময় লক্ষ করলাম ওর একটা চোখের কিছু অংশ ফোলা। বুকের এক্সরে করে দেখা যায় ছোট একটা দাগ। ইতোমধ্যে কোভিডের রেজাল্ট আসে। আমার ছেলে করোনায় আক্রান্ত। পরের ৮- ১০ ঘন্টা ছিলো জীবনের দুঃসহ যন্ত্রণার দিন। ওর হার্ট রেট, রেসপাইরেটরি রেট বাড়ছেই, অক্সিজেন লেভেল ড্রপ করছে। প্রতি মুহুর্তে মুহুর্তে ছেলে আমাদের চোখের সামনে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা কেউ কিছুই করতে পারছিনা। কিছু বুঝে ওঠার আগে ছেলে চোখ বন্ধ করে। ও আমাদের ছেড়ে চলে যায়।
ইতোমধ্যে আমার স্বামীরও করোনা পজিটিভ রেজাল্ট আসে। তাকেও আলাদা করা হয়। ম্যাডিকেল প্রসিডিউর অনুযায়ী আমার সন্তান সালমানের যানাজা, দাফন হয়। কাউকে জড়িয়ে ধরে যে কাঁদবো -সেই সুযোগও হয়না। কেউ হাসপাতালে ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছে । কেউ লাশের গাড়িতে করে সরাসরি কবরস্থান, শশ্মানে চলে যাচ্ছে। কারো পাশে কেউ নেই। আমার সন্তানকে তো আমরা হারিয়েছি। এই শোক এই পৃথিবীতে আর কোনোদিনও কাটিয়ে ওঠতে পারবোনা। তাই, নিজের সন্তানকে হারানোর আগে দয়া করে আমার কথাগুলো শুনুন।
এক) ভুলেও মনে করবেন না যে- আপনার করোনা হবেনা। আপনার নিজের না হলেও হয়তোবা আপনি করোনা ভাইরাসের বহনকারী হবেন। আমাদের যেটা মনে হচ্ছে- আমি আর আমার স্বামী প্রতিদিন নিজ নিজ কাজে গেছি। আর হয়তোবা আমরা নিজেরাই আমাদের সন্তানের জন্য বহন করে নিয়ে এসেছি। আর বেচারা ঘরে বসে থেকেই আমাদের কাছ থেকে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
দুই) এখনো সময় আছে সতর্ক হোন। অধৈর্য্য হয়ে ঢিলেঢালা হয়ে চলাটা আপনার জন্য ঠিক মনে করলেও ভাইরাস কিন্তুু সেটা মনে করছেনা। তাই, যাবতীয় জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। এখন, জীবনের তাগিদে যদি কাউকে বাইরে যেতে হয়- সেক্ষেত্রে কি বলা দরকার সেটা আমার জানা নেই।
তিন) একজন ডাক্তার হিসাবে infertility treatment'র জন্য আমি প্রতিদিন ফোন কল পাচ্ছি। আপনাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ দশবছর অপেক্ষা করতে পেরেছেন। সারা জীবন নিজের জন্য বাঁচতে এবং অন্যকে বাঁচাতে কেন মাত্র আরো ছয়টি মাস অপেক্ষা করতে পারছেন না। প্লিজ ধৈর্য্য ধরুন।
চার) সরকারের দেয়া নির্দেশনা খুবই কড়াকড়িভাবে মেনে চলুন। একজন আরেকজনকে দোষারুপ করলে কিছুই হবেনা। নিজ নিজ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক না হলে এই মৃত্যু মহামারী আটকানো যাবেনা। হাসপাতালের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা পেয়ে, নিজে ডাক্তার, নিজের স্বামী ডাক্তার হওয়ার পরও আমাদের সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি।
পাঁচ) আপনাদের মাঝে যারা বলছেন- এসব মিথ্যা। শুধু টাকা আয় করবার কৌশল। তাদেরকে বলছি- আমাদের সব সম্পত্তি দিয়ে দিতে চাই। শুধু আমাদের সন্তানকে একটিবার ফিরিয়ে দিন।
ছয়) যারা মনে করছেন- আমাদের আর করোনা হবেনা। হওয়ার থাকলে এতোদিনে হয়ে যেতো। বিশ্বাস করেন- কিছু বুঝে ওঠার আগেই জীবন শেষ হয়ে যাবে। কিছুই বুঝতে পারবেন না।
জীবন-মরণ আমাদের হাতে না। কিন্তু সাবধান থাকা আমাদের হাতে। তাই, সতর্ক হোন, সাবধান হোন। আর কোনো মাকে যেনো আমার মতো হাহাকার করতে না হয়।
"রাব্বুল আলামীন এই দুঃসময়ে সবার প্রতি সহায় হোন"
বিনীত-
করোনায় মারা যাওয়া সালমান তাহিরের এক দুঃখী মা।
Can you please write next time in English and not in Punjabi? Because, English is international language, and I'm not an Indian for me to know Punjabi language, because I've never been taught that languagex because I was not even born in India.
So, next time when you post something, make sure that this post is in English and not in Punjabi or Sanskrit or Tamil or whatever language it is called.
Hey there! Looks like you're enjoying the discussion, but you're not signed up for an account.
When you create an account, we remember exactly what you've read, so you always come right back where you left off. You also get notifications, here and via email, whenever new posts are made. And you can like posts and share your thoughts.
Sign Up
Bookmarks