দাসীদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক ইসলামে বৈধ বলে ধারনা করা হয় এবং নবী ও তাঁর সহচররা তাদের দাসীদের সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত ছিল বলে বহু বর্ননা হাদিস ও সিরাতে লিখা হয় । যুদ্ধবন্দিনীদের কে গন ধর্ষন এরূপ হাদিস থেকে সমর্থিত হয় বলে অনেকেই মনে করে । কিন্তু কোরানের দিকে তাকালে দেখা যায় যে মহান আল্লাহ একমাত্র নিজের স্ত্রী ছাড়া আর কোন পর নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক বৈধ করেননি । ماملكت ايمانك (মা মালাকাত আইমানাকুম) / ‘যা তোমাদের ডান হাত অধিকার করেছে’ সংক্রান্ত আয়াতগুলোর অপব্যাখ্যা এর দ্বারা এর বৈধতা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে এখনও অনেকে এই ঘৃন্য কর্ম কে ইসলামিক নিয়মের আওতাধীন করে রেখেছে ।
প্রথমতঃ কোরআনে বিয়ের বাইরে যে কোন ধরনের যৌন সম্পর্ক থেকে বেঁচে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেঃ
“যারা বিবাহে সামর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের ব্যবস্থা করে দেন............” (২৪:৩৩)
দাসী ব্যবহার যদি বৈধই হয় তাহলে মহান আল্লাহ বিয়ের আগে কেন নিজের যৈন কামনাকে সংযম করতে বললেন ? তার মানে কি এই না যে শুধু মাত্র বিয়ের পরেই নিজ স্ত্রীর সাথেই শারীরিক সম্পর্ক জায়েজ , অন্যথা কোনভাবেই তা বৈধ নয় ?
দ্বিতীয়তঃ ‘মা মালাকাত আইমানাকুম’ সম্পর্কিত পর পর প্রথম ৩ টি আয়াতেই ‘মা মালাকাত আইমানাকুম’ কে বিয়ের পাত্রী হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে , ফ্রি ভোগ্য বস্তু হিসেবে নয় । মহান আল্লাহ এই আয়াতগুলোতে নির্দেশ দিয়েছেন যে আমাদের অধিনস্তদের যারা বিত্তশালী ও স্ব-নির্ভরশীল নয় তাদেরকে যথাযোগ্য মোহরানা দিয়ে বিবাহ করে স্ত্রীর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে । শুধুমাত্র তার পরেই তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে ।
‘মা মালাকাত আইমানাকুম’ সম্পর্কিত কোরানের ১ম আয়াতঃ
“আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতীম মেয়েদের হক যথাথভাবে পুরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা।
আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। ” (৪:৩-৪)
‘মা মালাকাত আইমানাকুম’ সম্পর্কিত কোরানের ২য় আয়াতঃ
“যে নারীকে তোমাদের পিতা-পিতামহ বিবাহ করেছে তোমরা তাদের বিবাহ করো না। কিন্তু যা বিগত হয়ে গেছে। এটা অশ্লীল, গযবের কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।
তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকণ্যা; ভগিনীকণ্যা তোমাদের সে মাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের দুধ-বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোন গোনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা; কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকরী, দয়ালু ।
এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়-এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য-ব্যভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ। ” (৪:২২-২৪)
‘মা মালাকাত আইমানাকুম’ সম্পর্কিত কোরানের ৩য় আয়াতঃ
“আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বাধীন মুসলমান নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না, সে তোমাদের অধিকারভুক্ত মুসলিম ক্রীতদাসীদেরকে বিয়ে করবে। আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞাত রয়েছেন। তোমরা পরস্পর এক, অতএব, তাদেরকে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে বিয়ে কর এবং নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর এমতাবস্থায় যে, তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে-ব্যভিচারিণী কিংবা উপ-পতি গ্রহণকারিণী হবে না। অতঃপর যখন তারা বিবাহ বন্ধনে এসে যায়, তখন যদি কোন অশ্লীল কাজ করে, তবে তাদেরকে স্বাধীন নারীদের অর্ধেক শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ ব্যবস্থা তাদের জন্যে, তোমাদের মধ্যে যারা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে ভয় করে। আর যদি সবর কর, তবে তা তোমাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।” (৪:২৫)
পরিশেষে উপরে উল্লেখিত ৪:২৪ আয়াতের এই গুরুত্বপূর্ন অংশটি আবারও লক্ষ্যনীয় ঃ
“...শর্ত এই যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য-ব্যভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর....”
মহান আল্লাহ উপরের আয়াতে ‘মা মালাকাত আইমানাকুম’ সম্পর্কে আমাদের নিয়ত কে পরিশুদ্ধ ও পবিত্র রাখতে বলেছেন । তাদেরকে যেন আমরা ব্যভিচারের লক্ষ্যবস্তু না বানাই , বরং যথাযোগ্য মোহরানা আদায় করে বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে স্ত্রীর মর্যাদা দিই । তারা সুযোগ্য স্ত্রীর সব অধিকার পাওয়ার হকদ্বার ।
Hey there! Looks like you're enjoying the discussion, but you're not signed up for an account.
When you create an account, we remember exactly what you've read, so you always come right back where you left off. You also get notifications, here and via email, whenever new posts are made. And you can like posts and share your thoughts.
Sign Up
Bookmarks