আমার ছেলেটা তখন খুব ছোট,২ এর কম হবে বয়স।
ওকে নিয়ে হেফজ খানায় পড়তে যেতাম...
প্রতি সপ্তাহ সেখানে একজন দায়ীয়া আসতেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে লেকচার দিতেন।
রোজার আগের সপ্তাহ প্রতিদিনই এক ঘন্টা করে লেকচার দিতেন ক্লাসের ম্যাম।
অনেক অসাধরন ব্যক্তিত্বসম্পন্� � ছিলেন তিনি। উনার অনেক অনেক নসিহত আমি আজো মেনে চলি।
তো সেবার রোজার আগে ছাত্রীরা বিভিন্ন প্রশ্ন করছিল।
তিনি উত্তর দিচ্ছেন।
আমি প্রশ্ন করলামঃ এক জন মা তার সন্তানের জন্য সবচেয়ে উত্তম কোন দুয়া টা করতে পারে ?
উনার উত্তর টা আজও স্পষ্ট কানে ভাসছে,
উনি আমার দিকে প্রথমে তাকালেন,এরপর কোলে আমার ছেলের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে এতো সুন্দর করে বললেনঃ
"একজন মা তার সন্তানের জন্য কি দুয়া করবে? এটা তো ফিক্সড করে দেওয়া যায় না,সন্তানের জন্য তো মায়ের চাহিদার শেষ নেই। সন্তানের জন্য মায়েরা সব কিছুই চায়,প্রশ্ন হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম দুয়াটা কি হতে পারে।"
এরপর তিনি আমাদের মাঝে যতজন মা ছিলেন সবাইকে বললেন "যা যা তোমরা আল্লাহর কাছে চাও তোমাদের সন্তানের জন্য, তার একটা লিস্ট করো।"
আমরা সবাই লিস্ট করলাম,উনাকে দিলাম লিস্ট,উনি পড়ে শুনাচ্ছেন...
কমন ছিল সবার চাওয়া গুলোঃ
১ঃ ভাল মত যেন পড়াশুনা করে
২ঃ সুস্থতা
৩ঃ টাকা পয়শা
৪ঃ সুখ শান্তি
৫ঃ লম্বা হায়াত
৬ঃ কখনো যেন কষ্ট/অভাব না আসে
৭ঃ ঈমানি মৃত্যু এবং জান্নাত
ইত্যাদি...
এবার ম্যাম চশমা নাকে নামিয়ে চশমার উপর দিয়ে আমাদের দিকে প্রশ্নবাচক হাসি হেসে তাকালেন।
তারপর বললেনঃ
সুস্থতা কি ফায়দা দিবে যদি এই শরীর আল্লাহর প্রতি অবনত না হয়?
পড়াশুনা কি কাজে দিবে যদি দায়ী হতে না পারে?
টাকা পয়শা দিয়ে কি হবে যদি খারাপ কাজে ব্যয় করে?
লম্বা হায়াত দিয়ে কি হবে যদি মানুষ টা পথ ভ্রষ্ট হয়?
আমরা সত্যি খুব অবাক হচ্ছিলাম, আমাদের এই চাওয়া গুলো কি তাহলে ভুল?
বান্দা খারাপ হবে না ভাল তা কি আমরা জানি?
"তাহলে সন্তানের জন্য আমরা চাইব কি?"
প্রশ্ন গুলো করলাম ম্যাম কে।
তিনি বললেনঃ ❛❛তোমরা মা, সন্তানের জন্য দুয়া করবা, তোমাদের দুয়া বদলে দিবে সন্তানের জীবন।
কেন এইসব চাও?
সুস্থতা টাকা পয়শা লম্বা হায়াত সুখ শান্তি ইত্যাদি কি আল্লাহর খুব কাছে নিয়ে যাবে তোমার সন্তান কে?
তোমরা আল্লাহর কাছে সন্তানের জন্য একটা সুন্দর ক্বলব চাও, এমন ক্বলব চাও যেখানে শয়তান ওয়াসওয়াসা দিতে পারবে না। এমন পরিষ্কার ক্বলব চাও!!
কারন এক মাত্র পরিষ্কার ক্বলব ভাল চিন্তা করতে পারে, আল্লাহর খুব নিকটে যাওয়ার কথা চিন্তা করতে পারে, খারাপ থেকে দূরে থাকতে পারে।
তার সুস্থতা থাকুক না থাকুক, অনেক টাকা পয়শা থাকুক না থাকুক, সুখ শান্তি থাকুক না থাকুক,
তার পবিত্র ক্বলবের জন্য সে আল্লাহর খুব নিকটেই থাকবে, কারন পবিত্র ক্বলবেই তাকওয়া থাকে,
তাওয়াক্কুল থাকে, সবর থাকে।
দুনিয়াতে ক্ষনিকের জন্য সুখ শান্তি টাকা পয়সা চেয়ে লাভ কি? একটা অশিক্ষিত মানুষও জান্নাতে যাবে যদি তার ক্বলব গুনাহ থেকে পরিষ্কার থাকে।
একটা পংগু মানুষ ও আল্লাহর অনেক নিকটে থাকতে পারে যদি তার ক্বলব পরিষ্কার থাকে।
সন্তানের জন্য সরাসরি জান্নাত চাও। আর সেই জান্নাতে যাওয়ার পথ গুলো চিনিয়ে দিবে একটা পরিষ্কার ক্বলব।
পরিষ্কার ক্বলব দুনিয়াতে নিজেকে শান্তি দিবে আশেপাশের সবাইকে শান্তি দিবে, গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে,ঈমানি মৃত্যু হবে ইন শা আল্লাহ ও জান্নাতবাসী হবে ইন শা আল্লাহ।❜❜
সেই থেকে আজ অবধি আমি মুহাম্মাদের জন্য একটা পরিষ্কার ক্বলব ও শারীরিক সুস্থতার চেয়ে অন্য কিছু বেশি আর চাইনি।
একটা তাকওয়াপূর্ণ, তাওয়াক্কুলপুর্ণ, সবরপুর্ণ ক্বলব সবচেয়ে বেশি ইম্পরট্যান্ট একটা মানুষের জন্য
অনেক আপু প্রশ্ন করে থাকেন, সন্তানের জন্য কি দুয়া করবো আপু?
এই লেখাটায় আশা করি উত্তর আছে ।
Hey there! Looks like you're enjoying the discussion, but you're not signed up for an account.
When you create an account, we remember exactly what you've read, so you always come right back where you left off. You also get notifications, here and via email, whenever new posts are made. And you can like posts and share your thoughts.
Sign Up
Bookmarks