মহিলা হাজিরা যেভাবে সাবধানে থাকবেন :
হারিয়ে গেলে কি করবেন ?
১/ হারিয়ে গেলে ভয় পাবেন না। মাথা ঠাণ্ডা রাখবেন ।অনেক
মহিলাকে দেখেছি হাউ মাউ করে কান্নাকাটি করতে । এতে কিন্তু
সমস্যার সমাধান হয় না । আপনি তাড়াতাড়ি ক্লান্ত, আরও ভীত হয়ে পড়বেন । এতে সমস্যা বাড়বে।
২/ আপনার বোরখা এবং সেলোয়ার কামিজে অবশ্যই একাধিক পকেটের ব্যাবস্থা রাখবেন। আপনার পাসপোর্টের ফটোকপি , কিছু রিয়েল, মোবাইল সবসময় পকেটে থাকবে। ব্যাগ সব সময় হাতে রাখা কষ্টকর। অনেক সময় ব্যাগ হাত ছাড়া হয়ে যায়। টয়লেটে যাবার সময় ব্যাগ নিয়ে যাওয়া ঝামেলা। তাই পকেটের মধ্যেই জরুরী জিনিস গুলো রাখবেন। এতে দলছুট হয়ে পড়লে অসহায় হয়ে পড়বেন না।
৩/ সৌদিতে আপনার ঠিকানাটা আরবিতে মুখস্থ করে রাখবেন, যাতে পুলিশ বা ভলেন্টিয়ার পথ দেখিয়ে দিতে পারে। মনে রাখবেন, সৌদি পুলিশ কিন্তু বাংলা বা ইংরেজী বুঝবে না । অবশ্যই ঠিকানাটা মুখস্ত করবেন অথবা আরবিতে লিখে সাথে রাখবেন।
৪/ মোবাইল সবসময় সাথে রাখবেন। চার্জারসহ মোবাইলের
একটা অতিরিক্ত ব্যাটারি সাথে রাখবেন। মোবাইল চার্জ দেবার সুযোগ না থাকলে আপনি যেন অতিরিক্ত ব্যাটারি ভরে জরুরী কথা বলতে পারেন। মোবাইলে কিভাবে ব্যাটারি লাগাতে হয়, দেশে থাকতেই শিখে নিন। সহজে চিনতে পারবে এমন একটা সাইনবোর্ডের নিচে দাঁড়িয়ে সাথের কাউকে বা হজ এজেন্সির লোককে ফোন করুন।
জেদ্দা এয়ারপোর্টে নেমেই সৌদি সিম সংগ্রহ করে আপনার
মোবাইলে ঢুকিয়ে ফেলবেন। দাম বেশি হলেও কিনতে দ্বিধা করবেন না।
হোটেলে পৌঁছে মোবাইলের দোকান খুঁজে বের করে সিম কিনতে অনেক সময় লাগে। এর মধ্যে আপনি যদি হারিয়ে যান , তাহলে যে দুর্ভোগের মুখোমুখি হবেন , তার থেকে খরচ বেশি পড়লেও আগেই সিম সংগ্রহ করে ফেলা ভালো।
আপনার মুহারিম এবং হজ্ব এজেন্সির কমপক্ষে দুজনের নাম্বার মোবাইলে সেভ করবেন। আপনার নাম্বারও তাদের মোবাইলে সেভ করতে বলবেন।
৫/ লাখ লাখ হাজীদের ভিড়ে যে কোন জায়গায়, যে কোন সময়ে হারিয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে। কোথাও যাওয়ার আগেই ঠিক করে রাখবেন
হারিয়ে গেলে কোন সময় কোথায় দাঁড়াবেন । যেমন কাবা ঘরের এক নম্বর গেটের সামনে রাত আটটায় অপেক্ষা করব ; অথবা তাওয়াফ যেখান থেকে শুরু করতে হয় , সেই জায়গার সিঁড়ির পাশে মাগরিবের পরে দাঁড়িয়ে থাকবো ।
কমপক্ষে দুইটি জায়গা ঠিক করবেন । বেশি ভিড় হলে পুলিশ অনেক সময় একটা জায়গাতে দাঁড়াতে নাও দিতে পারে। তখন বিকল্প জায়গাতে থাকবেন। মিনা বা মুজদালিফায় মহিলা হাম্মামখানার সামনে থাকবো , এভাবে আগেই আলোচনা করে নেবেন।
৬/ কালো বোরকার উপর রঙ্গিন ওড়না পরতে পারেন, যাতে দূর থেকে চেনা যায়।
ওখানে বেশিরভাগ মহিলা হাজী কালো হিজাব
পড়েন বলে কেউ হারিয়ে গেলে দূর থেকে চেনা কঠিন। সহযাত্রী মহিলারা সবাই একই রঙ্গের হিজাব এখনই কিনে ফেলুন। হিজাবের পিছনে বাংলাদেশী পতাকা বা বাংলাদেশ নাম লেখা থাকলে দূর থেকে চিনতে পারবেন।
৭/ মক্কায় বাংলাদেশ হজ অফিসের ফোন নাম্বার মোবাইলে এখনই সেভ করে রাখুন।
দেশ থেকে ঔষধ কিনে নিয়ে যান :
১/ মেয়েদের যে স্বাভাবিক মাসিক অসুস্থতা , সেটা বন্ধ রাখার জন্য ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে আগে থেকেই ওষুধ খাওয়া শুরু করুন।
অবশ্যই দেশ থেকে ওষুধ কিনে নেবেন । বাংলাদেশের ঔষধের নাম কিন্তু সৌদি দোকানদাররা বুঝবে না, তখন বিপদে পড়ে যাবেন। তাছাড়া হজের সময় সব কিছুর দাম বেশি থাকে। দেশে যে ঔষধ সস্তায় পাবেন , সেটা হজের সময় বিদেশী রিয়েল দিয়ে কিনতে গেলে খুব খারাপ লাগে।
২/ প্রচন্ড রোদে যাদের মাথা ধরে তারা অবশ্যই ছাতা ও সানগ্লাস এর পাশাপাশি পেইন কিলার সাথে রাখবেন। সৌদি আরবে দিনের বেলা প্রচন্ড গরম থাকে। ভিড়ের জন্য মসজিদে ঢুকতে না পারলে রোদের মধ্যে রাস্তায় নামাজ পড়তে হয়। দরকার হলে মাথা ব্যাথা শুরুর আগেই একটা ট্যাবলেট খেয়ে নেবেন । তবে এটা আবার নিয়মিত করবেন না।
টয়লেটে যাবার সাবধানতা :
১/ বাংলাদেশের বদনা সৌদির কোন টয়লেটে পাবেন না। বাংলাদেশের অনেক মহিলা হাজী ফ্ল্যাশ আর হ্যান্ড শাওয়ার কিভাবে ব্যবহার করতে হয়, জানেন না।
তারা টয়লেটে গিয়ে যখন দেখেন পানির কল, বদনা নেই, তখন দিশেহারা হয়ে পড়েন। টয়লেট নোংরা করে নিজেরা নাপাক অবস্থায় বের হয়ে আসেন। এভাবে নিজেরাও পরে নামাজ পড়তে পারেন না আর যেসব হাজিরা সেই টয়লেটে ঢুকেন, তারা বমি করতে করতে বের হন। টয়লেটের নোংরা দৃশ্য বহুদিন পর্যন্ত তাদের তাড়া করে বেড়ায়।
দয়া করে হজে যাওয়ার আগে আধুনিক টয়লেট এর ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিন। হজ এজেন্সি কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। হজ ট্রেনিং এর সময় হাজীদের অবশ্যই টয়লেট ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেবেন।
২/ প্লাস্টিকের গ্লাভস ফার্মেসিতে পাওয়া যায় , সেগুলি সাথে রাখবেন ।অসংখ্য মানুষ যে পাইপ ধরছে , সেটা থেকে রোগ জীবাণু ছড়াতে পারে। তাছাড়া হ্যান্ড শাওয়ার অনেকে ময়লা পানিতে ফেলে রাখে। তাই টয়লেটে ঢোকার আগে গ্লাভস পড়ে নেবেন।
ভিড় এড়িয়ে চলুন :
১/ মেয়েদের জন্য মসজিদে জামাতে সালাত আদায় ফরজ , ওয়াজিব কিছু না ।তাই পর্দা নষ্ট করে পুরুষদের পাশে দাঁড়াবেন না।
ভিড় বেশি হলে অপেক্ষা করুন। দরকার হলে পরে একাকী নামাজ পড়বেন।
২/ কাবা ঘরের এক তলায় প্রচন্ড ভীড় হয় । তই দোতলা বা তিনতলায় চলে যান। ভিড় এড়াতে নামাজের ওয়াক্তের কমপক্ষে দেড় দুই ঘন্টা আগে মসজিদে চলে যাবার চেষ্টা করবেন।
৩/ হজরে আসওয়াদ এ চুমু খাওয়া , রুকুন এ ইয়ামিন স্পর্শ করা, কাবা ঘরের দরজা ধরা, হাতিম এ নামাজ পড়া কোনটাই হজের অপরিহার্য শর্ত না। এর কোন একটিও না করলে আপনার হজ ইন শা আল্লাহ আদায় হয়ে যাবে। তাই পাগলের মত পুরুষদের সাথে দৌড়াদৌড়ি , ধাক্কাধাক্কি করে এসবের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না।
৪/ হোটেলের টয়লেটে ভিড় লেগে থাকতে পারে। হেরেম শরীফে অসংখ্য মহিলা টয়লেট আছে। ওখানে গিয়ে জেনে নিন কোথায় কোথায় মেয়েদের ওযু খানা, টয়লেট আছে। মেয়েদের হাম্মামখানার শুরুর দিকের টয়লেটে বেশি ভিড় থাকে । আপনারা একটু ভেতরের দিকে বা দোতলা তিনতলা টয়লেটে চলে যাবেন , তাহলে ভিড় কম থাকবে।
বেশি জিনিস সাথে নিবেন না :
১/ বাংলাদেশীদের তাঁবুতে জায়গা খুব কম থাকে। তাই বেশি বড় সুটকেস নেবেন না। ছোট হাত ব্যাগে দরকারি কিছু জিনিস নেবেন। বাড়তি কিছু নিয়ে ঝামেলা বাড়াবেন না।
কেনাকাটা পরে করবেন:
১/ মক্কা মদিনায় গিয়েই কেনাকাটা শুরু করবেন না, বিশেষ করে সোনার গয়না। কেনার পর ওগুলা কোথায় হেফাজতে রাখবেন, সেটা একটা দুশ্চিন্তা শুরু হয়। হজ শেষ করে তারপর দামী জিনিস কিনবেন। রাস্তায় রাস্তায় দোকান থাকে , তাই পরে কিনতে অসুবিধা হওয়ার কথা না।
২/ সস্তার খেজুর ঠেলা গাড়িতে বিক্রি হয়। সেগুলো বেশি আগে কিনলে ভিতরে পোকা হয়ে যায় । তাই দেশের জন্য যে খেজুর কিনতে চান ,সেগুলো আসার আগের দিন কিনবেন। কোন কিছুই বেশি কিনে হজের সময় বোঝা বাড়াবেন না।
-নফল ইবাদত বেশি করতে গিয়ে মূল হজের
যেন কোন ক্ষতি না হয় :
অনেকে সারারাত জেগে নামাজ পড়েন , উমরা তাওয়াফ বেশি বেশি করেন। এভাবে নফল ইবাদত করতে গিয়ে হজের আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
খেয়াল রাখবেন আপনি কিন্তু হজের জন্য গিয়েছেন। তাই বেশি বেশি উমরাহ, তাওয়াফ করতে গিয়ে হজের সময় জন্য শক্তি শেষ না হয়ে যায়।
বয়স্ক অসুস্থ মহিলা হাজিরা বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করবেন।
সব সালাত মসজিদে আদায় করার দরকার নেই।
দরকার হলে হজের পরে তাহাজ্জুদ , নফল উমরাহ ,
তাওয়াফ সামর্থ্য অনুযায়ী করবেন।
মোবাইলের ব্যবহার শিখে নিন :
আমাদের দেশের বয়স্ক হাজিদের অনেকেই মোবাইল এর ব্যবহার জানেন না। কিন্তু হজের সফরে মোবাইল সাথে রাখা এবং সেটার ব্যবহার করতে পারাটা খুবই জরুরী।
দেশে থাকতেই মোবাইল চালানো ভালোভাবে শিখে নিন।
মোবাইল চার্জ করা, মোবাইলের ব্যাটারি বদলানো, টাকা রিচার্জ করা এ সবকিছু শিখে রাখবেন। মোবাইল ছাড়া কখনোই একা কোথাও যাবেন না। দরকার হলে মোবাইলে ফেসবুকে ঢুকে হারিয়ে যাবার খবর দেওয়া শিখে রাখুন । কোন জ্ঞান কখন কাজে আসবে বলা যায় না।
একা কোথাও যাবেন না:
কাবা ঘর বা মসজিদুন নববীর যত কাছেই থাকুন না কেন , ভালো জায়গায় বসার জন্য সবাইকে রেখে আগে আগে মসজিদে যাবার চেষ্টা করবেন না।
মহিলা হাজিরা কোন অবস্থাতেই জামাতে সালাত আদায় করতে গিয়ে দলছুট হবার ঝুঁকি নেবেন না। সুশৃংখলভাবে দলের সাথে চলাফেরা করবেন।
আল্লাহ সবাইকে সুস্থ রাখুন, হেফাজতে রাখুন।
জাবীন হামিদ
ফ্রীল্যান্স প্রতিবেদক
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
Hey there! Looks like you're enjoying the discussion, but you're not signed up for an account.
When you create an account, we remember exactly what you've read, so you always come right back where you left off. You also get notifications, here and via email, whenever new posts are made. And you can like posts and share your thoughts.
Sign Up
Bookmarks