Muslim Woman
Super Moderator
- Messages
- 12,286
- Reaction score
- 1,449
- Gender
- Female
- Religion
- Islam

আরবী ভাষা কুরআন বুঝার চাবিকাঠি
-
মূল (ইংরেজী) : ফাতেমা বরকতুল্লাহ
অনুবাদ : ফাতেমা বিনতে আযাদ
অনুবাদ : ফাতেমা বিনতে আযাদ
যখন আমরা কুরআন মাজীদের একটি ভাল অনুবাদ গ্রন্থ খুলি, তখন আমরা সবাই স্পর্শ অনুভব করি। আমরা গভীরভাবে চিন্তা করি এবং এর অন্তর্ভুক্ত শব্দ ও মর্মার্থের সৌন্দর্যতে বিস্মিত হই। কিন্তু বাস্তবিকভাবে কুরআন যে একটি প্রকৃত মূল্যবান সম্পদ তা আমরা শুধুমাত্র এক ঝলকে দেখতে পাই।কল্পনা করুন, আপনি কেমন অনুভব করবেন যদি আপনি আল্লাহর বাণী যেভাবে নাযিল হয়েছে ঠিক ঐভাবে বুঝতে পারতেন এবং ইংরেজী অনুবাদের উপর নির্ভর না করতেন? সেই কার্যকারিতা হবে সত্যিই অদ্ভূত! কুরআন আল্লাহর বাণী।
আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর বান্দার নিকট সরাসরি বার্তা। আল্লাহ তাঁর বার্তার ভাষা হিসাবে আরবী ভাষাকে পসন্দ করেছেন। সত্যিকারার্থে মহান আল্লাহর বার্তাকে সম্পূর্ণরূপে বুঝতে হ’লে অবশ্যই এর ভাষাকে বুঝতে হবে। আল্লাহ বলেন,إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ- ‘আমরা উহা নাযিল করেছি আরবী ভাষায় কুরআনরূপে, যাতে তোমরা বুঝতে পার’ (ইউসূফ ১২/২)।তিনি আরো বলেন, وَكَذَلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِتُنْذِرَ أُمَّ الْقُرَى وَمَنْ حَوْلَهَا‘এইভাবে আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায়, যাতে তুমি সতর্ক করতে পার মক্কা ও তার চতুর্দিকের জনগণকে এবং সতর্ক করতে পার কিয়ামত দিবস সম্পর্কে’ (শূরা ৪২/৭)।

আরবী ভাষা ও কুরআনের বাণীকে কখনও আলাদা করা যাবে না। যুগ যুগ ধরে অনুবাদকগণ কুরআনের অর্থের সৌন্দর্যকে অমুসলিমদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। আর এটাকে ‘কুরআনের অর্থের অনুবাদ’ বলা হয়, এই বিষযটির উপর জোর দিয়ে যে, কুরআনের সরাসরি অনুবাদ করা সম্ভব নয়। কারণ শব্দের ও অর্থের কার্যকারিতা ও অত্যুৎকৃষ্ট এত গভীরভাবে আরবী ভাষার সাথে সম্পর্কযুক্ত যে, তা ইংরেজী বা অন্য যে কোন ভাষায় হারিয়ে যেতে পারে। এমনকি কুরআনের কাব্যিক সৌন্দর্যের প্রশংসা করতে হ’লেও আরবীতে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।স্মরণ করুন, কুরআনের ভাষা এতটাই অদ্বিতীয় ছিল যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে আরবে যারা কাব্যে ও বাকপটুতায় বা অলংকার শাস্ত্রে পন্ডিত ছিলেন, তাদের সর্বাধিক অলংকারিক কবিতার সাথেও একে তুলনা করা যেত না।
অনেকেই ইসলামের পথে এসেছিলেন এটা উপলব্ধি করে যে, কুরআন এমনই সর্বোৎকৃষ্ট যে, এটি কোন মানব কবির সৃষ্টি হ’তে পারে না। অধিকন্তু এটা শুধুমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে। কুরআনের অলৌকিকতার অন্যতম হচ্ছে এর ভাষা। মহান আল্লাহ মানবজাতিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন,وَإِنْ كُنْتُمْ فِيْ رَيْبٍ مِمَّا نَزَّلْنَا عَلَى عَبْدِنَا فَأْتُوْا بِسُورَةٍ مِنْ مِثْلِهِ وَادْعُوْا شُهَدَاءَكُمْ مِنْ دُوْنِ اللهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ–‘আর আমরা আমাদের বান্দার প্রতি যা নাযিল করেছি, সে বিষয়ে যদি তোমরা সন্দেহে পতিত হও, তাহ’লে অনুরূপ একটি সূরা নিয়ে এসো। আর (একাজে) আল্লাহ ছাড়া তোমাদের যত সহযোগী আছে, সবাইকে ডাকো, যদি তোমরা (তোমাদের দাবীতে) সত্যবাদী হও’ (বাক্বারাহ ২/২৩)।
আরবী ভাষা সংরক্ষণ :
কিন্তু এই আরবী ভাষা শুধুমাত্র একটি ভাষা নয়। এই কারণে ছাহাবীগণ ও প্রাথমিক যুগের মুসলিমগণ ক্লাসিক আরবী ভাষাকে সংরক্ষণ করার জন্য সাগ্রহে চেষ্টা করেছিলেন। আলী (রাঃ) আরবদের প্রাদেশিক ভাষায় সামান্য পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিলেন এবং আরবী ব্যাকরণ বিধিকে সার্বজনীন কাঠামোতে লিপিবদ্ধ করার আদেশ করেছিলেন।
তিনি জানতেন যে, আরবী ভাষার সংরক্ষণ হ’ল স্বয়ং ইসলামকে সংরক্ষণেরই অংশ।আরবী ভাষা মুসলিম দেশগুলোর মধ্য সমন্বয় সাধন করেছিল। কারণ যারা সাদরে ইসলাম গ্রহণ করেছিল তাদের দেশে এটা ছড়িয়ে পড়েছিল। এজন্য দেখা যায় যে, যে মুসলিম সমাজগুলো আরবীতে অজ্ঞ তারা সাধারণত ইসলাম সম্পর্কে ওয়াকিফহাল কম। এই অজ্ঞতা পর্যায়ক্রমে তাদেরকে সোজা পথ থেকে বিচ্যুত করার ক্ষেত্রে অধিক বিপথগামী করেছে।ইসলামের শত্রুরা এটা জেনে মুসলমানদের আরবী ভাষা ও কুরআন থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে। আলজেরিয়া যখন ফ্রান্সের অধীনে ছিল তখন ফ্রান্সের সরকারকে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল যে, ‘আমরা ততদিন পর্যন্ত আলজেরিয়া বশীভূত করতে পারব না যতদিন পর্যন্ত তারা কুরআন পাঠ করবে এবং আরবী ভাষায় কথা বলবে।
তাই আমাদেরকে অবশ্যই তাদের মধ্য থেকে আরবী কুরআন সরিয়ে ফেলতে হবে এবং তাদের মুখ থেকে আরবী ভাষা কেড়ে নিতে হবে’।তুর্কীর ধর্মনিরপেক্ষ নেতা কামাল আতাতুর্ক, যিনি ইসলামী খিলাফতের বিলুপ্তি সাধন করেছিলেন, দুর্ভাগ্যবশতই এটা করেছিলেন। তিনি আদেশ করেছিলেন যে, কুরআন তুর্কী ভাষায় পাঠ করতে হবে, এমনকি ছালাতেও। আর যেসব তুর্কী ভাষা আরবীতে লিখা হ’ত, তা ল্যাটিন ভাষায় পরিবর্তন করেছিলেন।আজকে আপনি দেখবেন যে, যদিও আরবে দুর্ভাগ্যক্রমে সারা বিশ্বের ন্যায় বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার রয়েছে, কিন্তু তারা এখনও তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে ক্লাসিক আরবী শিক্ষা দেয় এবং প্রতিটি সংবাদপত্র ও বইয়ের লিখার মানদন্ড হ’ল ক্লাসিক আরবী। তাই এটা আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষিত হয়েছে। যেমনভাবে তিনি কুরআনে প্রতিজ্ঞা করেছেন, إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ ‘নিশ্চয়ই আমরা কুরআন নাযিল করেছি, আমরাই এর হেফাযতকারী’ (হিজর ১৫/৯)।
আমাদের সকলের জন্য একটি পূর্ববর্তিতা :
বিদ্বানগণ আরবী ভাষা শিক্ষার জন্য উম্মাহকে উৎসাহিত করেছেন। যেমন ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেছেন,عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ أَنْ يَتَعَلَّمَ مِنْ لِسَانِ الْعَرَبِ مَا بَلَغَهُ جُهْدُهُ فِي أَدَاءِ فَرْضِهِ كَمَا عَلَيْهِ أَنْ يَتَعَلَّمَ الصَّلَاةَ وَالْأَذْكَارَ‘ছালাত ও দো‘আ-দরূদসমূহ শেখার ন্যায় প্রত্যেক মুসলিমের জন্য সাধ্যনুযায়ী আরবী ভাষা শিক্ষা করা আবশ্যক, যাতে সে ফরয সমূহ যথাযথভাবে আদায় করতে পারে’ (মাওয়ার্দী, আল-হাবী ফী ফিকহিশ শাফেঈ ১৬/১২০)।৮ম শতাব্দীর বিখ্যাত পন্ডিত শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) বলতে গিয়ে এতটাই বলেছেন যে, نفس اللغة العربية من الدين ومعرفتها فرض واجب ‘আরবী ভাষা স্বয়ং দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত এবং তা শেখা অতীব যরূরী’ (ইকতিযাউছ ছিরাতিল মুস্তাকীম, পৃঃ ২০৭)।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা শুধুমাত্র অনুবাদের উপর নির্ভর করে স্বস্তিবোধ করছি এবং আমাদের সব সময় ও প্রচেষ্টা অন্যান্য জিনিস (এমনকি অন্যান্য ভাষা) শেখার ক্ষেত্রে ব্যয় করছি, যা পরকালে আমাদের কোন উপকারে আসবে না। কুরআনের ভাষা যে খুবই সুগম এবং এটা পড়া ও বুঝা যে আমাদের সকলের কর্তব্য অথবা দায়িত্ব তা ভুলে গেছি।যদি আপনি জানতেন যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য ব্যক্তিগতভাবে একটি চিঠি এসেছিল, তাহ’লে আপনি কি এটা প্রকৃত রূপে বুঝতে চাইতেন না? এ ব্যাপারে ভেবে দেখুন।
আমাদের কাছে মানবজাতির শেষ প্রত্যাদেশ রয়েছে, আমাদের রব ও মালিকের পক্ষ থেকে একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম, যা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং সত্তরোর্ধ্ব বয়স হওয়া সত্ত্বেও আমরা এটার উপর যথাসাধ্য মনোযোগ দেই না। আমাদেরকে অনুধাবন করতে হবে যে, আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন দিয়ে সম্মানিত করেছেন এবং আমাদের জন্য সবচেয়ে উন্নত ভাষা নির্বাচন করেছেন। আর আরবী ভাষায় মনোযোগ দেওয়া হ’ল আল্লাহর কিতাবে মনোযোগ দেওয়া। তাই অগ্রাধিকার দিয়ে এটা শিক্ষা করা উচিত।আমি স্মরণ করি সে সময়ে কথা, যখন আমি প্রথম আরবী ভাষা শেখার কাজে নিযুক্ত হই, তখন ছালাতে আল্লাহর বাণীর মিষ্টতার যে স্বাদ তা অনুভব করি। আমি শুধু কুরআনের একই আয়াত বার বার পড়ছিলাম এবং শব্দের স্বাদ নিচ্ছিলাম এবং হৃদয়ে এক গভীর আবেগ অনুভব করছিলাম, যা ইতিপূর্বে আমি কখনও অনুভব করিনি। যদিও একই আয়াত আরবী শেখার আগে বহুবার পড়েছি। তখন এমন মনে হয়েছিল যে, এটা আমার জন্য একটি দ্বীপ জ্বালিয়ে দিল এবং হঠাৎ করে আমি ঘরের একটি নতুন অংশ আবিষ্কার করলাম।
যে ঘরটাতে আমি বছরের পর বছর ধরে বসবাস করেছি। আরবী শেখার একটি নির্দিষ্ট উপকারিতা হ’ল এটা ছালাতে খুশূ বা আত্মজ্ঞানে সাহায্য করে এবং আমাদের সকল ধর্মীয় কর্মকান্ডকে উন্নত করতে সহায়তা করে।
Last edited: