Muslim Woman
Super Moderator
- Messages
- 12,286
- Reaction score
- 1,449
- Gender
- Female
- Religion
- Islam

বদলে যাবার গল্প
উম্মু নুসাইবা
জীবনটা ভালোই কাটছিল, হাসি-আনন্দে, গল্পে-আড্ডায় কিংবা জীবনের স্বাভাবিক ব্যস্ততায়।
ছুটির দিনে প্রিয় মানুষদের সাথে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো, কখনো বা রাত জেগে জমজমাট আড্ডা, ক্রিকেট মৌসুমে ক্রিকেটের নেশায় মত্ত হওয়া; কোন দল হারলো, কোন দল জিতলো, কে সেঞ্চুরী করলো, কে দুর্দান্ত বোলিং করে মাঠ মাতিয়ে রাখলো ইত্যাদি আরও কত কী!
কিংবা, লম্বা কোন ছুটি পেলে শহরের কোলাহল ছাড়িয়েগাড়ি নিয়ে এক্কেবারে সমুদ্র সৈকত কিংবা গহীন কোন অরণ্যে। সে সুযোগ না হলেনিদেনপক্ষে আশুলিয়া কিংবা সংসদ ভবন কিংবা ঢাকার আশেপাশে। ক্যামেরা হাতেবেরিয়ে পরে কখনও শরতের অপূর্ব আকাশ, কুয়াশা মাখা শীতের ভোর কিংবা ফুলে ফুলেভরা বসন্তের বিকেল ফ্রেমে বন্দী করা।
খুব বেশী মন খারাপ হলে, কাক ডাকা ভোরে কাউকে কিছু না বলে মোহনীয় সুরের তালে তালে ঘন্টা খানেকের একটা ড্রাইভ।
এভাবেই, ঘর-সংসার আর কর্মজীবনের ব্যস্ততা নিয়ে আর দশটা সাধারণ মানুষের মতোই মোটামুটি ভালই কাটছিল আমার জীবন।
কিন্তু, একদম ছেলেবেলা থেকে একটা প্রশ্ন বারবার কাঁটার মতো আমার সমস্ত সুখের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতো।আর, সে প্রশ্নটা হল, জীবনের পরে কী?
এই জীবনের উদ্দেশ্যই বা কী? জ্ঞানহবার পর থেকে এই প্রশ্নগুলো আমাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে জীবনের দীর্ঘ একটা সময়। মনে পড়ে, কৈশোরের শুরুতেই আমি আমার মা’কে প্রশ্ন করেছি বহুবার,“জীবনের উদ্দেশ্য কী, মা?”
মা বলতেন, আমি ইঁচড়ে পাকা। কখনো বা বিরক্ত হয়ে দূরে ঠেলে দিতেন।
এক পর্যায়ে প্রশ্ন করা বন্ধ করেছি, কিন্তু ডায়েরীর পাতা জুড়ে লিখেছি আমার অতৃপ্ত আত্মার না বলা অনুভুতি। এই একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পাগলের মতো পড়েছি শত-সহস্র বই।
হুমায়ুন আহমেদ থেকে মানিক বন্দোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্রথেকে ম্যাক্সিম গোর্কী, বুঁদ হয়ে থেকেছি কখনও জীবনান্দ দাস বা কখনও নির্মলেন্দু গুনের কবিতায়, নানা দেশের নানা লেখকের লেখনীর মাঝে আমি শুধুখুঁজেছি একটি প্রশ্নের উত্তর।
মনে আছে, একদিন রমনা পার্কে হাঁটছিলাম। দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটু দূরে একা একাই হাঁটছিলাম।
স্বভাবসুলভ ভাবুক মনে নানা ভাবনার মাঝে আবারও উঁকি দিল একই প্রশ্ন, “আচ্ছা, এই মূহুর্তে যদি আমার মৃত্যু হয়, তাহলে আমি কোথায় যাব? আমার সাফল্যে ভরা শিক্ষা জীবন, সম্ভাবনাময় কর্মজীবন কিংবা সুখী দাম্পত্য জীবন, আমার প্রিয়স্বামী-সন্তান, হায় আমার সাথে যে কিছুই যাবে না!” নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলাম, তাহলে কিসের পেছনে ছুটছি আমি?
এ যে মরীচিকা ! ! এ যে ধোঁকা ! ! !
মনেপড়লো, শত-সহস্র বইয়ের মাঝে খুব যত্ন করে শেলফের অনেক উপরে উঠিয়ে রাখাধূলিমলিন একটি বইয়ের কথা। আগ্রহের অভাবে যে বইটি কোনদিন খুলে দেখা হয় নি।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে কিংবা রোজার মাসে দূর্বোধ্যে হায়রোগ্লিফিকস্ এর সমগোত্রীয় ভাষায় খুব অনাগ্রহ নিয়ে পড়া ছাড়া যা কোনদিন যত্ন করে বোঝার চেষ্টা করা হয়নি।
তারপর…..
হাতের কাছে সবচাইতে অবহেলায় পড়েথাকা ধূলিমলিন সেই বইটি বদলে দিল আমার সমগ্র জীবন, অবলীলায় দিল আমার সকলপ্রশ্নের উত্তর, যে প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজেছি শতসহস্র আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্ররাজির অপূর্ব শোভায়, খুঁজেছি সবুজে ঢাকা গহীন অরণ্যের সীমাহীন নিস্তব্ধতায় কিংবা গোধুলী বেলায় স্বর্ণাভ সমুদ্রের অন্তহীন বিক্ষুব্ধ উর্মিমালায়।
একটি মাত্র বইয়ের শক্তিশালী বাণী যেন আমার অতৃপ্ত, অস্থির আরজিজ্ঞাসু মনের সকল পিপাসা দূর করে আমার অন্তরকে করলো প্রশান্ত।
অবাক বিস্ময়ে নিজেকে প্রশ্ন করলাম, এ কোন লেখক, যে আমার মনের গহীনে লুকিয়ে থাকানা বলা প্রশ্নের উত্তর দেয়?
এ কোন লেখক, যার প্রতি নিজের অজান্তেই আমারহৃদয় শুধু সিজদাবনত হয়? এ কোন লেখক, যার জ্ঞানের কাছে পৃথিবীর তাবৎ মানুষেরজ্ঞান ক্ষুদ্র আর তুচ্ছ মনে হয়? . . .
“আল-কোরআন” নামের এই বইটি আমাদের সবার ঘরে ঘরে খুব যত্ন করে তোলা আছে।
উদ্দেশ্যহীন আর অতৃপ্ত এই জীবনকে যারা সত্যিকার ভাবে বদলে দিতে চান, তারা একবার সব ব্যস্ততাকে এক পাশে ঠেলে যত্ন করে বইটি খুলে দেখবেন কি?........
Last edited: