চিকিৎসাবিজ্ঞানের আলোকে রোজার উপকারিতা

Muslim Woman

Super Moderator
Messages
12,286
Reaction score
1,449
Gender
Female
Religion
Islam
:sl:


পৃথিবীজুড়ে ১৬০ কোটি মুসলমান রোজার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার কাছে নিজেদের নিবেদন করেন। তাঁদের এ আত্মনিবেদনের পেছনে থাকে না কোনো ইহলৌকিক চাওয়া।

আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিই কেবল চেয়ে থাকেন মুমিনরা। আল্লাহ তাআলাও মুমিনদের এ ভালোবাসাকে কবুল করে নিয়ে জান্নাতি প্রতিদান দিয়ে তাঁদের জীবনকে কানায় কানায় পূর্ণ করে দেন।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, আল্লাহ তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেন। ’ (বুখারি ও মুসলিম)
রোজাদারদের সংবর্ধিত করতে জান্নাতে থাকবে একটি বিশেষ গেট। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতে রাইয়ান নামে একটি দরজা আছে। ওই দরজা দিয়ে কেবল রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। ঘোষণা করা হবে, রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা উঠে দাঁড়ালে তাদের জান্নাতে প্রবেশ করতে বলা হবে। তারা প্রবেশ করার পর ওই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং তা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ’ (সহিহ বুখারি) ইহলৌকিক কোনো প্রাপ্তির আশায় মুসলমানরা রোজা না রাখলেও বর্তমান পৃথিবীর গবেষকরা রোজা নিয়ে গবেষণা করে রোজার দৈহিক অনেক উপকার আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন।


রোজার ব্যাপারে ইসলাম কঠোর অবস্থানে। রোজা অস্বীকারকারী কাফির। রোজা পরিত্যাগকারী ফাসেক। কেউ যদি ইচ্ছাকৃত একটি রোজাও ছেড়ে দেয়, তাহলে তাকে এর জন্য কাফফারা দিতে হবে। কাজাও আদায় করতে হবে। কেন এত কঠোরতা? কারণ রোজায় রয়েছে মানুষের জন্য প্রভূত কল্যাণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোজা রাখো, তোমরা সুস্থ থাকবে। ’ (মুসনাদে আহমাদ)


রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এই হাদিস বলে, রোজায় সুস্থ থাকার অনেক উপাদান রয়েছে। ১৯৯৭ সালে ‘দেহের সজীব পুষ্টির ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে পরিচালিত একটি গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, রোজা মানবদেহের খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমিয়ে নিয়ে আসে এবং ভালো (উপকারী) কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়। আর এর মাধ্যমে মানুষের হার্টকে কার্ডিওভাসকুলার রোগ থেকে রক্ষা করে। (দৈনিক আল আরাবিয়া : ৮ জুলাই ২০১৪)


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহর মতে, রোজা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রোগীদের জন্য বিশেষ রহমত। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল উপায় হলো খাদ্য নিয়ন্ত্রণ। রোজা মানেই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ। যারা ইনসুলিননির্ভর নয়, তাদের ক্ষেত্রে রোজা রাখা এক আদর্শ চিকিৎসাব্যবস্থা। আর যারা ইনসুলিন নেয় তাদের ওষুধের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে রোজা।

রক্তের গ্লুকোজ ও চর্বি নিয়ন্ত্রণে রোজা মোক্ষম ভূমিকা পালন করে। রোজা ডায়াবেটিস রোগীকে সংযম, পরিমিতিবোধ ও সৃঙ্খলা শিক্ষা দেয়, যা ডায়াবেটিস চিকিৎসায় অপরিহার্য। আর রোজার মাধ্যমে ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ হওয়ার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায় এবং উচ্চরক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।



একসময় মানুষ ধারণা করত, পেপটিক আলসারে আক্রান্ত রোগীরা রোজা রাখতে পারবে না। তাদের ঘন ঘন খেতে হবে। অনেকক্ষণ পেট খালি রাখা যাবে না, এতে এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করেছে। বরং আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, রোজায় নিয়ন্ত্রিত খাবারের ফলে এসিডের মাত্রা কমে যায়। সঠিকভাবে রোজা রাখলে এবং নিয়ম মতো সাহরি ও ইফতার গ্রহণ করলে আলসারের উপশম হয়। এমনকি অনেকের ক্ষেত্রে আলসার একেবারেই সেরে যায়।


চিকিৎসাবিজ্ঞানে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান জাপানের ডা. ইয়োশিনোরি ওহশুমি। টোকিও ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক ইয়োশিনোরি ওহশুমির গবেষণার বিষয় ছিল, ‘Mechanisms underlying autophagy’। কোষ কিভাবে নিজের আবর্জনা পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে সুস্থ ও সজীব থাকে, সে রহস্যে আলো ফেলে নোবেল পুরস্কার জিতে নেন তিনি। কোষের এ প্রক্রিয়ার নাম অটোফাজি (Autophagy)| অটোফাজি হলো কোষঘটিত প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত একটি পদ্ধতি, যা কোষের বার্ধক্য নিয়ন্ত্রণ ও এর দেহকে সংরক্ষণ করে এবং কোষ তার ভেতরে থাকা বর্জ্য ভেঙে সেটিকে আবার ব্যবহার উপযোগী উপাদানে পরিণত করে। অটোফাজি প্রক্রিয়ায় অসংগতি দেখা দিলে মানবদেহের কোষগুলো বাঁচে না। এই প্রক্রিয়ায় কোনো রকমের ঝামেলা হলে ক্যান্সার ও স্নায়ুবিক অনেক রোগে আক্রান্ত হয় মানবদেহ।


ডা. ওহশুমি তাঁর গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে অটোফাজি (Autophagy)) প্রক্রিয়াকে সচল করে রোজা। মানুষ রোজা রাখলে তার দেহ মস্তিষ্ককে সংকেত দেয় যে দেহে প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাবার নেই। মস্তিষ্কের দেখানো পথে দেহ তখন রক্ষিত খাবারের সন্ধানে বের হয়ে দেহকোষ তার ভেতরে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত প্রোটিন কণা খুঁজে বের করে।
তারপর সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে কোষ তার সুস্থতায় কাজে লাগায়। আর অটোফাজি প্রক্রিয়াকে স্বয়ংক্রিয় করতে হলে সে মানুষকে কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা Fasting (রোজা) পালন করতে হবে। ডা. ওহশুমি বলেন, যদি এ রোজার ভেতরে সামান্য পরিমাণ খাবার গ্রহণ করলেও অটোফাজি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। (Saudi Gazette : October ২৮, ২০১৬)

ডা. ওহশুমির গবেষণায় যে উপবাসযাপনের কথা বলা হয়েছে, তা একেবারেই ইসলাম নির্দেশিত রোজা। কারণ রোজায় ১২ ঘণ্টার মতো না খেয়ে থাকতে হয় আর এর ভেতরে সামান্য খাবার গ্রহণ করলেও রোজা ভেঙে যায়।


লেখক : খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ


বোর্ড বাজার (আ. গনি রোড), গাজীপুর



http://www.24livenewspaper.com/site/?url=www.kalerkantho.com/


 

Similar Threads

Back
Top