সকল প্রশংসা বিশ্ব পালনকর্তা আল্লাহর জন্য সমর্পিত। উৎপীড়ক ও সীমালংঘনকারীগণ ছাড়া আর কেউ আল্লাহর ক্রোধানলে নিপতিত হয় না। সাইয়্যেদুল মোরসালীন ও ইমামুল মোত্তাক্বীন হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা (সাঃ) এর প্রতি সালাম জ্ঞাপন করছি। আরো জ্ঞাপন করছি, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবায়ে কেরামের প্রতি। হাদীসে কুদ্*সী কি?
ইসলামী শরীয়তের চার উৎস মূলের অন্যতম হচ্ছে, ‘আল হাদীস’ পবিত্র আল কুরআনের পরেই যার স্থান। হাদীস হচ্ছে - প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তফা (সাঃ)- এর মুখনিঃসৃত নিজস্ব বাণী ও কর্ম এবং রাসূল (সাঃ) কর্তৃক সাহাবায়ে কেরাম(রাঃ) গনের বক্তব্য ও কর্মের অনুমোদন।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কথা, কাজ ও অনুমোদনের বিপরিত নয়, সাহাবায়ে কেরামের এমন সব কথা, কাজ ও অনুমোদন হাদীসের মধ্যে গণ্য।
হাদীসসমূহের মধ্যে এমন কতগুলো হাদীস রয়েছে যেগুলো আল্লাহর নবী (সাঃ) নিজ জবানে বর্ণনা করলেও তা মহান আল্লাহ তায়া’লার নামে বিবৃত হয়েছে। যেমন - ‘আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন’ কিংবা ‘মহান আল্লাহ তায়া’লা বলেন’ এভাবে উল্লেখ হয়েছে। হাদীস শাস্ত্র বিশারদ - মুহাদ্দিসদের কাছে এগুলো ‘হাদীসে কুদসী’ নামে পরিচিত।
কুদ্*স শব্দের অর্থ হচ্ছে - পবিত্র (দোষ-ক্রটি থেকে)। যা আল্লাহ তায়া’লার গুনবাচক নামসমূহের একটি নাম। যেহেতু এ হাদীসগুলো সরাসরি আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত তাই এগুলোকে ‘হাদীসে কুদ্*সী’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন এ হাদীসগুলো ব্যক্ত করতেন, তখন তা সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে বর্ণনা করতেন। যেমন - আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন বা বলেন, আবার কখনও বা বলতেন, ‘জিবরাঈ’লকে আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন, কিংবা ‘জিবরাঈ’ল (আঃ) আমাকে বলেছেন।
মোট কথা যেসব হাদীসের মর্ম রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘ইলহাম’ কিংবা জিবরাঈ’ল (আঃ) এর মাধ্যমে জ্ঞাত হয়ে নিজ ভাষায় প্রকাশ করেছেন, তাই ‘হাদীসে কুদ্*সী’ হিসেবে সুপরিচিত।
প্রাথমিক যুগের মুহাদ্দিসগণের মতে - ‘হাদীসে কুদসী’র সংখ্যা একশ’য়ের কিছু বেশি। কিন্তু পরবর্তী কালের মুহাদ্দিসগণ প্রায় সহস্র হাদীসকে ‘হাদীসে কুদসী’ হিসাবে গণ্য করেছেন।
উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হযরতুল আ’ল্লামা মুহাম্মদ মাদানী (রহঃ)- এর বিখ্যাত ‘হাদীসে কুদসী ’ সংকলন গ্রন্থ ‘আল ইতফা-ফা-তুস্* সুন্নিয়্যাতু ফিল আহা-দীসিল কুদসিয়্যাহ’ থেকে সুনির্বাচিত প্রায় তিনশত ‘হাদীসে কুদসী’ এর বঙ্গানুবাদসহ বিষয় ভিত্তিক রূপে উপস্থাপন করা হল।
১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্* বলেছেন, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই) আমার দুর্গ। তাতে যে প্রবেশ করেছে, সে আমার শাস্তি থেকে নিরাপদ হয়েছে।”
এ হাদীসটি হযরত আনাস (রাঃ) থেকে ইবনু নাজাজ সংগ্রহ করেছেন।
২. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন - সুমহান আল্লাহ্* হযরত মূসা ইবনে ইমরানের প্রতি প্রত্যাদেশ নাযিল করলেন যে, “তাঁর উম্মতের মধ্যে এমন কিছু সংখ্যক লোক হবে, তারা উঁচু নিচু স্থানে উঠা নামার সময় ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই)’ সাক্ষ্য দিতে থাকবেন, তাদের জন্য আম্বিয়ায়ে কেরামের অনুরূপ পুরস্কার রয়েছে।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রাঃ) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৩. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয় আল্লাহ্* সর্বপ্রথম লাওহে মাহফুজে যা কিছু লিখেছেন তা হচ্ছে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম - পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি, নিশ্চয় আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কোন মা’বুদ নেই।
আমার কোন শরীক নেই, যে আমার বিচার-মীমাংসার প্রতি আত্নসমর্পণ করেছে। আমার কঠিন পরীক্ষার সময় সবর এখতিয়ার করেছে এবং আমার শাসনে সন্তুষ্ঠ রয়েছে, তাকে আমি সত্যবাদীরূপে লিখেছি; এবং কিয়ামতের দিন তাকে সত্যবাদীদের সাথে পুনরুন্থিত করব।”
ইবনুন নাজ্জার এ হাদীসটি হযরত আলী (রাঃ) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৪. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্* বলেন, “আমি আল্লাহ্*, আমি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, এ আমার উক্তি; এটা যে স্বীকার করে তাকে আমি আমার বেহেশতে প্রবেশ করাই, আর আমি যাকে আমার বেহেশতে প্রবেশ করাই, নিশ্চয়ই সে আমার শাস্তি থেকে নিরাপদ হয়। কুরআন আমার বাণী, আর আমার কাছ থেকে তা নাযিল হয়েছে।” খাতীব এ হাদীসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
ভয় ও উপাসনা ভয় ও উপাসনা একমাত্র আল্লাহর জন্যঃ
৫. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্* বলেছেন, “নিশ্চয়ই আমি এবং জিন ও মানব জাতি এক মহাপরিস্থিতিতে অবস্থান করছি। তাদেরকে আমি সৃষ্টি করি, আর তারা অন্যের উপাসনা করে, তাদেরকে আমি জিবিকা দেই, আর তারা অন্যের শুকরিয়া জ্ঞাপন করে।”
এ হাদীসটি হযরত আবুদ দারদ (রা) থেকে হাকেম ও তিরমিযী সংগ্রহ করেছেন।
৬. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- তোমাদের প্রভূ বলেছেন, “সকলে আমাকেই ভয় করবে। কারণ, আমিই এর যোগ্য; এতএব আমার সাথে আর কাউকেও যেন উপাস্য স্থির করা না হয়। অনন্তর যে আমার সাথে আর কাউকেও উপাস্য স্থির করবে না, তাকে আমি ক্ষমা করে দেয়া কর্তব্য মনে করি।” আহমদ ও তিরমিযী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রাঃ) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ৭. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, “আমার বান্দারা যদি পুরোপুরি আমার অনুগত হত, তবে নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে রাতে বৃষ্টিদান করতাম, তাদের জন্য দিনে রোদ উঠাতা এবং তাদেরকে বজ্র ধ্বনি শুনাতাম না।” আহমদ ও হাকেম এ হাদীসটি হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৮. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর সম্প্রদায়কে আমার আরশের ছায়া তলে স্থান দাও। কারণ, নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে ভালবাসি।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রাঃ) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৯. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- কোন মুসলমান বান্দা যখন ‘লা -ইলাহা ইল্লাল্লাহু‘ (আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই) বলে, তখন তা আকাশসমূহ ছেদন করে যায়, এমনকি তা আল্লাহর সম্মুখে গিয়ে পৌছে।
আল্লাহ্* তখন বলেন, “স্থির হও”, তখন এটা বলে, “আমি কিরূপে স্থির হব- আমি যার দ্বারা উচ্চারিত হয়েছি এখনও তাকে মাফ করা হয়নি”। আল্লাহ তখন বলেন, আমি তোমাকে সে লোকের জিহ্বা দ্বারা পরিচালিত করিনি যাকে তার আগ মুহুর্তে মাফ করে দেইনি।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রাঃ) থেকে সংগ্রহ করেছেন।