Muslim Woman
Super Moderator
- Messages
- 12,286
- Reaction score
- 1,449
- Gender
- Female
- Religion
- Islam

তওবাঃ দুই ভাইয়ের গল্প
- কাজী শফিকুল আযম
আমরা যে কোন সময় মারা যেতে পারি। মারা যাওয়ার আগে আমাদের সবশেষ কাজ বা বিশ্বাসই শেষ বিচারের দিনে বিবেচনায় নেয়া হবে। যেমন সারাজীবন সালাত আদায় করে মৃত্যুর দিন কেউ যদি মূর্তিকে সিজদা করে আল্লাহর সাথে মানুষের হাতে বানানো মূর্তিকে আল্লাহর শরীক করে ফেলে, তবে তার সারা জীবনের ইবাদাত নষ্ট হয়ে যাবে।
আল্লাহ্ আগেই এ কথাটি জানিয়ে দিয়েছেন পবিত্র কুরআনে: “নিশ্চয়ই আল্লাহ তারঁ সাথে শরীক করা মাফ করেন না” (সুরা নিসাঃ ৪:৪৮)।
তাই এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে পাপ কাজের জন্য সাথে সাথে অনুশোচনা করা ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই। পরে তওবা করবো- এমনটি ভাবা ও আগামীর জন্য তা রেখে দেয়া চরম বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়। এ বিষয়ে দুই ভাইয়ের গল্প বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বড় ভাই খুবই ধার্মিক, বাড়ির দোতলায় থাকে। ছোট ভাই নাস্তিক, নীচের তলায় থাকে। মদ খাওয়া, জুয়া খেলা থেকে শুরু করে যে কোন খারাপ কাজেই সে অভ্যস্থ। বড় ভাই তাকে সৎ পথে আসার জন্য অনেক উপদেশ দিত কিন্তু ছোট ভাই তাতে মোটেও কান দিত না।
নিজের ভালো আমলের জন্য বড় ভাইয়ের মনে খুব অহংকার ছিল। সে তার সৎ স্বভাব ও আমলের জন্য এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিল যে এমনও ভাবতো- শয়তান যদি এসে তাকে প্ররোচিত করতে চাইতো, তাহলে বেশ মজা হতো। সে তো কিছুতেই শয়তানের প্রলোভনের ফাঁদে পা দিতো না, শয়তান তখন নিরাশ হয়ে ফিরে যেত।
একদিন ইবলিশ শয়তান বৃদ্ধ মানুষের চেহারা নিয়ে বড় ভাইয়ের সামনে আসলো। শয়তান তাকে নানাভাবে বোঝালো যে ইবাদাত হলো বুড়ো বয়সের জন্য। সে বললো, দেখো তোমার ভাই কী সুন্দরভাবে জীবনকে ভোগ করছে। তোমার দাদা, বাবা, চাচা সবাই তো ছিলেন দীর্ঘজীবী; তাই তুমিও অনেক দিন বাঁচবে। এখন তুমি সারা রাত কষ্ট করে নামাজ পড়, দিনে রোজা রাখ। এভাবে জীবনের সব আনন্দ থেকে তুমি নিজেকে বঞ্চিত করছো। কী বোকা তুমি। এভাবে সব ভোগবিলাস বাদ দিলে জীবনে বেঁচে থেকে কী লাভ?
তুমি এখন তোমার ছোট ভাইয়ের কাছে যাও, ওর মতো আনন্দ ফূর্তি করো। পরে বুড়ো বয়সে ইবাদাত করো আর তওবা করে নিও। আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল। তুমি বুড়ো বয়সে হজ্জে গিয়ে মাফ চাইলে আল্লাহ্ তোমার সব পাপ মাফ করে দিবেন।
বড় ভাই ভাবলো, তাই তো। কী বোকা আমি। বুড়ো বয়সে হজ্জে গেলেই তো গুনাহ মাফ হবে আমার। তাহলে এখন আর এত ইবাদাত করে কী লাভ?
এদিকে ছোটভাই নীচতলায় বসে ভাবছিল, হায়! আমি কত পাপী। আমার বড় ভাই কত পবিত্র জীবনযাপন করেন, কত ইবাদাত করেন; আর আমি কি না তারই আপন ছোটভাই হয়ে কত পাপ কাজ করি। কখনো নামাজ পড়ি না, রোজা রাখি না। হায়! না জানি কিয়ামতের দিনে আমার কী অবস্থা হবে। আমার ভাই আল্লাহর পথে থেকে ভাল কাজ করে জান্নাতে যাবে আর আমি পাপ কাজের জন্য জাহান্নামের আগুনে পুড়বো সবসময়। না, এমনটা হতে পারে না। আর দেরী করা ঠিক হবে না। আজই আমি তওবা করে সৎ পথে ফিরে আসবো। আমার বড়ভাইয়ের কাছে যাই। তাহলে একসাথে ইবাদত করতে সুবিধা হবে।
এই ভেবে ছোটভাই আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে চাইতে ও আর কোন খারাপ কাজ না করার শপথ নিতে নিতে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলো। অন্যদিকে বড়ভাই আনন্দফূর্তি করার জন্য ছোট ভাইয়ের কাছে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হলো। সে ভাবছে আজ থেকে কিছু গুনাহর কাজ করি, তওবা বুড়ো বয়সে করবো। তাড়াতাড়ি করে নামতে গিয়ে সে পা পিছলে পড়ে সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে গিয়ে পড়লো ছোট ভাইয়ের উপর। টাল সামলাতে না পেরে ছোট ভাইও সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে নীচে পড়ে যেতে লাগলো। এভাবে এক ভাই অন্য ভাইয়ের উপর পড়ে দু’জনেই মারা গেল।
মারা যাওয়ার আগে যে যা নিয়ত করেছিল ও যা করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিল, সেই শেষ আমলই কিয়ামতের দিন গণ্য হওয়ার কথা। অর্থাৎ, শয়তানের ফাঁদে পড়ে বুড়ো বয়সে তওবা করবো, এখন পাপ কাজ কিছু করে ফেলি- এটা ভেবে সে অনুযায়ী কাজ করার উদ্যোগ নেয়ার জন্য বড় ভাই হয়ত জাহান্নামের পথ সহজ করে নিল আর অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে ভালো জীবনে ফিরে আসার শপথ করে ও সে অনুযায়ী আমল করার জন্য ঘর থেকে বের হওয়ায় ছোটভাই ইনশাআল্লাহ্ জান্নাতের দাবীদার হবে।
আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো –বিশুদ্ধ তওবা। সম্ভবতঃ তোমাদের রব তোমাদের মন্দ কাজগুলো মোচন করে দেবেন ও তোমাদের প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত (সূরা তাহরীমঃ ৬৬:৮)।
যোগাযোগ: [email protected]
আল্লাহ্ আগেই এ কথাটি জানিয়ে দিয়েছেন পবিত্র কুরআনে: “নিশ্চয়ই আল্লাহ তারঁ সাথে শরীক করা মাফ করেন না” (সুরা নিসাঃ ৪:৪৮)।
তাই এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে পাপ কাজের জন্য সাথে সাথে অনুশোচনা করা ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই। পরে তওবা করবো- এমনটি ভাবা ও আগামীর জন্য তা রেখে দেয়া চরম বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়। এ বিষয়ে দুই ভাইয়ের গল্প বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বড় ভাই খুবই ধার্মিক, বাড়ির দোতলায় থাকে। ছোট ভাই নাস্তিক, নীচের তলায় থাকে। মদ খাওয়া, জুয়া খেলা থেকে শুরু করে যে কোন খারাপ কাজেই সে অভ্যস্থ। বড় ভাই তাকে সৎ পথে আসার জন্য অনেক উপদেশ দিত কিন্তু ছোট ভাই তাতে মোটেও কান দিত না।
নিজের ভালো আমলের জন্য বড় ভাইয়ের মনে খুব অহংকার ছিল। সে তার সৎ স্বভাব ও আমলের জন্য এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিল যে এমনও ভাবতো- শয়তান যদি এসে তাকে প্ররোচিত করতে চাইতো, তাহলে বেশ মজা হতো। সে তো কিছুতেই শয়তানের প্রলোভনের ফাঁদে পা দিতো না, শয়তান তখন নিরাশ হয়ে ফিরে যেত।
একদিন ইবলিশ শয়তান বৃদ্ধ মানুষের চেহারা নিয়ে বড় ভাইয়ের সামনে আসলো। শয়তান তাকে নানাভাবে বোঝালো যে ইবাদাত হলো বুড়ো বয়সের জন্য। সে বললো, দেখো তোমার ভাই কী সুন্দরভাবে জীবনকে ভোগ করছে। তোমার দাদা, বাবা, চাচা সবাই তো ছিলেন দীর্ঘজীবী; তাই তুমিও অনেক দিন বাঁচবে। এখন তুমি সারা রাত কষ্ট করে নামাজ পড়, দিনে রোজা রাখ। এভাবে জীবনের সব আনন্দ থেকে তুমি নিজেকে বঞ্চিত করছো। কী বোকা তুমি। এভাবে সব ভোগবিলাস বাদ দিলে জীবনে বেঁচে থেকে কী লাভ?
তুমি এখন তোমার ছোট ভাইয়ের কাছে যাও, ওর মতো আনন্দ ফূর্তি করো। পরে বুড়ো বয়সে ইবাদাত করো আর তওবা করে নিও। আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল। তুমি বুড়ো বয়সে হজ্জে গিয়ে মাফ চাইলে আল্লাহ্ তোমার সব পাপ মাফ করে দিবেন।
বড় ভাই ভাবলো, তাই তো। কী বোকা আমি। বুড়ো বয়সে হজ্জে গেলেই তো গুনাহ মাফ হবে আমার। তাহলে এখন আর এত ইবাদাত করে কী লাভ?
এদিকে ছোটভাই নীচতলায় বসে ভাবছিল, হায়! আমি কত পাপী। আমার বড় ভাই কত পবিত্র জীবনযাপন করেন, কত ইবাদাত করেন; আর আমি কি না তারই আপন ছোটভাই হয়ে কত পাপ কাজ করি। কখনো নামাজ পড়ি না, রোজা রাখি না। হায়! না জানি কিয়ামতের দিনে আমার কী অবস্থা হবে। আমার ভাই আল্লাহর পথে থেকে ভাল কাজ করে জান্নাতে যাবে আর আমি পাপ কাজের জন্য জাহান্নামের আগুনে পুড়বো সবসময়। না, এমনটা হতে পারে না। আর দেরী করা ঠিক হবে না। আজই আমি তওবা করে সৎ পথে ফিরে আসবো। আমার বড়ভাইয়ের কাছে যাই। তাহলে একসাথে ইবাদত করতে সুবিধা হবে।
এই ভেবে ছোটভাই আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে চাইতে ও আর কোন খারাপ কাজ না করার শপথ নিতে নিতে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলো। অন্যদিকে বড়ভাই আনন্দফূর্তি করার জন্য ছোট ভাইয়ের কাছে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হলো। সে ভাবছে আজ থেকে কিছু গুনাহর কাজ করি, তওবা বুড়ো বয়সে করবো। তাড়াতাড়ি করে নামতে গিয়ে সে পা পিছলে পড়ে সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে গিয়ে পড়লো ছোট ভাইয়ের উপর। টাল সামলাতে না পেরে ছোট ভাইও সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে নীচে পড়ে যেতে লাগলো। এভাবে এক ভাই অন্য ভাইয়ের উপর পড়ে দু’জনেই মারা গেল।
মারা যাওয়ার আগে যে যা নিয়ত করেছিল ও যা করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিল, সেই শেষ আমলই কিয়ামতের দিন গণ্য হওয়ার কথা। অর্থাৎ, শয়তানের ফাঁদে পড়ে বুড়ো বয়সে তওবা করবো, এখন পাপ কাজ কিছু করে ফেলি- এটা ভেবে সে অনুযায়ী কাজ করার উদ্যোগ নেয়ার জন্য বড় ভাই হয়ত জাহান্নামের পথ সহজ করে নিল আর অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে ভালো জীবনে ফিরে আসার শপথ করে ও সে অনুযায়ী আমল করার জন্য ঘর থেকে বের হওয়ায় ছোটভাই ইনশাআল্লাহ্ জান্নাতের দাবীদার হবে।
আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো –বিশুদ্ধ তওবা। সম্ভবতঃ তোমাদের রব তোমাদের মন্দ কাজগুলো মোচন করে দেবেন ও তোমাদের প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত (সূরা তাহরীমঃ ৬৬:৮)।
যোগাযোগ: [email protected]
- at:http://www.nirmanmagazine.com/index...66-তওবাঃ-দুই-ভাইয়ের-গল্প#sthash.q3XV6gOf.dpuf
Last edited: