আল্লাহ বলেন , তুমি তার আনুগত্য করো না যার মনকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি , যে নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে ও যার কাজ সীমা ছাড়িয়ে যায় ( সুরা কাহফ ; ১৮ : ২৮ ) । সে রবকে ভুলেছে , তাই নিজের আত্মাকে ভুলেছে । তাই নিজের জন্য যা ভাল , নিজের মন ও আত্মাকে শুদ্ধ করবে যা , তা সে গ্রহণ করতে পারে না । তার মনে সন্দেহ থাকে , সে পথ হারিয়ে ফেলেছে ও ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে ।
মূল কথা হলো : আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান হলো সব জ্ঞানের ভিত । দাসকে জানতে হবে কিভাবে সে এই দুনিয়া ও পরের দুনিয়ায় সফল হবে । আল্লাহ সম্পর্কে না জানলে সে নিজের কল্যাণ কোথায় , তার পূর্ণতা কোথায় , কিভাবে সে সফল হবে সে সবও জানতে পারবে না । তাই আল্লাহ সম্পর্কে জানা তার জন্য সুখের , আল্লাহ সম্পর্কে না জানার পরিণাম হলো খুব কষ্ট ও বেদনার ।
আল্লাহকে ভালবাসা , সবসময় তাঁর যিকির করা ও তাঁকে সন্ত্তষ্ট করার চেয়ে আর কোন কিছুই দাসের জন্য উত্তম ও পছন্দনীয় হতে পারে না , এছাড়া দাস সম্পূর্ণ হয় না । এজন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে , ওহী নাযিল হয়েছে , নবী – রাসূলদের পাঠানো হয়েছে , আসমান ও দুনিয়া বানানো হয়েছে , বেহেশত ও দোযখ সৃষ্টি হয়েছে , হারাম – হালালের নিয়ম হয়েছে , পবিত্র ঘর বানানো হয়েছে ও হজ্জের জন্য জায়গা ঠিক করা হয়েছে - যা আল্লাহকে সন্ত্তষ্ট করে ।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
জ্ঞান ছাড়া এসব বিষয়ের ভিতরে ঢোকা যায় না । যারা আল্লাহ সম্পর্কে বেশি জানে , তারাই তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে । তাই যে আল্লাহকে জানবে , সে তাঁকে ভালবাসবে । যে দুনিয়া ও এর মানুষ সম্পর্কে জ্ঞান রাখে , সে এসবের প্রতি আগ্রহ হারাবে । তাই জ্ঞান সেই দরজা খুলে দেয় যাতে রয়েছে সৃষ্টির রহস্য ।
তাই জ্ঞানের ছাত্ররা সেটা দিয়ে জ্ঞান চর্চা শুরু করবে , যা তাদের এখন ও সবসময়ই দরকার লাগবে - আল্লাহ বিষয়ে জ্ঞান , তাঁর নাম , বৈশিষ্ট্য ও কাজ । সে যদি আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারে , তাহলে সে কুরআন ও সুন্নাহর জ্ঞান সেই নিয়মে চর্চা করবে , যা উম্মাহর প্রথম যুগের মুসলমানরা করেছেন ।
তাহলে সে রাসূল صلى الله عليه وسلم যেভাবে শিখিয়েছেন , সেভাবে শিখতে পারবে ।
ইবনে আল কাইয়্যিম র: বলেন , রাসূল صلى الله عليه وسلم এর পক্ষ থেকে কিছু বর্ণনা করা দুই ভাবে হয় :
১. কারো মাধ্যমে বা মধ্যস্থতাকারীর সহায়তায় ,
২. কারো মাধ্যম ছাড়া ।
সাহাবীরা কোন মাধ্যম ছাড়া সরাসরি রাসূল صلى الله عليه وسلم থেকে জ্ঞান অর্জন করেছেন , তারা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ । উম্মাহর অন্য কারো পক্ষে এদের সমান মর্যাদায় আসা সম্ভব নয় । তবে সেই সফল হবে , যে তাদের দেখানো পথে চলবে । যা কিছু এই পথ থেকে তাদের সরিয়ে নিতে পারে , সে সব থেকে সে দূরে থাকবে ।
নইলে তার অবস্থা হবে এমন - যে মরুভূমিতে মৃত্যুর ফাঁদ ছড়িয়ে আছে , সেখানে যেন সে পথ হারিয়ে উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।
তাই এর চেয়ে ভাল আর কী থাকতে পারে যার জন্য এমন মানুষেরা সবার আগে সেদিকে অর্থাৎ রাসূল صلى الله عليه وسلم ও সাহাবীদের দেখানো পথে ছুটে যাবে না ?
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
আল্লাহর শপথ , এই সাহাবীরা যেন জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ও সেরা পানীয় পান করেছে ও তারা ইসলামের মূল ভিতকে সমর্থন
করেছে । তারা যা শিখেছেন , তার কোনকিছু তারা পরের যুগের মানুষদের জন্য ব্যাখ্যা না করে যান নি । তারা মানুষের মনকে খুলে দিয়েছেন কুরআনের ন্যায়বিচার ও ঈমান দিয়ে ; তারা দেশ জয় করেছেন তরবারী ও জিহাদ দিয়ে ; তারা যে জ্ঞান অর্জন করেছেন রাসূল صلى الله عليه وسلم থেকে , তার সবকিছুই তাবেয়ীদের দিয়ে গিয়েছেন ।
তাদের ইসনাদ ছিল রাসূল صلى الله عليه وسلم , জিবরাইল আলাইহিস সালাম ও জগতসমূহের রব আল্লাহ থেকে , আর এটাই সর্বোচ্চ মানের ও বিশ্বাসযোগ্য ইসনাদ ।
তারা বলেন , এটা রাসূল صلى الله عليه وسلم এর আমনত যা আমাদের কাছে আছে , আমরা তোমাদের কাছে এই আমানত দিয়ে গেলাম । এটা আল্লাহ তাঁর রাসূল صلى الله عليه وسلم ও আমাদের উপর দায়িত্ব দিয়েছিলেন । আমরা এই দায়িত্ব তোমাদের দিয়ে গেলাম।
তাবেয়ীনরা দৃঢ়ভাবে নিয়ম মেনে জ্ঞানের পথে চলেছেন ও সঠিকভাবে রাসূল صلى الله عليه وسلم ও সাহাবীদের দেখানো পথ অনুসরণ করেছেন । এরপর তাদের অনুসারীরা একই পথে আবর্তিত হয়েছেন , সেরা কথা ও প্রশংসনীয় বৈশিষ্ট্যগুলির দিকে পরিচালিত হয়েছেন ।
যারা তাদের আগে এসেছিলেন , তাদের সাথে তুলনা করলে তাবেয়ী ও তার পরে যারা এসেছেন তাদের অবস্থান এমন , যা আল্লাহ যিনি সবচেয়ে সত্যবাদী বলেছেন : বেশিরভাগ হবে পুর্ববর্তীদের মাঝ থেকে ও অল্প সংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে
( সুরা ওয়াকিয়াহ ; ৫৬ : ১২-১৩ ) ।
এরপর আসলো শীর্ষস্থানীয় চিন্তাবিদরা আশীর্বাদপ্রাপ্ত চতুর্থ শতাব্দী থেকে যা সম্পর্কে একটি নির্ভরযোগ্য বর্ণনা এসেছে আবু সাঈদ , ইবনে মাসুদ , আবু হুরায়রা , আয়শা র: ও ইমরান বিন হুসাইন থেকে । তারা সম্মানিত পূর্ববর্তীদের পথ ধরে চলেছেন সব বিষয়ে , তাদের উজ্জ্বল আলোর ওয়ারিশ এরা, আল্লাহর ধর্ম এদের অন্তর ও আত্মার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান ছিল । তাই এসবের উপর তারা অন্য কারো যৌক্তিক মতামত , কারো অন্ধ অনুসরণ বা কোন যুক্তিপূর্ণ উপস্থাপনাকে প্রাধান্য দেন নি ।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
সারা দুনিয়ায় তারা সেরা আলো হিসাবে বিবেচিত হয়েছিলেন এবং অন্য সব মানুষের মাঝে আল্লাহ তাদেরকে সত্যবাদিতার গুণ দান করেছিলেন। এরপর পরবর্তী প্রজন্ম তাদের পদক্ষেপ অনুসরণ করেছেন এবং তাদের দৃঢ় ও সঠিক পথের নিয়মকানুন সমুন্নত রেখেছেন । তারা কোন ব্যক্তি বা দলের প্রতি অন্ধ আনুগত্য দেখান নি। তারা সহীহ দলীল প্রমাণে সন্ত্তষ্ট ছিলেন ; যেখানেই সত্যকে পেয়েছেন সেখান থেকেই সত্যকে গ্রহণ করেছেন ও সঠিক মতবাদে একনিষ্ঠ ছিলেন । যদি কখনো কোন সত্যকে পেয়েছেন যা তাদের উপর প্রভাব ফেলেছে , তার দিকে তারা ছুটে গিয়েছিলেন একক ও দলগতভাবে ।
রাসূল صلى الله عليه وسلم কোন কিছু করতে বললে , সাহাবীরা সেদিকে পুরো মনোযোগ দিতেন কোন প্রশ্ন না করেই । রাসূল صلى الله عليه وسلم এর কথা তাদের এত প্রিয় ছিল যে , তার কথার উপর তারা কোন কথা বলতেন না বা তার বিরোধিতা করতেন না ।
তাই জ্ঞানের সন্ধানীরা , তোমরা অবশ্যই তোমাদের মনোযোগ দেবে কুরআন ও সুন্নাহর জ্ঞানের দিকে । কেননা , এসবের জ্ঞানই হলো প্রকৃত জ্ঞান । অন্যকিছু সম্পর্ক অজ্ঞ থাকলেও তা সত্যিকারের অর্থে তোমার ক্ষতি করবে না ।
একজন শুভাকাঙ্খী বন্ধু উপদেশ পাঠিয়েছেন খুব সুন্দর ও জাদুকরী ভাষায় কেননা তিনি তোমাদের কল্যাণ চান । ইবনে আল কাইয়্যিম বলেন , ও হে যে তুমি নিজেকে বাঁচাতে চাও ; শোন একজন প্রিয় উপদেশদাতা কী বলছে ;
তোমার সব বিষয়ে ওহীকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখো, কামনা - বাসনার বিভ্রান্তিকর কিছুকে নয়;
আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাহকে বিজয়ী করো যা এসেছে তাঁর থেকে বিচারের মাপকাঠি নিয়ে ; যারা একে অস্বীকার করে তাদের উপর ওহীর তরবারীর আঘাত হানো , ঠিক যেমন মুজাহিদ হলে আঘাত হানতো আঙুলের অগ্রভাগে ;
এগিয়ে যাও সত্যের অনুভূতি নিয়ে, আন্তরিক আর সাহসী - যারা আল্লাহর প্রতি নিবেদিত তাদের পথে ; দৃঢ় থাকো ধৈর্য্য সহকারে হেদায়েতের ছায়ায় , যদি এই পথে তুমি ক্ষতিগ্রস্থ হও , তবে তা হবে পরম ক্ষমাশীলের খুশীর জন্য ।
আল্লাহর কিতাব ও নির্ভরযোগ্য ঐতিহ্যকে তোমার অস্ত্র বানাও , আর তোমার আত্মাকে শক্তিশালী করো, কে লড়াই করবে অথবা যুদ্ধের ময়দানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে?
প্রকাশ্যে ঘোষণা করো যা রাসূল صلى الله عليه وسلم
নিয়ে এসেছিলেন ; সাহায্যকারী থাকবে না এমন ভয়ে ভীত হয়ো না ;
দুই ধরণের পোশাককে ভয় করো , যারা এসব পরবে তারা হবে তিরষ্কৃত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত ; অজ্ঞতার পোশাক যা কোন অন্ধ মতবাদের সাথে আসে - কত ভয়ানক পোশাক এগুলি । নিজেকে সজ্জিত করো নিরপেক্ষতা ও ন্যায়পরায়নতা দিয়ে, এগুলি হলো সেরা পোশাক অন্তরকে সৌন্দর্যমন্ডিত করার জন্য ;
আল্লাহভীরুতা ও রাসূল صلى الله عليه وسلم এর উপদেশকে তোমার লক্ষ্য হিসাবে স্থির করো , এই দুই বিষয়ে সেরা হও ; আল্লাহর রশি ও ওহীকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং তাঁর উপর সেভাবে নির্ভর করো যেমনটি তাঁর প্রাপ্য ।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
ইমাম শাফেয়ী র: বলেন , কুরআনের বাইরে হাদীস বা ফিকাহর জ্ঞান ছাড়া আর সবকিছু মনোযোগ নষ্টকারী । যা কিছু শুরু হয় এভাবে - এটা আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন অমুক .........এছাড়া অন্যকিছু শয়তানের কূ – মন্ত্রণা ।
ইবনে আল কাইয়্যিম رضي الله عنهم বলেন , জ্ঞান হচ্ছে তাই যা আল্লাহ ,
তাঁর রাসূল صلى الله عليه وسلم ও সাহাবীরা বলেছেন । কেননা , এরাই সবচেয়ে জ্ঞানী । তাই যে কুরআন ও সুন্নাহ ছাড়া অন্যকিছু জ্ঞান পেতে চায় , সে অসম্ভবকে চায় । যে অন্যকিছু থেকে জ্ঞান নিয়ে সন্ত্তষ্ট , সে সঠিক পথ থেকে দূরে চলে গিয়েছে । কুরআন ও সুন্নাহ তোমাকে অজ্ঞতা থেকে মুক্তি দেবে । এ নিয়ে আল্লামা ইবনে আল কাইয়্যিম رضي الله عنهم বলেন , অজ্ঞতা হলো মরণ রোগ । এর সুস্থতা আছে দুইটি বিষয়ের ভিতরে -- কুরআন ও সুন্নাহ।
একজন যত্নশীল শিক্ষক এদেরকে আরো সুরভিত করে ; জ্ঞান তিন ধরণের - চতুর্থ কিছু নেই এছাড়া, সত্য তাই যা শুদ্ধ করে , জ্ঞান হলো স্রষ্টার গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যে এবং তাঁর কাজ সম্পর্কে জানা , আল্লাহর সব গুণবাচক নাম , তাঁর আদেশ - নিষেধ অর্থাৎ ধর্ম সম্পর্কে জানা , তাঁর সাথে সাক্ষাতের দিনে তিনি কী পুরষ্কার দেবেন, এসব কিছুই রয়েছে কুরআন ও সুন্নাহতে । এসব কিছু এসেছে তাঁর কাছ থেকে যিনি বিচারের মাপকাঠি ঠিক করে দিয়েছেন ; আল্লাহর শপথ , সে ছাড়া আর কেউ এর বিরুদ্ধে বলে না যে বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে ।
কত মহান এই কথা : ও হে যে তুমি জেগে উঠেছো জ্ঞান অন্বেষণে, সব জ্ঞান হলো রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জ্ঞানের দাস , তুমি জ্ঞান খুঁজে বেড়াচ্ছো কোনকিছু সংশোধন করার জন্য; কিভাবে তুমি সেরা জ্ঞান থেকে পথভ্রষ্ট হচ্ছো ?
সব জ্ঞান আছে আল্লাহর কিতাবে ও রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহতে । তাই তোমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব ততটুকু দৃঢ় থাকবে এই দুইটির সাথে । এই দুই হলো নিরাপত্তা ও আরামের পথ , প্রচন্ড গরমের দিনে অর্থাৎ কিয়ামতের দিনে যা তোমাকে ছায়া ও সেরা পুরষ্কার দেবে।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
কার থেকে শিখবে ?
জ্ঞানের পথের যে ছাত্র , সে অবশ্যই কোন শেখ বা জ্ঞানী কাউকে শিক্ষক হিসাবে বেছে নিতে চেষ্টা করবে ।
সে এমন কাউকে বেছে নেবে যিনি সবচেয়ে জ্ঞানী , বুদ্ধিমান ও সাবধানী যেমনটি আবু হানিফা র: বেছে নিয়েছিলেন হাম্মাদ বিন সুলায়মান র: কে । চিন্তা – ভাবনা ও বিবেচনা করে তিনি বলেন , আমি তাঁকে পেয়েছি বুদ্ধিমান , নরম মনের ও ধৈর্য্যশীল শেখ হিসাবে । তিনি আরো বলেন : আমি হাম্মাদ বিন সুলায়মান র: এর সাথে ছিলাম ও জ্ঞানের পথে এগিয়ে গিয়েছিলাম ।
সহীহ হাদীসের ভূমিকায় ইমাম মুসলিম র: বলেন , মুহাম্মদ বিন সিরীন বলেছেন , জ্ঞান হলো ধর্ম। তাই দেখে নাও , তুমি কার কাছ থেকে এই জ্ঞান নিচ্ছো ।
ইবনে জামাহ বলেন , কার কাছ থেকে জ্ঞান নেবে তা ঠিক করার সময় একজন ছাত্র অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য চাইবে । সে শিক্ষকের কাছ থেকে ভাল আচরণ ও সৎ স্বভাব শিখবে । যদি সম্ভব হয় , সে এমন একজনকে শিক্ষক হিসাবে বেছে নেবে , যিনি শিক্ষাদানের যোগ্য , ছাত্রদের বিষয়ে সচেতন , পুরুষসুলভ গুণাবলী যার আছে , যিনি ভাল মানুষ হিসাবে পরিচিত , যিনি সুন্দরভাবে শেখাতে পারেন ।
খুব জ্ঞানী হলেই কাউকে শিক্ষক হিসাবে বেছে নেয়া যাবে না যদি তিনি ধার্মিক , ভদ্র ও সাবধানী না হোন । সালাফদের মধ্যে কেউ কেউ উপদেশ দিয়েছেন : জ্ঞান হলো ধর্ম । তাই কার থেকে তুমি ধর্ম বা জ্ঞান নিচ্ছো , তা খেয়াল করে দেখবে । শুধু বিখ্যাত ব্যক্তিদের কাছ থেকেই শিখবো , কোন ছাত্র যেন নিজেকে এভাবে সীমিত না করে ।
আল গাযযালী ও অন্যরা এই মনোভাবকে জ্ঞানের প্রতি ঔদ্ধত্য ও খুব নীচু স্বভাবের আচরণ হিসাবে গণ্য করেছেন । কেননা , জ্ঞান হলো বিশ্বাসীদের জন্য পুরস্কার । তাই সে এই পুরস্কার যেখানে পাবে , সেখান থেকে নিবে । যে এই কল্যাণ দিতে চাইবে , সে অবশ্যই তার থেকে সেটা নেবে ।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
সিংহ দেখলে মানুষ যেভাবে দৌঁড়ে পালাতে চাইবে ও এই বিপদে কেউ তাকে সাহায্য করতে চাইলে সে অবশ্যই তা গ্রহণ করবে , তেমনি অজ্ঞতা থেকেও একজন ছাত্র সেভাবে আত্মরক্ষার চেষ্টা করবে ।
তাই কেউ যদি বিখ্যাত নাও হয় , তবু তার থেকে উপকার লাভের আশা তুমি করতে পারো ও হয়তো তিনি তোমার জন্য বেশি কল্যাণকর হবেন । যদি তুমি সালাফদের জীবনী পড়ো , তাহলে দেখবে তাদের কোন ছাত্র এমন কোন শেখ থেকে উপকার পায় নি , যদি না তিনি ধর্মভীরু হোন ও ছাত্রদের এমন উপদেশ দেন যা তার তাকওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ দেয় । একইভাবে যদি তুমি অনেক বই পড়ো , তাহলে সেই লেখকের বই পড়ে বেশি কল্যাণ লাভ করবে যার তাকওয়া বেশি ও দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ কম ।
নিশ্চিত হয়ে নাও শরীয়াহ বিজ্ঞান সম্পর্কে তোমার শেখ পুরোপুরি সচেতন । তিনি শুধুমাত্র বই পড়ে নয় বরং তার সময়ের নির্ভরযোগ্য শিক্ষকদের কাছ থেকে শিখেছেন ।
আশ শাফেয়ী র: বলেন , শুধু বই পড়ে শিখলে শরীয়াহ সম্পর্কে জ্ঞানে খুঁত থাকবে অর্থাৎ শুধু বই পড়ে শরীয়াহ আইন সম্পর্কে পুরো জ্ঞান অর্জন সম্ভব না।
এদের কেউ কেউ বলেছেন , সবচেয়ে বড় পরীক্ষাগুলির একটি হলো শুধু বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করা । আল খাতীব আল বাগদাদী র: বলেন , মুগীরাহ বিন ইবরাহীম বলেছেন , তারা যদি কারো কাছ থেকে শিখতে চাইতেন , তাহলে জনসমক্ষে সেই শিক্ষকের আচরণ , তার ইবাদত ও সার্বিক অবস্থা বিচার করতেন । এরপর তার কাছে পড়াশোনা বা জ্ঞান চর্চা করতেন ।
সুফিয়ান আস সাওরী র: বলেন , যে বেদাতকারীর কাছে জ্ঞান চর্চা করে , আল্লাহ তাকে জ্ঞান থেকে কল্যাণ পেতে দেবেন না । যে তার সাথে হাত মেলায় , সে ইসলামের বাঁধন একে একে সরিয়ে ফেলে ।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
মালিক বিন আনাস বলেন , চার ধরণের মানুষের কাছ থেকে জ্ঞান নেয়া যাবে না । এছাড়া আর যে কারো কাছ থেকে তা নেয়া যাবে । এরা হলো :
১. বোকা : যে বোকা হিসাবে পরিচিত , সে অন্য সবার থেকেও যদি বেশি বর্ণনা করে , তার কথা মানা যাবে না ।
২. মিথ্যাবাদী : যে অন্য মানুষ সম্পর্কে মিথ্যা বলে , সে যদি রাসূল صلى الله عليه وسلم সম্পর্কে মিথ্যা নাও বলে ।
৩. বেদাতকারী - যে মানুষকে তার নতুন রীতি পালন করতে আহবান করে ।
৪. যার প্রকৃত জ্ঞান নেই : যা শেখাবেন তার প্রকৃত মানে যিনি জানেন না । তিনি যদি তার ইবাদত ও সদগুণের জন্য পরিচিত হোন , তবুও তার থেকে জ্ঞান নেয়া যাবে না ।
এসব আলোচনা থেকে বোঝা যায় সঠিক শিক্ষক বেছে নেয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ । কেননা , তিনি হলেন তোমার আদর্শ ও উদাহরণ । আল্লাহই পথ দেখান ও তিনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই । নেই কোন প্রভু আল্লাহ ছাড়া ।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
আল্লাহ , যিনি অদৃশ্যের সব জ্ঞান রাখেন ও সবার অন্তরের প্রভু - তিনি পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট করেছেন যে , কোনকিছু মনে করিয়ে দিলেই সবাই সচেতন হয় না ও কিছু শুনলেই তা থেকে সবাই কল্যাণ পায় না । বরং এর শর্ত হলো : এতে উপদেশ আছে তার জন্য যার আছে অন্ত:করণ ( যে বোধশক্তি সম্পন্ন ) অথবা যে শোনে মনোযোগ দিয়ে ( সুরা কাফ ; ৫০ : ৩৭ ) ।
ইবনে আল কাইয়্যিম র: বলেন , যদি তুমি কুরআন থেকে উপকার পেতে চাও , তাহলে যখন তা তেলাওয়াত করা হয় তোমার মনকে সেদিকে রাখো ; কুরআন শোনার দিকে মনোযোগ দাও ও এটাই মনে করবে যে আল্লাহ সরাসরি তোমাকে বলছেন । কেননা , এটি সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে রাসূল صلى الله عليه وسلم এর মুখে উচ্চারিত হয়ে তোমার কাছে এসেছে যেমনটি আল্লাহ বলেন : এতে উপদেশ আছে তার জন্য যার আছে অন্ত:করণ ( যে বোধশক্তি সম্পন্ন ) অথবা যে শোনে মনোযোগ দিয়ে (৫০ : ৩৭ )।
কোনকিছু থেকে সর্বোচ্চ কল্যাণ ও ভাল ফলাফল পেতে হলে নির্ভর করতে হয় সেই বিষয়ের উপর যা প্রভাব বিস্তার করে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি চেষ্টা করবে পুরোপুরিভাবে সেই সুফল লাভ করতে । সুফল পেতে যা যা শর্ত পূরণ করতে হয় সে তা করবে এবং যা কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে সে তা দূর করবে ।
এসব কিছু সংক্ষিপ্ত কিন্ত্ত স্পষ্টভাবে উপরের আয়াতে সুন্দরভাবে বলা হয়েছে । “ নিশ্চয়ই এতে উপদেশ আছে ” , এটা নির্দেশ করে সূরার প্রথম থেকে এই আয়াত পর্যন্তকে ; আর তাঁর বাণী - যার আছে অন্ত:করণ ( বোধশক্তি ), এটা নির্দেশ করে কার উপর এর প্রভাব পড়বে সেই লক্ষ্যবস্ত্ত । এর মানে যে অন্তর জীবিত ও আল্লাহকে জানে যেমনটি আল্লাহ বলেছেন অন্য আরেকটি আয়াতে এটি তো কেবল এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন, যাতে সে সতর্ক করতে পারে জীবিতদের ...( সুরা ইয়াসিন ৩৬ :৬৯-৭০ ) ।
এর অর্থ সেই অন্তর যা জীবিত । আল্লাহর এই কথা , “ ..যে শোনে ”, এটা বলতে বোঝায় , যে তার শ্রবণ ও অন্য ইন্দ্রিয়গুলিকে যা তাকে শোনানো হচ্ছে অর্থাৎ কুরআনের বাণী সেদিকে কেন্দ্রীভূত করেছে । যা বলা হচ্ছে তার প্রভাব কার্যকরী হওয়ার জন্য এটা হলো শর্ত । তাঁর বাণী , “ মনোযোগ দিয়ে ” বলতে বোঝায় তার অন্তর এখানে উপস্থিত আছে , অনুপস্থিত নয়। ইবনে কুতাইবাহ বলেন , “ সে আল্লাহর কিতাব শোনে যখন তার অন্তর ও উপলব্ধি করার অনুভূতিগুলি সেখানে রয়েছে এবং সে অমনোযোগী নয় ” ।
এটা নির্দেশ করছে কুরআনের প্রভাবে কী দূর হয়ে যাবে, সেটি হলো মনোযোগ নষ্ট হতে পারে এমনকিছু ও অন্তরের অনুপস্থিতি –এর বুঝতে পারার অক্ষমতা যা একে শোনানো হচ্ছে এবং অন্তর্দৃষ্টির ও চিন্তাভাবনার অভাব ।
তাই প্রভাব বিস্তারের উৎস যদি সেখানে থাকে অর্থাৎ পবিত্র কুরআন ও এর লক্ষ্যবস্ত্ত
( এমন অন্তর যা জীবিত ) , প্রভাব কার্যকরী হওয়ার দরকারী শর্তাদি যদি পূরণ হয়
( কুরআনকে কেন্দ্রবিন্দু করে সেদিকে মনোযোগ দেয়া ) , মনোযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে এমন বাধা যদি দূর করা হয় ( অন্তরের অমনোযোগ ও যা শুনছে তার মানে বুঝতে সমর্থ না হওয়া ) , যদি সহায়ক পরিস্থিতি থাকে , তবে সুফল পাওয়া যাবে ( কুরআনের প্রভাব , কল্যাণ ও উপদেশ যা এতে দেয়া হয়েছে , তা বোঝা যাবে )।
জ্ঞান তখনই অর্জিত হয় যখন একজন বিনীতভাবে সেদিকে পুরো মনোযোগ দেয় ।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
আশ সাবি র: বলেন , যায়েদ বিন সাবিত জানাযার সালাত পড়েন । একটি গাধা আনা হয় তাকে পৌঁছে দেয়ার জন্য । ইবনে আব্বাস এগিয়ে এসে গাধার লাগাম টেনে এগিয়ে চললেন ।
তখন যায়েদ বললেন , ছেড়ে দিন ও আল্লাহর রাসূল صلى الله عليه وسلم এর চাচাতো ভাই । ইবনে আব্বাস জবাব দেন : জ্ঞানীদের সাথে এমন আচরণ করতে আমরা আদেশ পেয়েছি ।
সালাফরা তাদের শিক্ষকের দিকে শ্রদ্ধাভরে তাকাতেন । তারা যে শিক্ষকদের কত সম্মান করতেন , তার অনেক বর্ণনা আল খাতিব দিয়েছেন । আল মুগহিরাহ বলেন , আমরা ইবরাহীম আল নকহাইকে এত সম্মান দেখাতাম , যেমন সম্মান দেশের শাসককে
মানুষ দেখায় ।
আইয়ূব বলেন , একজন ছাত্র আল হাসানের কাছে তিন বছর ধরে শিক্ষা নেয় , কিন্ত্ত কোনদিন কোন প্রশ্ন করে নি তার প্রতি সম্মানবোধ থেকে ।
ইসহাক আশ শাহিদী বলেন , আমি দেখেছি আসরের সালাত পড়ে ইয়াহিয়া আল কাতান মসজিদের মিনারতে হেলান দিয়ে বসতেন । তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন আলী বিন আল মাদিনী , আশ শাদ হাকুনী , আমর বিন আলী , আহমদ বিন হাম্বল , ইয়াহিয়া বিন মইন প্রমুখ । তারা দাঁড়িয়ে থেকে হাদীস সম্পর্কে প্রশ্ন করতেন । এমনটি চলতো মাগরিব পর্যন্ত ।
তিনি কাউকে বসতে বলতেন না আর তার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখিয়ে কেউ তার সামনে বসতো না ।
মালিক বিন আনাসের প্রশংসা করে ইবনে আল খাইয়াত বলেন , তিনি জবাব দিতেন অত্যন্ত ধৈর্য , বিনয় ও প্রজ্ঞার সাথে । যারা তার কাছ থেকে কোন প্রশ্নের উত্তর শুনতো , তারা অভিভূত হয়ে যেত ; প্রশান্তির আলো ও সঠিক জ্ঞানের সম্মান তাকে ঘিরে থাকতো ; মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করতো যদিও তিনি কোন ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন না ( বর্ণনায় আল গুলাবি ) ।
আবদুর রহমান বিন হারমালা আল আসলামী বলেন , অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত সাঈদ বিন আল সুমাইবকে প্রশ্ন করার সাহস কারো ছিল না , ঠিক যেমন কোন কিছু করতে শাসকের অনুমতি লাগে ।
আশ শাফেয়ীকে সমালোচনা করা হতো জ্ঞানীদের প্রতি তার অত্যন্ত বিনীতভাবের জন্য । এ নিয়ে তিনি বলেন , আমি তাদের প্রতি বিনম্র হই , তারা আমাকে সম্মান দেন । তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত সম্মানিত হবে না , যতক্ষণ না তুমি বিনীত হও ।
খালাফ আল আনসারকে আহমদ বিন হাম্বল র: বলেন ,আমি আপনার দুই হাতের মাঝে ছাড়া বসবো না । যার কাছ থেকে জ্ঞান পাই , তার প্রতি বিনয়ী হতে আমরা আদেশপ্রাপ্ত ।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
জ্ঞানের পথের যে ছাত্র সে তার শিক্ষকের সাথে কোন বিষয়ে মতবিরোধে যাবে না । রোগী যেমন ডাক্তারের উপর নির্ভর করে , ছাত্র তেমনি তার শিক্ষককে খুশি রাখবে , শিক্ষকের সম্মান বজায় রাখবে ও শিক্ষককে সেবা দানের মধ্য দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করবে । তাকে অবশ্যই এটা বুঝতে হবে নিজের শিক্ষকের কাছে বিনম্র হওয়াটা সম্মানের ব্যপার । শিক্ষকের সামনে তুমি বিনীত হলে তা আসলে তোমাকে উঁচু করবে , তোমার নিজের মর্যাদা বাড়াবে । শিক্ষকের দিকে সম্মানের চোখে তাকাতে হবে , তাহলে শিক্ষক থেকে সেই ছাত্র বেশি কল্যাণ লাভ করতে পারবে ।
সালাফদের মধ্যে কেউ কেউ শিক্ষকের কাছে যাওয়ার আগে সাদকা করে এই দুআ করতেন : হে আল্লাহ , আমার শেখের দোষ আমার কাছ থেকে গোপন রাখো ও তার জ্ঞানের কল্যাণ থেকে আমাকে দূরে রাখবেন না ।
আশ শাফেয়ী র: বলেন , আমি ইমাম মালিক র: এর সামনে খুব আস্তে করে বইয়ের পাতা উল্টাতাম যাতে কোন শব্দ হয়ে উনার অসুবিধা না হয় । আমি এমন করতাম তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে ।
হামদান আল আশফাহানি বলেন , আমি শারিক র: এর সাথে ছিলাম । খলিফা আল মাহদীর সন্তানরা তার কাছে এসে একটি হাদীস নিয়ে জানতে চাইলো । তিনি দেয়ালে হেলান দিয়ে বসলেন কিন্ত্ত জবাব দিলেন না । তারা সামনে এসে একই প্রশ্ন আরো কয়েকবার করে জবাব না পেয়ে বললো , আপনি কি শাসকদের সন্তানদের এভাবে অপমান করেন ? শারিক র: বললেন , না । তবে জ্ঞান হলো আল্লাহর কাছে মূল্যবান যা আমি এভাবে কাউকে দেই না । তখন তারা তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তার হাঁটু স্পর্শ করলো । শারিক র: বললেন , এভাবেই জ্ঞানের কথা জানতে হয় ।
ছাত্ররা দূর থেকে চিৎকার করে শেখকে ডাকবে না ও অনানুষ্ঠানিকভাবে সম্বোধন করবে না । সম্মানের সাথে শিক্ষককে সম্বোধন করবে ।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
আল খাতিব বলেন , কোন ছাত্র এভাবে বলবে না , এই শিক্ষক বা ও জ্ঞানী ব্যক্তি , আপনি এ বিষয়ে কী মনে করেন ? শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে সে শুধু নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করবে না , বরং নামের আগে সম্মানসূচক শব্দ যেমন শেখ , ওস্তাদ বা শায়খুনা বলবে ।
তার উপর শিক্ষকের যা অধিকার আছে , সে সেসব জানবে ও তার উপর শিক্ষকের শ্রেষ্ঠত্ব ভুলবে না । সে শিক্ষকের সম্মান রক্ষা করবে ও শিক্ষকের বদনাম অন্যের কাছ থেকে শুনবে না । কোথাও তার শিক্ষক সম্পর্কে খারাপ আলোচনা হলে সে তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করবে ; সেটা না পারলে সে ঐ জায়গা থেকে চলে আসবে । তার শেখ বেঁচে থাকতে সে তার জন্য দুআ করবে ; শেখের মৃত্যুর পরে তার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখবে । তার শেখের কবর সে অবশ্যই জিয়ারত করবে ও শেখের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করবে ও দান – সদকা করবে ।
সে শেখকে অনুকরণ করবে শান্ত , নম্র ও সৎ পথে চলা এবং ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের সময় । শেখের নিয়মিত ইবাদত ও অভ্যাসগুলি সে পালন করবে ও আচার – আচরণ অনুকরণ করবে । এটা অপরিহার্য যে সে তার শিক্ষককে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করবে ।
কঠোর স্বভাবের শিক্ষকের সাথে কিভাবে মানিয়ে চলতে হবে ?
একজন ছাত্রকে অবশ্যই কড়া শিক্ষকের সাথে ধৈর্য ধরতে হবে ও শিক্ষকের সাথে নরম আচরণ করতে হবে ।
ইমাম আশ শাফেয়ী র: বলেন , দু’জন লোক আল আমাসের কাছে প্রায়ই যেত । এদের একজনের আগ্রহ ছিল হাদিসের প্রতি , আরেকজনের তাতে আগ্রহ ছিল না ।
আল আমাস একদিন হাদীসের প্রতি যে আগ্রহী , তার সাথে খুবই রাগারাগি করলেন । অন্য লোকটি তখন বললো , তোমার সাথে ইনি যে খারাপ ব্যবহার করলেন , তা আমার সাথে করলে আমি আর কখনোই এখানে আসতাম না । আল আমাস তা শুনে বললেন , তাহলে সে তোমার মতো বোকা হতো । আমার খারাপ আচরণের জন্য সে তাই ত্যাগ করতো যা তার জন্য কল্যাণকর ( বর্ণনায় আল খাতীব ) ।
ইমাম আশ শাফেয়ী র: একই ধরনের আরেকটি ঘটনা বলেন । সুফিয়ান বিন উয়াইনাহকে বলা হয়েছিল , আপনার কাছে দুনিয়ার বিভিন্ন এলাকার মানুষ অনেক দূর থেকে আসে , আর আপনি কি না তাদের সাথে এত রাগ করেন ? তারা সবাই তো আপনাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে ।
তিনি বললেন , যদি এমন করে , তবে বোকামি করবে । কেননা আমার খারাপ ব্যবহারের জন্য তারা এমন কিছু ছেড়ে যাবে , যা তাদের উপকারে আসবে ।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
ইবনে জামাহ র: বলেন , ছাত্ররা অবশ্যই শিক্ষকের কড়া স্বভাব ও বদমেজাজী আচরণ সহ্য করে তার সাথে থাকবে । শিক্ষকের কঠোরতার জন্য ছাত্র যেন শিক্ষককে ছেড়ে চলে না যায় ।
শিক্ষক কড়া আচরণ করলে ছাত্র তার কাছে মাফ চাইবে , আল্লাহর কাছে মাফ চাইবে ও নিজের উপর দোষ দেবে । তাহলে শিক্ষকের জন্য তার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা বজায় থাকবে , নিজের অন্তর রক্ষা পাবে ও তা ইহকাল – পরকালের জন্য কল্যাণকর ।
সালাফদের কেউ কেউ বলেছেন , যে জ্ঞান অর্জনের সময় লজ্জা বা অপমান সহ্য করতে পারে না , সে সারাজীবন অজ্ঞতার অন্ধকারে থাকবে । যে জ্ঞানের পথে অপমানিত হলে ধৈর্য ধরে , সে এই জীবন ও পরকালে সম্মান পাবে ।
ইবনে আব্বাস رضي الله عنهم বলেন , ছাত্র হিসাবে আমি নিজেকে বিনীত করেছিলাম , তাই আমি শিক্ষক হিসাবে সম্মানিত হয়েছি । মুয়াফি বিন ইমরান বলেন , যে একজন জ্ঞানী ব্যক্তির প্রতি রেগে যায় , সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সাথে রাগ করলো ।
ইমাম আশ শাফেয়ী র: বলেন , জ্ঞানের উৎস ও কাঠিন্যের ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরবে ; কেননা জ্ঞান অর্জনে ব্যর্থ হওয়া মানে তা থেকে তুমি ফিরে গেলে ।
যে জ্ঞানের কাঠিন্য এক ঘন্টা সহ্য করতে পারবে না , সে অজ্ঞতার অপমানের মধ্যে চিরকাল থাকবে । যে যৌবনে জ্ঞানকে পাশ দিয়ে চলে যেতে দেয় , সে তখনই সজাগ হবে , যখন অন্যরা তার জানাযা পাঠ করবে । ইবনে জুরায়ী র: বলেন , আমি আতা র: এর কাছ থেকে যা শিখেছি , তা অত্যন্ত ভদ্র - নম্র হয়েই শিখতে পেরেছি । ইবনে তাউস তার পিতার একটি উদ্ধৃতি দেন : জ্ঞানীদের সম্মান করা সুন্নাহ ( বর্ণনায় ইবনে আল বার র: ) ।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
জ্ঞানের ছাত্র হিসাবে শিক্ষকের সাথে ঝগড়া করা থেকে সাবধান থাকবে । ঝগড়া করা পাপ আর এটা আরো পাপের , যখন তা করা হয় শিক্ষকের সাথে । এমন আচরণ কল্যাণ লাভ না হওয়ার একটি কারণ ।
মায়মুন বিন মাহরান বলেন , যে তোমার চেয়ে বেশি জ্ঞানী , তার সাথে তর্ক করবে না । যদি তুমি তা করো , তাহলে তিনি তার জ্ঞান তোমার থেকে গোপন রাখবেন , আর তুমি তার কোনই ক্ষতি করতে পারবে না । আয যুহরী বলেন , ইবনে আব্বাসের সাথে সালামাহ সবসময় তর্ক করতো । তাই সে তেমন জ্ঞান লাভ করতে পারে নি ।
শেখ যখন তোমার ভাল কিছুর জন্য প্রশংসা , তোমার দোষ - অলসতা সম্পর্কে তোমাকে জানানো ও দোষ কাটিয়ে কিভাবে নিজের উন্নতি করতে হবে সে সম্পর্কে উপদেশ দেন , তখন একজন ছাত্র হিসাবে শেখকে ধন্যবাদ জানাবে । এটি আল্লাহর তরফ থেকে তোমার জন্য রহমত ।
শেখ যখন তোমাকে তোমার সদগুণের কথা জানিয়ে তা আরো বাড়ানোর উপায় বলবেন , তখন এ সম্পর্কে তোমার জানা থাকলেও তুমি তাকে সেটা বলবে না । বরং শেখকে ধন্যবাদ জানাবে তোমাকে এসব উপদেশ দিয়ে উপকার করার জন্য । তবে না বললে যদি তোমার কোন ক্ষতির আশংকা থাকে , তাহলে বললে ক্ষতি নেই ।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
যদি জানতে পারো শেখ ঘুমাচ্ছেন , তবে তার সাথে দেখা করতে চাইবে না । বরং তার ঘুম থেকে উঠার জন্য বসে অপেক্ষা করো বা ইচ্ছা হলে ফিরে যাও ।
ইবনে আব্বাস رضي الله عنهم বলেন , যখন রাসূল صلى الله عليه وسلم
ইন্তেকাল করেন , আমি একজন আনসারকে বললাম , চলো , সাহাবীদের কাছ থেকে কিছু জেনে আসি । সে বললো , আমি তোমার কথায় খুব অবাক হচ্ছি । সাহাবীদের মধ্যে এত বিশিষ্ট ব্যক্তি থাকতে তুমি কি মনে করো কেউ আমাদের দিকে মনোযোগ দেবে ?
আমি তখন তাকে ছেড়ে সাহাবীদের কাছে গিয়ে হাদীস নিয়ে জানতে শুরু করি । যদি আমি শুনতে পেতাম কেউ একটি হাদীস জানে , আমি তার বাসায় যেতাম । যদি শুনতাম সে ঘুমিয়ে আছে , তাহলে দরজার সামনে চাদর বিছিয়ে তার অপেক্ষায় বসে থাকতাম ।
বাতাস ধূলা উড়িয়ে আমার গায়ে ফেলতো । সে লোক ঘুম ভেঙ্গে যখন দেখতো আমি এভাবে বসে আছি , তখন বলতো , হে আল্লাহর রাসূল صلى الله عليه وسلم এর চাচাতো ভাই , আপনি কেন এসেছেন ? আপনি আমাকে খবর পাঠালেন না কেন ? আমি তাহলে আপনার কাছে যেতাম ।
আমি বলতাম , আমারই আসা উচিত আপনার কাছে । তারপর আমি তাকে হাদীস বলতে অনুরোধ করতাম । সেই আনসার বেঁচে থাকতে দেখেছিল লোকজন আমাকে ঘিরে নানা প্রশ্ন করছে । তখন সে বলেছিল , এই তরুণ আমার চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান
( বর্ণনায় আল খাতিব আল বাগদাদী র: ) ।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
ইবনে আব্বাস رضي الله عنهم বলেন , আমি হাদীসের জ্ঞান আনসারদের কাছ থেকে বেশি পেয়েছি । আমি তাদের দরজার সামনে অপেক্ষা করতাম । ভিতরে ঢোকার অনুমতি চাইলে পেতাম কিন্ত্ত আমি চাইতাম যে দেখা হওয়াটা যেন আনন্দের হয় ।
ইবনে আব্বাস সাহাবীদের বাসায় যেতেন হাদীস শুনতে । তখন তাকে যদি বলা হতো তিনি ঘুমাচ্ছেন , ডেকে দেব ? আব্বাস তাতে রাজী হতেন না । তিনি দরজার সামনে বসে সাহাবীর ঘুম ভাঙার অপেক্ষায় থাকতেন
( বর্ণনায় সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ , সূত্র আবু আল হুসাইন ) ।
মা’মার থেকে বর্ণিত , আয যুহরী বলেন , আমি যখন উরওয়ার বাসায় যেতাম , তখন চাইলে ঘরে ঢুকতে পারতাম । কিন্ত্ত আমি বাইরে বসে অপেক্ষা করতাম তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে ।
ইবনে জামাহ বলেন : জ্ঞানের ছাত্র হিসাবে কেউ তার শেখের অনুমতি না নিয়ে তার কাছে যাবে না । যদি তিনি প্রকাশ্যে বসে মানুষের সাথে আলাপরত থাকেন , তবে যেতে পারবে ।
ঘরের ভিতরে থেকে শেখ অনুমতি দিলে ছাত্র ঢুকবে । যদি অনুমতি না দেন , তবে ছাত্র আবারো অনুমতি চাইবে না বরং চলে যাবে । যদি ছাত্রের মনে সন্দেহ হয় যে শেখ জানেন না সে এসেছে , তাহলে আবারো অনুমতি চাইতে পারে - তবে তিনবারের বেশি নয় । যদি সে দরজায় ধাক্কা দেয় , তবে খুব ভদ্রভাবে ও আস্তে করে দেবে । প্রথম ও দ্বিতীয়বার আঙুল দিয়ে আস্তে করে দরজায় টোকা দেবে । তৃতীয়বার আঙুলের গাঁট দিয়ে দরজায় ধাক্কা দেবে । যদি শেখ দরজা থেকে দূরে থাকেন , তবে ছাত্র এতটুকু জোরে টোকা দিতে পারবে যাতে শেখ শব্দ শুনতে পান , তার চেয়ে বেশি জোরে না ।
যদি শেখ ঢোকার অনুমতি দেন ও সাক্ষাত করতে অনেকে একসাথে আসে , তবে যিনি সবচেয়ে বড় বা শ্রদ্ধেয় তিনি প্রথম ঘরে ঢুকে শেখকে সালাম জানাবেন । এরপর দ্বিতীয় সম্মানিত ব্যক্তি ঢুকবেন । এভাবে একের পর এক ঢুকবে ।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
আনাস বিন মালিক র: বলেন , আমরা রাসূল صلى الله عليه وسلم এর দরজায় আঙুলের নখ দিয়ে টোকা দিতাম
( বর্ণনায় আল খাতিব র: ) ।
ইমাম বুখারী র: তার ‘ আল আদাব আল মুফরাদ ’ বইতে বলেন , এটা অপছন্দীয় যে যদি জানতে চাওয়া হয় - কে ওখানে , তবে ছাত্র জবাবে নিজের পরিচয় না দিয়ে শুধু বলবে : আমি । যদি দরজা খোলা থাকে , তবে সে ঘরের দিকে মুখ করে থাকবে না বরং দরজার ডানে বা বামে থাকবে ও ঘরের ভিতরে যারা আছে , তাদেরকে সালাম দেবে ।
ইমাম বুখারী র: তার সহীহ হাদীসে ঘরে ঢোকার অনুমতির বিষয়ে একটি পরিচ্ছদের শিরোনাম দিয়েছেন : ওখানে কে –এই প্রশ্নের জবাবে আমি বলা ।
জাবির رضي الله عنهم এর সূত্রে একটি ঘটনা এতে উল্লেখ করা হয় । জাবির বলেন , আমি একদিন আমার পিতার দেনা নিয়ে কথা বলার জন্য রাসূল صلى الله عليه وسلم এর কাছে যাই । দরজায় টোকা দেয়ার পর রাসূল صلى الله عليه وسلم জানতে চান , কে ? বললাম , আমি । তিনি এমনভাবে বললেন , আমি , আমি - যেন তা অপছন্দ করেছেন ।
ইমাম বুখারী র: তার সহীহ বইতে একটি অধ্যায় লিখেছেন এই শিরোনামে : ‘ তাকানোর বদলে অনুমতি চাওয়া ’’ । এতে শাহল বিন সাদকে উদ্বৃত করে বলা হয়েছে - এক লোক রাসূল صلى الله عليه وسلم এর ঘরের ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখছিল । তখন তিনি একটি লোহার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিচ্ছিলেন ।
তিনি যখন দেখলেন লোকটি অনুমতি ছাড়া তার ঘরের ভিতরে দেখেছে , তখন বললেন : যদি আমি জানতে পারতাম তুমি এভাবে তাকাচ্ছো , তাহলে আমি এই চিরুনি দিয়ে তোমার চোখে আঘাত করতাম । ঘরে ঢোকার অনুমতি চাওয়ার আদেশ এজন্য দেয়া হয়েছে যেন কেউ অবৈধভাবে মানুষের ঘরের ভিতরে না তাকায় ( ইমাম মুসলিমও এই ঘটনা তার সহীহ হাদীস বইতে উল্লেখ করেছেন ) ।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
ইবনে জামাহ র: বলেন , একজন ছাত্র খুব ভালভাবে পোশাক পরে সুন্দরভাবে শেখের সাথে দেখা করতে যাবে । তার দেহ ও পোশাক পরিষ্কার থাকবে , চুল ও নখ ছাঁটা থাকবে ও সে সুগন্ধী মেখে যাবে - বিশেষত সে যদি অনেকের মধ্যে এসে বসতে চায় । কেননা , এই সমাবেশ হলো যিকির ও ইবাদতের ।
ছাত্র যদি শেখের কাছে গিয়ে দেখে তিনি কারো সাথে কথা বলছেন , যিকির বা কোন ইবাদত করছেন বা পড়াশোনা করছেন - আর তাকে দেখে তিনি সেই কাজ বন্ধ করেছেন ; তাহলে সালাম জানিয়ে সে চলে আসবে ।
যদি শেখ তাকে থাকতে বলেন , তাহলে সে থাকতে পারে । তবে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না , যদি না শেখ তাকে নিজে থেকে বেশি সময় থাকতে বলেন । শেখের কাছে কেউ তখনই যাবে , যখন তার মন পবিত্র ও শান্ত থাকে অর্থাৎ কোন কারনে মন অশান্ত বা অমনোযোগী না । পিপাসা বা ক্ষুধা পেয়েছে , ঘুম পাচ্ছে , ক্লান্ত বা রেগে থাকা অবস্থায় শেখের কাছে সে যাবে না , যাতে শেখ যা বলছেন তার প্রতি সে পুরো মনোযোগ দিতে পারে ।
যদি শেখের সন্ধানে গিয়ে ছাত্র তাকে খুঁজে না পায় , তাহলে অপেক্ষা করবে যেন কোন ক্লাশ বাদ না যায় । কোন ক্লাশ বাদ যাওয়া মানে সেই ক্ষতি আর পূরণ হওয়ার নয় । যদি শেখ ঘুমে থাকেন , তাহলে ছাত্র অপেক্ষা করবে বা পরে আসবে - ধৈর্য ধরা তার জন্য উত্তম ।
ইবনে আব্বাস র: জ্ঞান অর্জনের আশায় যায়াদ বিন সাবিতের বাসার সামনে বসে থাকতেন । যদি বলা হতো , তিনি ঘুমাচ্ছেন , তাকে কি ঘুম থেকে ডেকে দিব ? আব্বাস তাতে না বলতেন । প্রখর রোদে বসে তিনি অপেক্ষা করতেন - সালাফরা এমনই ছিলেন ।
একজন ছাত্র তার শেখকে বিশেষ কোন সময়ে বা আলাদাভাবে তাকে শেখাবার জন্য অনুরোধ করবে না , যদিও সে কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে থাকে । সাধারণত শেখ যে সময়ে শেখান , সেই সময়ের বাইরে গিয়ে বা তার কোন অসুবিধা করে কোন অনুরোধ ছাত্র করবে না । সেটা হবে নিজেকে বড় করে দেখানো এবং শেখ এবং জ্ঞানের পথের অন্য ছাত্রদের হেয় করা ।
শেখ হয়তো লজ্জায় এমন অনুরোধকে প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন না । ফলে ঐ সময়ের অন্য কোন গূরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ দিয়ে তাকে ছাত্রের অনুরোধ রক্ষা করতে হবে । তবে যদি সত্যিকারের কোন কারণ থাকে যাতে শেখের সাথে তার আলাদাভাবে সময় কাটানো দরকার , তবে সে এমন অনুরোধ করতে পারবে ।
শেখের ক্লাশে গিয়ে তার থেকে কিছুটা দূরত্ব রক্ষা করে বসতে হবে । উমর বিন আল খাত্তাব (র: ) কে ঘিরে বসে লোকজন তার কথা শুনছিল । কাব সেখানে গিয়ে বেশ দূরত্ব রেখে বসলে উমর র: তাকে ধমক দিলেন ।
কাব তখন বলেন , হে বিশ্বাসীদের নেতা , জ্ঞানী লোকমান رضي الله عنهم তার ছেলেদেরকে উপদেশ দেন : তোমরা যখন শাসকের পাশে বসবে , তখন দু’জনের মধ্যে এই পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রাখবে , যেন একজন এসে বসতে পারে । তা না হলে , তোমার থেকে গুরুত্বপূর্ণ কেউ যদি তার কাছে আসে , তখন তোমাকে জায়গা ছেড়ে উঠে পড়তে হবে , তা হবে তোমার জন্য অসম্মানের ( বর্ণনায় সুফিয়ান বিন উমাইনাহ ) ।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
শেখের সামনে বসার সময় ছাত্র অবশ্যই শান্ত , নম্র হয়ে শিক্ষকের দিকে মুখ করে বসবে । তার পুরো মনোযোগ থাকবে শিক্ষকের কথার দিকে । বিনা দরকারে সে শিক্ষকের দিক থেকে মুখ সরিয়ে নেবে না বা ডানে , বামে , উপরে , নিচে তাকাবে না ; বিশেষ করে যখন সে শিক্ষকের কাছে পড়ছে বা তার সাথে কথা বলছে। আশেপাশে কী ঘটছে বা অন্য কেউ কিছু বললো কি না , এসব জানতে সে অন্যদিকে তাকাবে না । নিজের কাপড় থেকে ধূলা – ময়লা সরাবে না ও কোন কারণে বিরক্তিবোধ করলে হাত –পা নাড়বে না ।
নাকের ভিতরে হাত ঢুকাবে না ; হাত ছড়িয়ে রাখবে না ও মুখে –গালে - কপালে রাখবে না । হাই তুলবে না বা দাঁত খৌঁচাবে না , কার্পেটের উপর আঙুল দিয়ে লাইন টানবে না , আঙুল মটকাবে না , কাপড় ধরে টানাটানি করবে না ।
শেখের উপস্থিতিতে একজন ছাত্র দেয়াল ও বালিশে হেলান দেবে না বা সেখানে হাত রাখবে না । সে শেখের দিকে পিঠ ফেরাবে না বা একপাশ ফিরে বসবে না । হাতের উপর ভর দিয়ে বসবে না বা খামোকা কথা বলবে না । শেখের সামনে বসে হাসি – তামাশা করা , বোকার মতো বা অভদ্রভাবে কথা বলা – এসব কিছু সে করবে না ।
বিনা কারনে হাসবে না ও শেখ না হাসা পর্যন্ত সে নিজে হাসবে না । কোন কারণে হাসি পেলে আওয়াজ না করে হাসবে । শেখ উপস্থিত থাকলে সে বারবার গলা সাফ করবে না ; সম্ভব হলে নাক ঝাড়বে না বা থুথু ফেলবে না । যদি নাক সাফ করতেই হয় , তাহলে সবার সামনে সর্দি ফেলবে না , বরং রুমাল বা টিস্যু কাগজ ব্যবহার করবে বা কাপড়ের এক কোনা দিয়ে নাক সাফ করবে ।
সে পা ঢেকে বসবে ; তার কাপড় লম্বা , ঢিলা হবে ও সে পড়ার সময় হাত স্থির রাখবে । হাই উঠলে মুখ ঢেকে রাখবে ।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
আলী رضي الله عنهم বলেন , এটা জ্ঞানীদের অধিকারের মধ্যে যে তুমি সমবেত মানুষকে সালাম দেয়ার পাশাপাশি আলাদাভাবে শেখকেও সালাম জানাবে । তুমি তার সামনে এসে বসবে , এদিক – সেদিক তাকাবে না বা কাউকে চোখের ইশারা করবে না । তার কাছে এসে বলবে না অমুক অমুক আপনার সাথে ঐ বিষয়ে একমত না ।
শেখের উপস্থিতিতে কারো নামে গীবত করবে না । তাকে জটিল প্রশ্ন করবে না । যদি শেখ কোন ভুল করেন , তবে তার সমর্থনে অজুহাত খুঁজো ও শেখকে সম্মান করবে আল্লাহর সন্ত্তষ্টির জন্য । যদি শেখের কিছু দরকার থাকে , অবশ্যই তুমি প্রথম এগিয়ে গিয়ে তার দরকার পূরণে চেষ্টা করবে । তার সামনে বা তাকে ঘিরে যারা থাকে , শেখের আসরে বসে তাদের মনোযোগ তোমার দিকে আকর্ষণের চেষ্টা করবে না । শেখের কাপড় ধরে টানবে না ।
শেখ যদি খুব ক্লান্ত থাকেন , তবে কোনকিছুর জন্য জোর করবে না । এটা মনে করবে না যে তুমি তার বন্ধু । শেখ হচ্ছেন তাল গাছের মতো - যা থেকে কোনকিছু পরার অপেক্ষায় তুমি থাকবে ।
আলী رضي الله عنهم যা উপদেশ দিয়েছেন , তা প্রয়োজনের চেয়েও যথেষ্ট । তাই নম্রতা ও শান্তভাব – এই দুইটি বৈশিষ্ট্য জ্ঞান চর্চার আসরের যে ছাত্র তার থাকতে হবে এবং আদব সম্পর্কে জানা তার জন্য অপরিহার্য ।
সালাফরা জ্ঞানের আসরকে অত্যন্ত সম্মান করতেন ও এমনভাবে সেখানে বসতেন ঠিক যেন পাখি বসে আছে । আবু বকর বিন আল আম্বারী বলেন , পাখির মতো বসা কথাটির দুইটি ব্যাখ্যা হতে পারে । একটি হলো তারা স্থির হয়ে আসরে বসে থাকতেন , দৃষ্টি নত রাখতেন আর পাখিরা স্থির নয় এমন জায়গা ছাড়া বসে না । যে মানুষ খুব শান্ত , নম্র - তার সম্পর্কে বলা হয় - এই ধীর-স্থির ভাবের জন্য পাখি এসে তার মাথায় বসতে পারে ।
দ্বিতীয় মানে হলো , হজরত সোলায়মান বিন দাউদ আলাইহিস সালাম বাতাসকে বলতেন - আমাদের বহন করে নিয়ে চলো ও পাখিকে বলতেন , ছায়া দাও । বায়ু তাদেরকে ভাসিয়ে নিয়ে যেত আর পাখিরা ছায়া দিতো ।
তার সাথীরা শ্রদ্ধায় দৃষ্টি নত রাখতো ও একদম স্থির বসে থাকতো । তিনি কিছু জানতে না চাওয়া পর্যন্ত তারা কোন কথা বলতো না । তাই জ্ঞানী ব্যক্তির সামনে কেউ যদি একদম ধীর – স্থির হয়ে বসে থাকে , তবে তাকে নবী সুলায়মান আলাইহিস সালামের সাথীদের সাথে তুলনা করা হয় ।
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
Hey there! Looks like you're enjoying the discussion, but you're not signed up for an account.
When you create an account, we remember exactly what you've read, so you always come right back where you left off. You also get notifications, here and via email, whenever new posts are made. And you can like posts and share your thoughts.
Sign Up
Bookmarks