বিসমিল্লাহ

***কপি***

স্বামী আর স্ত্রীর সাথে সমাজের সংলাপ!

স্বামীঃ আমার স্ত্রী আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সে অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্ক করেছে।

সমাজঃ শোনো! তাকে অবশ্যই তালাক দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করো। তাকে মোটেই ক্ষমা করো না। তার প্রতি সহানুভূতিশীল হবা না। সে হয়তো বলবে, ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দিন, এমন আর হবে না। এসব মায়াবী কথা শুনে কিন্তু মাফ করবা না। মাফ করলে কিন্তু তুমি দাইয়ূস হয়ে যাবা। (দাইয়ূস মানে এমন স্বামী যিনি তার স্ত্রীর অন্যায় ও অশ্লীলতাকে মেনে নেয়।)

স্ত্রীঃ আমার স্বামী আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমি ছাড়া অন্য মহিলার সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক আছে।

সমাজঃ মা! ধৈর্যধারণ করো। নিজেকে সাজিয়েগুছিয়ে তার সামনে উপস্থাপন করো যাতে সে তোমাকে অন্য কারো চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। হয়তো তুমি নিজেকে সাজিয়ে তার সামনে উপস্থাপন করো না কিংবা তাকে খুশি করতে পারো না তাই সে অন্য মেয়ের কাছে যায়। তাই তোমারই তো দায়িত্ব স্বামীকে নিজের দিকে টেনে রাখা। তাই না? আর শোনো! তার কাছে কখনো তালাক চাইবে না কখনো। তোমার ছেলেমেয়ের স্বার্থে তুমি ধৈর্যধারণ করো। মনে কষ্ট থাকলেও তুমি সবসময় তার সামনে হাসিমুখে থাকবা আর শরীর অসুস্থ থাকলেও সবসময় তার পছন্দমত খাবার সুন্দর করে রান্না করে তাকে খাওয়াবা। বুঝেছো?

স্বামীঃ আমার স্ত্রী বন্ধা। সে গর্ভধারণ করতে পারে না। তার সন্তান হয় না। বিয়ে করলাম কত দিন হলো। এখনো একটা সন্তানের মুখ আমাকে দেখাতে পারলো না। কী যে করি?

সমাজঃ এতে এতো চিন্তার কী আছে? আরেকটা বিয়ে করে ফেলো। আর আগের স্ত্রী যদি রাগ মন খারাপ করে তাহলে তাকে তালাক দিয়ে দাও। চিন্তা কম করো। সমাধানের কত পথ খোলা!

স্ত্রীঃ আমার স্বামী বন্ধা। সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা তার নেই। ডাক্তার দেখিয়েছি আমরা। ডাক্তার বলছে, আমার সমস্যা নাই। আমার স্বামীরই নাকি সমস্যা।

সমাজঃ মা! এতো তাড়াতাড়ি অধৈর্য হলে চলে? বিয়ের বয়স তো মাত্র দশ বছরই তো হলো! ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। স্বামীর প্রতি একটু ইহসান করো, জানোই তো আল্লাহ বলেছেন, ইহসানের বিনিময়ে ইহসান পাওয়া যায়।

স্বামীঃ আমার স্ত্রী অনেক দিন যাবত এমন অসুস্থ যে, সে ঘরের কাজকর্ম করতে পারে না। ছেলেমেয়েদের দেখাশুনা করতে পারে না। ভালোই ছিলো। কিন্তু হঠাত কী একটা অসুখে বিছানায় পড়ে যায়। এখন আর আগের মত কাজকর্ম করতে পারেন না।

সমাজঃ তাকে তালাক দিয়ে দাও। সুস্থ আরেকজনকে বিয়ে করো। মেয়ের অভাব পড়েছে নাকি? আর তুমি চাকরী করো। সারাদিন বাইরে থাকো। কত ব্যস্ততা তোমার। তোমার কি স্ত্রীর সেবায় বাসায় বসে থাকার সুযোগ আছে? সহজ সমাধান, তাকে তালাক দিয়ে দাও। সে তার বাপের বাড়ি চলে যাক। সেখানে তার মা-বাবা ভাইবোনেরা তাকে দেখবে। তোমার এত টেনশন করার কিছু নেই।

স্ত্রীঃ আমার স্বামী অনেক অসুস্থ। সে কোনো কাজকর্ম করতে পারে না। কয়েকবছর যাবত প্যারালাইসড হয়ে বিছানায় পড়ে আছে।
সমাজঃ মা, ধৈর্যধারণ করো। আর তুমি এমন একটা চাকরী খুঁজে নাও যেটি করে তুমি তোমার পরিবারের খরচ চালাতে পারবে। তবে তোমার চাকরি শেষে বাসায় ফিরে তোমার অসুস্থ স্বামীর সেবাযত্ন করতে আর ঘরবাড়ি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করতে ভুলে যেও না। জানোই তো, তোমার স্বামী তোমাকে ছাড়া অচল।

স্বামীঃ আমার স্ত্রী আমার অবাধ্য ও খুব জেদি। আমার কথাই শোনে না।

সমাজঃ এমন অবাধ্য স্ত্রী ঘরে এখনো রেখেছো কেনো? তাড়াতাড়ি তাকে তালাক দিয়ে দাও। ভালো ঘরের ভদ্র দেখে অন্য কাউকে বিয়ে করে আনো। তোমার বয়স তো আর বেশি হয়নি! মাত্র ৪৫!

স্ত্রীঃ আমার স্বামী আমার সাথে খুব কঠোর ব্যবহার করে এবং আমাকে পাত্তাই দেয় না। আমার কোনো কথাই শোনে না। তার যা ইচ্ছা তাই করে।
সমাজঃ মা, কী আর করবা? ছেলেরা এমনই হয়। ধৈর্যধারণ করো। আর সে কঠোর ব্যবহার করলে তুমি কোনো কথাই বলবা না। শুধু শুনবা। সয়ে যাও। তুমি তোমার সন্তানদের স্বার্থে আর পরিবারটি টিকিয়ে রাখতে ধৈর্যধারণ করো। তার আচরণে কষ্ট পেয়ে তুমি চলে গেলে পরিবারটির কী হবে ভেবে দেখেছো?

স্বামীঃ আমার স্ত্রী মোটেও সুন্দর না। তাকে আমার কাছে আকর্ষণীয় লাগে না। অন্য ভাবীরা কত সুন্দর!

সমাজঃ তাকে তালাক দিয়ে দাও। তার থেকে সুন্দরী মেয়ের অভাব পড়েছে নাকি? কত সুন্দরী মেয়ে আছে। সুন্দর দেখে একটি মেয়েকে বিয়ে করে নাও। তোমার যে চাকরী তাতে সুন্দরী মেয়ে পাওয়া তোমার জন্য কোনো ব্যাপার হবে না।

স্ত্রীঃ আমার স্বামী একটুও সুন্দর না। চেহারাটা কেমন ভয়ংকর। তার শরীর থেকে বের হওয়া ঘাম দুর্গন্ধময়। তাকে আমার একটুও ভালোলাগে না।

সমাজঃ বোন! ধৈর্যধারণ করো। এমনকি তোমার স্বামী যদি কুৎসিতও হয় তারপরও তুমি তার কাছেই থাকো। শোনো! ছেলেদের চেহারা অত গুরুত্বপূর্ণ না। একটু মানিয়ে নাও। আর সারাদিন কাজ করে তো, একটু দুর্গন্ধ আসতেই পারে। এতে এতো আপত্তির কী আছে?

উপরের কথোপকথনগুলো কাল্পনিক। তবে কতটুকু বাস্তব তা আপনারাই বলবেন। শুধু এতটুকুই বলি, সমাজ কেনো সবসময় স্ত্রীকে বদলাতে উপদেশ দেয়? সমাজ কি স্ত্রীদের ঘরের আসবাবপত্রের মত কিছু মনে করে যা চাইলেই বদলানো যায় কিংবা মনে করে ঘরের কোণে ফেলে রাখা কোনো ফেলনা জিনিসপত্র? আবার এই সমাজই তাকেই সারাক্ষণ ধৈর্যের নসীহত করতে থাকে! স্বামীর মনে হয় কিছুই করার নেই!

ইসলামে স্ত্রীর যেমন করণীয় আছে তেমন আছে স্বামীর। সব ভুল কখনো এক পক্ষের হয় না। সবসময় স্ত্রীকে দোষারোপ করা একটি অন্যায়, অবিচার। ইসলাম একদিকে যেমন স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অধিকার ও ক্ষমতা দিয়েছে আরেকদিকে স্বামীর প্রতিও স্ত্রীর অধিকার ও ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু স্ত্রীর ক্ষমতা কখনই স্বামীর সমান নয়। স্বামীর ক্ষমতা বেশি জবাবদিহিতাও বেশি।

স্ত্রীর স্বামী হয়ে অনেকেই মনে করে জগতের স্বামী হয়ে বসে আছেন। তার কোনো ভুল হতে পারে না। ইংল্যান্ডের প্রবাদের মত স্বামীরা মনে করেন নিজেকে যে, "the King can do no wrong" । সব দোষ স্ত্রীর, স্বামী নির্দোষ!

এটা ঠিক নয়। চোখ থেকে রঙ্গিন চশমা খুলুন। যার যতটুকু অধিকার দিন আর যার প্রতি যতটুকু দায়িত্ব তা পালন করুন। মনে রাখবেন আপনার দায়িত্ব আরেকজনের অধিকার আর আপনার অধিকার আরেকজনের দায়িত্ব।

(লেখাটির মূল ভাব একটি আরবী পেইজ থেকে নেয়া)
Shahadat ফায়সাল (রা.)