আজকেও মাত্র ৫ মিনিট, শিখবেন কুরআনের ২,৮৫৯ শব্দ! শিখবেন তো?
১. هذا -হাযা-: এই/এটি(This)
২. ذلك -যা-লিকা: ঐ/সেটি(That)
৩. الذي -আল্লাযি-: যে/যিনি( Who)
৪. الذين -আল্লাযি-না: যারা( Those)
৫. من - মান: কে/যে(Who)
হয়ে গেছে! এ শব্দগুলোই ঘুরে ফিরে এত বার এসেছে, যা কুরআনের মোট শব্দের ৩.৬৮%! আর হ্যাঁ, প্রথম ৪ টিই পুরুষবাচক শব্দ কিন্তু।
আল্লাহ আমাদের জন্য কুরআন জানা, বুঝা ও মানা সহজ করে দিন....
#কুরআন_বুঝা-২
.
Credit : Md Anamul Haque
Collected from Khaled Bin Showkot Tanim
Christ will never be proud to reject to be a slave to God .....holy Quran, chapter Women , 4: 172
এখন থেকে বছর তিনেক আগের কথা। আমার ছোট কন্যা সুরা হাদীদ পড়ছিল তার কোরআনে হাফিজ শিক্ষিকার কাছে।
আমি পড়ার ঘরে যেতেই, আমাকে দেখে আমার কন্যার শিক্ষিকা বললো, “আন্টি, দেখেন তো এই আয়াতটির তিলওয়াত শুদ্ধ হচ্ছে কিনা।”
আমি দেখলাম সুরা হাদীদের খুব বিখ্যাত একটি আয়াত নিয়ে সে একটু সমস্যায় পড়েছে। আর, খুব নির্বিকার ভাবে আয়াতটি পড়ে যাচ্ছে।
আমি কিছুক্ষণ আয়াতটির দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম, “তুমি কি এই আয়াতের অর্থ বোঝ?” সে মাথা নেড়ে বললো, “না।”
আয়াতটি ছিল, “ঈমানদারদের কি এখনো সময় হয়নি যে, আল্লাহ’র স্মরণে তাদের অন্তর বিগলিত হয়ে যাবে এবং যে মহাসত্য (তাদের প্রতি) অবতীর্ণ হয়েছে তার সামনে তারা নত হয়ে যাবে?
তারা যেন তাদের মতো না হয়, যাদের এর পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল, তারপর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে।
আর, (আল্লাহ’র বাণী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার কারণে) তাদের অন্তরগুলো কঠিন হয়ে গেছে। বস্তুত: তাদের অধিকাংশই তো ছিল পাপাচারী।” (সুরা হাদীদ: ১৬)
কোরআন না বুঝে পড়ার সমস্যা এই সমাজে কত গভীর, তা নতুন করে অনুভব করে আমার বুকটা সেদিন ব্যাথায় ভরে গিয়েছিল।
এক বুক কষ্ট নিয়ে আমি ভেবেছিলাম, একটি কোরআনে হাফিজ মেয়ে, যে কিনা সারাজীবন কোরআন ছাড়া আর কিছুই পড়েনি,
এই কোরআনকে কত বছরের শ্রম দিয়ে সে হৃদয়ে ধারণ করেছে, অথচ, এই অমূল্য গ্রন্থের এক বর্ণ সে বোঝে না।
মনে মনে শুধু বলেছিলাম, “আফসোস! এই উম্মতের জন্য, যারা এই কোরআনকে তার প্রকৃত মর্যাদা দিতে পারেনি।”
আমার সেদিন কোরআনের সেই আয়াতটি মনে পড়েছিল, যেখানে আমাদের প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুক ভরা কষ্ট নিয়ে আল্লাহ’র কাছে অভিযোগ করে বলছেন,
“হে আমার রব! নিশ্চয়ই আমার স্বজাতি এই কোরআনকে পরিত্যাজ্য মনে করেছে।” (সুরা ফুরক্বান: ৩০)
২০০৯ সালের রামাদান মাসে, আমি যখন উমরাহ পালন করতে মক্কায় যাই, তখন আমি যেন হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছিলাম যে, কেন আমি কোরআন থেকে এতকাল দূরে ছিলাম।
কারণ, আমি আমার জীবনে যত বই পড়েছি, তার ভেতরে একটি বইও কোনদিন আমি না বুঝে পড়িনি, একমাত্র কোরআন ছাড়া।
তখন আমি বুঝেছিলাম, সেই ছেলেবেলায় রামাদান মাসে ইফতারের ১৫ – ২০ মিনিট আগে যখন আমার বাবা রেডিওতে সম্প্রচারিত কোরআন তিলওয়াত ছেড়ে রাখতেন,
কেন সেই তিলওয়াত কোনদিন আমাকে আকর্ষণ করেনি, কেন সেই তিলওয়াত কোনদিন আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেনি।
কারণ, আমি সেই তিলওয়াতের এক বর্ণ আমি কোনদিন অনুধাবন করিনি।
আমরা তখন মক্কায় ছিলাম প্রায় নয়দিন। এ সময়ের মাঝে প্রতিটি দিন, প্রতিটির ওয়াক্তের সালাতে যাবার জন্য আমি মনটা শুধু অস্থির হয়ে থাকতো।
না – এই অস্থিরতা শুধুমাত্র ক্বারীদের সুরেলা তিলওয়াত শোনার জন্য ছিল না।
আমি যখন কোরআনের আয়াতগুলো বুঝতাম, তখন আমার মাঝে মাঝে মনে হত, আমার মহান রব এই আয়াতগুলো শুধুমাত্র আমার জন্যই এইমাত্র অবতীর্ণ করেছেন।
আমি যখন কোরআন পড়তাম, তখন কোরআনের কোন কোন আয়াতে আমি যেন নিজেকে আবিষ্কার করতাম।
মনে হত, হ্যাঁ – এইতো, এই আয়াতে তো আল্লাহ আমার মতো গুনাহগার বান্দার কথাই বলছেন, যে জীবনের দীর্ঘসময় তার রবকে ভুলে পর্বতসম ভুলের মাঝে লিপ্ত ছিল।
আমাকেই যেন পরম মমতায় আমার রব ডেকে বলছেন,
“হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজের উপর অধিকমাত্রায় জুলুম করেছো (অন্তহীন গুনাহ করেছো), তোমরা আল্লাহ’র রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।
নিশ্চয়ই, আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সুরা জুমার: ৫৩)
তিনি যেন আমার মতো গুনাহগার এক বান্দাকে সুসংবাদ দিয়ে বলছেন,
“(হে নবী!) তুমি আমার বান্দাদের (এই সুসংবাদ) দিয়ে দাও যে, নিশ্চয়ই আমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, আর পরম দয়ালু।” (সুরা হিজর: ৪৯)
আমি যখন কোরআন পড়তাম তখন মনে হত, আমার রব যেন আমাকেই ডেকে অভিমানের সুরে বলছেন,
“নিশ্চয়ই আমি তোমাদের প্রতি (এমন) একটি কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যেখানে তোমাদের কথাই আছে। তবুও কি তোমরা ভেবে দেখবে না?” (সুরা আম্বিয়া: ১০)
কোরআনের ভাষা শেখার পর আমি বুঝেছিলাম, কেন ফুদাইল ইবন ইয়াদের মতো দুধর্ষ ডাকাত সুরা হাদীদের এই বিখ্যাত আয়াতটি শোনার সাথে সাথে বলেছিল,
“হ্যাঁ, আমার রব, নিশ্চয়ই আজ তোমার স্মরণে আমার অন্তর বিগলিত হয়ে যাবার সময় হয়েছে”,
আমি বুঝেছিলাম, কেন এই একটি মাত্র আয়াত তাকে পরবর্তীতে দুধর্ষ ডাকাত থেকে ইসলামের প্রখ্যাত স্কলারে পরিণত করেছিল?
কোরআনের ভাষা শেখার পর আমি বুঝেছিলাম, কেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীরা কিয়ামত দিবস কিংবা জাহান্নামের আয়াতগুলো তিলওয়াত করার সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলতেন,
কেন তারা রাতের পর রাত ঘুম বিসর্জন দিয়ে নির্জনে কোরআন পাঠ করতেন, আর, পাঠ করার সময় কাঁদতে কাঁদতে তাদের পরিধেয় বস্ত্র ভিজিয়ে ফেলতেন,
কেন জান্নাতে একটি মাত্র গাছের মালিকানা অর্জনের জন্য তারা এ -দুনিয়ার সমস্ত সম্পদ বিনা দ্বিধায় বিসর্জন দিয়ে দিতেন।
আমাকে অনেকে অনেক সময় অভিযোগের সুরে বলেছে,
“আপা, অনেক চেষ্টা করেও নামাজে মনোযোগ ধরে রাখতে পারি না।”
আমি মনে মনে ভেবেছি, কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব, যখন সালাতে দাঁড়িয়ে আমার রবের সাথে কথোপকথোনের এক বর্ণ আমি বুঝতে পারি না,
যখন আমি প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে হাজার বার আমার রবকে ডেকে বলি, “ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতায়্যিন (আমরা তো কেবলমাত্র তোমারই ইবাদত করি আর একমাত্র তোমারই কাছে সাহায্য চাই)” – কিন্তু, কি বলছি তা আসলে অনুধাবন করি না।
কোরআনের সাথে হাতে হাত রেখে পথ চলছি আজ আমি প্রায় দীর্ঘ বিশটি বছর।
গভীর বন্ধুত্ব, ভালোবাসা আর মান-অভিমানের এই দীর্ঘসময়টিতে কোরআনের প্রতি আমার ভালোবাসা ক্রমান্বয়ে শুধু বেড়েছে, কিন্তু, কোনদিন এতটুকু কমেনি।
আমি মাঝে মাঝে হয়তো দুনিয়ার ব্যস্ততায় নিমজ্জিত হয়ে, কিছু সময়ের জন্য কোরআন থেকে দূরে থেকেছি।
কিন্তু, যখনই ভুল বুঝে ফিরে এসেছি, দেখেছি, আমার বিশ্বস্ত এ বন্ধু আমার অপেক্ষায় আছে।
আমার সাময়িক অবহেলায় হয়তো অভিমানী মেয়ের মতো অভিমান করেছে, কিন্তু, আমাকে একা ফেলে সে কোথাও চলে যায়নি।
আমার বিশ্বাস, বিচারের সেই ভয়াবহ দিনে যেদিন আমার মমতাময়ী মা আমাকে সন্তান বলে পরিচয় দেবে না,
আমার আদরের সন্তানেরা আমার দিকে ফিরে তাকাবে না, আমার প্রাণের বন্ধুরা আমাকে বন্ধু বলে স্বীকার করবে না,
সেইদিন, আমার বিশ্বস্ত এই বন্ধু পরম মমতায় আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমার রবকে ডেকে বলবে,
“হে আমার রব! তোমার এই গুনাহগার বান্দাকে তুমি ক্ষমা করে দাও, কারণ, সে আমাকে ভালোবাসতো।” (চলবে)
Hey there! Looks like you're enjoying the discussion, but you're not signed up for an account.
When you create an account, we remember exactly what you've read, so you always come right back where you left off. You also get notifications, here and via email, whenever new posts are made. And you can like posts and share your thoughts.
Sign Up
Bookmarks