ক্ল্যাসিকাল আরবিতে গ্যালাক্সি, নেবুলা , সৌরমণ্ডল , বায়ুমন্ডল ইত্যাদি আধুনিক শব্দগুলো খুজে পাওয়া যায়না । কোরআন রচয়িতা তাই তৎকালীন জ্ঞানের মাত্রার সাথে কোরআনের শব্দকোষকে এমনভাবে ব্যবহার করেছেন যেন তা কোরআন নাযিলের সম-সাময়িক সময় তথা আগত যে কোন সময়ের জন্য উপযোগী হয় । ‘সামাআ’ (السَّمَاءُ) বা আসমান এমন এক শব্দ যার বহু মাত্রার ব্যবহার কোরআনের যত্রতত্র পাওয়া যায় । ‘সামাআ’ শব্দটা কখনও পৃথিবীর কাছের , কখনও দুরের বা কখনও বা ব্যাপক অর্থে আয়াতের সারমর্মের উপর ভিত্তি করে লক্ষ্য করা যায় । এক কথায় পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে অ/দৃশ্যমান Space ‘সামাআ’ (السَّمَاءُ) এর অন্তর্ভূক্ত ।

পৃথিবীর কাছের আসমান বা বায়ুমন্ডল নিয়ে কোরআনে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া যায় যা ৭-ম শতাব্দীর বিশ্বের কাছে এ জ্ঞান ছিলনা । নীচে বিজ্ঞান ও কোরআনের সমান্তরালে পৃথিবীর বায়ুমন্ডল এর আলোচনা সংক্ষেপে করা হল ।

বিজ্ঞানঃ

বায়ুমন্ডল সৃষ্টির আগে পৃথিবীর বুকে পাহাড় সৃষ্টি হয় । প্রকৃত পক্ষে ২.৫ বিলিয়ন বছর থেকে ৪.০ বিলিয়ন বছর আগে প্রাথমিক যে বায়ুমন্ডলের রুপ নিতে শুরু করে তাতে আগ্নেয়গিরি থেকে উৎক্ষিপ্ত গ্যাস এক গুরুত্ব পূর্ন ভূমিকা পালন করে । মূলতঃ আগ্নেয়গিরি থেকে উৎপন্ন কার্বন-ডাই-অক্সাইড সেই আর্চিয়ন যুগ থেকে বৃক্ষ-জগতের জন্য যেমন একদিকে খাদ্য যুগিয়েছে তেমনি গাছ-পালা থেকে অক্সিজেন পরিত্যাগের ধারা নিশ্চিত করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ করে পৃথিবীর বুকে অক্সিজেন গ্রহণকারী জীবের জীবন ধারন নিশ্চিত করেছে ।

কোরআনঃ

১০- আর তার উপরিভাগে তিনি দৃঢ় পর্বতমালা স্থাপন করেছেন এবং তাতে বরকত দিয়েছেন, আর তাতে চার পর্যায়ে জন্য সমভাবে উপযোগিতা নিরূপণ করে দিয়েছেন।
১১- তারপর তিনি আসমানের দিকে মনোনিবেশ করেন। তা ছিল ধোঁয়া। তারপর তিনি আসমান ও যমীনকে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় আস’। তারা উভয়ে বলল, ‘আমরা অনুগত হয়ে আসলাম’। (সুরা ফুসিলাত)



বিজ্ঞানঃ

বায়ুমণ্ডল আসলে বিভিন্ন গ্যাসের সমষ্টি । পৃথিবীর আদি বায়ুমন্ডল মূলত হাইড্রোজেন গ্যাস দ্বারা গঠিত । ২.৪-৩.৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে এতে মূলতঃ নাইট্রোজেন , অক্সিজেন , কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও নিষ্ক্রিয় গ্যাস সমূহের উপস্থিতি ধরা পরে ।

কোরআনঃ

১১- তারপর তিনি আসমানের দিকে মনোনিবেশ করেন। তা ছিল ধোঁয়া/গ্যাস।(সুরা ফুসিলাত)

বিজ্ঞানঃ

বায়ুমন্ডল ও পৃথিবী একে অপরের কাছাকাছি অবস্থানের কারন হচ্ছে পৃথিবীর অভিকর্ষ টান । এই টান যদি না থাকত তবে পৃথিবীর আকাশে বায়ু ম ণ্ডল নামে না কিছু থাকত না প্রানের কোন নাম নিশানা পৃথিবীর বুকে জন্ম নিত ।

কোরআনঃ

১১-তারপর তিনি আসমান ও যমীনকে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় আস’। তারা উভয়ে বলল, ‘আমরা অনুগত হয়ে আসলাম’।(সুরা ফুসিলাত)

বিজ্ঞানঃ

বায়ুমন্ডলের ৭ টি কার্যকর স্তর আছে । একেকটা স্তর একেকটা ভূমিকা পালন করে । ৭ টি স্তর হলঃ

1. Troposphere
2. Ozone layer
3. Stratosphere
4. Mesosphere
5. Ionosphere
6. Thermosphere
7. Exosphere

কোরআনঃ

১২- অতঃপর তিনি দুই পর্যায়ে সাত আকাশে পরিণত করলেন এবং প্রত্যেক আকাশে উহার বিধান নির্ধারন করলেন । ( সুরা ফুসিলাত)

বিজ্ঞানঃ

প্রতিদিন ২০ লক্ষ উল্কাপিণ্ড ৩০ মাইল/সেকেণ্ড বেগে পৃথিবীতে আঘাত হানার জন্য ছূটে আসে । পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এই সকল উল্কাকে ভস্মীভূত করে পৃথিবীকে সুরক্ষিত করছে প্রতিনিয়ত । উপরন্তু সৌর বায়ু , মহাজাগতিক রশ্মি , তেজস্ক্রিয় কনা , অতিবেগুনি রশ্মি – কত কিছু থেকেই না এই বায়ুমণ্ডল আমাদের রক্ষা করে ।

কোরআনঃ

১২- আমি এই দুনিয়ার আকাশকে সুশোভিত করলাম প্রদীপমালা দ্বারা এবং করলাম সুরক্ষাকারী। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা। (সুরা ফুসিলাত)
১২- আর আমি তোমাদের উপরে বানিয়েছি সুদৃঢ় সাত। (সুরা আন-নাবা)
৬৪- আল্লাহ, যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে স্থিতিশীল করেছেন এবং আসমানকে করেছেন কাঠামো । (সুরা গাফির)

লেখকঃ আবরার শাহরিয়ার
ইমেইলঃ[email protected]