কাজীর বিচার ও পুলিশ রিমান্ড





সালাম আলাইকুম


অনেক আগে কাজীর বিচার নিয়ে কিছু গল্প পড়ি । আগেকার যুগে বিচারকরা কিভাবে ন্যায়বিচার করতেন , তা জেনে অভিভূত হয়েছিলাম ।

সুবিচার করার জন্য কোন কাজী কাউকে পুলিশ রিমান্ডে দিয়েছিলেন বলে আমি কোন কাহিনীতে পাই নি । তাছাড়া কোন কাজী যদি রায়ে ভুল করতেন , তাহলে ভুল ধরিয়ে দিলে তারা রেগে না গিয়ে তা সংশোধন করতেন । অথচ আজ বিচার কাজ নিয়ে কোন সমালোচনা হলে তা কোর্ট অবমাননার দায়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হয়ে যায় । কাগজে বিভিন্ন বিচারকের রায় পড়ে মনে অনেক প্রশ্ন জাগলেও সাহস করে কেউ প্রতিবাদও করেন না ।



যারা কাজীর বিচারের কাহিনীগুলি পড়েন নি , তাদের জন্য স্মৃতি থেকে কিছু লিখছি । কোন ভুল কারো চোখে পড়লে জানাবেন , ইনশাআল্লাহ সংশোধন করবো ।



১. চুরির অপরাধে চোরকে হাত কাটার শাস্তি দেয়া হলো । রায় শুনে মাদ্রাসার এক শিক্ষিকা তার নাবালক ছাত্রকে দিয়ে বলে পাঠালেন , রায় ভুল হয়েছে। কেননা , তিন দিরহাম বা তার চেয়ে কম দামী কিছু চুরি করলে হাত কাটা বিধান প্রযোজ্য হবে না ।



বিচারক প্রকাশ্য সভায় এই কথায় কি তেলে – বেগুনে জ্বলে উঠলেন ? আদালত অবমাননার দায়ে সেই শিক্ষিকা বা ছাত্রকে শাস্তি দিলেন ? না । তিনি নিজের ভুল স্বীকার করে চোরের হাত কাটার রায় ফিরিয়ে নিলেন ।


আজ যদি মাদ্রাসার কোন ছাত্র আদালতে এসে বিচারককে বলে , আমার শিক্ষিকা বলেছেন আপনার বিচার ঠিক হয় নি , তাহলে সেই ছাত্র আর তার শিক্ষিকার যে কী অবস্থা হবে , তাদেরকে কী পরিমাণ হেনস্থা করা হবে , তা আল্লাহই ভাল জানেন ।



২. এক নারীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনলো এক ব্যক্তি । সাথে নিয়ে আসলো চারজন সাক্ষী । সবার এক কথা : এই নারীর চরিত্র খুবই খারাপ । এক কুকুরের সাথে তার রয়েছে বিশেষ সম্পর্ক যা ইসলামে পাপ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ । অভিযোগ গুরুতর , সাথে সাক্ষীরাও হাজির । কাজী কী করলেন ? তিনি কি প্রকাশ্য বিচার সভায় নারীকে তলব করলেন ?

না ।

তিনি এক এক করে সাক্ষীদের ডেকে শুধু একটি প্রশ্ন করলেন : কুকুরটি দেখতে কেমন ?

কেউ বললো বড় কুকুর , খয়েরী রংয়ের ; কারো উত্তর মাঝারী আকারের কালো কুকুর , আরেকজনের উত্তর ছোট , সাদা কুকুর । বিচারক বুঝলেন সবই ষড়যন্ত্র । দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা হলো , এক নিরপরাধ নারীর সম্মান রক্ষা হলো ।



৩. বন্ধুর কাছে খুব দামী এক পাথর জমা রেখে একজন ব্যবসায়ী গেলেন বিদেশে । ফিরে এসে আমানত ফেরত চাইলে বন্ধু আকাশ থেকে পড়লো , তোমার জিনিষ তো আমি দিয়ে দিয়েছি । অনেক সাক্ষীও আছে যারা দেখেছে তোমাকে আমি জিনিষ ফেরত দিয়েছি ।



নিরুপায় হয়ে প্রতারিত ব্যবসায়ী গেলেন কাজীর দরবারে । কাজী সব শুনে ....না , কাউকে পুলিশ রিমান্ডে দিলেন না । তিনি সাক্ষীদের নরম মাটি দিয়ে বললেন , পাথরটি কেমন ছিল বানিয়ে দেখাও । কেউ বানালো গোল করে , কেউ বানালো চারকোণা , কেউ বা লম্বা করে । যা বোঝার বুঝে নিলেন কাজী , উদ্ধার হলো দামী পাথরটি ।



এখন যে কোন বিচার কাজ মাসের পর মাস ধরে চলে , বেশীরভাগ সময় বছর পার হয়ে যায় । বিচারপ্রার্থী আদালত ভবন আর উকিলের পিছনে ছোটাছুটিতে লাখ লাখ টাকা খরচ করেও অনেক সময় সুবিচার পান না । অভিযুক্ত ( হয়তো সে নির্দোষ ) ব্যক্তি মাসের পর মাস হাজতে থেকে কখনো কখনো মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে । এছাড়া , পুলিশ রিমান্ড তো রয়েছেই ।


রিমান্ডে আসামীর উপর কী ধরণের নির্যাতন হয় , কথা আদায়ের নামে অত্যচারের ভয় দেখিয়ে অভিযুক্তের পরিবার থেকে টাকা আদায় করা থেকে শুরু করে আরো কত নির্মমতা যে হয় , তা আমরা সবাই বুঝি।




আগে যদি কাউকে পুলিশ রিমান্ডে না পাঠিয়ে সুবিচার করা যেত , তাহলে আজ তা করা যাচ্ছে না কেন ? আইন পেশা , বিচার বিভাগের সাথে যারা জড়িত , তারা কি এ নিয়ে কিছু ভাববেন , কিছু করবেন ?