আদব (জ্ঞান চর্চাকারীর আদব-কায়দা)

Muslim Woman

Super Moderator
Messages
12,286
Reaction score
1,449
Gender
Female
Religion
Islam
:sl:




আদব ( জ্ঞান চর্চাকারীর আদব-কায়দা )

আরবী : শেখ আবু আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মাদ সাঈদ রাসলান, সৌদি আরব।

ইংরেজী অনুবাদ: আবু সাবাইয়া

ইংরেজী থেকে অনুবাদ: জাবীন হামিদ, বাংলাদেশ।


"আমি ত্রিশ বছর ধরে আদব শিখেছি আর জ্ঞান চর্চায় সময় দিয়েছি বিশ বছর"


-আবদুল্লাহ বিন আল মুবারক।




সূচি :

ভূমিকা

১. জ্ঞানের সন্ধান করার সময় আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিয়ত পরিশুদ্ধ করতে হবে

২. শরীয়াহ বিরোধী সবকিছু থেকে মন ও আচরণকে শুদ্ধ করতে হবে

৩. জ্ঞানের দিকে পুরো মনোযোগ দিতে হবে ও সব বাধা দূর করতে হবে

৪. কম খাও , সাবধান হও ও সবসময় আল্লাহর যিকির করো

৫. খাওয়া , ঘুম ও কথা যত কম তত ভাল

৬. সঠিক বন্ধু বেছে নেয়া ও সামাজিকতা কমানো

৭. কী শিখবে ? কার কাছে শিখবে ?

৮ . শিক্ষকের সাথে সেরা আচরণ করতে হবে

৯ . বইয়ের যত্ন নেবে

১০ . যেভাবে পড়তে হবে


শেষ কথা
 
Last edited:
:sl:



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

অবশ্যই সব প্রশংসা আল্লাহর। আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর কাছে মাফ চাই। আমাদের আত্মার অকল্যাণ ও কাজের ভুল থেকে আমরা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি। আল্লাহ্ যাকে পথ দেখান, কেউ তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর আল্লাহ্ যাকে হেদায়াত করেন না, কেউ তাকে পথ দেখাতে পারে না।

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ্ ছাড়া কেউ উপাসনার যোগ্য নয়, আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি
মুহাম্মাদ صلى الله عليه وسلم আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।

"হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থ ভাবে ভয় করো ও আত্মসমর্পণকারী না হয়ে কোন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করো না।" (সূরা আলে ইমরান: ১০২)।

"হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তার থেকে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন, যিনি তাদের দু’জন থেকে অনেক নর-নারী ছড়িয়ে দেন; আর আল্লাহকে ভয় কর; যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে অধিকার (ও পাওনা) দাবী কর এবং সতর্ক থাক জ্ঞাতি বন্ধন সম্পর্কে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন।"
(সূরা আন্-নিসা ; ৪: ১)।

হে মুমিনগণ ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল ; তাহলে তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে। ( সূরা আল আহযাব; ৩৩: ৭০-৭১ )।


নিশ্চয়ই সব কথার মধ্যে আল্লাহর কথাই সবচেয়ে সত্য ও রাসূল صلى الله عليه وسلم সবচেয়ে সুন্দরভাবে আমাদের পথ দেখিয়েছেন।

সবচেয়ে খারাপ কাজ হলো বিদআত এবং সব বিদআতই পথভ্রস্টতা; আর সব পথভ্রস্টতা দোযখের আগুনের দিকে নিয়ে যায় ।

জ্ঞান হলো মনের ইবাদত, জীবনের রহস্য ও শক্তির উৎস। যিনি জ্ঞান অনুসন্ধান করছেন তার জন্য এটা অবশ্য কর্তব্য যে, জ্ঞান বিষয়ক যে সব আদবকায়দা আছে, তা তিনি জেনে নেবেন ও এই আদব শিখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবেন। তা না হলে তিনি যাবেন একদিকে, জ্ঞান যাবে অন্যদিকে , যেমনটি বলা হয়ে থাকে : জ্ঞান যায় পূর্বে , সে যায় পশ্চিমে - পূর্ব আর পশ্চিমের মধ্যে কতই না দূরত্ব।

একজনকে বুঝতে হবে এসব আদব অন্য সব আচরণের মত না যে , ইচ্ছা হলো তা করলাম, ইচ্ছা না হলে এই আদব শিখলাম না। এসব আদব একই স্তরের না বরং কিছু কিছু আদব শেখা সবার জন্যই বাধ্যতামূলক , তা সে যেখানেই থাকুক না কেন বা ছাত্র - অছাত্র যেই হোক না কেন।

শরীয়াহ সম্পর্কে জানার লক্ষ্য হলো নিখুঁত ও স্পষ্টভাবে মনোভাব প্রকাশ করতে শেখা। নিজের মনোভাব স্পষ্ট ও নিখুঁত প্রকাশের লক্ষ্য হলো আল্লাহকে সবার থেকে আলাদা করা ও শুধু তাঁরই ইবাদত করা। তাই জ্ঞানের সন্ধান করার উদ্দেশ্য হলো , আল্লাহ যিনি সর্বশক্তিমান ও মহিমান্বিত ; তাঁকে আর সবার থেকে আলাদা করা ও একমাত্র আল্লাহরই উপাসনা করা - এটি তখনই ভালভাবে একজন বুঝতে পারে যখন সে জ্ঞানের প্রতি সুবিচার করে - তা সে ছাত্র বা শিক্ষক যেই হোক না কেন।

যে জ্ঞানের সন্ধান করছে তার থেকে আদব তাই আলাদা নয়, কেননা এই আদব কায়দার অন্তর্ভুক্ত হলো ধর্মের মূলনীতি। ধর্মীয় আদর্শের সাথে মতবিরোধে যাওয়ার বিলাসিতা কেউ করতে পারে না বা এটাকে গুরুত্ব না দেয়ার কোন উপায় নেই।

জ্ঞান চর্চাকারীর জন্য আদব শেখা তাই সবসময়ই বাধ্যতামূলক ; আর আল্লাহ হলেন সাহায্যের উৎস ও তাঁর উপরেই আমরা ভরসা রাখি।


ছাত্রদের জন্য যে সব আদব কায়দা জানা বাধ্যতামূলক সেসব হলো:

১ . জ্ঞানের সন্ধান করার সময় আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিয়্যত পরিশুদ্ধ করতে হবে:

আবু হামিদ আল গাযযালী (রঃ) বলেন: “ নিয়্যত, ইরাদা ও ক্বাসদ এগুলি আলাদা পরিভাষা হলেও এগুলোর মানে এক। এগুলি মনের অবস্থা বর্ণনা করে। মন দু’টি জিনিষের উৎস - জ্ঞান ও কাজ।

প্রথমে আসে জ্ঞান, কেননা এটা হলো স্তম্ভ ও শর্ত। এরপর কাজ তার অনুসরণ করে, কেননা কাজ হলো জ্ঞানের শাখা। জ্ঞান, ইচ্ছা ও সামর্থ্য -- এগুলি ছাড়া কোন কাজ হয় না। তার মানে, সেই বিষয়ে জানতে হবে, সেটা করার ইচ্ছা মনে থাকতে হবে।

মানুষ এমনভাবে সৃষ্ট হয়েছে, যাতে সে মাঝেমাঝে এমন কাজ করে, যা তার মন চায় ; আবার এমন কাজও সে করে, যার সাথে মনের ইচ্ছার সংঘর্ষ হয়। এমন অবস্থায় যা তার জন্য ভাল , সে তার কাছে যাবে ও যা তার ক্ষতি করবে তাকে সে দূর করে দিবে । এজন্য তার জানা থাকতে হবে, কী তার জন্য কল্যাণকর, আর কী তার ক্ষতি করবে যেন সে কল্যাণকর কাজের কাছে আসতে পারে ও ক্ষতিকে এড়িয়ে যেতে পারে । যে দেখতে পায় না , সে জানে না কোন খাবার তার থেকে দূরে আছে বা কোন খাবার সে কাছে টানতে পারবে । যে আগুন দেখতে পাচ্ছে না, সে আগুন থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবে না। তাই আল্লাহ হেদায়েত ও জ্ঞান সৃষ্টি করেছেন, এগুলি পাওয়ার উপায় ঠিক করে দিয়েছেন - সেগুলি হলো আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ইন্দ্রিয় সমূহ।


কোন কিছু করার জন্য একজনের মনে কোন লক্ষ্য থাকবে যা তাকে উদ্দীপিত করবে।
লক্ষ্য হাসিল করতে হলে যে ইচ্ছাশক্তি ও উদ্যোগের দরকার ,সেজন্য নিয়্যত করা অপরিহার্য , যদিও তা ঘটে থাকে আলাদাভাবে বা যা চাওয়া হয় তা ঘটার সময়। তাই কোন কিছু করার জন্য উদ্বুদ্ধ হতে প্রথম পদক্ষেপ হলো একজনের কোন একটি লক্ষ্য থাকবে যা তাকে কাজ করতে উদ্দীপিত করবে ; একজনের নিয়্যতের উদ্দেশ্য হলো সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো ।একজন কোন কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হয় ও সে কিছু একটা কাজ করে যখন তার কোন লক্ষ্য ও নিয়্যত থাকে কারো মনে কোন লক্ষ্য থাকলে তা তাকে কোন কাজের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সে তখন লক্ষ্য পূরণের জন্য তার শক্তি ও সামর্থ্যকে সেদিকে পরিচালিত করে , একে বলে কোন কাজ করা।
এ কারনে শরীয়াহতে এটা প্রতিষ্ঠিত যে , যিনি সর্বশক্তিমান ও মহিমান্বিত , তিনি এমন কোন আমল কবুল করেন না যা শুধুমাত্র তাঁর সন্ত্তষ্টির জন্য করা হয় নি ।
রাসূল صلى الله عليه وسلم নিয়্যতের গুরুত্ব সম্পর্কে ও যা একজনের কাজকে নষ্ট করে ফেলতে পারে, তা থেকে নিয়্যত শুদ্ধ রাখার বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে বলেছেন।

আলকামাহ বিন ওয়াক্কাস আল লায়থী র: বলেন , আমি শুনেছি - হজরত উমর বিন আল খাত্তাব রা মিম্বারে দাড়িয়ে বলেন , “ রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন: অবশ্যই কাজের ফলাফল নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল; একজন মানুষ তাই পাবে যা সে নিয়্যত করে। তাই যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল صلى الله عليه وسلم এর জন্য হিজরত করে, তার হিজরত আল্লাহও রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য আর যে হিজরত করে দুনিয়াতে কোন লাভের জন্য বা কোন নারীকে বিয়ের জন্য, তার হিজরত সেজন্যই ( বর্ণনায় ইমাম বুখারী, সূত্র আলকামাহ বিন ওয়াকাস আল লায়থি)।

আন – নওয়াবি (রহঃ) বলেন: এই হাদিসের গুরুত্ব সম্পর্কে মুসলমানরা একমত – এর সূত্র নির্ভরযোগ্য ও এই এক হাদিসের মধ্যে অনেক কল্যাণ আছে। আশ – শাফেয়ী ও অন্যরা বলেন: ইসলামের চার ভাগের এক ভাগ আছে এই একটি হাদিসে। আবদুর রাহমান বিন মাহদী ও অন্যান্যরা বলেন: যে বই লিখে তার জন্য এটা অপরিহার্য যে সে এই হাদিস দিয়ে বইটি শুরু করবে – এটা ছাত্রদেরকে শুদ্ধভাবে আবারও নিয়্যত করার কথা মনে করাবে। আল – বুখারী (রঃ)ও আরো অনেকে তাদের বইয়ের শুরুতে এই হাদিসের উল্লেখ করতেন। বুখারী (রঃ) তার বইয়ের সাত জায়গায় এই হাদিসের উল্লেখ করেন।


বেশিরভাগ ইসলামিক চিন্তাবিদ, ভাষাবিদ ও আইনবিদ মনে করেন যে ‘ অবশ্যই ’ শব্দটি এটাই নিশ্চিত করে যা বলা হয়েছে ও অন্যকিছুকে প্রত্যাখ্যান করে – এর মানে নিয়্যতের উপর কাজ নির্ভরশীল ও নিয়্যত সঠিক না হলে সে কাজের ফলাফল শূন্য।
তারা বলেন, “ অবশ্যই কাজের ফলাফল নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল” , এটা বলার পর রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই কথা , “ একজন মানুষ তাই পাবে যা সে নিয়্যত করে ” , এটা নিয়্যতের গূরুত্ব বোঝাতে উল্লেখ করা হয়েছে । যে কোন কাজের জন্য শর্ত হলো নিয়্যত সুনির্দিষ্ট করা ।

কেউ যদি সালাত আদায় করতে চায় , তবে শুধু এটা বলা তার জন্য যথেষ্ট হবে না যে আমি সালাত আদায় করবো ; বরং তাকে সুনির্দিষ্টভাবে নিয়্যত করতে হবে : “ আমি ফজরের দুই রাকাত ফরয সালাত অথবা আসরের চার রাকাত ফরয আদায় করছি ” ।

রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বক্তব্যের শেষের অংশটুকু যদি না থাকতো , তবে প্রথম অংশকে একজন এভাবে ব্যাখ্যা করতে পারতো যে এটি সুনির্দিষ্টভাবে নিয়্যতের বদলে সাধারণভাবে নিয়্যত করার অনুমতি দিচ্ছে ।

রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই কথা , “ তাই যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য হিজরত করে ”, এর মানে হলো , যে ব্যক্তি তার হিজরতের জন্য আল্লাহর সন্ত্তষ্টি কামনা করে , সে আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার পাবে ; আর যে দুনিয়ার মোহে বা স্ত্রী পাবার নিয়্যতে হিজরত করে , সে শুধু তাই –ই পাবে এবং এই হিজরতের জন্য সে পরকালে আল্লাহর কাছ থেকে কিছুই লাভ করবে না ।


হিজরতের আভিধানিক অর্থ হলো কোনকিছু ত্যাগ করা। এখানে হিজরত বলতে বোঝানো হয়েছে কেউ কোন ভূমি বা দেশ ত্যাগ করলো । এখানে দুনিয়ার মোহের পাশাপাশি নারীর উল্লেখ করার বিষয়টি দুইভাবে ব্যাখ্যা করা যায় ।
উম্মে কাইম নামের এক নারীকে বিয়ে করার জন্য একজন মুসলমান পুরুষ হিজরত করে । সেজন্য তার নাম হয়ে যায় –এই সে যে উম্মে কাইমের জন্য হিজরতকারী । আরেকটি ব্যাখ্যা হলো সাবধানতা অবলম্বনকে গূরুত্ব দেয়ার জন্য এখানে নির্দিষ্ট একটি উদাহরণের উল্লেখ করা হয়েছে । আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন ।

 
Last edited:
:sl:


শরীয়াহতে এটা সুপ্রতিষ্ঠিত যে আল্লাহ এমন কোন আমর বা ইবাদত কবুল করেন না , যা তাঁর সন্ত্তষ্টির জন্য করা হয় নি ।

কুরআন ও সুন্নাহতে এর অনেক প্রমাণ আছে। যেমন .

১.সূরা ক্বাহফে আল্লাহ বলেন,

বলুন: আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ; আমার প্রতি ওহী নাযিল হয় যে, তোমাদের মাবুদ হলেন এক। তাই যে তার মাবুদের সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন ভাল কাজ করে। এবং তার মাবুদের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে। ( ১৮: ১১০ )।

২. আল্লাহ আরো বলেন , তাদেরকে এছাড়া কোন আদেশ দেয়া হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে ( সূরা বায়্যিনা: ৯৮:৫ )।

৩. রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , অবশ্যই কাজের ফলাফল নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল; একজন মানুষ তাই পাবে যা সে নিয়্যত করে। তাই যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল صلى الله عليه وسلم এর জন্য হিজরত করে, তার হিজরত আল্লাহও রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য আর যে হিজরত করে দুনিয়াতে কোন লাভের জন্য বা কোন নারীকে বিয়ের জন্য, তার হিজরত সেজন্যই । এই হাদীসটি আল বুখারী র: তার সহীহ হাদীস গ্রন্হের শুরুতে উল্লেখ করেছেন । এছাড়াও ইমাম মুসলিম র: ও অন্যরাও উমর বিন খাত্তাব র: এর সূত্রে এই হাদীসের উল্লেখ করেছেন ।



৪. রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , উম্মাহকে সম্মান , দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠা লাভ , বিজয় ও ধর্মীয় কর্তৃত্বের সুখবর দাও । এদের কেউ যদি পরকালের কোন কাজ এই দুনিয়ায় ফল লাভের আশায় করে , তবে পরকালে সে ঐ কাজের কোন বিনিময়ই পাবে না ( বায়হাকী ) ।

এই হাদীসটি উল্লেখিত হয়েছে আহমদ ও তার ছেলের ‘ মুসনাদ ’ বইতে ও ইবনে হিবরানের সহীহতে ও তিনি বলেন , এর ধারাবাহিকতা বিশ্বাসযোগ্য । এতে যারা একমত তারা হলেন আদধাহাবী ও আল মুনধিরী । আল আবানি বলেন , ইমাম আল বুখারি র: এর শর্ত মোতাবেক আহমদ বিন হাম্বলের ছেলে আবদুল্লাহর ধারাবাহিক বর্ণনা নির্ভরযোগ্য ।


৫. এক লোক রাসূল صلى الله عليه وسلم এর কাছে জানতে চাইলো: কেউ যদি পুরস্কারও সম্মানের আশায় যুদ্ধ করে, তবে সে কী পাবে? রাসূল صلى الله عليه وسلم উত্তর দিলেন, কিছু না। লোকটি তিনবার প্রশ্ন করলো, রাসূল صلى الله عليه وسلم তিনবার একই উত্তর দিলেন। তারপর বললেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন কাজ গ্রহণ করেন না যদি সেটা আন্তরিকতার সাথে ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা না হয় ( হাদিস বর্ণনায় আবু উমামাহ )।
৬. রাসূল صلى الله عليه وسلم জানান, আল্লাহ বলেছেন: আমি স্বয়ংসম্পূর্ণ - আমার কোন অংশীদারের দরকার নেই। তাই কেউ যদি কোন কাজ করে যাতে সে আমার সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করেছে, তবে আমি তার থেকে মুক্ত ও যাকে সে আমার অংশীদার বানিয়েছে, তার জন্য ওকে ছেড়ে দেব ( বর্ণনাকারী আবু হুরায়রা )। তাই যে কোন কাজে আল্লাহর জন্য নিয়ত করা জরুরী।


ইবনে আল কাইয়্যিম বলেন: ঠিক যেমনটি উনি একমাত্র উপাস্য কোন অংশীদার ছাড়া, এটি অপরিহার্য যে উপাসনা হবে শুধু তাঁরই জন্য। তাই যেভাবে উনি উপাস্য হিসাবে একক, ইবাদতের জন্যও সবার থেকে তাঁকে আলাদা করতে হবে। সৎ কাজ হচ্ছে তাই যা রিয়া বা লোক দেখানো না ও সুন্নতপন্থী।



সুলায়মান বিন আবদুল্লাহ رضي الله عنهم বলেন: কোন কাজ গ্রহণ হওয়ার জন্য দুইটি স্তম্ভের দরকার - তা সঠিক হতে হবে ও আন্তরিকতার সাথে করতে হবে। সৎ কাজ হচ্ছে তাই যা কুরআন ও সুন্নাহর সাথে মানানসই যেমনটি কুরআনে আদেশ দেয়া হয়েছে: সে যেন ভাল কাজ করে ( সূরা কাহফ; ১৮: ১১০ )।



আন্তরিক কাজ সেটাই যা গোপন ও প্রকাশ্য শিরক থেকে মুক্ত যেমনটি আল্লাহ বলেন: এবং তার মাবুদের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে ( সূরা কাহফ; ১৮: ১১০)।



যে জ্ঞানের সন্ধান করছে, সে তার নিয়্যতকে শুদ্ধ করবে - “ আর জ্ঞানের সন্ধানের সময় সঠিক নিয়্যত হচ্ছে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা ও সেজন্য কাজ করা, তাঁর শরীয়তকে জীবন দান বা শরীয়াহ আইনের প্রচলন ঘটানো, নিজের মনকে আলোকিত ও আত্মিক জগতকে সুন্দর করা, কিয়ামতের দিনে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা ও আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য যে মহা-পুরষ্কারের আয়োজন রেখেছেন, সেটা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা।



সুফিয়ান আস সাওরী (রহঃ) বলেন, নিয়্যত সংশোধনের মতো কঠিন চেষ্টা অন্য কোন কাজে আমাকে কখনো করতে হয় নি। এই দুনিয়ায় কোন কিছু পাওয়ার লোভে অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ কোন পদ লাভ, সম্মান ও টাকা – পয়সা বৃদ্ধি বা আশেপাশের মানুষের চোখে জ্ঞানী ও মহান ব্যক্তির মর্যাদা লাভ, জ্ঞানী – গুণী - সম্মানিত ব্যক্তিদের আসরে যাওয়ার সুযোগ অর্জন ইত্যাদির জন্য একজন জ্ঞান চর্চা করবে না। তাহলে তা হবে খারাপের সাথে ভালোর বদল।



আবু ইউসুফ র: বলেন, হে মানুষ, তোমরা তোমাদের জ্ঞান দিয়ে আল্লাহকে খুজো। জ্ঞানের সন্ধানে আমি বিনীত না হয়ে কোথাও কখনো বসি নি আর সে জায়গা থেকে সবার চেয়ে বেশি জ্ঞান অর্জন করেই আমি উঠেছি। সবার থেকে আমি সেরা তা দেখানোর আশায় কখনো কোথাও বসি নি - নিজে থেকে তা প্রকাশ পেয়ে গেলে তা আলাদা কথা।



জ্ঞান হলো ইবাদতের কাজ ও আল্লাহর কাছে যাওয়ার একটি উপায়। তাই এই ইবাদতে আপনার নিয়্যত যদি খাঁটি হয়, তবে তা গ্রহণ করা হবে, বিশুদ্ধ করা হবে ও কল্যাণকর হবে। যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কিছুর ইচ্ছা থাকে, তবে তা নষ্ট ও অপচয় হবে - আপনি তার কল্যাণ হারাবেন। এমন হতে পারে যে কেউ মহৎ উদ্দেশ্য ছাড়া কোন কাজ করলো আর তার লক্ষ্য পূরণ হলো না। ফলে তার সব পরিশ্রম ও চেষ্টা বৃথা গেল।



উপরে যা বলা হয়েছে তার সার - সংক্ষেপ সহীহ মুসলিমেরএকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে : কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তিকে প্রথমে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে। এরা হলো : আলেম, মুজাহিদ ও দাতা। আল্লাহ জ্ঞানী বা আলেমকে প্রশ্ন করবেন: তুমি দুনিয়ায় কী করেছ? সে বলবে: আমি আপনার জন্য জ্ঞান অর্জন করেছিলাম ও আপনার সন্তুষ্টির জন্য সেই জ্ঞান দান করেছি। তখন তাকে বলা হবে, তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি জ্ঞান অর্জন করেছো যেন তোমাকে জ্ঞানী বলা হয়। তুমি যা চেয়েছিলে তা দুনিয়াতে পেয়ে গিয়েছ। তখন আদেশ করা হবে সেই জ্ঞানীকে দোযখে ফেলে দেয়ার জন্য।



দানকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ প্রশ্ন করবেন: তুমি দুনিয়ায় কী করেছো? সে বলবে: আমি আপনার জন্য হালাল ভাবে সম্পদ অর্জন করেছিলাম ও আপনার পথে তা দান করেছি। তখন তাকে বলা হবে, “ তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি সম্পদ দান করেছো যেন তোমাকে দানশীল বলা হয়। তুমি যা চেয়েছিলে তা দুনিয়াতে পেয়ে গিয়েছ ”। তখন আদেশ করা হবে সেই দানশীল ব্যক্তিকে দোযখে ফেলে দেয়ার জন্য।



মুজাহিদকে প্রশ্ন করা হবে: তুমি দুনিয়ায় কী করেছিলে? সে বলবে: আমি আপনার জন্য মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত লড়াই করেছিলাম। তাকে বলা হবে, “ তুমি মিথ্যাবাদী। তুমি এজন্য লড়াই করেছো যেন তোমাকে বীর যোদ্ধা বলা হয় ও তাই হয়েছে। তুমি দুনিয়াতেই তোমার পুরস্কারপেয়ে গিয়েছ ”। এরপর তাকে দোযখে ফেলে দেয়ার আদেশ হবে।



আল – নওয়ারী রঃ বলেন: লোক দেখানো কাজ করা মানা, ও তা করলে যে কঠিন শাস্তি পেতে হব, রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এই হাদিস তার একটি প্রমাণ। কোন কাজের জন্য সঠিক নিয়্যত থাকার বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন: তাদেরকে এছাড়া কোন আদেশ দেয়া হয় নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে ( সূরা বায়্যিনাহ; ৯৮: ৫ )। এটা আরো বোঝায় যে জিহাদ, জ্ঞান চর্চা, দান - এসবের মর্যাদা ও প্রতিদান সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তা তাদের জন্যই প্রযোজ্য যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এসব করবে।




উপরে উল্লেখিত হাদীস প্রশ্নাতীতভাবে বুঝিয়ে দেয় যে একজন শিক্ষার্থী অবশ্যই তার জ্ঞানচর্চার সময় নিয়্যত পরিশুদ্ধ করবে । সে এভাবে নিয়্যত করবে যে তার জ্ঞানের অন্বেষণ আল্লাহ ছাড়া অন্য আর কারো জন্য নয় ; সে আল্লাহর সন্ত্তষ্টির জন্য ও আল্লাহর কাছ থেকেই পুরস্কার লাভের আশায় জ্ঞান অর্জন করবে। অন্যদের কাছে সম্মানিত হওয়ার আশায় সে জ্ঞানচর্চা করবে না যেমনটি রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে জ্ঞান অর্জন করতে চায় বিদ্বানদের সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য , অজ্ঞদের থেকে নিজেকে সেরা হিসাবে প্রমাণ করার জন্য অথবা লোকে যেন তার দিকে সম্মানের চোখে তাকায় , তাহলে তার জায়গা আগুনে অর্থাৎ সে জাহান্নামী। আল আবানি র: সহীহ ইবনে মাজাহ , মিশকাত আল মাসাবীহ ও আত তালিক আর রাগিব বইগুলিতে এই হাদীসকে সহীহ বলেছেন ।

 
:sl:




২ . শরীয়াহ বিরোধী সবকিছু থেকে মন ও আচরণকে শুদ্ধ করতে হবে



জ্ঞান অর্জনের পথে যে ছাত্র, সে নিজেকে শুদ্ধ রাখবে সব বিদআত থেকে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাহ, জীবনের সব ক্ষেত্রে সে প্রয়োগ করবে ও উযু বজায় রেখে সাধ্যমত দেহ ও পোশাক পবিত্র রাখবে।

আবদুল মালিক আল মায়মুনি বলেন: ইমাম আহমেদ বিন হাম্বল (রঃ)এর চেয়ে আর কাউকে আমি এত পরিষ্কার কাপড় পরতে, গোঁফ ছাটাতে মনোযোগী, চুল – দাড়ি পরিপাটি রাখা ও ধবধবে সাদা – পাক কাপড় পরতে দেখি নি ( বর্ণনায় ইবনে আবু হাতিম )।

আহমেদ বিন হাম্বল রঃ এর সব কাজ ছিল সুন্নাহ অনুসারে যেমনটি তিনি বলেন: আমি কখনোই এমন কোন হাদিস লিখিনি যা আমি নিজে আমল করিনি। একবার আমি জানতে পারলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন ( গা থেকে দুষিত রক্ত বের করে দেয়া ) ও এক দিনার মজুরী দিয়েছিলেন। সেজন্য আমিও শিঙ্গা লাগাই ও যে এটা করে তাকে এক দিনার দেই।

পরিষ্কার কাপড় পরা নিয়ে কেউ যেন ভুল ধারণা না রাখে ও এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে বরং একজন এর চেয়ে কিছুটা কম করবে ; এটা বিবেচনায় রাখতে হবে যে রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘ বাদহাদা ’ আসে ঈমান থেকে। ইবনে আল আতহীর (রঃ) বলেন: বাদহাদা হলো সাদাসিধা ভাবে মানুষের সামনে হাজির হওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝিয়েছেন, পোশাকের মধ্য দিয়ে একজন বিনয় প্রকাশ করবে - অহংকার নয়।


আবু আবদুল্লাহ আল বুসিনজী বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বলেছেন - বাদহাদা আসে ঈমান থেকে, সেটা হলো সেই বিনয় যা একজন তার পোশাকের মধ্য দিয়ে প্রদর্শন করেন। এটা হলো নম্রতা যা দামী, চটকদার কাপড় পরা থেকে মুক্ত থাকতে পারলে প্রকাশ পায়।

আল খাতীব رضي الله عنهم বলেন: শিক্ষার্থী অবশ্যই হাসি- তামাশা, অর্থহীন ও নীচু শ্রেণীর কথাবার্তা যেমন অপরিপক্ক কথা, অট্টহাসি, ফিকফিক করে হাসা ও অতিরিক্ত কৌতুক থেকে দূরে থাকবে। মাঝেমাঝে অল্প হাসার অনুমতি তার আছে – সেটা এমন হবে যেন জ্ঞানের সন্ধানে যে আছে, তার আদবের সীমা না ছাড়ায়।

সবসময় কেউ যদি জ্ঞানের ছাত্রের উপযুক্ত না এমন সব কথা বলে ও অপরিপক্ক ও ছেলেমানুষী আচরণ, বেশি বেশি হাসি – তামাশা করে, তবে তা তার প্রতি অন্যের শ্রদ্ধাবোধ কমিয়ে দেবে ও সেটা তার ব্যক্তিত্বের জন্য ক্ষতিকর।

মালেক রঃ বলেন: ছাত্ররা স্থিরতা, বিনয় ও প্রশান্তভাবের অধিকারী হবে ও তার আগে যে আলিমগণ চলে গেছেন, তাদের সে অনুসরণ করবে। সাইয়্যিদ বিন আমীর বলেন, আমরা হিসাম – আদ – দাসতাওয়াই এর সাথে ছিলাম। আমাদের মধ্যে একজন জোরে হেসে উঠলে হিসাম বললেন: তুমি হাসছো যখন তুমি হাদীস নিয়ে পড়ছো? ( বর্ণনায় মুহাম্মদ বিন আল হুসাইন )।

একজন ছাত্র হিসামের সামনে হেসে উঠলে তিনি বলেন: হে তরুণ; তুমি জ্ঞানের সন্ধান করছো আর হাসছো? ছেলেটি উত্তর দিল: আল্লাহই কি আমাদের কাঁদান ও হাসান না? হিসাম বললেন, তাহলে তুমি কাঁদো (তরুণটি সূরা নাজমের ৪৩ নং আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়েছিল; বর্ণনায় আবদুর রহমান বিন মাহদী। )

বাহ্যিক পবিত্রতা অর্জন করার জন্য সব মুসলমানের উচিত সুন্নাহ মেনে চলা যেমন দেহ পাক্ রাখা, পরিষ্কার কাপড় পরা, মানুষের সামনে যথাযথভাবে হাজির হওয়া। বিশেষত যারা ছাত্র, তাদের জন্য এসব পালন করা অবশ্য কর্তব্য কেননা তারা তাদের জ্ঞান দিয়ে ভাল কাজের প্রতি উৎসাহিত হবে, এটাই স্বাভাবিক।




রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার মধ্যে অণু পরিমাণ কিবর আছে, সে বেহেশতে যাবে না ( বর্ণনায় মুসলিম; সূত্র আবদুল্লাহ বিন মাসউদ )। একজন এটা শুনে বললো, অনেকে এটা পছন্দ করে যে তার কাপড় ,জুতা দেখতে সুন্দর হোক। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন, অবশ্যই আল্লাহ সুন্দর ও তিনি সুন্দরকে ভালবাসেন। কিবর হলো সত্যকে অস্বীকার করা ও মানুষকে তুচ্ছ করা ( সহীহ মুসলিম )।

রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্দর সুগন্ধী ভালবাসতেন ও নিয়মিত সুগন্ধী ব্যবহার করতেন। আবু মুসা বিন আনাস বিন মালিকের পিতা জানান , রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সুককাহ ছিল ও তিনি তা ব্যবহার করতেন। আল আলবানি বলেন: সুককাহ হলো কালো মৃগনাভি; সময়ের সাথে সাথে এর সুগন্ধ বাড়ে। এর আরেকটি মানে হতে পারে মৃগনাভি রাখার পাত্র, এটাই মনে হয় সঠিক ( বর্ণনায় দাউদ, মুসলিম)।



রাসূল ﷺ দূর্গন্ধ অপছন্দ করতেন ও তা থেকে ফিরে যেতেন। যেমন আবু সাঈদ আল খুদরী رضي الله عنهم বলেন, যখন খায়বার জয় করা হলো তখন আমরা কয়েকজন সাহাবী ক্ষুধার্ত ছিলাম। তাই রসুন গাছের কাছে গিয়ে প্রচুর রসুন খাই যতক্ষণ না মন সন্তুষ্ট হয়। এরপর মসজিদে যাই। রাসূল ﷺ গন্ধ পেয়ে বললেন: যে এরকম বাজে গন্ধযুক্ত কিছু খায়, সে মসজিদে আসবে না। সবাই বলা শুরু করলো, রসুন হারাম হয়ে গিয়েছে।। রাসূল ﷺ এটা জানতে পেরে বললেন: হে মানুষ; আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা আমি হারাম করতে পারি না। তবে রসুনের গন্ধ আমি অপছন্দ করি ( বর্ণনায় মুসলিম )।



রাসূল ﷺ বলেন, যে রসুন, পেয়াজ ও পেয়াজের তরকারী খায়, সে ( ওসব খেয়ে ) মসজিদে আসবে না। কেননা, মানুষের মতো ফিরিশতারাও এসব গন্ধে কষ্ট পায় ( বর্ণনায় জাবির رضي الله عنهم )।

রাসূল ﷺ বলেছিলেন, মুসলমানরা চল্লিশ দিনের বেশি গোঁফ না ছেটে, নখ, চুল, বগলের লোম না কেটে থাকবে না। আনাস বিন মালিক رضي الله عنهم বলেন, রাসূল ﷺ গোঁফ ছাটার জন্য ও নখ ও বগলের লোম কাটা ও যে চুল দেখা যায় না তা কাটতে ৪০ দিনের সময়সীমা দিয়েছিলেন। আন নাওয়ায়ী (রহঃ)বলেন: এর মানে ৪০ দিনের বেশি না কেটে এসব রাখা যাবে না; আবার এর মানে এই না ৪০ দিন পর্যন্ত রাখতেই হবে ( সহীহ মুসলিম )।



রাসুল ﷺ আরো উৎসাহ দিয়েছেন মিসওয়াক ব্যবহার করতে। তিনি বলেছেন, যদি আমি এই ভয় না পেতাম যে উম্মাতের জন্য এটা খুব কঠিন হবে, তাহলে প্রত্যেক সালাতের আগে মিসওয়াক ব্যবহার করতে আদেশ দিতাম ( বর্ণনায় আবু হুরায়রা رضي الله عنهم, বুখারী ও মুসলিম)। তাই এসব পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে ছাত্ররা সতর্ক থাকবে।

রাসুল ﷺ এর সুন্নাহ মেনে এসব পালন করতে হবে ও দৃঢ়ভাবে একে ধরে রাখতে হবে। যারা জ্ঞানের ছাত্র, তাদেরকেই বেশি করে এসব ব্যপারে দৃষ্টি রাখতে হবে; কেননা তারা রাসুল ﷺ এর ওয়ারিস। এটাই স্বাভাবিক যে তারাই রাসুল ﷺ কে বেশি মেনে চলবে ও তাঁর দেখানো আদর্শে পথ চলবে।



অন্তরের পবিত্রতার জন্য জ্ঞানের ছাত্ররা অবশ্যই নিজের আত্মাকে শুদ্ধ করবে অপছন্দীয় ও নিন্দনীয় স্বভাব থেকে। যেহেতু জ্ঞান হলো মনের ইবাদত, গোপন প্রার্থনা ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়। বাহ্যিক অঙ্গগুলির উপাসনা গ্রহণযোগ্য হয় না, যদি তা বাহ্যিক অপবিত্রতা থেকে মুক্ত না হয়। আত্মিক উপাসনাও তেমনি কবুল হয় না যতক্ষণ না একজন নিজেকে পবিত্র করছে অপবিত্র আচরণ ও স্বভাব থেকে।


আল্লাহ বলেন: অবশ্যই মুশরিকরা অপবিত্র ( সূরা তওবা; ৯: ২৮ )। এই আয়াত দেখায় যে পবিত্রতা শুধু বাইরের দিকেই সীমিত না যা ইন্দ্রিয়গুলি দিয়ে অনূভব করা যায়; যেহেতু অবিশ্বাসীরা গোসল করে পরিষ্কার কাপড় পরে বাইরের দিক পবিত্র রাখতে পারে কিন্তু তার আত্মিক দিক নোংরা ও অপবিত্র। অন্যভাবে বলা যায়, তার অন্তর নাপাকীতে ভরা।



নাজাশাহ ( অপবিত্রতা ) একটি পরিভাষা যা ব্যবহৃত হয় যা থেকে দূরে থাকতে হবে ও যেটা থেকে ফিরে আসতে হবে। মনের নাপাকী সবচেয়ে গূরুত্বপূর্ণ অপবিত্রতা যা থেকে একজন দূরে থাকতে চাইবে। কারন এখন যদিও এটা শুধুই অপবিত্রতা, পরে স্বাভাবিকভাবেই এর এমন বিকাশ হবে যা তোমাকে ধ্বংস করবে।
 
:sl:




একবার জিবরাইল আলাইহিস সালাম রাসুল ﷺ এর সাথে দেখা করার কথা দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আসতে দেরী করলেন। ফলে রাসুল ﷺ বিচলিত হলেন। পরে জিবরাইল আলাইহিস সালাম অভিযোগ করে বললেন, আমরা এমন ঘরে ঢুকি না যেখানে ছবি বা কুকুর আছে ( সহীহ বুখারী; বর্ণনায় ইবনে উমর رضي الله عنهم )।



আবু হামিদ আল গাযযালী رضي الله عنهم বলেন: মনও হলো বাসা। এই বাসা হলো ফিরিশতাদের যেখানে তারা নেমে আসে ও বাস করে। নিন্দনীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যেমন রাগ, লোভ, মিথ্যা বলা, হিংসা, উদ্ধত ভাব, আত্মপ্রশংসা ইত্যাদি হলো ঘেউ ঘেউ করা কুকুরের মতো। তাই কিভাবে ফেরেশতা এমন জায়গায় ঢুকবে?


ইবনে জামাহ رضي الله عنه বলেন: জ্ঞানের পথের ছাত্র তার মনকে নৈতিক ত্রুটি, প্রতারণা, হিংসা ও খারাপ স্বভাব থেকে মুক্ত রাখবে যাতে সে জ্ঞান অর্জন করতে পারে, তা মনে রাখতে পারে, কোন বিষয়ের বিস্তারিত অর্থ ও জ্ঞানের গোপন সম্পদ আবিষ্কার করতে পারে।


অনেকে যেমনটি বলেন - জ্ঞান হলো গোপন ইবাদত, মনের উপাসনা ও আল্লাহকে কাছে পাবার আত্মিক উপায়। নোংরা ও নাপাকী থেকে মুক্ত না হলে বাহ্যিক ইন্দ্রিয়সমূহের ইবাদত কবুল হয় না; তেমনি মনের ইবাদত জ্ঞান অর্জন করা সহজ হবে না যদি সে নীচু, ঘৃণ্য স্বভাব ও আচরণ থেকে মুক্ত না হয়। যদি তুমি তোমার মনকে জ্ঞানের জন্য পরিষ্কার রাখো, এর কল্যাণ স্পষ্ট বোঝা যাবে - ঠিক যেমন এক টুকরো জমি চাষের পর ফলনশীল হয়। হাদীসে বলা হয়েছে: অবশ্যই দেহের মধ্যে এক টুকরা মাংস আছে। যদি সেটা ভাল থাকে, তবে বাকী শরীর ভাল থাকবে। যদি এটা নষ্ট হয়, তবে বাকী দেহ নষ্ট হবে। অবশ্যই এটা হলো মন বা অন্তর ( ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম ও ইবনে হিববানের বর্ণিত একটি বড় হাদীসের অংশ এটি )।


কোন আলোর জন্য এমন মনের ভিতরে ঢোকা নিষেধ, যেখানে সর্বশক্তিমান ও মহিমান্বিত আল্লাহ যা ঘৃণা করেন তা থাকে। ইবনে আল কাইয়্যিম র: বলেন: পাপ এই দুনিয়ায় দেহ - মনে কুৎসিত, নিন্দনীয় ও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে; আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না এসবের প্রভাব পরকালে কী হবে। যার উপর এই প্রভাব পড়ে, সে জ্ঞান অর্জন করতে পারে না; কেননা জ্ঞান হলো এমন এক আলো যা আল্লাহ মনের ভিতরে রেখে দেন ও পাপ তা বের করে দেয়।



যখন আশ শাফেয়ী রঃ পড়ে শোনাবার জন্য ইমাম মালেক রঃ এর সামনে বসেন, তখন শাফেয়ীর বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান, বোঝা ও উপলব্ধি করার ক্ষমতা দেখে ইমাম রঃ অভিভূত হোন। তিনি বলেন: আমি দেখতে পাচ্ছি তোমার মনের ভিতরে আল্লাহ আলো দিয়েছেন। তাই পাপের অন্ধকার দিয়ে এই আলো মন থেকে বের করে দিও না।ইমাম শাফীয়ি রঃ বলেন, আমি ওয়াকির কাছে মনে রাখার ব্যাপারে আমার দুর্বলতা নিয়ে অভিযোগ করলাম। তিনি উপদেশ দেন পাপ ত্যাগ করতে এবং বলেন: জেনে রাখো - জ্ঞান হলো রহমত ও আল্লাহর রহমত পাপীদের কাছে পৌঁছায় না ( বর্ণনায় ইবনে আল জাওরী র.।



আবু আবদুল্লাহ বিন আল জালা বলেন: আমি এক খ্রিষ্টান বালকের দিকে তাকিয়ে ছিলাম যার চেহারা ছিল খুব সুন্দর। আবু আবদুল্লাহ আল বালখী আমাকে বললেন: তোমার কী হয়েছে? আমি বললাম: চাচা, আপনি কি এই সুন্দর চেহারা দেখছেন না? এত সুন্দর মুখ কিভাবে আগুনে শাস্তি পাবে? তিনি আমার বুকে ধাক্কা দিয়ে বললেন, তোমার এই কাজের পরিণাম একদিন তুমি পাবেই। এই ঘটনার চল্লিশ বছর পর শাস্তিটা পেলাম , আমি কুরআন ভুলে গেলাম।

আবু আল আদিয়ান বলেন: আমি আমার শিক্ষক আবু বকর আদ দাককারের সাথে ছিলাম। সেখানে এমন একটা কিছু ঘটলো যা ঠিক ছিল না , আমি তা তাকিয়ে দেখলাম। তিনি এটা খেয়াল করে বললেন: বৎস, এই তাকানোর পরিণাম তুমি ভোগ করবে, যদিও তা অনেক পরে হয়। বিশ বছর পার হয়ে গেল অপেক্ষায় – খারাপ কিছু ঘটলো না। এক রাতে আমি এ নিয়ে চিন্তা করে ঘুমাতে গেলাম। জেগে উঠে বুঝলাম আমি পুরো কুরআন ভুলে গিয়েছি।

আবু হামিদ رضي الله عنهم বলেন, যদি তুমি বলতে চাও - কিন্তু আমি তো এমন অনেক ছাত্র দেখেছি যাদের আদব ভাল না কিন্তু তারা যথেষ্ট জ্ঞানী - এই দুইয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য। এই ছাত্র প্রকৃত, দরকারী জ্ঞান যা তাকে পরকালে কল্যাণ ও সুখ এনে দেবে - তার থেকে অনেক দূরে রয়েছে। জ্ঞান অর্জনের প্রথম ধাপ থেকে তার কাছে এটা স্পষ্ট যে পাপ হলো প্রাণঘাতি ও ধ্বংসাত্মক বিষ। তুমি কি এমন কাউকে কখনো দেখেছ যে প্রাণঘাতি বিষের স্পর্শে আসতে চাচ্ছে? এটা জেনেও যে তা বিষ ? তুমি যা দেখেছো তা হলো তারা বানিয়ে বানিয়ে কথা বলছে যা তাদের মন অস্বীকার করছে; আর একে কোন ভাবেই জ্ঞান বলে না।

ইবনে মাসউদ رضي الله عنهم বলেন: জ্ঞান কোন ধারাবাহিক বর্ণনা না, বরং এটা আলো যা মনের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। অনেকে বলেন - জ্ঞান হলো ভয় যেমনটি আল্লাহ বলেন: অবশ্যই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী, তারাই তাঁকে ভয় করে
( সূরা ফাতির; ৩৫: ২৮ )। কেউ কেউ এ নিয়ে বলেন: আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য জ্ঞানের সন্ধান করেছিলাম। আর জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য হতে চায় নি। তাই জ্ঞান আমাদের থেকে চলে গেল ও তার আসল পরিচয় আমাদের কাছে প্রকাশ করলো না।

তাই তুমি যদি বলো, আমি একদল জ্ঞানী ও বিচারকদের দেখেছি যারা খুবই মেধাবী ও জ্ঞানীদের মধ্যে যাদেরকে সবচেয়ে সফল বিবেচনা করা হয় কিন্তু নিন্দনীয় আচরণ থেকে তারা মুক্ত নয়; তবে আমরা বলবো: যদি তুমি প্রকৃত জ্ঞান কী তা বুঝতে পারো ও পরকাল সম্পর্কে জানতে পারো, তাহলে তোমার কাছে এটা স্পষ্ট হবে যে তাদের মনকে যা আচ্ছন্ন করে রেখেছে, তা কোন কল্যাণকর জ্ঞান নয়। বরং সেটাই প্রকৃত কল্যাণকর জ্ঞান যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য,মহিমান্বিত আল্লাহর জন্য আমল করা হয়।


মনের পবিত্রতা ও দেহের অঙ্গের শরীয়াহ আইনের প্রতি সমর্পণকে ঘিরে এসব কিছু আবর্তিত হয়। তাই শিক্ষার্থীকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে আত্মিক ও বাহ্যিক দুই অবস্থার দিকেই যা হবে সুন্নাতপন্থী; যাতে আল্লাহ তার জন্য জ্ঞানের আলো ও সম্পদ উন্মুক্ত করে দেন। এসব হলো আল্লাহর অকৃপণ দান যা তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দেন ও আল্লাহ হলেন অফুরন্ত দানের মালিক।


 
:sl:




৩ .জ্ঞানের দিকে পুরো মনোযোগ দিতে হবে ও সব বাধা দূর করতে হবে

ইবনে আল কাইয়্যিম رضي الله عنهم বলেন: তুমি কী পাচ্ছো তা নির্ভর করে অভ্যাস ত্যাগ ও অন্য কিছুর সাথে একাত্ম হওয়ার উপর।

কিছু নিয়ম চালু আছে যাতে মানুষ অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছে ও এসব রীতিকে শরীয়াহর স্তরে বসিয়েছে বরং কিছু ক্ষেত্রে এসব রীতিকে শরীয়াহ থেকে বেশি সম্মান দেয়া হয়। যারা এসব মানতে চান না, তাদেরকে কঠোরভাবে তিরস্কার করা হয়; এমনো হয় এদেরকে কাফির, বেদাআত সৃষ্টিকারী বা পথভ্রষ্ট বলা হয়। প্রচলিত এসব নিয়মের জন্য এরা রাসুল ﷺ এর নিয়মকে ধ্বংস করে ফেলে ও নিজেদের নিয়মকে রাসুল ﷺ এর অংশীদার বানায়।

এদের কাছে সেটাই ভাল যা তাদের নিয়ম মেনে চলে ও তাই খারাপ যা এসবের বিরোধী। এসব অভ্যাস ও রীতিকে আদমের সন্তানদের বিভিন্ন দল গ্রহণ করেছে যেমন রাজা, নেতা, বিচারক, সুফি, বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ মানুষ। একদম ছোট থাকতেই একজনকে এসব শেখানো হয়; বৃদ্ধরা এসব শিখেই বড় হয়েছে - এসব রীতিকে সুন্নাহ হিসাবে পালন করা হয়। বরং যারা এসব পালন করে, তারা এসব অভ্যাসকে সুন্নতের থেকেও বেশি গুরুত্ব দেয়। যে এসব প্রচলিত অভ্যাস দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়, সে আসলে খুবই হতভাগ্য - এর শেষ ঘটে কুরআন ও সুন্নাহ ত্যাগ করার মধ্য দিয়ে।

আল্লাহর পথে যাওয়ার সময় শরীয়াহ বিরোধী বাহ্যিক ও আত্মিক নানা বাধা মনের ক্ষতি করে। এসব তিনটি বাধা হলো: শিরক, বেদাত ও পাপ। শিরকের বাধা দূর করার জন্য তাওহীদকে অবলম্বন করতে হবে। বেদআতের বাধা দূর করতে সুন্নাহ মেনে চলতে হবে; প্রকৃত তওবার মধ্য দিয়ে পাপের বাধা সরাতে হবে।

আল্লাহ ও পরকালের পথে বান্দা যাত্রা শুরু না করা পর্যন্ত এসব বাধা তার কাছে স্পষ্ট হয় না। বাধাগুলি লক্ষ্য করার পরে সে বুঝতে পারে কিভাবে এসব তাকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছিল। আল্লাহর পথে রওনা না হলে সে ওভাবেই থেকে যাবে, এসব বাধার গোপন প্রভাব বুঝতে পারবে না।
এই তিনটি বাধা থেকে দূরে যাওয়ার জন্য যে শক্তি দরকার, তার জন্য উচ্চতর লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। তা না হলে এসবের সাথে সম্পর্ক শেষ করা সম্ভব না। মন এমন কিছু ছাড়তে চায় না, যা সে পছন্দ করে। ব্যতিক্রম হলো যা ত্যাগ করা হচ্ছে তার বদলে আরো বেশি পছন্দের ও গূরুত্বপূর্ণ কিছু যদি পাওয়া যায়। যা সে চায় তার সাথে সম্পর্ক যত দৃঢ় হবে, অন্য কিছুর সাথে সম্পর্ক তত দূর্বল হবে।

ইবনে আল কাইয়্যিম رضي الله عنهم বলেন, লক্ষ্যে যেতে হলে দরকার বাজে অভ্যাসগুলি বাদ দেয়া ; অন্যান্য কিছুর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা ও অন্য বাধাগুলি পার হওয়া। এসব নির্ভর করবে বৃহত্তর লক্ষ্যের সাথে আপনার সম্পর্ক কতটুকু শক্তিশালী তার উপর। লক্ষ্যের প্রতি আপনার ইচ্ছা যত প্রবল হবে, সেটার জন্য কোন কিছু ত্যাগ করা তত সহজ হবে। আপনার মনে হবে আপনি যা চান তা যেন পেয়ে গিয়েছেন।

লক্ষ্যস্থলে যাওয়াটা মনে হবে অল্প কিছুদিনের ব্যাপার, ত্যাগ যা করতে হবে তা খুবই সামান্য।
বদঅভ্যাসগুলি হলো মরিচীকার মতো যেমনটি আল ইমাম আহমদ র: বলেন: যদি কেউ মৃত্যুর কথা ভাবে, তবে এই দুনিয়ার সবকিছুই গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।

যে জ্ঞানের চর্চাকারী, তার আকাঙ্খা থাকবে মৃত্যুর পরের জীবন ও আল্লাহর জন্য। সেজন্য এই লক্ষ্যস্থলের জন্য প্রবল একাত্মতা তার মনে থাকতে হবে। এই দুনিয়ার ভোগ বিলাস ও চাকচিক্য থেকে দূরে থাকার মতো ব্যস্ততার জন্য জ্ঞানচর্চা যথেষ্ট আর বাকী দিন যা আছে তা খুবই অল্প।

আল আশহাত আবু আর- রাবি বর্ণনা করেন: সুহবাহ তাঁকে বলেন , তুমি তোমার ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলে ও তুমি হয়েছো ধনী ও সফল। আমি হাদীসের সাথে ছিলাম ও হয়েছি গরীব। সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ বলেন, সুববাহ বলেছেন: যে হাদীস নিয়ে পড়াশোনা করবে, সে গরীব হবে। আমি এতটাই গরীব হয়ে পড়ি যে আমার মায়ের একটি পট সাত দিনারে বিক্রি করি।
 
:sl:




আয যুবায়ের বিন আবু বকর বলেন: আমাকে নিয়ে আমার ভাতিজি বলে, আমাদের পরিবারে চাচা তার স্ত্রীর সাথে সবচেয়ে ভাল ব্যবহার করেন। চাচা দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করেন নি বা দাসী কেনেন নি। আমি বললাম: আমার স্ত্রী বলেন, এসব বই থেকে তিন সতীন তার জন্য কম যন্ত্রণাদায়ক হতো।

আবু তাহান বলেন: সুহবাহ তার নিজের অবস্থার বর্ণনা করেছেন ও যারা হাদীসের ছাত্র তাদেরকে উপদেশ দিয়েছেন। যারা হাদীস চর্চা করে তাদের সময় এর পিছনেই চলে যায়; তাই তারা নিজের ও পরিবারের জন্য আয় করতে পারে না। ফলে তারা অন্যের উপর বোঝা হয়ে যায় - এটা সহীহ হাদীসে যা আদেশ করা হয়েছে তার বিরোধী।

সুববাহের কথা থেকে এই মানে করা ঠিক হবে না যে, বেশি অর্থ রোজগার করতে না পারায় তিনি দু:খ পেতেন। তিনি ছিলেন মহৎ ও নির্লোভ চরিত্রের অধিকারী - এতটাই তিনি নির্লোভ ছিলেন যে একবার আল – মাহদী তাকে ত্রিশ হাজার দিরহাম উপহার দিলে সুহহাব সাথেসাথে তা গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। তার কথা থেকে এটাও মনে করা ঠিক হবে না যে, তিনি মানুষকে হাদীস চর্চা থেকে বিরত থাকতে বলতেন। বরং তিনি হাদীস চর্চার পাশাপাশি জীবিকা অর্জনের জন্য ছাত্রদের উৎসাহ দিতেন।



সুফিয়ান বিন উয়াহনাহ বলেন: এসব কালির পাত্র যে মানুষের ঘরে ঢুকে, তার স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য জীবন কঠিন হয়ে যায়। আত - তাহহান বলেন: কালির পাত্র বলতে এখানে হাদীসের চর্চাকারীরা যে কালি তাদের সাথে রাখেন যেন যখন যে হাদীস তারা শুনতে পান, তা লিখে রাখতে পারেন সেটা বোঝানো হয়েছে।

সুফিয়ান সওরী র: বুঝিয়েছেন হাদীসের ছাত্রদের বেশিরভাগই লেখা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকেন যে পরিবারের জন্য আয় করতে পারেন না। ফলে তাদের স্ত্রী ও সন্তানরা অভাবের মধ্যে থাকে। কালির পাত্র নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্যই এদের এই কঠিন অবস্থা।
 
:sl:



ইবনে জামাহ বলেন: ছাত্ররা জ্ঞানের পথে তাদের তারুণ্য ও সময়কে যতটুকু সম্ভব কাজে লাগাবে। কালকের জন্য আজকের পড়া ফেলে রাখতে তারা যেন প্ররোচিত না হয়। প্রতিটি ঘন্টা যা তাদের জীবন থেকে চলে যাচ্ছে তা খুবই মূল্যবান ও তা আর ফিরে পাওয়া যাবে না। জ্ঞান অর্জনের পথে যে সব বাধা আছে ও যা তার মনোযোগ নষ্ট করে, সে সবের সাথে সম্পর্ক সাধ্যমতো শেষ করতে হবে। এর বদলে তার শক্তি ও সামর্থ্যকে জ্ঞান অর্জনের পথে কাজে লাগাতে হবে।

এজন্যই যারা সালাফ তারা পরিবার ও দেশ থেকে দূরে চলে যেতে পছন্দ করতেন। কেননা, যদি কারো চিন্তা - ভাবনা অনেক কিছুকে ঘিরে হয়, তাহলে সে জ্ঞানকে আবিষ্কার করতে পারবে না - আল্লাহ মানুষের মনে দুইটি অন্তর দেন নি। [ অনুবাদকের ব্যাখ্যা: একটি মন জ্ঞান চর্চা করবে, অন্যটি সংসার চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে, এমনটি সম্ভব নয় ]।

আল খাতীব আল বাগদাদী র: বলেন: জ্ঞান তখনই একজনের হয় , যখন সে তার কারখানা বন্ধ করে , বাগান ধ্বংস করে , বন্ধুদের ত্যাগ করে ও পরিবারের সব সদস্য মারা গিয়েছে বলে তাকে আর কারো জানাযায় যেতে হয় না। হয়তো একটু বেশি বলা হয়ে গিয়েছে - এখানে মূল কথা হলো জ্ঞানের জন্য একজন তার সব চিন্তা ও মনোযোগকে কাজে লাগাবে। অন্যকিছুর সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করা মানে তার উপর যারা নির্ভর করে, তাদের প্রতি দায়িত্বে অবহেলা করা বা আয় না করে অন্যের করুণার উপর নির্ভর করা - যারা হয়তো সাহায্য করবে বা করবে না - তা নয়।

আশ শাফেয়ী র: বলেন: যার বাসায় খাবার নেই , তার সাথে পরামর্শ করবে না ; কেননা সে যুক্তিহীন মানুষ। জ্ঞানের পথে মনোযোগ নষ্ট করে এমন বিষয়ের সাথে সম্পর্ক না রাখার মানে যা করার দরকার নেই, তাতে সে নিজেকে ব্যস্ত রাখবে না। আয় করা ও মন এবং শক্তিকে জ্ঞান চর্চায় ব্যবহারে ভারসাম্য রাখতে হবে। আবু ইউসুফ আল কাজী বলেন: জ্ঞান তোমাকে তার এতটুকুও দেবে না যতক্ষণ না তুমি তাকে তোমার পুরোপুরি দিচ্ছ।




আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন: সেরা দিনার হলো সেটি যা একজন তার পরিবারের জন্য, আল্লাহর পথে পশু ও সাথীদের পিছনে খরচ করে ( বর্ণনায় সাওবান )। হাদীস বর্ণনাকারী আবু কিলাবাহ (রহঃ) বলেন: রাসূল ﷺ পরিবারের কথা আগে বলেছেন। তার চেয়ে বড় পুরস্কারআর কে পাবে, যে তার সন্তানদের জন্য খরচ করে ও তাদেরকে সুরক্ষা দেয়? রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেন: আল্লাহর পথে তুমি যা খরচ করো যেমন দাস মুক্তি, গরীবকে দান করা ও পরিবারের ভরণপোষণ, এসবের মধ্যে সবচেয়ে বড় পুরস্কারপাবে যা তুমি পরিবারের জন্য খরচ করলে ( বর্ণনায় আবু হুরায়রা র: )।


খায়তামাহ বলেন, আমরা একদিন আবদুল্লাহ বিন উমরের রা: সাথে ছিলাম। তার কোষাগারের কর্মচারী সেখানে আসলে তিনি জানতে চান - দাসদের খাবার দিয়েছ? নাসূচক উত্তর শুনে তিনি বললেন, যাও, ওদের খেতে দাও। রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন: পাপের জন্য এটাই যথেষ্ট যে একজন তার অধীনে যারা আছে তাদেরকে সময়মতো খেতে দেয় নি ( সহীহ মুসলিম )।

 
:sl:



সুফিয়ান আস সাওরীর র: কাছে কেউ জ্ঞান অর্জনের জন্য আসলে তিনি তাকে প্রশ্ন করতেন: তোমার কি কোন রোজগার আছে? যদি নিজের খরচ চালানোর মতো ক্ষমতা তার থাকতো, তবেই তিনি তাকে অনুমতি দিতেন তার কাছে শিক্ষা গ্রহণের। তা না হলে বলতেন, যাও, আগে কিছু রোজগার করো।

এই আলোকে আমরা সালাফদের কথা এভাবে ব্যাখ্যা করবো যে, তারা বেঁচে থাকার জন্য কমপক্ষে যতটুকু দরকার ঠিক সেটাই নিজের ও পরিবারের জন্য চাইতেন। ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে দুনিয়াদারির অনর্থক কাজে তারা ব্যস্ত হতেন না। ও সব প্রলোভন থেকে মুক্ত থাকতেন। সালাফরা জ্ঞানকে এতই ভালবাসতেন যে, সেটা তাদের দুনিয়ার জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। এ নিয়ে আবু হুরায়রা رضي الله عنهم বলেন, তোমরা বলো আমি রাসূল صلى الله عليه وسلم এর কাছ থেকে শোনা কথা অনেক বেশি বর্ণনা করেছি। তোমরা জানতে চাও কেন মুহাজির ও আনসাররা আমার মতো এত বেশি হাদীস বর্ণনা করে নি?


আমার মুহাজির ভাইয়েরা বাজারে তাদের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো আর আমি রাসুল صلى الله عليه وسلم এর কাছে থাকতাম; আর তারা যা মুখস্থ করতো না, আমি তা মুখস্থ করতাম। এ সময় যা খেতে পেতাম তাতেই আমি খুশি থাকতাম।

আমার আনসার ভাইয়েরা তাদের সম্পদ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো আর আমি আস – শুফফার এক গরীব মানুষ সেই হাদীস মুখস্থ করতাম যা তারা ভুলে যেত। রাসুল صلى الله عليه وسلم বলেছিলেন, “ আমার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যে তার কাপড় গুটিয়ে নেবে না, সে তাই মনে রাখতে পারবে যা আমি বলেছি।” তাই রাসুল صلى الله عليه وسلم এর কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি চাদর মেলে বসে থাকতাম। যখন তিনি কথা শেষ করতেন, তখন চাদর গুটিয়ে বুকে ধরতাম। তাই আমি রাসুল صلى الله عليه وسلم এর বলা কথা ভুলি নি ( বর্ণনায় ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম )।


ক্ষুধা লাগলেও খেতে না গিয়ে রাসুল صلى الله عليه وسلم এর সাথে আমি থাকতাম। ঐ সময়ে আমি ভাজা রুটি খেতাম না বা রঙিন কাপড় পরতাম না। কোন নারী , পুরুষ আমাকে খাবার বেড়ে খাওয়ায় নি; আমি পেটে পাথর বেধে রাখতাম আর কাউকে কুরআনের কোন আয়াত শুনাতে বলতাম যদিও তা আমার জানা থাকতো ( বুখারী )।

 
:sl:


ইমাম বুখারী তার বইয়ের সহীহ জ্ঞান অধ্যায়ে আবু হুরায়রার ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। লোকে বলে আবু হুরায়রা খুব বেশি হাদীস বলে। পবিত্র কুরআনে যদি এই দুইটি আয়াত না থাকতো , তবে আমি একটি হাদীসও বর্ণনা করতাম না :

মানুষের জন্য যা আমি কিতাবে বর্ণনা করি, তারপর যারা আমার নাযিল করা সুস্পষ্ট নিদর্শন ও পরিষ্কার পথনির্দেশ গোপন করে, এরাই হচ্ছে সেই লোক যাদের আল্লাহ অভিশাপ দেন, অভিশাপ দেয় অন্যান্য অভিশাপকারীগণও।

তবে যারা ফিরে আসবে ও নিজেদের শুধরে নেবে, খোলাখুলিভাবে তারা ( সে সব সত্য ) কথা প্রকাশ করবে ( যা এতদিন আহলে কিতাবরা গোপন করে এসেছিল ), তারা হবে সেই লোক যাদের উপর আমি দয়া দেখাবো, আমি পরম ক্ষমাকারী, দয়ালু ( সূরা বাকারা ; ১৫৯ : ১৬০ )।

অবশ্যই আমাদের মুহাজির ভাইয়েরা ব্যবসা ও আনসার ভাইয়েরা তাদের সম্পদ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন আর আবু হুরায়রা রাসুল صلى الله عليه وسلم এর সাথেসাথে থাকতেন। অন্যরা যাতে অংশ নিতো না, তিনি তাতে যোগ দিতেন ও অন্যরা যা মুখস্থ করতো না, তিনি তা মুখস্থ করতেন।

হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী র: বলেন, তিনি (বুখারী ) তার বইয়ের এই অধ্যায়ে আবু হুরায়রা র: ছাড়া আর কারো কথা বলেন নি। এর কারণ আবু হুরায়রা রা: সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাদীস মুখস্থ করেছেন। আশ শাফেয়ী র: বলেন: আবু হুরায়রা رضي الله عنهم তার সময়কালে সবচেয়ে বেশি বর্ণনা মুখস্থ করেছেন। আবু হুরায়রার জানাযায় দাড়িয়ে ইবনে উমর رضي الله عنهم আল্লাহর করুণা প্রার্থনা করেন এই বলে যে তিনি রাসূল صلى الله عليه وسلم এর কথা মুসলমানদের জন্য মুখস্থ করেছিলেন।

আন নাওয়ায়ী বলেন : তিনি রাসূল صلى الله عليه وسلم এর সাথে সবসময় থাকতেন ; নিজের জন্য যে জীবিকার ব্যবস্থা হতো , তিনি তাতেই সন্তুষ্ট হতেন ; টাকা জমানোর দিকে তার কোন আকর্ষণ ছিল না ( সহীহ মুসলিম )।

 
:sl:



রাসূল صلى الله عليه وسلم একবার আবু হুরায়রা রা: কে বলেছিলেন, তুমি কি আমার কাছে গণীমতের মাল নিয়ে জানতে চাইবে না যা অন্য সাহাবীরা জানতে চেয়েছে? আবু হুরায়রার জবাব ছিল, আমি আপনার কাছে তাই জানতে চাই যা আল্লাহ আপনাকে জানিয়েছেন ( বর্ণনায় ইবনে কাসির )।

আবু হুরায়রা যদিও হজরত মুহাম্মদ صلى الله عليه وسلم এর সাথে বেশিদিন থাকার সুযোগ পান নি, সাহাবীদের মধ্যে তিনিই বেশিরভাগ হাদীস মুখস্থ করে নেন। মনে করা হয় ত্রিশ বছর বয়সে তিনি ইসলাম কবুল করেন। এরপর থেকে তিনি রাসূলের صلى الله عليه وسلم ইন্তিকালের আগে পর্যন্ত তাঁর সাথে সবসময় থাকতেন। তাই মাত্র তিন বছর রাসূল صلى الله عليه وسلم এর সাথে থাকার সুযোগ পাওয়ার পরেও তিনি সবচেয়ে হাদীস মুখস্থ ও বর্ণনা করেন।

এটা সম্ভব হয়েছিল কেননা জ্ঞানের ব্যপারে তিনি ছিলেন খুবই আন্তরিক; এ বিষয়ে দুনিয়ার সব বাঁধা তিনি দূর করেছিলেন ও মনকে অন্য সব কিছু থেকে মুক্ত রেখেছিলেন।

জ্ঞানের পথে যা বাধা দেয়, তা থেকে ছাত্রদের দূরে থাকতে হবে; কেননা কারো মনোযোগ যদি এদিক - সেদিক ছড়িয়ে যায়, তবে সে জ্ঞানকে পাবে না। সালাফরা সবকিছু থেকে জ্ঞানকে বেশি গূরুত্ব দিতেন। যেমন আল ইমাম আহমদ র: চল্লিশের পরে বিয়ে করেন।


আবু বকর আল আম্বারীকে এক দাসী দেয়া হয়েছিল। সে যখন একবার আম্বারীর কাছে যায়, তখন তিনি একটি বিষয়ে রায় কী হবে তা নিয়ে ভাবছিলেন। দাসীকে ঘরে ঢুকতে দেখে তিনি বললেন, একে ফেরত পাঠাও। দাসী জানতে চাইলো তার অপরাধ কী? তিনি বললেন, তোমার জন্য আমার মনোযোগ নষ্ট হয়েছে। জ্ঞানের চেয়ে তুমি আমার কাছে মূল্যবান না।

আশ শাফেয়ী র: বলেন, কেউ ধনী ও মর্যাদাবান থাকার সময় জ্ঞানের খোঁজ করলে সে সফল হবে না; বরং যারা বিনীতভাবে কম মর্যাদার স্থানে থেকে জ্ঞানীদের সেবা দেয়, তারা সফল হবে।
মালিক বিন আনাস رضي الله عنهم বলেন, কেউ জ্ঞানের খোঁজ পাবে না যতক্ষণ না সে অভাবের মুখোমুখি হয় ও জ্ঞানকে সবকিছুর উপর গূরুত্ব দেয়।

 
:sl:

৪. কম খাও , সাবধান হও ও সবসময় আল্লাহর যিকির করো

ইবনে জামাহ বলেন : জ্ঞান অর্জনের জন্য ও জ্ঞান চর্চার সময় বিরক্তিবোধ না করার সেরা উপায় হলো খুব কম খাও ও হালাল খাবার খাও । আশ শাফেয়ী رضي الله عنهم বলেন : গত ষোল বছর ধরে আমি পেট ভরে খাই নি ।

এর কারণ হলো বেশি খেলে বেশি পানি পান করতে হয় , বেশি ঘুমাতে হয় , সব চেতনাগুলি ধীরে ধীরে তখন ভোঁতা হয়ে যায় ও দেহ অলস হয়ে যায় ।
শরীয়াহতে বেশি খাওয়া অপছন্দ করা হয়েছে । বেশি খেলে শরীরে বিভিন্ন অসুখ দেখা দেয় । বলা হয়ে থাকে , যা রোগ তুমি দেখো তার বেশিরভাগ হয় খাওয়া ও পান করা থেকে ।

কোন আলিম বা আউলিয়া সম্পর্কে এটা জানা যায় নি যে তিনি বেশি খেতেন । বেশি খাওয়া হলো বুদ্ধিহীন প্রাণীদের বৈশিষ্ট্য । একজন মানুষের বুদ্ধিমত্তা হলো তার কাজের উৎস । এটি খুবই মহান একটি গুণ যাকে ঘৃণ্য একটি বিষয় অতিরিক্ত খাওয়া দিয়ে ক্ষতি ও নষ্ট করা যেতে পারে না ।

অন্য কোন খারাপ দিক যদি নাও থাকে , বেশি খাওয়ার জন্য বেশিবার যে টয়লেটে যেতে হয় -- একজন বুদ্ধিমান মানুষের জন্য এই বদঅভ্যাস থেকে দূরে থাকতে শুধু এই কারণই যথেষ্ট । যে বেশি খাওয়া , পান করা ও বেশি ঘুমের পক্ষে , তার জন্য জ্ঞান অর্জনে সফল হওয়া অসম্ভব ।

ইবনে কুদামাহ رضي الله عنهم বলেন : খাওয়ার লোভ সবচেয়ে ক্ষতিকর ও এটাই আদম আলাইহিস সালামকে বেহেশত থেকে বের করে এনেছিল । খাওয়ার লোভ থেকে আসে শারীরিক সম্পর্ক ও সম্পদের প্রতি আকর্ষণ । এসব অনেক সমস্যার দিকে নিয়ে যায় ।
 
:sl:

উকবাহ আর রাশিবী বলেন : আমি আল হাসানের কাছে গেলাম যখন তিনি খাচ্ছিলেন । তিনি আমাকে তাঁর সাথে খেতে বললে আমি জানাই , আমি ততক্ষণ পর্যন্ত খেয়েছি যখন আর খাওয়া সম্ভব না । শুনে তিনি বলেন , “ সুবহান আল্লাহ । মুসলমানরা কি এতটা খায় যখন সে আর খেতে না পারে ”?

পরিমিত খাওয়া হচ্ছে তাই যখন কিছু ক্ষুধা থাকতে একজন হাত গুটিয়ে নেয় অর্থাৎ খাওয়া শেষ করে ।

এটা দেহকে শক্তিশালী করে ও অসুখকে দূরে রাখে , কেননা এই ব্যক্তি ক্ষুধা না লাগা পর্যন্ত খায় না আর ক্ষুধা থাকতেই খাওয়া শেষ করে । অবশ্য বেশি কম খেলে শরীর দূর্বল হয়ে যেতে পারে ।

কিছু মানুষ এত কম খেতো যে তারা তাদের কর্তব্য পালনের মতো সুস্থ থাকতো না । না জেনে তারা মনে করতো এটা ভাল অভ্যাস কিন্ত্ত আসলে তা না ।

যারা ক্ষুধার্ত থাকতে উৎসাহ দিয়েছেন ও এই অবস্থার প্রশংসা করেছেন তারা পরিমিত খাওয়ার কথা বলেছেন যা উপরে বলা হয়েছে । এসব কিছু করা হয় সাবধানতা থেকে । সাবধানতা হলো আল্লাহর পথে যাত্রাস্থল ।


রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন একজন মানুষের ধর্ম তখন নিখুঁত হয় যখন যে বিষয়ের সাথে তার সম্পর্ক নেই , অন্যের সেসব বিষয়ে সে অহেতুক নিজেকে জড়িত করে না । বিনা দরকারে কোন বিষয়ে কথা বলা , কোন কিছুর দিকে তাকানো , শোনা , ধরা , সেদিকে যাওয়া বা তা নিয়ে চিন্তা – ভাবনা করা , দৈহিক বা মানসিকভাবে সে বিষয়ের সাথে নিজেকে জড়ানো – এসব কিছু এই হাদীসের আওতায় আসবে ।
 
:sl:



ইবরাহীম বিন আদহাম বলেন : সাবধানতা হলো যা সন্দেহজনক তা ত্যাগ করা । যা তোমার সাথে সম্পর্কযুক্ত না এমন কিছু ত্যাগ করা মানে যাতে তোমার দরকার নেই , সেটাও ত্যাগ করা । সাবধানতার সবচেয়ে গূরুত্বপূর্ণ দিক হলো যাতে সন্দেহ আছে তা থেকে দূরে থাকা । যে সন্দেহযুক্ত বিষয়ের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে , সে পাপের সাথেও নিজেকে জড়িয়ে ফেলবে । পাপ হচ্ছে সীমানা যা আল্লাহ স্থাপন করেছেন । যে এই সীমানার কাছে ঘোরাফেরা করবে , সে সেই সীমানা পার হয়ে যাবে ( ইমাম বুখারী , ইমাম মুসলিম ) ।

আল বাগহাওয়ী বলেন : সাবধানতার বিষয়টি যখন আসে ,তখন এই হাদীসটি খুবই গূরুত্বপূর্ণ । এটা শেখায় যে কেউ যদি বুঝতে না পারে কোনকিছু বৈধ না অবৈধ , তবে সাবধানী ব্যক্তি তা থেকে দূরে থাকবে । কেননা সে যদি তা ত্যাগ না করে , সন্দেহযুক্ত বিষয় নিয়ে এগিয়ে যায় ও এটাকে অভ্যাসে বানিয়ে ফেলে , তবে তা তাকে সেখানে নিয়ে যাবে যা হারাম ।

বেশি সন্দেহপূর্ণ বিষয়কে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায় । প্রথম শ্রেণী হলো সেটা যা হালাল না হারাম তা নিয়ে কোন সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় না । এই না থাকাটাই নিশ্চিত করছে যে একজন এ থেকে দূরে থাকবে ।
দ্বিতীয় শ্রেণী হলো তা যার সূত্র আছে ও স্পষ্ট ভিত্তি আছে বলার জন্য যে এটা হালাল বা হারাম । তাই এ বিষয়ে যা স্পষ্ট ও প্রতিষ্ঠিত , তা একজন মেনে নেবে । এ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত মতের বাইরে চলে যাওয়া উচিত হবে না ,যদি না তার এ নিয়ে নিশ্চিত কোন জ্ঞান থাকে । যেমন কোন মানুষ যদি সন্দেহ করে যে উযু আছে কি নেই , তবে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সে ইবাদত করবে ।

এছাড়াও যদি কেউ মরুভূমিতে এমন পানি পায় যা পাক্ কি না তাতে সে নিশ্চিত নয় , তবে পানির বিষয়ে যে মূল নীতিগুলি আছে সে তাতে দৃঢ় থাকবে ও শয়তানের কূ-মন্ত্রণায় পড়বে না ।
ইবনে হাযার رضي الله عنهم বলেন , কোনটা হালাল তা স্পষ্ট , কোনটা হারাম তা স্পষ্ট ; এটা বোঝায় যে নিয়ম তিন ভাগে বিভক্ত । কেননা , প্রতিটি বিষয়ের জন্য ধর্মগ্রন্থে হয় স্পষ্ট নির্দেশনা আছে সেটার গূরুত্ব বিষয়ে ও তা করতে হবে সে নিয়ে অথবা স্পষ্ট আদেশ আছে যে এটা ক্ষতিকর , এর মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা যাবে না অথবা এই দুই ধরনের কোন বক্তব্য নেই ।

তাই প্রথমটি স্পষ্টতই হালাল ও দ্বিতীয়টি স্পষ্টতই হারাম । তাই রাসূল صلى الله عليه وسلم যখন বলেন , “ কোনটা হালাল তা স্পষ্ট ”, তখন তিনি বুঝিয়েছেন এতে অতিরিক্ত কোন ব্যাখ্যার দরকার নেই ও এটা সবার জানা । তৃতীয় ভাগটি হলো অস্পষ্ট । যারা সতর্ক থাকতে পছন্দ করে তারা এটাকে ভয় পায় কেননা তারা জানে না এটা হালাল না হারাম । এক্ষেত্রে সে এটা এড়িয়ে চলবে । কেননা , যদি এটা হারাম হয় তবে সে নিরাপদ থাকলো । আর যদি হালাল হয় , তবে ভাল নিয়তে এটা না করার জন্য সে পুরস্কার পাবে ।
তাই জ্ঞানের সন্ধানীরা জীবনের সব ক্ষেত্রে সাবধান থাকবে । খাবার , পানীয় , কাপড় ও আবাস যেন হালাল হয় সেদিকে তারা বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবে । সে ও তার পরিবারের সদস্যদের যা যা দরকার হয় , সেসব বিষয়ে এই সাবধান থাকার মত সে প্রয়োগ করবে যেন তার মন আলোকিত হতে পারে । এভাবে সে জ্ঞানের আলো পেতে নিজেকে অভ্যস্থ করবে এবং এ থেকে কল্যাণ পাবে ।
 
:sl:


হালাল হলেই শিক্ষার্থী কোন কিছুর দিকে আপনাআপনি বেশী ঝুঁকে পড়বে না - যতক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব ও দরকার না হওয়া পর্যন্ত সে সাবধানতা অবলম্বন করবে । তাই সে হালাল জিনিষও বেশি বেশি উপভোগ করবে না বরং সে উচ্চতর স্তরের খোঁজ করবে ও অতীতের সঠিক পথের জ্ঞানীদের অনুসরণ করবে । তারা যা হালাল ছিল সে বিষয়েও সাবধানতা অবলম্বন করতেন ।

ছাত্ররা যাকে সবচেয়ে বেশি অনুসরণ করার চেষ্টা করবে তিনি হলেন আল্লাহর রাসূল صلى الله عليه وسلم । রাসূল صلى الله عليه وسلم রাস্তায় পড়ে থাকা কোন একটি খেজুরও খেতেন না এই ভয়ে যে যদি এটা দানের হয়ে থাকে ; যদিও এমনটি না হওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক ।

জ্ঞানের সন্ধানকারীরা অবশ্যই এসব অনুসরণ করবে ; তারা যদি সাবধানতা অবলম্বন না করে তবে কারা তা করবে ? আনাস رضي الله عنهم বলেন : রাসূল صلى الله عليه وسلم রাস্তায় একটি খেজুর দেখতে পান যা গাছ থেকে পড়েছিল । তিনি বলেন : এটা হয়তো দানের হতে পারে । তা না হলে আমি এটা খেতাম ( বুখারী , মুসলিম ) ।

আবু হুরায়রা رضي الله عنهم বলেন : রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন , আমি আমার পরিবারের কাছে গেলাম ও আমার বিছানায় একটি খেজুর দেখতে পেলাম । আমি সেটা সেটা মুখের কাছে আনলাম খাওয়ার জন্য , তারপর ভয় পেলাম যে এটা দানের হতে পারে । তাই আমি তা নামিয়ে রাখলাম ।

ইবনে হাজার বলেন : এখানে রাসূল صلى الله عليه وسلم নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে তিনি খেজুর বিছানায় পেয়েছিলেন । তারপরেও তিনি সাবধানতা হিসাবে সেটা খান নি । আন নাওয়ায়ী বলেন , এই হাদীস সাবধানতার একটি উদাহরণ । খেজুরটি খাওয়া হারাম ছিল না এই সন্দেহ করে যে এটি দানের হতে পারে ; বরং এটি সাবধানতা থেকে করা হয়েছে ( মুসলিম) ।
 
:sl:


আল্লাহর যিকির

সবচেয়ে গূরুত্বপূর্ণ যে বিষয়ে ছাত্ররা বিশেষভাবে সাবধান থাকবে তা হলো , সব পরিস্থিতিতে আল্লাহকে স্মরণ করা বা যিকির করা ।
একজন যা চায় তা পাওয়ার সেরা উপায় হলো আল্লাহর যিকির । যে এই পথ থেকে ফিরে যায় , সে অবশ্যই সব কল্যাণ থেকে দূরে থাকলো ও সঠিক পথ থেকে সরে গেল ।


যে এই পথে পরিচালিত হলো সে সত্যিই হেদায়েতপ্রাপ্ত ও সেরা নেতা এবং পথপ্রদর্শক দিয়ে পরিচালিত । ইবনে আল কাইয়্যিম বলেন : আল্লাহর দিকে ছুটে যাওয়া , তাঁর উপর নির্ভর করা , তাঁর প্রতি সন্ত্তষ্ট থাকা , আল্লাহর জন্য ভালবাসায় মন পূর্ণ করা , সবসময় যিকির করা , আল্লাহকে জানার আনন্দ - এ সব কিছুর পুরস্কার সাথেসাথে পাওয়া যায় । এ হলো দুনিয়ার বেহেশত ও এমন একটি জীবন যার সাথে রাজা - বাদশাহর জীবনও তুলনা করা যায় না ।


আমি শুনেছি শেখ আল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ র: বলেন : অবশ্যই এই দুনিয়ায় একটি বেহেশত আছে । যে এখানে ঢুকবে না , সে পরকালের বেহেশতও ঢুকতে পারবে না । একবার তিনি আমাকে বলেন : শত্রুরা আমার কী করবে ? আমার বেহেশত ও বাগান আমার বুকের ভিতরে । আমি যেখানেই যাই না কেন , এই দুইটি আমার সাথে থাকে । বন্দী জীবন হলো আল্লাহর সাথে আমার একান্ত সান্নিধ্য , আমার নিহত হওয়া হলো শহীদের মৃত্যু ও দেশ থেকে নির্বাসন হলো আমার সফর ।

আল্লাহ জানেন , আমি শেখ ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ র: এর মতো এমন পবিত্র জীবনের অধিকারী আর কাউকে পাই নি যদিও তিনি কঠিন সব বিপদ , অত্যন্ত দু:খ - কষ্টের মধ্যে বন্দী ও খুন হওয়ার আশংকার মধ্যে ছিলেন । এত সব কিছুর মধ্যে তিনি পাক – পবিত্র জীবনযাপন করতেন ; দৃঢ় ও উদার মনের ছিলেন ; আধ্যাত্মিকভাবে সুখী আত্মা ও আলোকিত চেহারার অধিকারী ছিলেন । যখন আমরা ভয় পেতাম , মনে খারাপ চিন্তা আসতো , মনে হতো দুনিয়া শ্বাসরোধ করে দিচ্ছে আমাদের - তখন আমরা তাঁর কাছে ছুটে যেতাম । শুধু তাঁকে দেখে ও তাঁর কথা শুনেই ভয় , দু:চিন্তা দূর হয়ে আমরা আশ্বস্ত হতাম ।

সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি তাঁর সাথে সাক্ষাতের আগেই বান্দাদের জন্য এই দুনিয়ায় বেহেশত দেখার অনুমতি দিয়েছেন ও সেই বেহেশতের দরজা খুলে দিয়েছেন ; এর স্বাদ ও আনন্দের ভাগ দিয়েছেন যার জন্য দাস তার শক্তি , সামর্থ্য উৎসর্গ করেছিল । কিছু জ্ঞানী মানুষ বলেন যদি রাজারা ও তাদের ছেলেরা জানতো আমরা কী অভিজ্ঞতা লাভ করছি , তাহলে তা পাওয়ার জন্য তরবারী নিয়ে আমাদের সাথে লড়াই করতো । আরেকজন বলেন : সেই মানুষ বঞ্চিত , যারা এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল সবচেয়ে উপভোগ্য জিনিষটির স্বাদ না পেয়ে । তাকে প্রশ্ন করা হলো সেটা কী ? তিনি বললেন , আল্লাহর ভালবাসা , তাঁকে জানা ও তাঁকে মনে করা । ভালবাসা , জ্ঞান ও সবসময় যিকির করা ; তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়া , তাঁর স্মরণে শান্তি লাভ , ভালবাসা , ভয় , আশা , নির্ভরতা ও মনোযোগ – সবই আল্লাহর জন্য ; এই দুনিয়ার বেহেশত ও তার আনন্দের সাথে এখানকার অন্য আনন্দের তুলনা হয় না । যারা আল্লাহকে ভালবাসে , তাদের জন্য এটা চোখের শান্তি এবং যারা তাকে জানে তাদের জন্য এটাই সত্যিকারের জীবন ।
 
Last edited:
:sl:




ইবনে আল কাইয়্যিম বলেন : আমি শেখ আল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহর সাথে একদিন ছিলাম যখন তিনি ফজরের সালাত পড়ছিলেন । এরপর তিনি যিকির করতে থাকেন দুপুরের আগে পর্যন্ত । আমার দিকে ফিরে তিনি বললেন , এটাই আমার খাবার । যদি আমি এটা না পাই , তবে আমি মুক্তি পাবো না । একবার তিনি আমাকে বলেছিলেন : আমি যিকির থেকে কখনোই বিরত হই না । ব্যতিক্রম হলো , এই ইচ্ছা নিয়ে আমি মাঝেমাঝে বিশ্রাম নেই যাতে শক্তি সঞ্চয় করে আরো বেশি যিকির করতে পারি ।

তামা , রূপা ইত্যাদিতে যেমন মরিচা পড়ে , তেমনি মনেও মরিচা ধরে । একে উজ্জ্বল করতে হয় যিকির দিয়ে । মনকে চকচকে আয়নার মতো পরিষ্কার করে যিকির । মনকে যদি খালি রাখো , এটায় আবারো মরিচা ধরবে । যদি আল্লাহকে স্মরণ করো , এটা আবারো চকচকে হবে । মনে মরিচা পড়ে দুইটি কারণে : তা হলো অসাবধানতা ও পাপ । তওবা ও যিকিরে এই মরিচা দূর হয় । তাই যে বেশি অসাবধান , তার মনে বেশি মরিচা ধরে । যার মনে মরিচা ধরে , সে আর কোনকিছুর আসল চেহারা দেখতে পায় না । তাই সে মিথ্যাকে সত্য দেখবে আর সত্যকে মিথ্যা জানবে । তাই যদি মরিচা বাড়ে আর মনকে অন্ধকার করে ফেলে , তাহলে তার বোঝার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে । সে আর সত্যকে সত্য বলে মানতে পারবে না ; মিথ্যাকে মিথ্যা বলে অস্বীকার করবে না । এটা হচ্ছে মনের জন্য সবচেয়ে বড় শাস্তি । এ সবকিছু আসে অসাবধানতা থেকে ও নফসের ইচ্ছামতো চললে অর্থাৎ মনের ইচ্ছার বশ হলে । তখন মনের আলো নিভে যায় ও মন অন্ধ হয় ।

‘ তুমি তার আনুগত্য করবে না যার মনকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি , যে তার খেয়াল – খুশির অনুসরণ করে ও যার কাজ সীমা লংঘন করে ’ ( সুরা কাহফ ; ১৮ : ২৮) ।

তাই আল্লাহর কোন দাস যদি কাউকে অনুসরণ করতে চায় , তাহলে সে দেখবে – এ কি তাদের মধ্যে যারা আল্লাহকে স্মরণ করে , না কি এ অসাবধানীদের দলে ? এ কি নিজের খেয়ালখুশিতে চলে না ওহী মেনে চলে ? তাই সে যদি নিজের নফসকে গুরুত্ব দেয় ও অসাবধানীদের দলের হয় , তাহলে সে ক্ষতিগ্রস্ত । তার সব কাজ , সাফল্য নষ্ট হয়ে যাবে । এগুলি অপচয় কেননা এসব তার কোন কাজে আসবে না । এ হচ্ছে সত্যের বিপরীত । এমন লোকদের মেনে চলতে আল্লাহ মানা করেছেন । তাই একজন তার শিক্ষক ও নেতার আদর্শ কী তা খেয়াল করবে । যদি এসব দোষ তাদের থাকে , তবে সে তাদেরকে এড়িয়ে চলবে । যদি সে এমন কাউকে পায় যে সবসময় আল্লাহকে স্মরণ করে , সুন্নাহ মেনে চলে ও যার আমল নষ্ট হয় নি , সে তার সাথে ঘনিষ্ঠ হবে । জীবিত ও মৃত মানুষের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হলো আল্লাহর স্মরণ । যে তার রবকে স্মরণ করে ও যে তা করে না , তারা হলো জীবিত ও মৃত মানুষের মতো ।
 
:sl:



শেখ আল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ র: বলেন : অনেক সময় আমি একটি আয়াতের বিভিন্ন ব্যাখ্যা পাই । তখন আমি আল্লাহকে বলি , আমি যেন আয়াতের সঠিক মানে বুঝতে পারি । আমি এভাবে বলি : হে আদম আলাইহিস সালাম ও ইবরাহিম আলাইহিস সালামের শিক্ষক , আমাকে শেখান । আমি কোন পরিত্যক্ত মসজিদে যাই , সিজদা করি ও আল্লাহকে বলি : হে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের শিক্ষক , আমাকে শেখান ।

রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেন , যে তার প্রভুকে স্মরণ করে ও যে তা করে না ,তারা হলো জীবিত ও মৃত মানুষের মতো ( বর্ণনায় আবু মুসা আল আশারী رضي الله عنهم ; বুখারী হাদীস ) ।

ইমাম মুসলিম র: বলেন , যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় ও যে ঘরে তা করা হয় না , সে দুইটি হলো জীবিত ও মৃত মানুষের ঘরের মতো ।
আশ সাওকানি র: বলেন , আল্লাহর যিকিরের চমৎকার সৌন্দর্য ও পবিত্র মাহাত্ম্য এই রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে । এটা দেখায় , আল্লাহকে যে ভুলে থাকে , যদিও সে আক্ষরিক অর্থে জীবিত , আসলে সে বেঁচে নেই । বরং সে মরা মানুষের মতো । জীবিত মানুষ যেভাবে আল্লাহর আদেশ মেনে চলে , মৃত মানুষ তা করতে পারে না ।

এই হাদীসে যা আছে তা কুরআনের আয়াতেও বলা হয়েছে : যে মৃত ছিল , যাকে আমি পরে জীবিত করেছি ......( সুরা আল আনাম ; ৬ : ১২২ ) । এর মানে অবিশ্বাসীরা মরা মানুষের মতো আর ইসলামের পথে পরিচালিত হওয়া মানে জীবন ।

আল- বুখারী তার বইতে একটি অধ্যায় লিখেছেন এই শিরোনামে : আল্লাহর যিকিরের মাহাত্ম্য । এই অধ্যায়ে তিনি উপরে আবু মুসা ও আবু হুরায়রার উল্লেখ করা হাদীসের কথা লিখেছেন । এতে বলা আছে , রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন : আল্লাহর কিছু ফিরিশতা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় তাদের খোঁজে , যারা আল্লাহর যিকির করে । যদি তারা এমন কাউকে পায় , তারা তখন অন্য ফিরিশতাদের ডাক দিয়ে বলে - আসো , তুমি যাদেরকে খুঁজে বেড়াচ্ছো তাদেরকে দেখে যাও । তখন আকাশ পর্যন্ত ডানা মেলে দিয়ে ফিরিশতারা যিকিরকারীকে ঘিরে ধরে ।

তাদের রব প্রশ্ন করেন যদিও তিনি তাদের থেকে বেশি জানেন - আমার বান্দারা কী বলছে ?
ফিরিশতারা জবাব দেয় : তারা বলে সুবহান আল্লাহ , আল্লাহু আকবর ও আলহামদুলিল্লাহ । আল্লাহ তখন বলেন : ওরা কি আমাকে দেখেছে ? ফিরিশতারা বলে : না , আপনার শপথ , তারা আপনাকে দেখে নি । আল্লাহ বলেন : যদি তারা আমাকে দেখতো তাহলে তারা কী করতো ?

ফিরিশতারা জবাব দেয় : যদি তারা আপনাকে দেখতো , তাহলে তারা আরো আন্তরিকভাবে আপনার ইবাদত করতো , আরো বেশি করে আপনার প্রশংসা করতো এবং সৃষ্ট কোন কিছুর মতো হওয়া থেকে আপনার মুক্ত থাকার বিষয়টি আরো বেশি বেশি করে ঘোষণা করতো । আল্লাহ বলবেন : তারা আমার কাছে কী চায় ? ফিরিশতাদের জবাব : তারা বেহেশত চায় । আল্লাহ বলেন : তারা কি সেটা দেখেছে ? ফিরিশতারা বলে , না , ও প্রভু , আপনার শপথ । তারা বেহেশত দেখে নি ।

আল্লাহ বলেন : যদি তারা এটা দেখতো তাহলে তারা কী করতো ? ফিরিশতারা বলে : যদি তারা তা দেখতো , তাহলে আরো বেশি করে তারা এটা চাইতো , বেহেশত পাওয়ার আগ্রহ অনেক বেশি হতো । আল্লাহ বলেন : তারা কী থেকে আশ্রয় চায় ? ফিরিশতারা বলে : তারা দোজখের আগুন থেকে আপনার আশ্রয় চায় । আল্লাহ বলেন , তারা কী এটা দেখেছে ? ফিরিশতারা বলে , না , ও আল্লাহ । তারা এটা দেখে নি । আল্লাহ বলেন : যদি তারা এটা দেখতো তাহলে কী হতো ? ফিরিশতারা বলে : যদি তারা তা দেখতো , তাহলে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে যেত আর এ আগুনকে খুবই ভয় পেত ।


তখন আল্লাহ বলবেন , আমি তোমাদেরকে সাক্ষী করলাম যে এদেরকে মাফ করা হলো । একজন ফিরিশতা তখন বলবে : সেখানে এমন একজন লোক ছিল যে এদের মতো ছিল না । বরং সে তার কোন এক দরকারে সেখানে গিয়েছিল । আল্লাহ বলবেন : এরা এমন মানুষ যাদের সাথীরা দু:খিত হবে না ( সহীহ বুখারী ) ।

 
:sl:



আল হাফিয ইবনে হাযার رضي الله عنهم বলেন : আল্লাহকে স্মরণ করার মানে হলো যে সব শব্দ বলতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে তা বলা ও এই যিকির সবসময় করা। যেমন , এগুলি বলা :

সুবহান আল্লাহ ( সব মহিমা আল্লাহর ) ;
আলহামদুলিল্লাহ ( সব প্রশংসা আল্লাহর ) ;
লা ইলাহা ইল্লাললাহ ( নেই কোন রব আল্লাহ ছাড়া ) ;
আল্লাহু আকবর ( আল্লাহ শ্রেষ্ঠ ) ,
লা হাওলা ওয়ালা কুয়াআতা ইল্লা বিল্লাহ ( আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোন ক্ষমতা নেই ) ,
বিসমিল্লাহ ( আল্লাহর নামে শুরু ) ,
হাসবুনা আল্লাহ ওয়া নিমাআল ওয়াকিল ( আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট ) ও তিনি সেরা মীমাংসাকারী ।


এসবের পাশাপাশি আল্লাহর ক্ষমা চাইতেই হবে ও এই দুনিয়া এবং পরকালের জন্য কল্যাণ চাইতে হবে । আল্লাহ যা করতে আদেশ বা উৎসাহ দিয়েছেন যেমন কুরআন তেলাওয়াত , হাদীস পড়া , জ্ঞান চর্চা , নফল ইবাদত ইত্যাদি আল্লাহকে স্মরণ করার অন্তর্ভুক্ত ।

যিকির অনেক সময় জিহবা দিয়ে শুধু করা হয় - যা বলা হচ্ছে তার মানে না জেনেও আল্লাহর নাম বলার জন্য যিকিরকারী পুরস্কার পাবে । তবে মানে জেনে নিয়ে যিকির করা ও শুধু জিহবা না বরং মন থেকেও সে সব বললে তা বেশি ভাল । আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করা হয় যে সব শব্দ দিয়ে ও আল্লাহর কোন দোষ – ত্রুটি আছে এমন কথা অস্বীকার করা হয় যা দিয়ে - সে সব বুঝে বলা বেশি ভাল । যদি যিকিরকারী সঠিক কোন কাজ যেমন ইবাদত , জিহাদ এসবের মধ্যে যিকির করে , তবে তা যিকিরের মাহাত্ম্য বাড়ায় । যদি যিকিরকারী আল্লাহর দিকে পুরোপুরি চলে যায় ও আন্তরিক থাকে সে যা করছে তাতে , তাহলে সেটা সবচেয়ে ভাল ও প্রায় পরিপূর্ণ একটি কাজ ।

ইমাম মুসলিম র: এর বর্ণিত হাদীস : যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় ও যে ঘরে তা করা হয় না , সে দুটি হলো যেন জীবিত ও মৃত মানুষের ঘর । ইবনে হাজার এ নিয়ে বলেন , এখানে আসলে ঘরে যারা থাকে তাদের কথা বোঝানো হয়েছে , ঘরের কথা বলা হয় নি । কোন ঘর জীবিত না মৃত মানে তার বাসিন্দারা বেঁচে আছে না মারা গিয়েছে । যে ব্যক্তি আল্লাহকে স্মরণ করে , তার সম্পর্কে রাসুল صلى الله عليه وسلم বলেছেন , সে এমন একজন , যার বাইরের দিক জীবনের আলো দিয়ে সুন্দর ও ভিতরের দিক সুন্দর জ্ঞানের আলো দিয়ে - এ বেঁচে আছে ।

যে আল্লাহর যিকির করে না , সে সবদিক থেকে ধ্বংস হয়েছে । আরো বলা হয়েছে , জীবিত ও মৃত মানুষের মতো মানে হলো যে বেঁচে আছে সে বন্ধুদের ক্ষতি করতে পারে যা মৃত মানুষ পারে না । যারা যিকিরকে দৃঢ়ভাবে ধরেছে , তারা জ্ঞানী । তারা এমন যেন খাড়া পাহাড়ের পাশ দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে যায় ও যেখানে যেতে চায় সেদিকে সঠিকভাবে পরিচালিত হয় ।

যিকির ছাড়া চলার চেষ্টা করলে তাদের পা ধীরগতির হয়ে যাবে , মনে মরিচা ধরবে ও তারা পথ হারিয়ে ফেলবে - যেমনটি বলা হয় - যদি আমরা অসুস্থ হই , যিকির দিয়ে নিজেদের চিকিৎসা করি । যদি এক মুহূর্তের জন্যও যিকির থেকে বিরত হই , তাহলে আমরা হতাশায় ভুগি ।
 
:sl:


৫. খাওয়া, ঘুম ও কথা - যত কম তত ভাল

আমরা আগে এ নিয়ে আলোচনা করেছি যে ছাত্ররা অবশ্যই কম খাবে ও যা হালাল তা খাবে। পেটের লোভ থেকে মুক্তি পাবার উপায় হলো অল্পতে খুশি থাকা।

একজন ধীরে ধীরে তার খাওয়া কমাবে যেন পরিমিত পর্যায়ে সে আসতে পারবে - মধ্যম পন্থাই সেরা। সে এই পরিমাণ খাবে যেন শক্তি বজায় থাকে ও ইবাদত ঠিকমতো করতে পারে। সে অনাহারেও থাকবে না আবার ভরপেটও খাবে না। তখন সে সুস্থ থাকবে, তার আকাংখা উঁচু স্তরে যাবে ও বিবেক পরিষ্কার থাকবে। সে যদি পরিমিত মাত্রার চেয়ে বেশি খায়, তাহলে সে বেশি ঘুমাবে ও তার বুদ্ধিমত্তা নীচু স্তরে থাকবে।

খাওয়া হালাল হওয়াটা সব মুসলমানের জন্য দরকার, বিশেষ করে যারা জ্ঞানের সন্ধানে আছে তাদের জন্য আরো বেশি দরকার। কেননা, এরা হলো হালাল , হারামের জ্ঞানের সুরক্ষিত স্থান। আমরা আগেই বলেছি খাওয়া ও পানীয়ের বিষয়ে কিভাবে সাবধান হওয়া উচিত।
রাসূল صلى الله عليه وسلم কিভাবে একটি খেজুর খেতে গিয়েও খান নি এই ভেবে যে, হয়তো সেটি দানের আর দান গ্রহণ নবী صلى الله عليه وسلم এর জন্য বৈধ ছিল না।

খাওয়া নিয়ে বেশি চিন্তা করার সময় নেই যে ছাত্রের, সে মোটা হবে না। বরং জ্ঞানের প্রতি অনুরাগে সে খাওয়ার কথা ভুলে থাকবে।

শেখ আল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ কখনো খাবার চাইতেন না। তিনি জ্ঞান চর্চায় এতটাই মগ্ন থাকতেন যে খাবার দেয়া হলে অনেক সময় তা পড়ে থাকতো। মাঝেমাঝে তিনি সেখান থেকে অল্প কিছু নিয়ে খেতেন। তিনি কখনো এই দুনিয়ার ভোগবিলাস , আনন্দ নিয়ে কিছু বলতেন না বা এসব কিছু চাইতেন না। বরং তার সব ভাবনা ও কথাবার্তা ছিল পরকালকে নিয়ে এবং কিভাবে আল্লাহর আরো ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে যাওয়া যায় সেটা নিয়ে।

আন নুমান বিন বাসির বলেন, উমর বিন আল খাত্তাব رضي الله عنهم বলেছিলেন কিভাবে মানুষ অভাবের সাথে লড়াই করতো। রাসূল صلى الله عليه وسلم একবার সারাদিন অনাহারে কষ্ট পান - নীচু মানের কোন খেজুরও তিনি সেদিন খেতে পারেন নি ( সহীহ মুসলিম )।

 

Similar Threads

Back
Top