আবু হুরায়রা رضي الله عنهم একবার একদল মানুষের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যারা ভেড়ার ভাজা মাংস খাচ্ছিলো। তারা তাকে দাওয়াত দিলে আবু হুরায়রা রাজী হলেন না। তিনি বললেন, রাসূল صلى الله عليه وسلم এই দুনিয়া থেকে চলে গিয়েছেন পেট ভরে এমন কি রুটি না খেয়েই ( সহীহ বুখারী )।
আনাস বিন মালিক رضي الله عنهم বলেন, রাসূল صلى الله عليه وسلم কখনো টেবিলে বসে বা একাকী প্লেটে কিছু খান নি। তিনি আমৃত্যু পাতলা, ভালভাবে সেঁকা রুটি কখনো খান নি ( সহীহ বুখারী )।
ছাত্ররা ঘুমের সময় কমাবে এতদূর পর্যন্ত যেন শরীর মনের ক্ষতি না হয়। আট ঘন্টার বেশি তার ঘুমানো উচিত না। সারাদিনের তিন ভাগের এক ভাগ সময় এটি -- যদি সম্ভব হয় সে আরো কম ঘুমাবে।
আস যারলুমি র: বলেন: আল হাসান বিন যিয়াদ আশি বছর বয়সে পড়াশোনা শুরু করেন। এর পরের চল্লিশ বছর তিনি সারা রাত বিছানায় ঘুমান নি। মুহাম্মদ বিন আল হাসান আশ সায়বানী (রহঃ) রাতে একদমই ঘুমাতেন না। তিনি নিজের সামনে অনেক বই রাখতেন। যদি কোন বই পড়তে পড়তে বিরক্তি বোধ করতেন, তাহলে অন্য বই নিয়ে পড়তে শুরু করতেন। তিনি সামনে পানি রাখতেন ঘুম তাড়ানোর জন্য, বলতেন: ঘুম আসে গরম থেকে আর একজন শীতল পানি দিয়ে ঘুম তাড়াবে।
আবু হুরায়রা رضي الله عنهم বলেন, রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যখন কেউ ঘুমাতে যায়, তখন শয়তান তার ঘাড়ে তিনটি বাঁধন দেয় এই বলতে বলতে যে -তোমার সামনে অনেক লম্বা রাত রয়েছে, তাই ঘুমাতে থাকো। কেউ যখন জেগে উঠে আল্লাহর নাম নেয়, তখন একটি বাঁধন ঢিলা হয়। সে যদি উযু করে, তখন দুইটি বাঁধন ঢিলা হয়। সে যদি সালাত আদায় করে তাহলে সব বাঁধন ঢিলা হয়ে যায় ও সকালে সে ভাল মেজাজে থাকে ও কাজ করতে পারে। তা না হলে সে খারাপ মেজাজে থাকে ও সকালে অলসতা বোধ করবে ( বুখারী ও মুসলিম )।
আবদুল্লাহ বিন মাসউদ رضي الله عنهم বলেন, এক লোকের কথা বলা হয়েছিল যে সকাল হওয়া পর্যন্ত ঘুমিয়েছিল। রাসূল صلى الله عليه وسلم এ নিয়ে বলেছেন, এমন মানুষের কানে শয়তান পেশাব করে ( বুখারী ও মুসলিম )।
আল্লাহ সঠিক পথের মানুষদের প্রশংসা করেছেন, তারা ভাল কাজ করে বলে উল্লেখ করেছেন - সেটা হলো তারা রাতে কম ঘুমায় । সেদিন নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে প্রস্রবণ বিশিষ্ট জান্নাতে , উপভোগ করবে তা যা তাদের প্রতিপালক তাদেরকে দেবেন ; কারণ পার্থিব জীবনে তারা ছিল সৎ কর্মপরায়ণ , তারা রাতের সামান্য অংশই অতিবাহিত করতো নিদ্রায় , রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতো এবং তাদের ধন - সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতের হক ( সূরা যারিয়াত; ৫১: ১৫-১৯ )।
ইবনে কাসির র: বলেন, আল্লাহ যে বলেছেন তাদের রব যে সম্পদ দান করেছেন, তারা তা উপভোগ করবে যেহেতু তারা সঠিক পথের মানুষ ছিল,তারা বেহেশতে রবের দেয়া সব ধরণের আনন্দ, রহমত ভোগ করছে।
আল্লাহর এই কথা – ‘অবশ্যই তারা ছিল ’ বোঝাচ্ছে দুনিয়ার জীবনের কথা। তারা ভাল কাজ করে বলতে বোঝানো হয়েছে যা সূরা হাক্কাতেও বলা হয়েছে পানাহার করো তৃপ্তির সাথে, তোমরা অতীত দিনে যা করেছিলে তার বিনিময়ে ( ৬৯: ২৪ )। আল্লাহ বলেছেন তারা কী ভাল কাজ করতো , ‘ রাতে তারা কম ঘুমাতো’। ইবনে জারীর আল বাসরী বলেন: তারা ইবাদতের জন্য রাত জাগে ও খুব কমই ঘুমায় । আল হাসান আল বাসরী (রহঃ) বলেন: তারা রাত জেগে ইবাদত করে ও খুব অল্প সময় ঘুমায়। এরপর সামর্থ্য থাকলে তারা ইসতিগফার করে ভোর হওয়া পর্যন্ত।
আশ সাদী رضي الله عنهم বলেন, তারা ভাল কাজ করতো, খুব কম বিশ্রাম নিত ও ঘুমাতো। রাতে বেশিরভাগ সময় তারা রবের প্রতি মনোযোগী থাকে - সেটা হয় সালাত, নয়তো কুরআন তেলাওয়াত, যিকির, দুআ, আল্লাহর কাছে বিনীত হওয়া ইত্যাদি। শেষ রাতে তারা আল্লাহর কাছে মাফ চায় যেন তারা সকাল না হওয়া পর্যন্ত ইবাদত করে যেতে পারে। এরপর তারা রাতের ইবাদত শেষ করে ইসতিগফার করে ইসতিগফার হলো পাপের জন্য তওবাহ করা।
যিনি জ্ঞানের সন্ধান করছেন , বেশি ঘুম তার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য না। তারা এ থেকে যতটুকু সম্ভব দূরে থাকবেন। তারা চিন্তাশীল ও নিবেদিতপ্রাণ হবেন। যত ভাল কাজই তারা করুন না কেন, তাতে তারা সন্ত্তষ্ট হবেন না যতক্ষণ না বেহেশতে যেতে পারছেন।
আবদুল্লাহ বিন মাসউদ رضي الله عنهم বলেন, এক লোকের কথা বলা হয়েছিল যে সকাল হওয়া পর্যন্ত ঘুমিয়েছিল। রাসূল صلى الله عليه وسلم এ নিয়ে বলেছেন, এমন মানুষের কানে শয়তান পেশাব করে ( বুখারী ও মুসলিম )।
আল্লাহ সঠিক পথের মানুষদের প্রশংসা করেছেন, তারা ভাল কাজ করে বলে উল্লেখ করেছেন - সেটা হলো তারা রাতে কম ঘুমায় । সেদিন নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে প্রস্রবণ বিশিষ্ট জান্নাতে , উপভোগ করবে তা যা তাদের প্রতিপালক তাদেরকে দেবেন ; কারণ পার্থিব জীবনে তারা ছিল সৎ কর্মপরায়ণ , তারা রাতের সামান্য অংশই অতিবাহিত করতো নিদ্রায় , রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতো এবং তাদের ধন - সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতের হক ( সূরা যারিয়াত; ৫১: ১৫-১৯ )।
ইবনে কাসির র: বলেন, আল্লাহ যে বলেছেন তাদের রব যে সম্পদ দান করেছেন, তারা তা উপভোগ করবে যেহেতু তারা সঠিক পথের মানুষ ছিল,তারা বেহেশতে রবের দেয়া সব ধরণের আনন্দ, রহমত ভোগ করছে।
আল্লাহর এই কথা – ‘অবশ্যই তারা ছিল ’ বোঝাচ্ছে দুনিয়ার জীবনের কথা। তারা ভাল কাজ করে বলতে বোঝানো হয়েছে যা সূরা হাক্কাতেও বলা হয়েছে পানাহার করো তৃপ্তির সাথে, তোমরা অতীত দিনে যা করেছিলে তার বিনিময়ে ( ৬৯: ২৪ )। আল্লাহ বলেছেন তারা কী ভাল কাজ করতো , ‘ রাতে তারা কম ঘুমাতো’। ইবনে জারীর আল বাসরী বলেন: তারা ইবাদতের জন্য রাত জাগে ও খুব কমই ঘুমায় । আল হাসান আল বাসরী (রহঃ) বলেন: তারা রাত জেগে ইবাদত করে ও খুব অল্প সময় ঘুমায়। এরপর সামর্থ্য থাকলে তারা ইসতিগফার করে ভোর হওয়া পর্যন্ত।
আশ সাদী رضي الله عنهم বলেন, তারা ভাল কাজ করতো, খুব কম বিশ্রাম নিত ও ঘুমাতো। রাতে বেশিরভাগ সময় তারা রবের প্রতি মনোযোগী থাকে - সেটা হয় সালাত, নয়তো কুরআন তেলাওয়াত, যিকির, দুআ, আল্লাহর কাছে বিনীত হওয়া ইত্যাদি। শেষ রাতে তারা আল্লাহর কাছে মাফ চায় যেন তারা সকাল না হওয়া পর্যন্ত ইবাদত করে যেতে পারে। এরপর তারা রাতের ইবাদত শেষ করে ইসতিগফার করে ইসতিগফার হলো পাপের জন্য তওবাহ করা।
যিনি জ্ঞানের সন্ধান করছেন , বেশি ঘুম তার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য না। তারা এ থেকে যতটুকু সম্ভব দূরে থাকবেন। তারা চিন্তাশীল ও নিবেদিতপ্রাণ হবেন। যত ভাল কাজই তারা করুন না কেন, তাতে তারা সন্ত্তষ্ট হবেন না যতক্ষণ না বেহেশতে যেতে পারছেন।
রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন, যে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে।
আন নাওয়ায়ী বলেন, কেউ কিছু বলতে চাইলে সেটাই বলবে যা ভাল, প্রশংসার যোগ্য; ফরয বা যা বলতে সুপারিশ করা হয়েছে।
এমন কিছু সে বলবে না যা বলা নিষেধ, অপছন্দীয় বা বলার অনুমতি আছে - তবে এসবই এক। এসব ক্ষেত্রে যা বলার অনুমতি আছে সেটা বলবে না এই ভয় থেকে যে, তা হয়তো নিষিদ্ধ বা অপছন্দীয় কথাবার্তার দিকে নিয়ে যাবে - এমনটি ঘটে। উপরের হাদীসের আলোকে ইমাম শাফেয়ী رضي الله عنهم (রহঃ) বলেন, তুমি যদি কিছু বলতে চাও, তবে আগে চিন্তা করো। যদি মনে করো এতে কোন ক্ষতি নেই, তাহলে তা বলো। যদি মনে করো এটা বললে ক্ষতি হবে, তাহলে চুপ থাকো।
ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, রাসূল صلى الله عليه وسلم অল্প কথায় এই হাদীসে অনেক কিছু বুঝিয়েছেন।
কথা হয় ভাল বা খারাপ বা এই দুইয়ের যে কোন একটির দিকে হেলে থাকে। ভাল কথার অন্তর্ভূক্ত হলো যা ফরয বা সুপারিশ মুলক। রাসূল صلى الله عليه وسلم এটা বলতে বা যে কথা এদিকে নিয়ে যাবে তা বলার অনুমতি দিয়েছেন, যদিও এটা অনেক রকমের হয়। খারাপ কথা বা যা খারাপ কথার দিকে নিয়ে যাবে, তা বলতে রাসূল صلى الله عليه وسلم মানা করেছেন। ইবনে আল বার র: বলেন, জ্ঞানীরা যে সব পরীক্ষার মুখোমুখি হন তার একটি হলো, তিনি শোনার চেয়ে কথা বলতে বেশি পছন্দ করেন।
ইয়াযিদ বিন আবু হাবিব বলেন: শোনা হলো নিরাপদ ও তা একজনের জ্ঞান বাড়ায়। যে শুনে সে বক্তার অংশীদার। কথা হলো দ্বিধা ও প্রতারণা, বাহুল্য ও অভাববোধের সমন্বয়। যে কথা বলে সে ফিতনার অপেক্ষায় থাকে; যে শোনে সে ক্ষমার অপেক্ষায় আছে।
আবু আদ যিয়াল বলেন: চুপ করে থাকতে শিখো যেভাবে তুমি কথা বলতে শিখেছো, কেননা যদি কথা তোমাকে পরিচালিত করে, তবে নীরবতা তোমাকে বাঁচাবে। চুপ থাকলে তুমি দুইটি বৈশিষ্ট্য অর্জন করবে: তোমার থেকে যারা বেশি জ্ঞানী তাদের থেকে তুমি জ্ঞান নিতে পারবে; আর তোমার থেকে যে অজ্ঞ, তার অজ্ঞতা তুমি নেবে না।
ভাল কথা বলা সওয়াবের কাজ ও নীরবতা থেকে উত্তম। কেননা, নীরবতা সবচেয়ে ভাল জিনিষ যা দিতে পারে তা হলো নিরাপত্তা আর ভাল কথা বললে তুমি অতিরিক্ত কিছু পাবে। বলা হয় - ভাল কথা যে বলে সে জয়ী হলো; যে চুপ থাকে সে নিরাপদ থাকলো।
জ্ঞান সম্পর্কে কথা বলা সবচেয়ে ভাল কাজগুলির অন্তর্ভুক্ত। এটি যিকির ও কুরআন তেলাওয়াতের একই স্তরের - যদি তা অজ্ঞতা দূর, আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জন ও যা বলা হয়েছে তার যথার্থ মানে আবিষ্কারের জন্য করা হয়।
সালমান رضي الله عنهم এর কাছে এক লোক এসে বললো: আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন, কথা বলবে না। লোকটি বললো: যে মানুষের মধ্যে থাকে, তার জন্য কথা না বলা অসম্ভব।
সালমান رضي الله عنهم জবাব দিলেন, তাহলে তুমি যখন কথা বলবে,তখন যা ঠিক তাই বলবে। তা নইলে চুপ থাকবে। লোকটি বললো, আরো কিছু বলুন। সালমান رضي الله عنهم বললেন, রাগ করবে না। লোকটি জানালো, আপনি আমাকে বলছেন রাগ না করতে কিন্তু আমি মাঝেমাঝে খুব রেগে যাই আর কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারি না।
সালমান رضي الله عنهم বললেন, তাহলে যখন তুমি রাগ করো, কমপক্ষে তোমার জিহবা ও হাতকে সংযত রেখো। লোকটি বললো, আমাকে আরো বলুন। সালমান رضي الله عنهم বললেন, মানুষের সাথে মিশবে না। লোকটি বললো, মানুষের মধ্যে যে বাস করে, সে তাদের সাথে মিশতে বাধ্য।
সালমান رضي الله عنهم জবাব দিলেন, তাহলে তুমি ওদের সাথে মেশার সময় সত্য বলবে ও কথা দিলে কথা রাখবে।
আবু হারান আত তারমী বলেন, এটা বলা হয় যে মানুষ কোথায় তার পা রাখছে, সেটা থেকেও সে বেশি সতর্ক হবে সে কী বলছে তা নিয়ে। এটা এজন্য যে, জিহবা ও অতিরিক্ত কথা বিশ্বাসীদের জন্য বিপদজনক।
জিহবার ফাঁদ অনেক ও এসব হচ্ছে মৃত্যুফাঁদ। এর যে কোন একটি সারাজীবন ধরে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট বিপদজনক।
তবে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে পরীক্ষা করেন অশুভ থেকে কল্যাণকে আলাদা করার জন্য।
ইবনে কুদামাহ র: বলেন , জিহবার পাপ অনেক । এই পাপ মানুষের মন থেকে তার স্বভাবে বিকশিত হয় । এই বিপদ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো চুপ থাকা ।
আবু আদ দারদা رضي الله عنهم বলেন , মুখের চেয়ে তোমার কান বেশি ব্যবহার করো । তোমাকে কান দেয়া হয়েছে দুইটি ও মুখ দেয়া হয়েছে একটি যেন তুমি কথা যা বলো , তার থেকে বেশি শুনো । মাখলাদ বিন আল হুসাইন বলেন , ৫০ বছরে আমি এমন একটা কথাও বলি নি যাতে অনুতাপ করতে হয় ।
জিহবার পাপগুলি হলো -- এমন কিছু নিয়ে কথা বলা যার সাথে ব্যক্তির কোন সম্পর্ক নেই ।যে সময়কে মুল্য দেয় , সে এমন কিছুতে তা নষ্ট করবে না , যা তার কোন উপকারে আসবে না । এই উপলব্ধি একজনকে তার জিহবাকে সংযত করতে বাধ্য করে ।
যে এসব অনর্থক কাজে সময় অপচয় করে ও আল্লাহর স্মরণ থেকে নিজেকে দূরে রাখে , তার তুলনা হলো - দামী রত্ন কেনার সামর্থ্য থাকার পরেও কাদামাটি কেনা - এটা জীবনের একটা বড় ক্ষতি ।
লুকমান আ: কে প্রশ্ন করা হয়েছিল , আপনি কিভাবে এত জ্ঞানী হলেন ? তিনি বলেছিলেন , আমার যা দরকার নেই , তা আমি চাই না ; যার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই সে বিষয়ে আমি কথা বলি না । বলা হয় যে লুকমান আ: একবার দাউদ আলাইহিস সালামের কাছে গিয়েছিলেন । তিনি তখন বর্মগুলি গুছিয়ে রাখছিলেন ।
লুকমান আ: অবাক হয়ে তা তাকিয়ে দেখলেন । তার জানতে ইচ্ছা হচ্ছিলো এ নিয়ে কিন্ত্ত তার প্রজ্ঞা তাকে বাধা দিল । দাউদ আলাইহিস সালাম বর্ম পরে বললেন , যুদ্ধের জন্য এটা কেমন চমৎকার ?
লুকমান আ: বললেন , নীরবতা আসে জ্ঞান থেকে আর খুব কম মানুষই এর চর্চা করে ।
মিথ্যা অনেক রকমের । রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন , অবশ্যই বান্দা এমন একটা মাত্র কথা বলতে পারে যা তাকে আগুনের এত নিচে ফেলবে , যেটার গভীরতা পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে দূরত্ব যত , ততটুকু ( বর্ণনায় ইমাম বুখারী ,ইমাম মুসলিম ; সূত্র আবু হুরায়রা ) ।
এর সাথে তুলনীয় আরেকটি বিষয় হলো : কেউ কারো সাথে তর্ক করতেই থাকে এজন্য যে , অন্যের দোষ সবার সামনে তুলে ধরবে ও সবার মনোযোগ নিজের দিকে আকর্ষণ করবে ।
একজন তার জিহবা দিয়ে যা খারাপ তা করতে মানা করবে ও স্পষ্ট বোঝাবে কোনটা ভাল । তার থেকে এটা যদি গ্রহণ করা না হয় , তবে সে তর্ক এড়িয়ে যাবে । সে এমন করবে যদি তা ধর্ম নিয়ে কিছু হয় । যদি দুনিয়াদারীর কোন বিষয় হয় , তবে তর্কের কোন কারণ থাকতে পারে না । এই বিষয়ে সফল হতে হলে অহংকারবোধ , যে জন্য অন্যের চোখে আমরা ভাল হতে চাই , তা দূর করতে হবে ।
তর্ক করা থেকে খারাপ হলো লড়াই আর ঝগড়া করা । যে বিষয়ে জ্ঞান নেই , তা নিয়ে ঝগড়ার কথা এখানে বোঝানো হচ্ছে । যার যুক্তি দেখানোর যোগ্যতা আছে , সেও এটা এড়িয়ে চলবে ; কেননা এটা মনে ক্ষোভ ও হিংসার জন্ম দেয় , রাগ বাড়ায় । ফলে মানুষ একে অন্যকে অসম্মান করে ।
অতিরিক্ত অলংকারবহুল বাচনভঙ্গী
এটি তখন প্রযোজ্য যখন অতিরিক্ত অলংকারবহুল কথা আন্তরিকতা ছাড়া বলা হয় । মানুষকে ভাল কাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কোন খতীব বা অন্য কারো সুন্দর ভঙ্গীর কথা এর অন্তর্গত না । মূল কথা হলো , বক্তব্য যেন সহজ হয় ও মনকে উদ্বুদ্ধ করে ।
কেউ যখন মানানসই বা যথাযথ না এমন কথা স্পষ্ট ও সরাসরি বলে – যা অনেক সময় গানের মধ্যে করা হয় ।
রসিকতা - যদি সত্য হয় তবে রসিকতা নিষিদ্ধ নয় ; কেননা রাসূল صلى الله عليه وسلم কখনো কখনো কৌতুক করতেন ও সত্য ছাড়া কিছু বলতেন না । ঠাট্টার ছলে বলা সেই কথা সবসময়ই নিচের শর্ত পূরণ করতো : সত্য বলা ; নারী , শিশু ও দুর্বল পুরুষদের সাথে বলেছিলেন , যাদের মানসিক অবস্থার প্রেক্ষিতে একটু হালকা কথা বলা দরকার ছিল - তিনি সবসময় নয় বরং খুব কমই এটা করেছেন ।
কাউকে উপহাস করা ও তার মর্যাদা নষ্ট করা
কারো দোষ প্রকাশ করে তাকে উপহাস করলে তার সম্মান নষ্ট করা হয় । এটা সরাসরি কোন কথা বা কাজ দিয়ে করা হয় অথবা পরোক্ষভাবে তার দোষ তুলে ধরা হয় । এ দুটোই শরীয়াহতে নিষিদ্ধ ।
গোপন কিছু প্রকাশ করা , কথা না রাখা ও মিথ্যা শপথ
এসব কিছু হারাম ব্যতিক্রম হলো স্ত্রীর মন রক্ষায় ও যুদ্ধের সময় মিথ্যা বলা যায় ।
পরনিন্দা
কারো সম্পর্কে তার অনুপস্থিতিতে এমন কিছু বলা যা সে শুনলে পছন্দ করতো না । যেমন , তার কোন শারীরিক খুঁতের বর্ণনা দেয়া যে সে বেশি লম্বা , বেঁটে , মোটা , টাক মাথা , তার চোখ ট্যারা বা সে অন্ধ ইত্যাদি । তার পরিবারকে হেয় করে কিছু বলা যেমন তারা তেমন অভিজাত না ইত্যাদি । তার স্বভাব নিয়ে কিছু বলা যেমন সে বদমেজাজী । তার পোশাক নিয়ে কিছু বলা যেমন সে ময়লা বা কম দামী কাপড় পরে বা মাপমতো কাপড় পরে না ইত্যাদি ।
এসবের পক্ষে প্রমাণ হলো : রাসূল صلى الله عليه وسلم এর কাছে গীবত সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল । তিনি বলেন : এটা হলো তুমি তোমার ভাইকে নিয়ে এমন কথা বললে যা সে পছন্দ করে না । তাকে বলা হলো , যদি এমন হয় যা বলেছি সে তাই ?
তখন রাসূল صلى الله عليه وسلم বললেন , তুমি যা বললে সে যদি তাই হয় , তবে তা গীবত । আর যদি সে তা না , তবে তুমি অপবাদকারী ( বর্ণনায় মুসলিম , দাউদ , তিরমিযী ) ।
কারো মর্যাদা নানাভাবে নষ্ট করা যেতে পারে -- কথা দিয়ে , চোখের ইশারায় , আঙুল তুলে দেখানো বা লেখার মধ্য দিয়ে -- কলম হলো তোমার দুইটি জিহবার একটি ।
সবচেয়ে জঘন্য গীবত হলো মিথ্যা ধার্মিকদের গীবত । যখন কারো কথা বলা হয় , তারা বলে : আল্লাহকে ধন্যবাদ যে আমরা তার মতো নির্লজ্জ না বা আল্লাহ আমাদের মাফ করুন । এটা এজন্য যে তারা অন্য মানুষের সম্মান নষ্ট করার পাশাপাশি নিজেদের নিয়ে অহংকার করছে । এদের মধ্যে কেউ এমনো দুআ করে : আহা , এই বেচারা অনেক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে । আল্লাহ তাকে ও আমাদেরকে মাফ করুন । এভাবে সে মনের আসল ভাব লুকিয়ে রাখে ।
জেনে রাখো , যে গীবত শুনে সেও গীবতকারীর সাথী হলো । যদি সে গীবতের বিরুদ্ধে কিছু না বলে তবে সে এই পাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারলো না । যদি সে গীবতকারীর সামনে প্রতিবাদ করতে ভয় পায় , তবে কমপক্ষে সে মন থেকে গীবতকে ঘৃণা করবে । সম্ভব হলে সে ঐ জায়গা থেকে চলে যাবে বা আলোচনার বিষয় বদলে ফেলবে ।
রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন , মানুষের গোপন কথা যে ফাঁস করে , সে বেহেশতে যাবে না ( বর্ণনায় হুযায়ফা ) । এতে একের বেশি মানুষ জড়িত হয়ে পড়ে ।
কেননা তুমি কাউকে বললে ,অমুক তোমাকে নিয়ে এই কথা বলেছে - তখন এটা শুধু এর মধ্যে সীমিত থাকে না । বরং এটা এমন বিষয় ফাঁস করে , যা হওয়া উচিত ছিল না । এটা হতে পারে কথা বা কোন কাজ । এমন কী , তুমি যদি দেখো কেউ তার নিজের টাকা গর্তে ঢুকিয়ে রাখছে আর তুমি সেটা অন্যকে বলো , সেটা হবে কথা লাগানো । এ ধরণের কথা যে শুনবে - অমুক তোমার সম্পর্কে এই কথা বলেছে বা তোমার বিরুদ্ধে এই করেছে , তার উচিত হবে নিচের ছয়টি কাজ করা ।
১. যা শুনবে তা বিশ্বাস না করা । কেননা , যে কথা লাগায় সে পাপী ও তার কথা অস্বীকার করতে হবে ।
২. সে তাকে উপদেশ দিবে ও এই কাজ করতে মানা করবে ।
৩. সে আল্লাহর জন্য এই পাপীকে ঘৃণা করবে ; কেননা আল্লাহ তাকে ঘৃণা করেন ।
৪. একজন তার অনুপস্থিত ভাই সম্পর্কে খারাপ কোন ধারণা করবে না ।
৫. সে গোয়েন্দাগিরি করবে না ।
৬. অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না ; কেননা আল্লাহ বলেন : তোমরা একে অপরের গোপনীয় তথ্য খুঁজবে না ( সুরা হুজুরাত , ৪৯ : ১২ ) ।
সে অন্যকে যা করতে মানা করেছে , সেটা সে নিজেও করবে না ; এর মানে সে যা শুনেছে তা অন্য কাউকে বলে বেড়াবে না ।
দুইটি জিহবা থাকা
এটি ঘটে তখনই , যখন দু’জন শত্রুর মধ্যে একের কথা কেউ অন্যজনকে লাগায় । তাদের কারো কাছে গিয়ে সেটাই বলে, যা সে শুনতে চায় অথবা যাকে সাহায্য করবে বলে কথা দেয় বা সামনাসামনি তার প্রশংসা করে , কিন্ত্ত অন্য পক্ষের সামনে তার সম্মান নষ্ট করে কথা বলে ।
রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেছেন , সবচেয়ে খারাপ লোক হলো দুই মুখের লোকেরা যারা কারো কাছে একরকম চেহারা নিয়ে যায় ,আবার অন্যের কাছে অন্যভাবে যায় ( বর্ণনায় আবু হুরায়রা ; বুখারী ও মুসলিম শরীফ , দাউদ ) ।
মানুষের প্রশংসা করা
যে প্রশংসা করে ও যার প্রশংসা করা হয় , তাদের দুজনেরই ক্ষতি হয় । যে প্রশংসা করে তার পাপ হলো , সে যা বলে তা সত্য নাও হতে পারে ও তা নিশ্চিত করা যায় না । যেমন , সে বললো অমুক দুনিয়াদারির ভোগ – বিলাস থেকে দূরে থাকে । প্রশংসা করতে গিয়ে মাত্রা ছাড়িয়ে সে এমন কথা বলতে পারে, যা মিথ্যার পর্যায়ে চলে যায় । সে যার সম্পর্কে বলছে সে হয়তো তিরস্কারের যোগ্য । যার প্রশংসা করা হয় , সে অহংকারী বা উদ্ধত হয়ে উঠতে পারে । এ দুটিই খুব ক্ষতিকর ।
ধর্ম
এটা হয় কেউ যদি ধর্ম বিশেষ করে মহান আল্লাহ সম্পর্কে মারাত্মক কোন ভুল করে ফেলে ।
তাই ছাত্ররা জিহবা সংযত করবে , সময় বাঁচাবে , সত্য নিয়ে ব্যস্ত থাকবে , সামান্য বিষয়ে সময় নষ্ট করবে না , গঠণমূলক কিছু না করে জীবনটা অনর্থক পার করবে না। সেই সঠিক পথে পরিচালিত হয় যাকে আল্লাহ পথ দেখান ।
মানুষের সাথে মেলামেশা ও নির্জনতায় থাকা নিয়ে সবসময় মতভেদ দেখা দিয়েছে । কারো মত হচ্ছে মানুষের সাথে সবসময় মেলামেশা করা উচিত ; কারো মত হলো মানুষের ভীড় থেকে সবসময় নিজেকে সরিয়ে রাখতে হবে - যে যার মত নিয়ে খুশি ।
শেখ আল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ র: এই বিতর্ক সম্পর্কে বলেন : মানুষের সাথে মেলামেশা কখনো বাধ্যতামূলক , কখনো তা করতে সুপারিশ করা হয়েছে । একজন কখনো কখনো অন্য মানুষের সাথে মিশতে বাধ্য , অন্য সময়ে সে তাদের থেকে দূরে থাকতেও পারবে ।
ভাল কাজে ও ধর্মীয় ব্যপারে মানুষকে ভাল কাজে উৎসাহ দেয়ার জন্য তাদের সাথে মিশতে হয় । আবার কোন খারাপ কাজে সাহায্য করার জন্য তাদের সাথে মেলামেশা করা যাবে না ।
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত , ঈদ ও জুমআহ সালাত , চন্দ্রগ্রহণ , সূর্যগ্রহণের সময়কার সালাত , ইসতিসকার সালাত ( বৃষ্টির জন্য দুআ ) ইত্যাদি ইবাদত যা সবাই মিলে করে , সেগুলিতে অংশ নিতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল صلى الله عليه وسلم আদেশ দিয়েছেন ।
একইভাবে হজ্জের সময় মানুষের সাথে মেলামেশা , অবিশ্বাসীদের সাথে যেমন খাওয়ারিয ও বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধের সময় অংশগ্রহণ যদিও নেতা ও তার অনুসারীরা দূর্নীতিগ্রস্থ হয় । এ ধরণের আরো সমাবেশে অংশ নেয়া যাতে একজন বিশ্বাসী তার ঈমান দৃঢ় করতে পারে - হয় সে নিজে থেকে কল্যাণ লাভ করবে বা সে অন্যের উপকার করবে ।
একজন মানুষের কাছে নিজের জন্য এই সময় থাকবে, যাতে সে দুআ , যিকির , নিজের আমল নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও মনকে শুদ্ধ করতে পারে । এসব ব্যপারে অন্য কেউ তার সাথে অংশ নেবে না ।
এগুলি ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাসায় বা অন্য কোথাও করতে হবে যেমনটি তাউস বলেন : বাসায় আশ্রয় নেয়া কত না চমৎকার । এখানে থাকলে একজন তার দৃষ্টি ও জিহবাকে সংযত রাখতে পারে ।
মানুষের সাথে অনিয়ন্ত্রিতভাবে মেলামেশা বা তাদের থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া - এর কোনটাই ঠিক না । কতটুক মেলামেশা বা বিচ্ছিন্নতা একজনের জন্য দরকার ও তার জন্য ভাল , সেটা ঠিক করতে আরো অনেককিছু জানতে – বুঝতে হবে ।
উত্তম হলো অনেকরকম ইবাদতের মধ্য থেকে একজন গুরুত্ব অনুসারে তা বেছে নেবে। যেমন , কুরআন তেলাওয়াত থেকে সালাত উত্তম , যিকির থেকে কুরআন তেলাওয়াত উত্তম , দুআ থেকে যিকির ভাল । কখনো সময় বুঝে ইবাদত করা বেছে নিতে হয় যেমন ফজর ও আসরের সালাতের পরে কোন নফল সালাত আদায় না করে কুরআন তেলাওয়াত , যিকির ও দুআ পছন্দনীয় ইবাদত ।
অনেক সময় শারীরিক অবস্থান বিবেচনা করে ইবাদত বেছে নিতে হয় । রুকু ও সিজদাতে কুরআন তেলাওয়াত না করে যিকির ও দুআ করা বৈধ । তাওয়াফ করার সময় কুরআন তেলাওয়াত করা ঠিক কি না , সেটা নিয়ে মতভেদ আছে । স্থান বুঝে ইবাদত করতে হয় যেমন আরাফাত , মুজদালিফা , জামারাত , সাফা ও মারওয়ায় সালাত থেকে যিকির ও দুআ করা পছন্দীয় কাজ । মুসাফিরের জন্য কাবা ঘরে এসে সালাত থেকে তাওয়াফ করা উত্তম ; স্থানীয় বাসিন্দা যারা তাদের জন্য সালাতই উত্তম ।
ব্যক্তি ভেদে ইবাদত আলাদা হয় । যেমন পুরুষদের জন্য হজ্জ থেকে জিহাদ শ্রেষ্ঠ । নারীদের জন্য হজ্জই হলো জিহাদ । বিবাহিতা নারীর জন্য পিতার থেকে স্বামীর আনুগত্য করা উত্তম , অন্যদিকে অবিবাহিতা মেয়েদের জন্য পিতার আদেশ মানা কর্তব্য ।
সামর্থ্যের উপর ইবাদত কী করা হবে , তা নির্ভর করে । যা করতে একজন সমর্থ , তাই তার জন্য উত্তম , যেটা করা তার সাধ্যের বাইরে তা করার থেকে - যদিও হয়তো ঐ ইবাদতের গুরুত্ব বেশি ।
কিছু মানুষ অতিরিক্ত ইবাদত করতে চায় ও নিজের ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে সীমা ছাড়িয়ে ফেলে । কিছু মানুষ বিশেষ কোন ইবাদতকে নিজেদের জন্য উত্তম মনে করে এবং তাদের চারপাশে যারা থাকে তাদেরকেও তারা সেটা করতে বলে ।
আল্লাহ তাঁর রাসূল صلى الله عليه وسلم কে কিতাব ও জ্ঞান দিয়ে পাঠিয়েছেন , পাঠিয়েছেন তাঁর দাসদের জন্য রহমত ও পথপ্রদর্শক হিসাবে । যা ভাল তাই করতে মুসলমানদের আদেশ দেয়া হয়েছে ; তাই একজন মুসলমান অবশ্যই অন্যদের ভাল চাইবে ।
ইসলামি জ্ঞানে যারা সমৃদ্ধ ( আল্লাহ তাদের উপর সন্ত্তষ্ট হোন ) - মানুষের সাথে তারা মিশবেন ও তাদেরকে শেখাবেন । একই সাথে তারা হবেন সবচেয়ে সাবধানী মানুষ , যেন সময়ের অপচয় না হয় । যার মন মরে গিয়েছে , তার সাথে মেলামেশা করা যাবে না – যেন সে এক ডাকাত ; বরং এমন কারো সাথে মিশতে হবে , যে ঈমান বাড়াতে ও নেক আমলে সাহায্য করবে ।
ইবনে আল কাইয়্যিম বলেন : যার মন মরে গিয়েছে , যত দূর সম্ভব তার অনুপস্থিত থাকার সুবিধা গ্রহণ করো । যদি তোমাকে তাকে সাথে নিয়ে পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয় , তবে তুমি তার দিকে বাহ্যিক মনোযোগ দাও ; তোমার মনকে তার থেকে দূরে রাখো ; তোমার ভিতরের সত্ত্বাকে তার থেকে আলাদা রাখো ; তোমার মনোযোগ যেন সে নষ্ট করতে না পারে এমন বিষয় থেকে , যা তোমার মনোযোগ পাওয়ার দাবী রাখে ।
যে তোমার কোন কল্যাণ করতে পারবে না , তার সাথে বেশি ব্যস্ত থাকা ; সময় , শক্তি ও মনোযোগ তার পেছনে যেটা নষ্ট হয় - তা তোমার জন্য বড় ক্ষতি ।
যদি তোমাকে এসব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয় - আর তোমাকে অবশ্যই এসব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে - তার সাথে এমন ব্যবহার করো যা আল্লাহ চান - যতদূর সম্ভব তার সাথে ধৈর্যশীল হও । তোমাদের একসাথে থাকা যেন আল্লাহর কাছে যাওয়ার উপায় হয় , কোন কল্যাণ যেন এ থেকে আসে - ক্ষতি না । এমনভাবে তার সাথে থাকা যেন , রাস্তায় চলার সময় তোমাকে কেউ থামতে বলেছে ও তাকে তোমার সাথে নিতে বলেছে ।
এটা নিশ্চিত করো যে , তুমি তাকে এগিয়ে দেবে এবং সে তোমাকে গন্তব্যে নিয়ে যাবে না ।
যদি সে এতে রাজী না হয় ও তার সাথে একসাথে থাকলে তোমার কোন লাভ না হয় , তবে তার জন্য থামবে না ; তাকে বিদায় জানাও ; এমনকী তার দিকে পিছন ফিরে তাকাবেও না যেন সে একজন ডাকাত - আসলে সে যেই হোক না কেন ।
তাই তোমার মনকে বাঁচাও , তোমার দিন – রাত কিভাবে কাটাচ্ছো সে নিয়ে সাবধান হও ।
তাই ছাত্ররা অবশ্যই সামাজিক মেলামেশা থেকে দূরে থাকবে । কেননা , এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলির একটি যা সে করতে পারে - বিশেষ করে বিপরীত লিঙ্গের সাথে মেলামেশা ও যারা হালকা বিনোদনে সময় বেশি নষ্ট করে , তাদের বেলায় এটা বেশি প্রযোজ্য । এরা তোমার সময়কে চুরি করবে অর্থাৎ এরা তোমাকে প্রভাবিত করায় তুমি সময়ের অপচয় করবে ।
সামাজিক মেলামেশার ক্ষতির অন্তর্ভুক্ত হলো কোন কল্যাণ ছাড়া জীবন পার করা ; একই সাথে তোমার সম্পদ ও ধর্মীয় অঙ্গীকার ক্ষতিগ্রস্থ হবে , যদি ভুল লোকের সাথে উঠা – বসা করো ।
ছাত্ররা তাই মানুষের সাথে বেশি মেলামেশা করবে না । ব্যতিক্রম হলো যারা তার থেকে উপকার পেতে পারে বা সে তাদের থেকে কোন কল্যাণ লাভ করতে পারে ।
যদি কেউ তার বন্ধু হতে চায় যে তার সময় নষ্ট করবে , কোন উপকারে আসবে না বা তার থেকে উপকার লাভ করবে না , লক্ষ্যে যেতে কোন সাহায্য করবে না , তাহলে ছাত্রটির উচিত হবে সম্পর্ক গভীর হওয়ার আগে ভদ্রভাবে এই বন্ধুত্ব শেষ করা । কেননা বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে সম্পর্ক শেষ করা কঠিন হবে ।
জ্ঞানীরা একটি কথা প্রায়ই বলে থাকেন :
কিছু নিয়ে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার থেকে , তা নিতে রাজী না হওয়া সহজ কাজ । যদি তার কোন বন্ধুর দরকার থাকে , তবে সে বন্ধু হবে সঠিক পথের মানুষ , ধার্মিক , সাবধানী , বুদ্ধিমান , কল্যাণকর , বড় কোন দোষ যার মধ্যে নেই , মানিয়ে নিতে পারে , সহজে ঝগড়া করে না , কিছু ভুলে গেলে মনে করিয়ে দেয় , দরকারে সাহায্য করে ও দু:খে সান্ত্বনা দেয় ।
ইবনে কুদামাহ র: বলেন , জেনে রাখো সবাই তোমার বন্ধু হওয়ার যোগ্য নয় । তোমার সম্ভাব্য বন্ধুকে যাচাই করে দেখো , তার সেই যোগ্যতা আছে কি না ।
তোমার বন্ধু যে হবে তার মধ্যে অবশ্যই নিচের পাঁচটি গুণ থাকবে --
১. বুদ্ধিমান হবে । বোকার সাথে বন্ধুত্বে কোন কল্যাণ নেই , কেননা সে উপকার করতে চাইলেও তোমার কেবল ক্ষতিই করবে । বুদ্ধিমান বলতে বোঝাচ্ছি যে কোন কিছুর প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারে বা কিছু বোঝালে বোঝে ।
২. তার আদব – কায়দা ভাল হবে ও এটা অপরিহার্য গুণ ।যে শুধুই বুদ্ধিমান , সে রাগ বা ইচ্ছার বশ হয় । ফলে তার বন্ধুত্ব কল্যাণকর নয় ।
৩. সে মুনাফিক হবে না । এমন মানুষ আল্লাহকে ভয় পায় না ও যে আল্লাহকে ভয় করে না , তাকে বিশ্বাস করা যায় না ।
৪. সে নতুন কিছু চালু করবে না । কেননা , তার চালু করা রীতি তোমার উপর খারাপ প্রভাব ফেলার ভয় থাকবে ।
উমর বিন আল খাত্তাব رضي الله عنهم বলেন , তোমার সত্য পথের ভাইদের সাথে লেগে থাকো । তুমি তাদের সাথে শান্তিতে থাকতে পারবে , কেননা যখন কোন কষ্ট নেই , তখন তাদের সাথে থাকাটা আনন্দময় আর কঠিন সময়ে তুমি তাদের উপর ভরসা করতে পারবে ।
তোমার ভাই সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল ধারণা রাখবে যতক্ষণ না সে এমন কিছু নিয়ে আসে , যা তোমাকে সাবধান করবে তার বিষয়ে ।
তোমার শত্রুকে এড়িয়ে চলো । যাকে বিশ্বাস করা যায় না , তার সাথে বন্ধুত্ব করা থেকে সাবধান থাকবে । যে আল্লাহকে ভয় করে না , তাকে বিশ্বাস করা যায় না ।
যে নীতিহীন , তার সাথে বন্ধুত্ব করবে না । কেননা , সে তোমাকে নীতিহীনতা শেখাবে ; আর এমন লোকের কাছে তোমার গোপন কথা বলবে না ।
গোপন কথা নিয়ে আলোচনা শুধু তার সাথেই করতে পারো , যে আল্লাহকে ভয় করে । ইয়াহিয়া বিন মুরাদ বলেন : বন্ধু হচ্ছে সে যাকে তোমার জন্য দুআ করার কথা মনে করিয়ে দিতে হবে না । তাকে তোষামোদ করা বা মন জয় করার চেষ্টা করতে হবে না এবং তার কাছে কোন কিছু নিয়ে মাফ চাওয়ার দরকার নেই ।
উমর বিন আল খাত্তাব رضي الله عنهم বলেন , তোমার সত্য পথের ভাইদের সাথে লেগে থাকো । তুমি তাদের সাথে শান্তিতে থাকতে পারবে , কেননা যখন কোন কষ্ট নেই , তখন তাদের সাথে থাকাটা আনন্দময় আর কঠিন সময়ে তুমি তাদের উপর ভরসা করতে পারবে । তোমার ভাই সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল ধারণা রাখবে যতক্ষণ না সে এমন কিছু নিয়ে আসে , যা তোমাকে সাবধান করবে তার বিষয়ে ।
তোমার শত্রুকে এড়িয়ে চলো । যাকে বিশ্বাস করা যায় না , তার সাথে বন্ধুত্ব করা থেকে সাবধান থাকবে । যে আল্লাহকে ভয় করে না , তাকে বিশ্বাস করা যায় না ।
যে নীতিহীন , তার সাথে বন্ধুত্ব করবে না । কেননা , সে তোমাকে নীতিহীনতা শেখাবে ; আর এমন লোকের কাছে তোমার গোপন কথা বলবে না ।
গোপন কথা নিয়ে আলোচনা শুধু তার সাথেই করতে পারো , যে আল্লাহকে ভয় করে । ইয়াহিয়া বিন মুরাদ বলেন : বন্ধু হচ্ছে সে যাকে তোমার জন্য দুআ করার কথা মনে করিয়ে দিতে হবে না । তাকে তোষামোদ করা বা মন জয় করার চেষ্টা করতে হবে না এবং তার কাছে কোন কিছু নিয়ে মাফ চাওয়ার দরকার নেই ।
উমর বিন আল খাত্তাব رضي الله عنهم বলেন , তোমার সত্য পথের ভাইদের সাথে লেগে থাকো । তুমি তাদের সাথে শান্তিতে থাকতে পারবে , কেননা যখন কোন কষ্ট নেই , তখন তাদের সাথে থাকাটা আনন্দময় আর কঠিন সময়ে তুমি তাদের উপর ভরসা করতে পারবে । তোমার ভাই সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল ধারণা রাখবে যতক্ষণ না সে এমন কিছু নিয়ে আসে , যা তোমাকে সাবধান করবে তার বিষয়ে ।
তোমার শত্রুকে এড়িয়ে চলো । যাকে বিশ্বাস করা যায় না , তার সাথে বন্ধুত্ব করা থেকে সাবধান থাকবে । যে আল্লাহকে ভয় করে না , তাকে বিশ্বাস করা যায় না ।
যে নীতিহীন , তার সাথে বন্ধুত্ব করবে না । কেননা , সে তোমাকে নীতিহীনতা শেখাবে ; আর এমন লোকের কাছে তোমার গোপন কথা বলবে না ।
গোপন কথা নিয়ে আলোচনা শুধু তার সাথেই করতে পারো , যে আল্লাহকে ভয় করে । ইয়াহিয়া বিন মুরাদ বলেন : বন্ধু হচ্ছে সে যাকে তোমার জন্য দুআ করার কথা মনে করিয়ে দিতে হবে না । তাকে তোষামোদ করা বা মন জয় করার চেষ্টা করতে হবে না এবং তার কাছে কোন কিছু নিয়ে মাফ চাওয়ার দরকার নেই ।
তোমাদের সবারই ভাইয়ের উপর নির্দিষ্ট কিছু দাবী আছে । তার কোন দরকার থাকলে তা সাধ্যমত পূরণ করবে । কমপক্ষে যা অবশ্যই করতে হবে তা হলো : যখন সে কিছু চাইবে , তখন সাধ্যের মধ্যে হলে হাসিমুখে তার প্রয়োজন মেটাবে । ভাই চাওয়ার আগেই যদি খেয়াল করে তার প্রয়োজন মেটাও , তবে তা আরো ভাল । তোমার নিজের যা দরকার , তার উপর যদি ভাইয়ের দরকারকে প্রাধান্য দাও , তাহলে তা সবচেয়ে ভাল ।
তার দোষ সম্পর্কে তার সামনে বা আড়ালে কিছু বলবে না - এ নিয়ে নীরব থাকো ।
তার সাথে মতভেদ করবে না , ঝগড়া করবে না । তার গোপন কথা যা সে প্রকাশ হোক চায় না , তা জানতে চাইবে না । যদি তুমি দেখো সে কোথাও যাচ্ছে , জানতে চাইবে না সে কোথায় যাচ্ছে । কেননা সে হয়তো তা অন্যকে জানাতে চায় না । তার গোপন কথা কাউকে বলবে না ; যদিও পরে তার সাথে কখনো ঝগড়া হয় । তার বন্ধু ও পরিবারের লোকদের অপমান করবে না । যদি অন্য কেউ তার সম্পর্কে অপমানজনক কথা বলে , সেটা তার কাছে বলবে না ।
সে বিরক্ত হবে এমন কিছু তাকে বলবে না , ব্যতিক্রম হলো যদি এমন কিছু হয় যা অবশ্যই বলা উচিত যেমন ভাল কাজের নির্দেশ দেয়া , খারাপ কাজ করতে মানা করা । এতে তার উপকারই করা হলো । জেনে রাখো এমন বন্ধু কখনোই পাবে না , যার কোন দোষ নেই । তাই এমন বন্ধু খুঁজবে যার দোষের চেয়ে গুণ বেশি । যদি তুমি নিজের দোষ – গুণ বিচার করার চেয়ে অন্যের সমালোচনা বেশি করো , তাহলে আল্লাহর এই বাণী তোমার জন্য প্রযোজ্য হবে : যারা লোকের কাছ থেকে ওজনকালে পুরো মাপে নেয় , কিন্ত্ত যখন তাদের জন্য ওজন করে তখন মাপে কম দেয় (সুরা মুতাফফিফিন ; ৮৩ : ২-৩ ) ।
বিনা দরকারে তর্ক – বিতর্ক করা দুই ভাইয়ের মধ্যে ঘৃণা ও হিংসা সৃষ্টির অন্যতম কারণ । তখন দুই পক্ষই নিজেকে অন্যের থেকে সেরা ও বেশি বুদ্ধিমান প্রমাণ করতে চায় , অন্যের সম্মান নষ্ট করতে চায় ।
যে ঝগড়া করা বেছে নেয় , সে তার ভাইকে বোকা ও অযোগ্য প্রমাণ করতে চায় আর এসবই হলো অন্যের সম্পর্কে মিথ্যা বলা । এতে মন উত্তেজিত হয় ও একে অন্যকে ঘৃণা করে । এসব হলো ভ্রাতৃত্ববোধের বিপরীত।
ভ্রাতৃত্ববোধের দাবী হলো যা বলা উচিত না , তা যেমন বলবে না তেমনি, যা বলা উচিত তা বলবে । এটাই হলো ভ্রাতৃত্ববোধের অধিকার ; কেননা যে বোবার বন্ধু হতে চায় , সে কবরস্থানে যাবে ।
ভ্রাতৃত্ববোধের দৃষ্টিভঙ্গী হলো তুমি তোমার ভাইয়ের থেকে কল্যাণ লাভ করবে । তাই ভ্রাতৃত্ববোধকে শক্তিশালী করবে তার খোঁজখবর নিয়ে , তাকে বুঝতে দিবে যে তুমি তাকে নিয়ে ভাবো , তার সুখবরে খুশি হও । তুমি তার সম্পর্কে ভাল যা জানো , তা অন্যদের কাছে বলবে । তার পরিবার , সন্তান , কাজ , স্বভাব , বুদ্ধি , চেহারা , ব্যক্তিত্ব – ইত্যাদি যা নিয়ে বললে সে খুশি হয় তা বলবে , তবে বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যাবে না ও মিথ্যা বলবে না ।
একইভাবে কেউ যদি তার সম্পর্কে ভাল কথা বলে , সেটা তাকে জানাবে ও তাকে বুঝতে দিবে তার প্রশংসা শুনে তুমি খুশি হয়েছো । তা না হলে এটা হিংসা করার মতো হবে । তোমার জন্য সে যা বলবে , তার জন্য তাকে ধন্যবাদ দেবে । যদি কেউ তার সম্পর্কে খারাপ কথা বলে , তবে তার প্রতিবাদ করে ভাইয়ের সম্মান রক্ষা করবে । ভাইদের একে অন্যের উপর এই অধিকার আছে যে তারা একে অন্যকে বাঁচাবে ও সাহায্য করবে ।
তুমি তাকে শেখাবে ও উপদেশ দেবে । কেননা , তার যেমন অর্থের দরকার আছে , তেমনি জ্ঞানেরও দরকার আছে । তাই তুমি যদি জ্ঞান সম্পদ পাওয়ার মতো সৌভাগ্যবান হয়ে থাকো , তাহলে তা থেকে তাকে কিছু দাও ও তাকে পথ দেখাও ।
তাকে তুমি গোপনে উপদেশ দিবে । তুমি তাকে উপদেশ দিচ্ছো , না কি তাকে দোষ দিচ্ছো , তা নির্ভর করে সেটা গোপনে বলছো না সবার সামনে বলছো । একইভাবে তুমি তার দোষ উপেক্ষা করছো , না তার সাথে আপোস করছো তা নির্ভর করে , কিভাবে বা কোন উদ্দেশ্যে তা করছো ? যদি ধর্মীয় কল্যাণের কথা ভেবে বা এতে পরে তার কোন দীর্ঘমেয়াদী উপকার আছে এই ভেবে উপেক্ষা করো , তবে তুমি আপোস করছো না । যদি তুমি নিজের স্বার্থে তার দোষ এড়িয়ে যাও , তাহলে তুমি আপোস করছো ।
ভাই বেঁচে থাকতে ও তার মৃত্যুর পরে তুমি ভাইয়ের জন্য সেই দুআ করবে যা নিজের জন্য চাও । । রাসূল صلى الله عليه وسلم বলেন , ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য তার মুসলিম ভাই যে দুআ করে , তা কবুল হয় । ভাইয়ের জন্য কেউ যখন দুআ করে , একজন ফিরিশতা তা লিখে রাখে ও বলে : হে আল্লাহ , এই দুআ কবুল করুন ও একে একই জিনিষ দান করুন যা সে তার ভাইয়ের জন্য চেয়েছে ( বর্ণনায় আবু আদ দারদা رضي الله عنهم )।
আবু দারদা رضي الله عنهم নাম ধরে ধরে বলে অনেকের জন্য দুআ চাইতেন । একইভাবে আহমদ বিন হাম্বল ভোরে নির্দিষ্ট ছয়জনের জন্য দুআ করতেন । তুমি একটি চুক্তি করবে যে , অবশ্যই তোমার ভাইকে তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ভালবেসে যাবে ও সে মারা যাবার পরে তার পরিবার ও বন্ধুদের ভালবাসবে ।
তুমি যদি তার থেকে টাকা – পয়সা ও মর্যাদায় অনেক উঁচুতে থাকো তবুও তার সাথে বিনীত ব্যবহার করবে । এই চুক্তির মধ্যে এটাও থাকবে যে তুমি তার গীবত শুনবে না ও তার শত্রুর সাথে বন্ধুত্ব করবে না ।
তুমি তাকে এমন কঠিন কাজ দেবে না , যা সে করতে পারবে না । বরং তুমি তাকে তার দায়িত্ব ও বোঝা থেকে মুক্তি দেয়ার চেষ্টা করবে । তার বন্ধুত্বকে ব্যবহার করে তার কোন সম্পদ অধিকারে নেবে না । তোমাকে কোন সাহায্য করার জন্য তাকে চাপ দেবে না । বরং শুধু আল্লাহর সন্ত্তষ্টির জন্য তাকে ভালবাসবে । তার সাথে সহজ – সরল এমন সম্পর্ক রাখবে যেন তুমি তার কাছে যা চাইতে পারো , সেও তেমনি তার দরকারে চাইতে পারে ।
জাফর বিন মুহাম্মদ বলেন : তারাই সবচেয়ে কঠিন প্রকৃতির বন্ধু যারা আমার উপর ভারী বোঝা হয়ে আছে ও আমি তাদেরকে এড়িয়ে চলতে চাই । সবচেয়ে সহজ বন্ধু তারাই যাদের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি কোনটাই ভারী বোঝা হয়ে দাঁড়ায় না ।
সময় ও মনকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য বন্ধু নির্বাচনে জ্ঞানের পথের ছাত্ররা তাই সাবধান হবে । ধর্মীয় জ্ঞান ও পরকালের জন্য কল্যাণকর হবে , এমন কাউকে সে বন্ধু হিসাবে বেছে নিবে ।
আল খাওয়ারিযমী র: বলেন : যে অলস তার সাথে বন্ধুত্ব করবে না ; যারা দৃঢ় তাদেরকেও অলস মানুষেরা প্রভাবিত করে ফেলে । কতজন সঠিক পথের মানুষ নীতিহীনদের সাথে বন্ধুত্বের কারণে ক্ষতির শিকার হয়েছে ? জ্বলন্ত কয়লা ঠাণ্ডা হয়ে যায় যখন ছাইতে ফেলা হয় ।
ইবনে আল কাইয়্যিম র: বলেন , জ্ঞানের মর্যাদা নির্ভর করে সেটা কার কাছ থেকে শেখা হলো , শেখা বিষয়টির পক্ষে দলীল শক্তিশালী কি না , বিষয়টি শেখা কতটুকু জরুরী ছিল ও এর উপকারীতা কতটুকু – সেসবের উপর ।
কোন সন্দেহ নেই যে সবচেয়ে মহান ও চমৎকার জ্ঞান হলো আল্লাহ সম্পর্কে জানা – যিনি একমাত্র প্রভু , জগতসমূহের মালিক , এই দুনিয়া ও বেহেশতের অধিবাসীদের রিযিকদাতা , যিনি সত্য , নিখুঁত , তাঁর মতো বা তাঁর মতো গুণের অধিকারী কেউ না ।
আল্লাহ , তাঁর নাম , গুণ , বৈশিষ্ট্য , কাজ ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান নি:সন্দেহে সব জ্ঞানের থেকে শ্রেষ্ঠ । আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান যেমন সবচেয়ে মহান জ্ঞান , তেমনি তিনি হলেন সব জ্ঞানের ভিত ।
সব কিছুর অস্তিত্ব যেমন আল্লাহর উপর নির্ভরশীল , তেমনি সব জ্ঞান তাঁর উপর নির্ভরশীল ।
কোন কিছু সম্পর্কে পুরোটা জানতে হলে , এই জ্ঞান বা বিষয়কে যিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁর সম্পর্কেও জানা দরকার । আল্লাহর উপর সৃষ্ট সব কিছুই অস্তিত্বের জন্য নির্ভরশীল । তাই আল্লাহর গুণাবলী ও কাজ সম্পর্কে জানলে একজন বুঝবে , আল্লাহ ছাড়া আর কী কী অস্তিত্বশীল । কেননা , আল্লাহ হলেন সবকিছুর রব ও মালিক । আল্লাহ সম্পর্কে জানা হচ্ছে সব জ্ঞানের ভিত ও উৎস । তাই যে আল্লাহকে জানে , সে আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরও জানবে ।
যে আল্লাহ সম্পর্কে জানে না , সে অন্যদের সম্পর্কে জানবে না যেমনটি আল্লাহ বলেছেন : এবং তাদের মতো হয়ো না যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে ; ফলে আল্লাহ ওদের ( নিজ নিজ অবস্থা ) ভুলিয়ে দিয়েছেন ( সুরা হাশর ; ৫৯: ১৯ ) ।
এই আয়াত নিয়ে চিন্তা - ভাবনা করো , তাহলে তুমি বুঝতে পারবে এতে আছে এক চমৎকার ও মহৎ অর্থ , সেটা হলো যে আল্লাহকে ভুলে যায় , সে নিজেকেও ভুলে যাবে । তার কল্যাণ কিসে আছে তা সে বুঝতে পারবে না , পথভ্রষ্ট হয়ে সে বন্য প্রাণীর মতো হয়ে যাবে । বরং বলা যায় , বন্য প্রাণীও এমন মানুষ থেকে ভাল , কেননা তারা তাদের স্রষ্টার কাছ থেকে যা শিখেছে তাতে বেশি দৃঢ় থাকে এই পথহারা মানুষদের চেয়ে । এই পথহারা মানুষেরা ফিতরা বা স্বাভাবিক নিয়মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে , নিজেদের রবকে ভুলে গিয়েছে । পরিণামে নিজেকে , নিজের আত্মাকে , নিজের বৈশিষ্ট্য , কিভাবে তা পরিপূর্ণতা লাভ করবে ও পবিত্র থাকবে – এসব কিছু সে ভুলে গিয়েছে ।