আদব (জ্ঞান চর্চাকারীর আদব-কায়দা)

:sl:



আল্লাহ বলেন , তুমি তার আনুগত্য করো না যার মনকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি , যে নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে ও যার কাজ সীমা ছাড়িয়ে যায় ( সুরা কাহফ ; ১৮ : ২৮ ) । সে রবকে ভুলেছে , তাই নিজের আত্মাকে ভুলেছে । তাই নিজের জন্য যা ভাল , নিজের মন ও আত্মাকে শুদ্ধ করবে যা , তা সে গ্রহণ করতে পারে না । তার মনে সন্দেহ থাকে , সে পথ হারিয়ে ফেলেছে ও ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে ।

মূল কথা হলো : আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান হলো সব জ্ঞানের ভিত । দাসকে জানতে হবে কিভাবে সে এই দুনিয়া ও পরের দুনিয়ায় সফল হবে । আল্লাহ সম্পর্কে না জানলে সে নিজের কল্যাণ কোথায় , তার পূর্ণতা কোথায় , কিভাবে সে সফল হবে সে সবও জানতে পারবে না । তাই আল্লাহ সম্পর্কে জানা তার জন্য সুখের , আল্লাহ সম্পর্কে না জানার পরিণাম হলো খুব কষ্ট ও বেদনার ।

আল্লাহকে ভালবাসা , সবসময় তাঁর যিকির করা ও তাঁকে সন্ত্তষ্ট করার চেয়ে আর কোন কিছুই দাসের জন্য উত্তম ও পছন্দনীয় হতে পারে না , এছাড়া দাস সম্পূর্ণ হয় না । এজন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে , ওহী নাযিল হয়েছে , নবী – রাসূলদের পাঠানো হয়েছে , আসমান ও দুনিয়া বানানো হয়েছে , বেহেশত ও দোযখ সৃষ্টি হয়েছে , হারাম – হালালের নিয়ম হয়েছে , পবিত্র ঘর বানানো হয়েছে ও হজ্জের জন্য জায়গা ঠিক করা হয়েছে - যা আল্লাহকে সন্ত্তষ্ট করে ।
 
:sl:



জ্ঞান ছাড়া এসব বিষয়ের ভিতরে ঢোকা যায় না । যারা আল্লাহ সম্পর্কে বেশি জানে , তারাই তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে । তাই যে আল্লাহকে জানবে , সে তাঁকে ভালবাসবে । যে দুনিয়া ও এর মানুষ সম্পর্কে জ্ঞান রাখে , সে এসবের প্রতি আগ্রহ হারাবে । তাই জ্ঞান সেই দরজা খুলে দেয় যাতে রয়েছে সৃষ্টির রহস্য ।

তাই জ্ঞানের ছাত্ররা সেটা দিয়ে জ্ঞান চর্চা শুরু করবে , যা তাদের এখন ও সবসময়ই দরকার লাগবে - আল্লাহ বিষয়ে জ্ঞান , তাঁর নাম , বৈশিষ্ট্য ও কাজ । সে যদি আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারে , তাহলে সে কুরআন ও সুন্নাহর জ্ঞান সেই নিয়মে চর্চা করবে , যা উম্মাহর প্রথম যুগের মুসলমানরা করেছেন ।

তাহলে সে রাসূল صلى الله عليه وسلم যেভাবে শিখিয়েছেন , সেভাবে শিখতে পারবে ।


ইবনে আল কাইয়্যিম র: বলেন , রাসূল صلى الله عليه وسلم এর পক্ষ থেকে কিছু বর্ণনা করা দুই ভাবে হয় :


১. কারো মাধ্যমে বা মধ্যস্থতাকারীর সহায়তায় ,

২. কারো মাধ্যম ছাড়া ।

সাহাবীরা কোন মাধ্যম ছাড়া সরাসরি রাসূল صلى الله عليه وسلم থেকে জ্ঞান অর্জন করেছেন , তারা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ । উম্মাহর অন্য কারো পক্ষে এদের সমান মর্যাদায় আসা সম্ভব নয় । তবে সেই সফল হবে , যে তাদের দেখানো পথে চলবে । যা কিছু এই পথ থেকে তাদের সরিয়ে নিতে পারে , সে সব থেকে সে দূরে থাকবে ।

নইলে তার অবস্থা হবে এমন - যে মরুভূমিতে মৃত্যুর ফাঁদ ছড়িয়ে আছে , সেখানে যেন সে পথ হারিয়ে উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।


তাই এর চেয়ে ভাল আর কী থাকতে পারে যার জন্য এমন মানুষেরা সবার আগে সেদিকে অর্থাৎ রাসূল صلى الله عليه وسلم ও সাহাবীদের দেখানো পথে ছুটে যাবে না ?
 
:sl:



আল্লাহর শপথ , এই সাহাবীরা যেন জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ও সেরা পানীয় পান করেছে ও তারা ইসলামের মূল ভিতকে সমর্থন
করেছে । তারা যা শিখেছেন , তার কোনকিছু তারা পরের যুগের মানুষদের জন্য ব্যাখ্যা না করে যান নি । তারা মানুষের মনকে খুলে দিয়েছেন কুরআনের ন্যায়বিচার ও ঈমান দিয়ে ; তারা দেশ জয় করেছেন তরবারী ও জিহাদ দিয়ে ; তারা যে জ্ঞান অর্জন করেছেন রাসূল صلى الله عليه وسلم থেকে , তার সবকিছুই তাবেয়ীদের দিয়ে গিয়েছেন ।

তাদের ইসনাদ ছিল রাসূল صلى الله عليه وسلم , জিবরাইল আলাইহিস সালাম ও জগতসমূহের রব আল্লাহ থেকে , আর এটাই সর্বোচ্চ মানের ও বিশ্বাসযোগ্য ইসনাদ ।

তারা বলেন , এটা রাসূল صلى الله عليه وسلم এর আমনত যা আমাদের কাছে আছে , আমরা তোমাদের কাছে এই আমানত দিয়ে গেলাম । এটা আল্লাহ তাঁর রাসূল صلى الله عليه وسلم ও আমাদের উপর দায়িত্ব দিয়েছিলেন । আমরা এই দায়িত্ব তোমাদের দিয়ে গেলাম।

তাবেয়ীনরা দৃঢ়ভাবে নিয়ম মেনে জ্ঞানের পথে চলেছেন ও সঠিকভাবে রাসূল صلى الله عليه وسلم ও সাহাবীদের দেখানো পথ অনুসরণ করেছেন । এরপর তাদের অনুসারীরা একই পথে আবর্তিত হয়েছেন , সেরা কথা ও প্রশংসনীয় বৈশিষ্ট্যগুলির দিকে পরিচালিত হয়েছেন ।


যারা তাদের আগে এসেছিলেন , তাদের সাথে তুলনা করলে তাবেয়ী ও তার পরে যারা এসেছেন তাদের অবস্থান এমন , যা আল্লাহ যিনি সবচেয়ে সত্যবাদী বলেছেন : বেশিরভাগ হবে পুর্ববর্তীদের মাঝ থেকে ও অল্প সংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে
( সুরা ওয়াকিয়াহ ; ৫৬ : ১২-১৩ ) ।


এরপর আসলো শীর্ষস্থানীয় চিন্তাবিদরা আশীর্বাদপ্রাপ্ত চতুর্থ শতাব্দী থেকে যা সম্পর্কে একটি নির্ভরযোগ্য বর্ণনা এসেছে আবু সাঈদ , ইবনে মাসুদ , আবু হুরায়রা , আয়শা র: ও ইমরান বিন হুসাইন থেকে । তারা সম্মানিত পূর্ববর্তীদের পথ ধরে চলেছেন সব বিষয়ে , তাদের উজ্জ্বল আলোর ওয়ারিশ এরা, আল্লাহর ধর্ম এদের অন্তর ও আত্মার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান ছিল । তাই এসবের উপর তারা অন্য কারো যৌক্তিক মতামত , কারো অন্ধ অনুসরণ বা কোন যুক্তিপূর্ণ উপস্থাপনাকে প্রাধান্য দেন নি ।

 
:sl:



সারা দুনিয়ায় তারা সেরা আলো হিসাবে বিবেচিত হয়েছিলেন এবং অন্য সব মানুষের মাঝে আল্লাহ তাদেরকে সত্যবাদিতার গুণ দান করেছিলেন। এরপর পরবর্তী প্রজন্ম তাদের পদক্ষেপ অনুসরণ করেছেন এবং তাদের দৃঢ় ও সঠিক পথের নিয়মকানুন সমুন্নত রেখেছেন । তারা কোন ব্যক্তি বা দলের প্রতি অন্ধ আনুগত্য দেখান নি। তারা সহীহ দলীল প্রমাণে সন্ত্তষ্ট ছিলেন ; যেখানেই সত্যকে পেয়েছেন সেখান থেকেই সত্যকে গ্রহণ করেছেন ও সঠিক মতবাদে একনিষ্ঠ ছিলেন । যদি কখনো কোন সত্যকে পেয়েছেন যা তাদের উপর প্রভাব ফেলেছে , তার দিকে তারা ছুটে গিয়েছিলেন একক ও দলগতভাবে ।


রাসূল صلى الله عليه وسلم কোন কিছু করতে বললে , সাহাবীরা সেদিকে পুরো মনোযোগ দিতেন কোন প্রশ্ন না করেই । রাসূল صلى الله عليه وسلم এর কথা তাদের এত প্রিয় ছিল যে , তার কথার উপর তারা কোন কথা বলতেন না বা তার বিরোধিতা করতেন না ।
তাই জ্ঞানের সন্ধানীরা , তোমরা অবশ্যই তোমাদের মনোযোগ দেবে কুরআন ও সুন্নাহর জ্ঞানের দিকে । কেননা , এসবের জ্ঞানই হলো প্রকৃত জ্ঞান । অন্যকিছু সম্পর্ক অজ্ঞ থাকলেও তা সত্যিকারের অর্থে তোমার ক্ষতি করবে না ।
একজন শুভাকাঙ্খী বন্ধু উপদেশ পাঠিয়েছেন খুব সুন্দর ও জাদুকরী ভাষায় কেননা তিনি তোমাদের কল্যাণ চান । ইবনে আল কাইয়্যিম বলেন , ও হে যে তুমি নিজেকে বাঁচাতে চাও ; শোন একজন প্রিয় উপদেশদাতা কী বলছে ;
তোমার সব বিষয়ে ওহীকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখো, কামনা - বাসনার বিভ্রান্তিকর কিছুকে নয়;

আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাহকে বিজয়ী করো যা এসেছে তাঁর থেকে বিচারের মাপকাঠি নিয়ে ; যারা একে অস্বীকার করে তাদের উপর ওহীর তরবারীর আঘাত হানো , ঠিক যেমন মুজাহিদ হলে আঘাত হানতো আঙুলের অগ্রভাগে ;

এগিয়ে যাও সত্যের অনুভূতি নিয়ে, আন্তরিক আর সাহসী - যারা আল্লাহর প্রতি নিবেদিত তাদের পথে ; দৃঢ় থাকো ধৈর্য্য সহকারে হেদায়েতের ছায়ায় , যদি এই পথে তুমি ক্ষতিগ্রস্থ হও , তবে তা হবে পরম ক্ষমাশীলের খুশীর জন্য ।

আল্লাহর কিতাব ও নির্ভরযোগ্য ঐতিহ্যকে তোমার অস্ত্র বানাও , আর তোমার আত্মাকে শক্তিশালী করো, কে লড়াই করবে অথবা যুদ্ধের ময়দানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে?

প্রকাশ্যে ঘোষণা করো যা রাসূল صلى الله عليه وسلم
নিয়ে এসেছিলেন ; সাহায্যকারী থাকবে না এমন ভয়ে ভীত হয়ো না ;

দুই ধরণের পোশাককে ভয় করো , যারা এসব পরবে তারা হবে তিরষ্কৃত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত ; অজ্ঞতার পোশাক যা কোন অন্ধ মতবাদের সাথে আসে - কত ভয়ানক পোশাক এগুলি । নিজেকে সজ্জিত করো নিরপেক্ষতা ও ন্যায়পরায়নতা দিয়ে, এগুলি হলো সেরা পোশাক অন্তরকে সৌন্দর্যমন্ডিত করার জন্য ;

আল্লাহভীরুতা ও রাসূল صلى الله عليه وسلم এর উপদেশকে তোমার লক্ষ্য হিসাবে স্থির করো , এই দুই বিষয়ে সেরা হও ; আল্লাহর রশি ও ওহীকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং তাঁর উপর সেভাবে নির্ভর করো যেমনটি তাঁর প্রাপ্য ।
 
:sl:



ইমাম শাফেয়ী র: বলেন , কুরআনের বাইরে হাদীস বা ফিকাহর জ্ঞান ছাড়া আর সবকিছু মনোযোগ নষ্টকারী । যা কিছু শুরু হয় এভাবে - এটা আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন অমুক .........এছাড়া অন্যকিছু শয়তানের কূ – মন্ত্রণা ।

ইবনে আল কাইয়্যিম رضي الله عنهم বলেন , জ্ঞান হচ্ছে তাই যা আল্লাহ ,

তাঁর রাসূল صلى الله عليه وسلم ও সাহাবীরা বলেছেন । কেননা , এরাই সবচেয়ে জ্ঞানী । তাই যে কুরআন ও সুন্নাহ ছাড়া অন্যকিছু জ্ঞান পেতে চায় , সে অসম্ভবকে চায় । যে অন্যকিছু থেকে জ্ঞান নিয়ে সন্ত্তষ্ট , সে সঠিক পথ থেকে দূরে চলে গিয়েছে । কুরআন ও সুন্নাহ তোমাকে অজ্ঞতা থেকে মুক্তি দেবে । এ নিয়ে আল্লামা ইবনে আল কাইয়্যিম رضي الله عنهم বলেন , অজ্ঞতা হলো মরণ রোগ । এর সুস্থতা আছে দুইটি বিষয়ের ভিতরে -- কুরআন ও সুন্নাহ।


একজন যত্নশীল শিক্ষক এদেরকে আরো সুরভিত করে ; জ্ঞান তিন ধরণের - চতুর্থ কিছু নেই এছাড়া, সত্য তাই যা শুদ্ধ করে , জ্ঞান হলো স্রষ্টার গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যে এবং তাঁর কাজ সম্পর্কে জানা , আল্লাহর সব গুণবাচক নাম , তাঁর আদেশ - নিষেধ অর্থাৎ ধর্ম সম্পর্কে জানা , তাঁর সাথে সাক্ষাতের দিনে তিনি কী পুরষ্কার দেবেন, এসব কিছুই রয়েছে কুরআন ও সুন্নাহতে । এসব কিছু এসেছে তাঁর কাছ থেকে যিনি বিচারের মাপকাঠি ঠিক করে দিয়েছেন ; আল্লাহর শপথ , সে ছাড়া আর কেউ এর বিরুদ্ধে বলে না যে বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে ।


কত মহান এই কথা : ও হে যে তুমি জেগে উঠেছো জ্ঞান অন্বেষণে, সব জ্ঞান হলো রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জ্ঞানের দাস , তুমি জ্ঞান খুঁজে বেড়াচ্ছো কোনকিছু সংশোধন করার জন্য; কিভাবে তুমি সেরা জ্ঞান থেকে পথভ্রষ্ট হচ্ছো ?

সব জ্ঞান আছে আল্লাহর কিতাবে ও রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহতে । তাই তোমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব ততটুকু দৃঢ় থাকবে এই দুইটির সাথে । এই দুই হলো নিরাপত্তা ও আরামের পথ , প্রচন্ড গরমের দিনে অর্থাৎ কিয়ামতের দিনে যা তোমাকে ছায়া ও সেরা পুরষ্কার দেবে।
 
:sl:


কার থেকে শিখবে ?
জ্ঞানের পথের যে ছাত্র , সে অবশ্যই কোন শেখ বা জ্ঞানী কাউকে শিক্ষক হিসাবে বেছে নিতে চেষ্টা করবে ।

সে এমন কাউকে বেছে নেবে যিনি সবচেয়ে জ্ঞানী , বুদ্ধিমান ও সাবধানী যেমনটি আবু হানিফা র: বেছে নিয়েছিলেন হাম্মাদ বিন সুলায়মান র: কে । চিন্তা – ভাবনা ও বিবেচনা করে তিনি বলেন , আমি তাঁকে পেয়েছি বুদ্ধিমান , নরম মনের ও ধৈর্য্যশীল শেখ হিসাবে । তিনি আরো বলেন : আমি হাম্মাদ বিন সুলায়মান র: এর সাথে ছিলাম ও জ্ঞানের পথে এগিয়ে গিয়েছিলাম ।

সহীহ হাদীসের ভূমিকায় ইমাম মুসলিম র: বলেন , মুহাম্মদ বিন সিরীন বলেছেন , জ্ঞান হলো ধর্ম। তাই দেখে নাও , তুমি কার কাছ থেকে এই জ্ঞান নিচ্ছো ।

ইবনে জামাহ বলেন , কার কাছ থেকে জ্ঞান নেবে তা ঠিক করার সময় একজন ছাত্র অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য চাইবে । সে শিক্ষকের কাছ থেকে ভাল আচরণ ও সৎ স্বভাব শিখবে । যদি সম্ভব হয় , সে এমন একজনকে শিক্ষক হিসাবে বেছে নেবে , যিনি শিক্ষাদানের যোগ্য , ছাত্রদের বিষয়ে সচেতন , পুরুষসুলভ গুণাবলী যার আছে , যিনি ভাল মানুষ হিসাবে পরিচিত , যিনি সুন্দরভাবে শেখাতে পারেন ।
খুব জ্ঞানী হলেই কাউকে শিক্ষক হিসাবে বেছে নেয়া যাবে না যদি তিনি ধার্মিক , ভদ্র ও সাবধানী না হোন । সালাফদের মধ্যে কেউ কেউ উপদেশ দিয়েছেন : জ্ঞান হলো ধর্ম । তাই কার থেকে তুমি ধর্ম বা জ্ঞান নিচ্ছো , তা খেয়াল করে দেখবে । শুধু বিখ্যাত ব্যক্তিদের কাছ থেকেই শিখবো , কোন ছাত্র যেন নিজেকে এভাবে সীমিত না করে ।

আল গাযযালী ও অন্যরা এই মনোভাবকে জ্ঞানের প্রতি ঔদ্ধত্য ও খুব নীচু স্বভাবের আচরণ হিসাবে গণ্য করেছেন । কেননা , জ্ঞান হলো বিশ্বাসীদের জন্য পুরস্কার । তাই সে এই পুরস্কার যেখানে পাবে , সেখান থেকে নিবে । যে এই কল্যাণ দিতে চাইবে , সে অবশ্যই তার থেকে সেটা নেবে ।


 
:sl:



সিংহ দেখলে মানুষ যেভাবে দৌঁড়ে পালাতে চাইবে ও এই বিপদে কেউ তাকে সাহায্য করতে চাইলে সে অবশ্যই তা গ্রহণ করবে , তেমনি অজ্ঞতা থেকেও একজন ছাত্র সেভাবে আত্মরক্ষার চেষ্টা করবে ।

তাই কেউ যদি বিখ্যাত নাও হয় , তবু তার থেকে উপকার লাভের আশা তুমি করতে পারো ও হয়তো তিনি তোমার জন্য বেশি কল্যাণকর হবেন । যদি তুমি সালাফদের জীবনী পড়ো , তাহলে দেখবে তাদের কোন ছাত্র এমন কোন শেখ থেকে উপকার পায় নি , যদি না তিনি ধর্মভীরু হোন ও ছাত্রদের এমন উপদেশ দেন যা তার তাকওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ দেয় । একইভাবে যদি তুমি অনেক বই পড়ো , তাহলে সেই লেখকের বই পড়ে বেশি কল্যাণ লাভ করবে যার তাকওয়া বেশি ও দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ কম ।

নিশ্চিত হয়ে নাও শরীয়াহ বিজ্ঞান সম্পর্কে তোমার শেখ পুরোপুরি সচেতন । তিনি শুধুমাত্র বই পড়ে নয় বরং তার সময়ের নির্ভরযোগ্য শিক্ষকদের কাছ থেকে শিখেছেন ।

আশ শাফেয়ী র: বলেন , শুধু বই পড়ে শিখলে শরীয়াহ সম্পর্কে জ্ঞানে খুঁত থাকবে অর্থাৎ শুধু বই পড়ে শরীয়াহ আইন সম্পর্কে পুরো জ্ঞান অর্জন সম্ভব না।

এদের কেউ কেউ বলেছেন , সবচেয়ে বড় পরীক্ষাগুলির একটি হলো শুধু বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করা । আল খাতীব আল বাগদাদী র: বলেন , মুগীরাহ বিন ইবরাহীম বলেছেন , তারা যদি কারো কাছ থেকে শিখতে চাইতেন , তাহলে জনসমক্ষে সেই শিক্ষকের আচরণ , তার ইবাদত ও সার্বিক অবস্থা বিচার করতেন । এরপর তার কাছে পড়াশোনা বা জ্ঞান চর্চা করতেন ।

সুফিয়ান আস সাওরী র: বলেন , যে বেদাতকারীর কাছে জ্ঞান চর্চা করে , আল্লাহ তাকে জ্ঞান থেকে কল্যাণ পেতে দেবেন না । যে তার সাথে হাত মেলায় , সে ইসলামের বাঁধন একে একে সরিয়ে ফেলে ।
 
:sl:


মালিক বিন আনাস বলেন , চার ধরণের মানুষের কাছ থেকে জ্ঞান নেয়া যাবে না । এছাড়া আর যে কারো কাছ থেকে তা নেয়া যাবে । এরা হলো :

১. বোকা : যে বোকা হিসাবে পরিচিত , সে অন্য সবার থেকেও যদি বেশি বর্ণনা করে , তার কথা মানা যাবে না ।

২. মিথ্যাবাদী : যে অন্য মানুষ সম্পর্কে মিথ্যা বলে , সে যদি রাসূল صلى الله عليه وسلم সম্পর্কে মিথ্যা নাও বলে ।

৩. বেদাতকারী - যে মানুষকে তার নতুন রীতি পালন করতে আহবান করে ।

৪. যার প্রকৃত জ্ঞান নেই : যা শেখাবেন তার প্রকৃত মানে যিনি জানেন না । তিনি যদি তার ইবাদত ও সদগুণের জন্য পরিচিত হোন , তবুও তার থেকে জ্ঞান নেয়া যাবে না ।

এসব আলোচনা থেকে বোঝা যায় সঠিক শিক্ষক বেছে নেয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ । কেননা , তিনি হলেন তোমার আদর্শ ও উদাহরণ । আল্লাহই পথ দেখান ও তিনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই । নেই কোন প্রভু আল্লাহ ছাড়া ।
 
:sl:



৮ . শিক্ষকের সাথে সেরা আচরণ করতে হবে


আল্লাহ , যিনি অদৃশ্যের সব জ্ঞান রাখেন ও সবার অন্তরের প্রভু - তিনি পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট করেছেন যে , কোনকিছু মনে করিয়ে দিলেই সবাই সচেতন হয় না ও কিছু শুনলেই তা থেকে সবাই কল্যাণ পায় না । বরং এর শর্ত হলো : এতে উপদেশ আছে তার জন্য যার আছে অন্ত:করণ ( যে বোধশক্তি সম্পন্ন ) অথবা যে শোনে মনোযোগ দিয়ে ( সুরা কাফ ; ৫০ : ৩৭ ) ।

ইবনে আল কাইয়্যিম র: বলেন , যদি তুমি কুরআন থেকে উপকার পেতে চাও , তাহলে যখন তা তেলাওয়াত করা হয় তোমার মনকে সেদিকে রাখো ; কুরআন শোনার দিকে মনোযোগ দাও ও এটাই মনে করবে যে আল্লাহ সরাসরি তোমাকে বলছেন । কেননা , এটি সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে রাসূল صلى الله عليه وسلم এর মুখে উচ্চারিত হয়ে তোমার কাছে এসেছে যেমনটি আল্লাহ বলেন : এতে উপদেশ আছে তার জন্য যার আছে অন্ত:করণ ( যে বোধশক্তি সম্পন্ন ) অথবা যে শোনে মনোযোগ দিয়ে (৫০ : ৩৭ )।


কোনকিছু থেকে সর্বোচ্চ কল্যাণ ও ভাল ফলাফল পেতে হলে নির্ভর করতে হয় সেই বিষয়ের উপর যা প্রভাব বিস্তার করে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি চেষ্টা করবে পুরোপুরিভাবে সেই সুফল লাভ করতে । সুফল পেতে যা যা শর্ত পূরণ করতে হয় সে তা করবে এবং যা কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে সে তা দূর করবে ।

এসব কিছু সংক্ষিপ্ত কিন্ত্ত স্পষ্টভাবে উপরের আয়াতে সুন্দরভাবে বলা হয়েছে । “ নিশ্চয়ই এতে উপদেশ আছে ” , এটা নির্দেশ করে সূরার প্রথম থেকে এই আয়াত পর্যন্তকে ; আর তাঁর বাণী - যার আছে অন্ত:করণ ( বোধশক্তি ), এটা নির্দেশ করে কার উপর এর প্রভাব পড়বে সেই লক্ষ্যবস্ত্ত । এর মানে যে অন্তর জীবিত ও আল্লাহকে জানে যেমনটি আল্লাহ বলেছেন অন্য আরেকটি আয়াতে এটি তো কেবল এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন, যাতে সে সতর্ক করতে পারে জীবিতদের ...( সুরা ইয়াসিন ৩৬ :৬৯-৭০ ) ।



এর অর্থ সেই অন্তর যা জীবিত । আল্লাহর এই কথা , “ ..যে শোনে ”, এটা বলতে বোঝায় , যে তার শ্রবণ ও অন্য ইন্দ্রিয়গুলিকে যা তাকে শোনানো হচ্ছে অর্থাৎ কুরআনের বাণী সেদিকে কেন্দ্রীভূত করেছে । যা বলা হচ্ছে তার প্রভাব কার্যকরী হওয়ার জন্য এটা হলো শর্ত । তাঁর বাণী , “ মনোযোগ দিয়ে ” বলতে বোঝায় তার অন্তর এখানে উপস্থিত আছে , অনুপস্থিত নয়। ইবনে কুতাইবাহ বলেন , “ সে আল্লাহর কিতাব শোনে যখন তার অন্তর ও উপলব্ধি করার অনুভূতিগুলি সেখানে রয়েছে এবং সে অমনোযোগী নয় ” ।

এটা নির্দেশ করছে কুরআনের প্রভাবে কী দূর হয়ে যাবে, সেটি হলো মনোযোগ নষ্ট হতে পারে এমনকিছু ও অন্তরের অনুপস্থিতি –এর বুঝতে পারার অক্ষমতা যা একে শোনানো হচ্ছে এবং অন্তর্দৃষ্টির ও চিন্তাভাবনার অভাব ।


তাই প্রভাব বিস্তারের উৎস যদি সেখানে থাকে অর্থাৎ পবিত্র কুরআন ও এর লক্ষ্যবস্ত্ত
( এমন অন্তর যা জীবিত ) , প্রভাব কার্যকরী হওয়ার দরকারী শর্তাদি যদি পূরণ হয়
( কুরআনকে কেন্দ্রবিন্দু করে সেদিকে মনোযোগ দেয়া ) , মনোযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে এমন বাধা যদি দূর করা হয় ( অন্তরের অমনোযোগ ও যা শুনছে তার মানে বুঝতে সমর্থ না হওয়া ) , যদি সহায়ক পরিস্থিতি থাকে , তবে সুফল পাওয়া যাবে ( কুরআনের প্রভাব , কল্যাণ ও উপদেশ যা এতে দেয়া হয়েছে , তা বোঝা যাবে )।

জ্ঞান তখনই অর্জিত হয় যখন একজন বিনীতভাবে সেদিকে পুরো মনোযোগ দেয় ।
 
:sl:




আশ সাবি র: বলেন , যায়েদ বিন সাবিত জানাযার সালাত পড়েন । একটি গাধা আনা হয় তাকে পৌঁছে দেয়ার জন্য । ইবনে আব্বাস এগিয়ে এসে গাধার লাগাম টেনে এগিয়ে চললেন ।
তখন যায়েদ বললেন , ছেড়ে দিন ও আল্লাহর রাসূল صلى الله عليه وسلم এর চাচাতো ভাই । ইবনে আব্বাস জবাব দেন : জ্ঞানীদের সাথে এমন আচরণ করতে আমরা আদেশ পেয়েছি ।


সালাফরা তাদের শিক্ষকের দিকে শ্রদ্ধাভরে তাকাতেন । তারা যে শিক্ষকদের কত সম্মান করতেন , তার অনেক বর্ণনা আল খাতিব দিয়েছেন । আল মুগহিরাহ বলেন , আমরা ইবরাহীম আল নকহাইকে এত সম্মান দেখাতাম , যেমন সম্মান দেশের শাসককে
মানুষ দেখায় ।

আইয়ূব বলেন , একজন ছাত্র আল হাসানের কাছে তিন বছর ধরে শিক্ষা নেয় , কিন্ত্ত কোনদিন কোন প্রশ্ন করে নি তার প্রতি সম্মানবোধ থেকে ।


ইসহাক আশ শাহিদী বলেন , আমি দেখেছি আসরের সালাত পড়ে ইয়াহিয়া আল কাতান মসজিদের মিনারতে হেলান দিয়ে বসতেন । তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন আলী বিন আল মাদিনী , আশ শাদ হাকুনী , আমর বিন আলী , আহমদ বিন হাম্বল , ইয়াহিয়া বিন মইন প্রমুখ । তারা দাঁড়িয়ে থেকে হাদীস সম্পর্কে প্রশ্ন করতেন । এমনটি চলতো মাগরিব পর্যন্ত ।

তিনি কাউকে বসতে বলতেন না আর তার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখিয়ে কেউ তার সামনে বসতো না ।


মালিক বিন আনাসের প্রশংসা করে ইবনে আল খাইয়াত বলেন , তিনি জবাব দিতেন অত্যন্ত ধৈর্য , বিনয় ও প্রজ্ঞার সাথে । যারা তার কাছ থেকে কোন প্রশ্নের উত্তর শুনতো , তারা অভিভূত হয়ে যেত ; প্রশান্তির আলো ও সঠিক জ্ঞানের সম্মান তাকে ঘিরে থাকতো ; মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করতো যদিও তিনি কোন ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন না ( বর্ণনায় আল গুলাবি ) ।

আবদুর রহমান বিন হারমালা আল আসলামী বলেন , অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত সাঈদ বিন আল সুমাইবকে প্রশ্ন করার সাহস কারো ছিল না , ঠিক যেমন কোন কিছু করতে শাসকের অনুমতি লাগে ।


আশ শাফেয়ীকে সমালোচনা করা হতো জ্ঞানীদের প্রতি তার অত্যন্ত বিনীতভাবের জন্য । এ নিয়ে তিনি বলেন , আমি তাদের প্রতি বিনম্র হই , তারা আমাকে সম্মান দেন । তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত সম্মানিত হবে না , যতক্ষণ না তুমি বিনীত হও ।


খালাফ আল আনসারকে আহমদ বিন হাম্বল র: বলেন ,আমি আপনার দুই হাতের মাঝে ছাড়া বসবো না । যার কাছ থেকে জ্ঞান পাই , তার প্রতি বিনয়ী হতে আমরা আদেশপ্রাপ্ত ।
 
:sl:



জ্ঞানের পথের যে ছাত্র সে তার শিক্ষকের সাথে কোন বিষয়ে মতবিরোধে যাবে না । রোগী যেমন ডাক্তারের উপর নির্ভর করে , ছাত্র তেমনি তার শিক্ষককে খুশি রাখবে , শিক্ষকের সম্মান বজায় রাখবে ও শিক্ষককে সেবা দানের মধ্য দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করবে । তাকে অবশ্যই এটা বুঝতে হবে নিজের শিক্ষকের কাছে বিনম্র হওয়াটা সম্মানের ব্যপার । শিক্ষকের সামনে তুমি বিনীত হলে তা আসলে তোমাকে উঁচু করবে , তোমার নিজের মর্যাদা বাড়াবে । শিক্ষকের দিকে সম্মানের চোখে তাকাতে হবে , তাহলে শিক্ষক থেকে সেই ছাত্র বেশি কল্যাণ লাভ করতে পারবে ।

সালাফদের মধ্যে কেউ কেউ শিক্ষকের কাছে যাওয়ার আগে সাদকা করে এই দুআ করতেন : হে আল্লাহ , আমার শেখের দোষ আমার কাছ থেকে গোপন রাখো ও তার জ্ঞানের কল্যাণ থেকে আমাকে দূরে রাখবেন না ।

আশ শাফেয়ী র: বলেন , আমি ইমাম মালিক র: এর সামনে খুব আস্তে করে বইয়ের পাতা উল্টাতাম যাতে কোন শব্দ হয়ে উনার অসুবিধা না হয় । আমি এমন করতাম তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে ।


হামদান আল আশফাহানি বলেন , আমি শারিক র: এর সাথে ছিলাম । খলিফা আল মাহদীর সন্তানরা তার কাছে এসে একটি হাদীস নিয়ে জানতে চাইলো । তিনি দেয়ালে হেলান দিয়ে বসলেন কিন্ত্ত জবাব দিলেন না । তারা সামনে এসে একই প্রশ্ন আরো কয়েকবার করে জবাব না পেয়ে বললো , আপনি কি শাসকদের সন্তানদের এভাবে অপমান করেন ? শারিক র: বললেন , না । তবে জ্ঞান হলো আল্লাহর কাছে মূল্যবান যা আমি এভাবে কাউকে দেই না । তখন তারা তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তার হাঁটু স্পর্শ করলো । শারিক র: বললেন , এভাবেই জ্ঞানের কথা জানতে হয় ।

ছাত্ররা দূর থেকে চিৎকার করে শেখকে ডাকবে না ও অনানুষ্ঠানিকভাবে সম্বোধন করবে না । সম্মানের সাথে শিক্ষককে সম্বোধন করবে ।


 
:sl:




আল খাতিব বলেন , কোন ছাত্র এভাবে বলবে না , এই শিক্ষক বা ও জ্ঞানী ব্যক্তি , আপনি এ বিষয়ে কী মনে করেন ? শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে সে শুধু নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করবে না , বরং নামের আগে সম্মানসূচক শব্দ যেমন শেখ , ওস্তাদ বা শায়খুনা বলবে ।

তার উপর শিক্ষকের যা অধিকার আছে , সে সেসব জানবে ও তার উপর শিক্ষকের শ্রেষ্ঠত্ব ভুলবে না । সে শিক্ষকের সম্মান রক্ষা করবে ও শিক্ষকের বদনাম অন্যের কাছ থেকে শুনবে না । কোথাও তার শিক্ষক সম্পর্কে খারাপ আলোচনা হলে সে তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করবে ; সেটা না পারলে সে ঐ জায়গা থেকে চলে আসবে । তার শেখ বেঁচে থাকতে সে তার জন্য দুআ করবে ; শেখের মৃত্যুর পরে তার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখবে । তার শেখের কবর সে অবশ্যই জিয়ারত করবে ও শেখের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করবে ও দান – সদকা করবে ।

সে শেখকে অনুকরণ করবে শান্ত , নম্র ও সৎ পথে চলা এবং ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের সময় । শেখের নিয়মিত ইবাদত ও অভ্যাসগুলি সে পালন করবে ও আচার – আচরণ অনুকরণ করবে । এটা অপরিহার্য যে সে তার শিক্ষককে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করবে ।


কঠোর স্বভাবের শিক্ষকের সাথে কিভাবে মানিয়ে চলতে হবে ?


একজন ছাত্রকে অবশ্যই কড়া শিক্ষকের সাথে ধৈর্য ধরতে হবে ও শিক্ষকের সাথে নরম আচরণ করতে হবে ।

ইমাম আশ শাফেয়ী র: বলেন , দু’জন লোক আল আমাসের কাছে প্রায়ই যেত । এদের একজনের আগ্রহ ছিল হাদিসের প্রতি , আরেকজনের তাতে আগ্রহ ছিল না ।

আল আমাস একদিন হাদীসের প্রতি যে আগ্রহী , তার সাথে খুবই রাগারাগি করলেন । অন্য লোকটি তখন বললো , তোমার সাথে ইনি যে খারাপ ব্যবহার করলেন , তা আমার সাথে করলে আমি আর কখনোই এখানে আসতাম না । আল আমাস তা শুনে বললেন , তাহলে সে তোমার মতো বোকা হতো । আমার খারাপ আচরণের জন্য সে তাই ত্যাগ করতো যা তার জন্য কল্যাণকর ( বর্ণনায় আল খাতীব ) ।



ইমাম আশ শাফেয়ী র: একই ধরনের আরেকটি ঘটনা বলেন । সুফিয়ান বিন উয়াইনাহকে বলা হয়েছিল , আপনার কাছে দুনিয়ার বিভিন্ন এলাকার মানুষ অনেক দূর থেকে আসে , আর আপনি কি না তাদের সাথে এত রাগ করেন ? তারা সবাই তো আপনাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে ।

তিনি বললেন , যদি এমন করে , তবে বোকামি করবে । কেননা আমার খারাপ ব্যবহারের জন্য তারা এমন কিছু ছেড়ে যাবে , যা তাদের উপকারে আসবে ।
 
:sl:



ইবনে জামাহ র: বলেন , ছাত্ররা অবশ্যই শিক্ষকের কড়া স্বভাব ও বদমেজাজী আচরণ সহ্য করে তার সাথে থাকবে । শিক্ষকের কঠোরতার জন্য ছাত্র যেন শিক্ষককে ছেড়ে চলে না যায় ।


শিক্ষক কড়া আচরণ করলে ছাত্র তার কাছে মাফ চাইবে , আল্লাহর কাছে মাফ চাইবে ও নিজের উপর দোষ দেবে । তাহলে শিক্ষকের জন্য তার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা বজায় থাকবে , নিজের অন্তর রক্ষা পাবে ও তা ইহকাল – পরকালের জন্য কল্যাণকর ।
সালাফদের কেউ কেউ বলেছেন , যে জ্ঞান অর্জনের সময় লজ্জা বা অপমান সহ্য করতে পারে না , সে সারাজীবন অজ্ঞতার অন্ধকারে থাকবে । যে জ্ঞানের পথে অপমানিত হলে ধৈর্য ধরে , সে এই জীবন ও পরকালে সম্মান পাবে ।


ইবনে আব্বাস رضي الله عنهم বলেন , ছাত্র হিসাবে আমি নিজেকে বিনীত করেছিলাম , তাই আমি শিক্ষক হিসাবে সম্মানিত হয়েছি । মুয়াফি বিন ইমরান বলেন , যে একজন জ্ঞানী ব্যক্তির প্রতি রেগে যায় , সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সাথে রাগ করলো ।
ইমাম আশ শাফেয়ী র: বলেন , জ্ঞানের উৎস ও কাঠিন্যের ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরবে ; কেননা জ্ঞান অর্জনে ব্যর্থ হওয়া মানে তা থেকে তুমি ফিরে গেলে ।

যে জ্ঞানের কাঠিন্য এক ঘন্টা সহ্য করতে পারবে না , সে অজ্ঞতার অপমানের মধ্যে চিরকাল থাকবে । যে যৌবনে জ্ঞানকে পাশ দিয়ে চলে যেতে দেয় , সে তখনই সজাগ হবে , যখন অন্যরা তার জানাযা পাঠ করবে । ইবনে জুরায়ী র: বলেন , আমি আতা র: এর কাছ থেকে যা শিখেছি , তা অত্যন্ত ভদ্র - নম্র হয়েই শিখতে পেরেছি । ইবনে তাউস তার পিতার একটি উদ্ধৃতি দেন : জ্ঞানীদের সম্মান করা সুন্নাহ ( বর্ণনায় ইবনে আল বার র: ) ।
 
:sl:


জ্ঞানের ছাত্র হিসাবে শিক্ষকের সাথে ঝগড়া করা থেকে সাবধান থাকবে । ঝগড়া করা পাপ আর এটা আরো পাপের , যখন তা করা হয় শিক্ষকের সাথে । এমন আচরণ কল্যাণ লাভ না হওয়ার একটি কারণ ।

মায়মুন বিন মাহরান বলেন , যে তোমার চেয়ে বেশি জ্ঞানী , তার সাথে তর্ক করবে না । যদি তুমি তা করো , তাহলে তিনি তার জ্ঞান তোমার থেকে গোপন রাখবেন , আর তুমি তার কোনই ক্ষতি করতে পারবে না । আয যুহরী বলেন , ইবনে আব্বাসের সাথে সালামাহ সবসময় তর্ক করতো । তাই সে তেমন জ্ঞান লাভ করতে পারে নি ।


শেখ যখন তোমার ভাল কিছুর জন্য প্রশংসা , তোমার দোষ - অলসতা সম্পর্কে তোমাকে জানানো ও দোষ কাটিয়ে কিভাবে নিজের উন্নতি করতে হবে সে সম্পর্কে উপদেশ দেন , তখন একজন ছাত্র হিসাবে শেখকে ধন্যবাদ জানাবে । এটি আল্লাহর তরফ থেকে তোমার জন্য রহমত ।

শেখ যখন তোমাকে তোমার সদগুণের কথা জানিয়ে তা আরো বাড়ানোর উপায় বলবেন , তখন এ সম্পর্কে তোমার জানা থাকলেও তুমি তাকে সেটা বলবে না । বরং শেখকে ধন্যবাদ জানাবে তোমাকে এসব উপদেশ দিয়ে উপকার করার জন্য । তবে না বললে যদি তোমার কোন ক্ষতির আশংকা থাকে , তাহলে বললে ক্ষতি নেই ।
 
:sl:


শেখের সাথে সাক্ষাতের আদব


যদি জানতে পারো শেখ ঘুমাচ্ছেন , তবে তার সাথে দেখা করতে চাইবে না । বরং তার ঘুম থেকে উঠার জন্য বসে অপেক্ষা করো বা ইচ্ছা হলে ফিরে যাও ।


ইবনে আব্বাস رضي الله عنهم বলেন , যখন রাসূল صلى الله عليه وسلم
ইন্তেকাল করেন , আমি একজন আনসারকে বললাম , চলো , সাহাবীদের কাছ থেকে কিছু জেনে আসি । সে বললো , আমি তোমার কথায় খুব অবাক হচ্ছি । সাহাবীদের মধ্যে এত বিশিষ্ট ব্যক্তি থাকতে তুমি কি মনে করো কেউ আমাদের দিকে মনোযোগ দেবে ?


আমি তখন তাকে ছেড়ে সাহাবীদের কাছে গিয়ে হাদীস নিয়ে জানতে শুরু করি । যদি আমি শুনতে পেতাম কেউ একটি হাদীস জানে , আমি তার বাসায় যেতাম । যদি শুনতাম সে ঘুমিয়ে আছে , তাহলে দরজার সামনে চাদর বিছিয়ে তার অপেক্ষায় বসে থাকতাম ।

বাতাস ধূলা উড়িয়ে আমার গায়ে ফেলতো । সে লোক ঘুম ভেঙ্গে যখন দেখতো আমি এভাবে বসে আছি , তখন বলতো , হে আল্লাহর রাসূল صلى الله عليه وسلم এর চাচাতো ভাই , আপনি কেন এসেছেন ? আপনি আমাকে খবর পাঠালেন না কেন ? আমি তাহলে আপনার কাছে যেতাম ।


আমি বলতাম , আমারই আসা উচিত আপনার কাছে । তারপর আমি তাকে হাদীস বলতে অনুরোধ করতাম । সেই আনসার বেঁচে থাকতে দেখেছিল লোকজন আমাকে ঘিরে নানা প্রশ্ন করছে । তখন সে বলেছিল , এই তরুণ আমার চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান
( বর্ণনায় আল খাতিব আল বাগদাদী র: ) ।
 
:sl:



ইবনে আব্বাস رضي الله عنهم বলেন , আমি হাদীসের জ্ঞান আনসারদের কাছ থেকে বেশি পেয়েছি । আমি তাদের দরজার সামনে অপেক্ষা করতাম । ভিতরে ঢোকার অনুমতি চাইলে পেতাম কিন্ত্ত আমি চাইতাম যে দেখা হওয়াটা যেন আনন্দের হয় ।


ইবনে আব্বাস সাহাবীদের বাসায় যেতেন হাদীস শুনতে । তখন তাকে যদি বলা হতো তিনি ঘুমাচ্ছেন , ডেকে দেব ? আব্বাস তাতে রাজী হতেন না । তিনি দরজার সামনে বসে সাহাবীর ঘুম ভাঙার অপেক্ষায় থাকতেন
( বর্ণনায় সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ , সূত্র আবু আল হুসাইন ) ।


মা’মার থেকে বর্ণিত , আয যুহরী বলেন , আমি যখন উরওয়ার বাসায় যেতাম , তখন চাইলে ঘরে ঢুকতে পারতাম । কিন্ত্ত আমি বাইরে বসে অপেক্ষা করতাম তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে ।

ইবনে জামাহ বলেন : জ্ঞানের ছাত্র হিসাবে কেউ তার শেখের অনুমতি না নিয়ে তার কাছে যাবে না । যদি তিনি প্রকাশ্যে বসে মানুষের সাথে আলাপরত থাকেন , তবে যেতে পারবে ।

ঘরের ভিতরে থেকে শেখ অনুমতি দিলে ছাত্র ঢুকবে । যদি অনুমতি না দেন , তবে ছাত্র আবারো অনুমতি চাইবে না বরং চলে যাবে । যদি ছাত্রের মনে সন্দেহ হয় যে শেখ জানেন না সে এসেছে , তাহলে আবারো অনুমতি চাইতে পারে - তবে তিনবারের বেশি নয় । যদি সে দরজায় ধাক্কা দেয় , তবে খুব ভদ্রভাবে ও আস্তে করে দেবে । প্রথম ও দ্বিতীয়বার আঙুল দিয়ে আস্তে করে দরজায় টোকা দেবে । তৃতীয়বার আঙুলের গাঁট দিয়ে দরজায় ধাক্কা দেবে । যদি শেখ দরজা থেকে দূরে থাকেন , তবে ছাত্র এতটুকু জোরে টোকা দিতে পারবে যাতে শেখ শব্দ শুনতে পান , তার চেয়ে বেশি জোরে না ।


যদি শেখ ঢোকার অনুমতি দেন ও সাক্ষাত করতে অনেকে একসাথে আসে , তবে যিনি সবচেয়ে বড় বা শ্রদ্ধেয় তিনি প্রথম ঘরে ঢুকে শেখকে সালাম জানাবেন । এরপর দ্বিতীয় সম্মানিত ব্যক্তি ঢুকবেন । এভাবে একের পর এক ঢুকবে ।
 
:sl:



আনাস বিন মালিক র: বলেন , আমরা রাসূল صلى الله عليه وسلم এর দরজায় আঙুলের নখ দিয়ে টোকা দিতাম
( বর্ণনায় আল খাতিব র: ) ।


ইমাম বুখারী র: তার ‘ আল আদাব আল মুফরাদ ’ বইতে বলেন , এটা অপছন্দীয় যে যদি জানতে চাওয়া হয় - কে ওখানে , তবে ছাত্র জবাবে নিজের পরিচয় না দিয়ে শুধু বলবে : আমি । যদি দরজা খোলা থাকে , তবে সে ঘরের দিকে মুখ করে থাকবে না বরং দরজার ডানে বা বামে থাকবে ও ঘরের ভিতরে যারা আছে , তাদেরকে সালাম দেবে ।


ইমাম বুখারী র: তার সহীহ হাদীসে ঘরে ঢোকার অনুমতির বিষয়ে একটি পরিচ্ছদের শিরোনাম দিয়েছেন : ওখানে কে –এই প্রশ্নের জবাবে আমি বলা ।

জাবির رضي الله عنهم এর সূত্রে একটি ঘটনা এতে উল্লেখ করা হয় । জাবির বলেন , আমি একদিন আমার পিতার দেনা নিয়ে কথা বলার জন্য রাসূল صلى الله عليه وسلم এর কাছে যাই । দরজায় টোকা দেয়ার পর রাসূল صلى الله عليه وسلم জানতে চান , কে ? বললাম , আমি । তিনি এমনভাবে বললেন , আমি , আমি - যেন তা অপছন্দ করেছেন ।


ইমাম বুখারী র: তার সহীহ বইতে একটি অধ্যায় লিখেছেন এই শিরোনামে : ‘ তাকানোর বদলে অনুমতি চাওয়া ’’ । এতে শাহল বিন সাদকে উদ্বৃত করে বলা হয়েছে - এক লোক রাসূল صلى الله عليه وسلم এর ঘরের ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখছিল । তখন তিনি একটি লোহার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিচ্ছিলেন ।

তিনি যখন দেখলেন লোকটি অনুমতি ছাড়া তার ঘরের ভিতরে দেখেছে , তখন বললেন : যদি আমি জানতে পারতাম তুমি এভাবে তাকাচ্ছো , তাহলে আমি এই চিরুনি দিয়ে তোমার চোখে আঘাত করতাম । ঘরে ঢোকার অনুমতি চাওয়ার আদেশ এজন্য দেয়া হয়েছে যেন কেউ অবৈধভাবে মানুষের ঘরের ভিতরে না তাকায় ( ইমাম মুসলিমও এই ঘটনা তার সহীহ হাদীস বইতে উল্লেখ করেছেন ) ।
 
:sl:




ইবনে জামাহ র: বলেন , একজন ছাত্র খুব ভালভাবে পোশাক পরে সুন্দরভাবে শেখের সাথে দেখা করতে যাবে । তার দেহ ও পোশাক পরিষ্কার থাকবে , চুল ও নখ ছাঁটা থাকবে ও সে সুগন্ধী মেখে যাবে - বিশেষত সে যদি অনেকের মধ্যে এসে বসতে চায় । কেননা , এই সমাবেশ হলো যিকির ও ইবাদতের ।

ছাত্র যদি শেখের কাছে গিয়ে দেখে তিনি কারো সাথে কথা বলছেন , যিকির বা কোন ইবাদত করছেন বা পড়াশোনা করছেন - আর তাকে দেখে তিনি সেই কাজ বন্ধ করেছেন ; তাহলে সালাম জানিয়ে সে চলে আসবে ।


যদি শেখ তাকে থাকতে বলেন , তাহলে সে থাকতে পারে । তবে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না , যদি না শেখ তাকে নিজে থেকে বেশি সময় থাকতে বলেন । শেখের কাছে কেউ তখনই যাবে , যখন তার মন পবিত্র ও শান্ত থাকে অর্থাৎ কোন কারনে মন অশান্ত বা অমনোযোগী না । পিপাসা বা ক্ষুধা পেয়েছে , ঘুম পাচ্ছে , ক্লান্ত বা রেগে থাকা অবস্থায় শেখের কাছে সে যাবে না , যাতে শেখ যা বলছেন তার প্রতি সে পুরো মনোযোগ দিতে পারে ।
যদি শেখের সন্ধানে গিয়ে ছাত্র তাকে খুঁজে না পায় , তাহলে অপেক্ষা করবে যেন কোন ক্লাশ বাদ না যায় । কোন ক্লাশ বাদ যাওয়া মানে সেই ক্ষতি আর পূরণ হওয়ার নয় । যদি শেখ ঘুমে থাকেন , তাহলে ছাত্র অপেক্ষা করবে বা পরে আসবে - ধৈর্য ধরা তার জন্য উত্তম ।



ইবনে আব্বাস র: জ্ঞান অর্জনের আশায় যায়াদ বিন সাবিতের বাসার সামনে বসে থাকতেন । যদি বলা হতো , তিনি ঘুমাচ্ছেন , তাকে কি ঘুম থেকে ডেকে দিব ? আব্বাস তাতে না বলতেন । প্রখর রোদে বসে তিনি অপেক্ষা করতেন - সালাফরা এমনই ছিলেন ।


একজন ছাত্র তার শেখকে বিশেষ কোন সময়ে বা আলাদাভাবে তাকে শেখাবার জন্য অনুরোধ করবে না , যদিও সে কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে থাকে । সাধারণত শেখ যে সময়ে শেখান , সেই সময়ের বাইরে গিয়ে বা তার কোন অসুবিধা করে কোন অনুরোধ ছাত্র করবে না । সেটা হবে নিজেকে বড় করে দেখানো এবং শেখ এবং জ্ঞানের পথের অন্য ছাত্রদের হেয় করা ।

শেখ হয়তো লজ্জায় এমন অনুরোধকে প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন না । ফলে ঐ সময়ের অন্য কোন গূরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ দিয়ে তাকে ছাত্রের অনুরোধ রক্ষা করতে হবে । তবে যদি সত্যিকারের কোন কারণ থাকে যাতে শেখের সাথে তার আলাদাভাবে সময় কাটানো দরকার , তবে সে এমন অনুরোধ করতে পারবে ।



শেখের ক্লাশে গিয়ে তার থেকে কিছুটা দূরত্ব রক্ষা করে বসতে হবে । উমর বিন আল খাত্তাব (র: ) কে ঘিরে বসে লোকজন তার কথা শুনছিল । কাব সেখানে গিয়ে বেশ দূরত্ব রেখে বসলে উমর র: তাকে ধমক দিলেন ।


কাব তখন বলেন , হে বিশ্বাসীদের নেতা , জ্ঞানী লোকমান رضي الله عنهم তার ছেলেদেরকে উপদেশ দেন : তোমরা যখন শাসকের পাশে বসবে , তখন দু’জনের মধ্যে এই পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রাখবে , যেন একজন এসে বসতে পারে । তা না হলে , তোমার থেকে গুরুত্বপূর্ণ কেউ যদি তার কাছে আসে , তখন তোমাকে জায়গা ছেড়ে উঠে পড়তে হবে , তা হবে তোমার জন্য অসম্মানের ( বর্ণনায় সুফিয়ান বিন উমাইনাহ ) ।
 
:sl:



শেখের সামনে বসার সময় ছাত্র অবশ্যই শান্ত , নম্র হয়ে শিক্ষকের দিকে মুখ করে বসবে । তার পুরো মনোযোগ থাকবে শিক্ষকের কথার দিকে । বিনা দরকারে সে শিক্ষকের দিক থেকে মুখ সরিয়ে নেবে না বা ডানে , বামে , উপরে , নিচে তাকাবে না ; বিশেষ করে যখন সে শিক্ষকের কাছে পড়ছে বা তার সাথে কথা বলছে। আশেপাশে কী ঘটছে বা অন্য কেউ কিছু বললো কি না , এসব জানতে সে অন্যদিকে তাকাবে না । নিজের কাপড় থেকে ধূলা – ময়লা সরাবে না ও কোন কারণে বিরক্তিবোধ করলে হাত –পা নাড়বে না ।


নাকের ভিতরে হাত ঢুকাবে না ; হাত ছড়িয়ে রাখবে না ও মুখে –গালে - কপালে রাখবে না । হাই তুলবে না বা দাঁত খৌঁচাবে না , কার্পেটের উপর আঙুল দিয়ে লাইন টানবে না , আঙুল মটকাবে না , কাপড় ধরে টানাটানি করবে না ।

শেখের উপস্থিতিতে একজন ছাত্র দেয়াল ও বালিশে হেলান দেবে না বা সেখানে হাত রাখবে না । সে শেখের দিকে পিঠ ফেরাবে না বা একপাশ ফিরে বসবে না । হাতের উপর ভর দিয়ে বসবে না বা খামোকা কথা বলবে না । শেখের সামনে বসে হাসি – তামাশা করা , বোকার মতো বা অভদ্রভাবে কথা বলা – এসব কিছু সে করবে না ।

বিনা কারনে হাসবে না ও শেখ না হাসা পর্যন্ত সে নিজে হাসবে না । কোন কারণে হাসি পেলে আওয়াজ না করে হাসবে । শেখ উপস্থিত থাকলে সে বারবার গলা সাফ করবে না ; সম্ভব হলে নাক ঝাড়বে না বা থুথু ফেলবে না । যদি নাক সাফ করতেই হয় , তাহলে সবার সামনে সর্দি ফেলবে না , বরং রুমাল বা টিস্যু কাগজ ব্যবহার করবে বা কাপড়ের এক কোনা দিয়ে নাক সাফ করবে ।


সে পা ঢেকে বসবে ; তার কাপড় লম্বা , ঢিলা হবে ও সে পড়ার সময় হাত স্থির রাখবে । হাই উঠলে মুখ ঢেকে রাখবে ।
 
:sl:




আলী رضي الله عنهم বলেন , এটা জ্ঞানীদের অধিকারের মধ্যে যে তুমি সমবেত মানুষকে সালাম দেয়ার পাশাপাশি আলাদাভাবে শেখকেও সালাম জানাবে । তুমি তার সামনে এসে বসবে , এদিক – সেদিক তাকাবে না বা কাউকে চোখের ইশারা করবে না । তার কাছে এসে বলবে না অমুক অমুক আপনার সাথে ঐ বিষয়ে একমত না ।

শেখের উপস্থিতিতে কারো নামে গীবত করবে না । তাকে জটিল প্রশ্ন করবে না । যদি শেখ কোন ভুল করেন , তবে তার সমর্থনে অজুহাত খুঁজো ও শেখকে সম্মান করবে আল্লাহর সন্ত্তষ্টির জন্য । যদি শেখের কিছু দরকার থাকে , অবশ্যই তুমি প্রথম এগিয়ে গিয়ে তার দরকার পূরণে চেষ্টা করবে । তার সামনে বা তাকে ঘিরে যারা থাকে , শেখের আসরে বসে তাদের মনোযোগ তোমার দিকে আকর্ষণের চেষ্টা করবে না । শেখের কাপড় ধরে টানবে না ।

শেখ যদি খুব ক্লান্ত থাকেন , তবে কোনকিছুর জন্য জোর করবে না । এটা মনে করবে না যে তুমি তার বন্ধু । শেখ হচ্ছেন তাল গাছের মতো - যা থেকে কোনকিছু পরার অপেক্ষায় তুমি থাকবে ।
আলী رضي الله عنهم যা উপদেশ দিয়েছেন , তা প্রয়োজনের চেয়েও যথেষ্ট । তাই নম্রতা ও শান্তভাব – এই দুইটি বৈশিষ্ট্য জ্ঞান চর্চার আসরের যে ছাত্র তার থাকতে হবে এবং আদব সম্পর্কে জানা তার জন্য অপরিহার্য ।

সালাফরা জ্ঞানের আসরকে অত্যন্ত সম্মান করতেন ও এমনভাবে সেখানে বসতেন ঠিক যেন পাখি বসে আছে । আবু বকর বিন আল আম্বারী বলেন , পাখির মতো বসা কথাটির দুইটি ব্যাখ্যা হতে পারে । একটি হলো তারা স্থির হয়ে আসরে বসে থাকতেন , দৃষ্টি নত রাখতেন আর পাখিরা স্থির নয় এমন জায়গা ছাড়া বসে না । যে মানুষ খুব শান্ত , নম্র - তার সম্পর্কে বলা হয় - এই ধীর-স্থির ভাবের জন্য পাখি এসে তার মাথায় বসতে পারে ।

দ্বিতীয় মানে হলো , হজরত সোলায়মান বিন দাউদ আলাইহিস সালাম বাতাসকে বলতেন - আমাদের বহন করে নিয়ে চলো ও পাখিকে বলতেন , ছায়া দাও । বায়ু তাদেরকে ভাসিয়ে নিয়ে যেত আর পাখিরা ছায়া দিতো ।
তার সাথীরা শ্রদ্ধায় দৃষ্টি নত রাখতো ও একদম স্থির বসে থাকতো । তিনি কিছু জানতে না চাওয়া পর্যন্ত তারা কোন কথা বলতো না । তাই জ্ঞানী ব্যক্তির সামনে কেউ যদি একদম ধীর – স্থির হয়ে বসে থাকে , তবে তাকে নবী সুলায়মান আলাইহিস সালামের সাথীদের সাথে তুলনা করা হয় ।
 

Similar Threads

Back
Top