আদব (জ্ঞান চর্চাকারীর আদব-কায়দা)

:sl:




আল খাতিব র: থেকে বর্ণিত আহমেদ বিন সিনান আল কাততান বলেন : আবদুর রহমান বিন মাহদীর আসরে কেউ কথা বলতো না , পেন্সিল ধার করতো না বা হাসতো না ।

যদি তিনি দেখতেন কেউ কথা বলছে বা পেন্সিল ধার দিচ্ছে , তাহলে তিনি উঠে জুতা পরে চলে যেতেন । শেখ ওয়াকী ও তার ছাত্ররা এমনভাবে জ্ঞানের আসরে থাকতেন যেন তারা ইবাদতে আছেন । যদি এমন কিছু ঘটতো যাতে তিনি বিরক্ত হতেন , তাহলে জুতা পায়ে দিয়ে তিনি বাসায় চলে যেতেন ।


ইবনে নুমায়ের যদি দেখতেন কেউ আসরে বসে পেন্সিলে ধার দিচ্ছে , তাহলে রাগে তাঁর মুখের রং বদলে যেত ও তিনি ক্লাশ ছেড়ে চলে যেতেন ( বর্ণনায় আবদুর রহমান বিন উমর ) ।
 
:sl:



আবদুর রহমান বিন উমর বলেন : একজন ছাত্র আবদুর রহমান বিন মাহদীর আসরে হেসে উঠে । তিনি প্রশ্ন করেন , কে হেসেছে ? সবাই আঙুল তুলে তাকে দেখিয়ে দেয় । তিনি তাকে ধমক দিয়ে বললেন , তুমি জ্ঞানের সন্ধান করছো আর হাসছো ? আমি তোমাদের কাউকে এক মাস পড়াবো না ।


জ্ঞানের ছাত্র হিসাবে সে তার শেখের সাথে সর্বোচ্চ ভাল ব্যবহার করবে । সে এভাবে শেখের সাথে কথা বলবে না - কে এটা বলেছে বা কেন এটা নয় বা আপনি কিভাবে এটা জানেন ইত্যাদি । ছাত্র যদি শেখকে কিছু মনে করিয়ে দিতে চায় যা তিনি আগে বলেছিলেন , তাহলে এভাবে বলবে না যে আপনিই এটা বলেছিলেন বা আমি শুনেছি এটা এমন বা অমুক বলেছে এটা এই হবে । এ নিয়ে কথা বলার আগে সে জেনে নেবে এই বিষয়ে শেখের মনোভাব কী । অন্যরা শেখের মতামত নিয়ে কী বলেছে , সে নিয়ে কথা বলার ব্যপারে এটাই হলো প্রকৃত আদব । এছাড়াও ছাত্র তার শিক্ষকের সাথে এই ভাষায় কথা বলবে না যে , ব্যপার কী বা আপনি বুঝেছেন তো বা আপনি কি জানেন ইত্যাদি ।


অন্যরা যদি তার শিক্ষক সম্পর্কে খারাপ কিছু বলে থাকে যেটা তিনি জানেন না , তাহলে সরাসরি এভাবে বলবে না যে অমুক আপনার সম্পর্কে এই কথা বলেছে । বলতে হলে এভাবে বলা যেতে পারে যে , অমুক বলেছে কারো মধ্যে সদগুণ না থাকলে সে রহমত থেকে দূরে থাকে ইত্যাদি ।

শেখ হয়তো এমন কোন ফতোয়া বা কাহিনী বা কবিতা বললেন , যা সে আগে থেকেই জানতো । তবুও সে এমন মনোযোগ দেখাবে যে সে এটা জানতে পেরে খুশি ও মনোযোগের সাথে সে তা শুনবে এবং এমন ভাব দেখাবে যেন শেখের কাছ থেকেই প্রথম সে এটি শুনলো ।


সে শেখের সামনে নিজের জ্ঞান জাহির করার জন্য শেখের আগে আগে কোন কিছু নিয়ে মন্তব্য করা , কোন বিষয়ের ব্যাখ্যা করা বা কারো প্রশ্নের জবাবে কিছু বলা - এসব করবে না । সে কথার মাঝখানে শেখকে থামাবে না ও শেখের কথার মাঝখানে কিছু বলে উঠবে না । শেখ যদি আসরে বসে তার সাথে বা অন্য কারো সাথে কথা বলতে থাকেন , তাহলে সে অন্য কারো সাথে ঐ সময় কথা বলবে না ।

 
:sl:



যদি সে শেখকে কোন বই এগিয়ে দেয় , তবে এমনভাবে দেবে যাতে শেখ সহজেই বইটা ধরে খুলতে পারেন । যদি ছাত্রের জানা থাকে ঠিক কী বিষয়টি শেখ বইতে দেখতে চাচ্ছেন , তাহলে সে পাতা খুলে তারপর বইটি শেখের হাতে দেবে ও বিষয়টি পাতার কোন জায়গায় তা শেখকে দেখিয়ে দেবে । বইটি সে শেখের সামনে ছুড়ে মারবে না ।

যদি সে রাতে শেখের সাথে হাঁটতে বের হয় , তবে সে শেখের সামনে থাকবে । বেশি ভীড় বা অন্য কোন যথাযথ কারণ না থাকলে সে দিনের বেলা শেখের পিছনে থাকবে । যদি বিদেশে বা বিপদজনক এলাকায় তারা থাকে , তবে শেখের সামান্য সামনে থাকবে । সে সাবধান থাকবে যেন শেখের কাপড়ে নোংরা - ময়লা না লাগে । যদি খুব ভীড়ের মধ্যে হাঁটতে হয় , তবে সে শেখকে হাত দিয়ে ঘিরে রাখবে সামনে বা পিছন থেকে । যদি সে শেখের সামনে হাঁটে , তবে একটু পরপর পিছনে তাকিয়ে দেখবে । যদি শুধু তারা দু’জন হাঁটা অবস্থায় থাকে ও শেখ তার সাথে কথা বলেন , তাহলে সে অবশ্যই শেখের ডানে , কেউ বলেন বামে থাকবে ও মুখ তার দিকে ফিরিয়ে রাখবে ।


যদি পথে কারো সাথে দেখা হয় , তবে সে তাদের কাছে শেখের পরিচয় জানাবে । কোন কারণ ছাড়া সে শেখের ঠিক পাশাপাশি হাঁটবে না । শেখের একদম গাঁ ঘেষে সে থাকবে না । শেখের গায়ে বা পায়ে ধাক্কা লাগাবে না বা শেখের কাপড়ে যেন ময়লা না লাগিয়ে ফেলে - এসব বিষয়ে সে সচেতন থাকবে ।


গরমকাল হলে শেখকে সে ছায়ায় বসাবে ; শীতের রোদে বসতে হলে এমনভাবে বসাবে যেন শেখের ঠিক মুখের উপর রোদ না পড়ে । শেখ যদি কারো সাথে কথা বলতে থাকেন , তবে সে দু’জনের খুব কাছে আসবে না , তাদের কথা শোনার চেষ্টা করবে না বা তাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে না । যদি তারা ডাকেন আলাপে অংশ নিতে , তাহলে সে তাদের ডানে বা বামে থাকবে - মাঝখানে আসবে না ।



যদি কখনো সে শেখকে রাস্তায় দেখতে পায় , তাহলে সে প্রথমে সালাম জানাবার উদ্যোগ নেবে - শেখের দিকে সে তাকাবে , কাছে যাবে ও সালাম দেবে । সে দূর থেকে শেখের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করবে না । কোনকিছু নিয়ে কথা হলে সে সুন্দরভাবে শেখের উপদেশ মতো চলবে ।


যদি শেখ কোন ভুল উপদেশ দেন , তাহলে শেখকে এভাবে বলবে না যে - আপনি ভুল বলেছেন বা এই মতটা তেমন জোরালো না । বরং সুন্দরভাবে এভাবে বলবে , মনে করা হয় এই বিষয়ে এরকমটি সবচেয়ে ঠিক । সে এটা বলবে না - আমি মনে করি এটা ঠিক ইত্যাদি ।
 
:sl:



.বইয়ের যত্ন নেবে

বই হলো জ্ঞানের হাতিয়ার । সালাফরা বইয়ের ব্যপারে খুবই যত্নশীল ও সাবধানী ছিলেন । বই সংগ্রহের ব্যপারেও তারা সবরকম উদ্যোগ নিতেন ।


জ্ঞানের ছাত্র হিসাবে একজন তার দরকারী বই সংগ্রহ করতে সব রকম চেষ্টা করবে । সেটা কিনে হতে পারে , বই ভাড়া বা ধার নিয়ে হতে পারে । এসব বই থেকে সে শেখে । শুধু বই সংগ্রহ করার মধ্যে সে জ্ঞানকে সীমিত রাখবে না । এ নিয়ে চমৎকার একটি কথা হলো : তোমার স্মৃতিশক্তি যদি ভাল না হয় , তাহলে সংগ্রহ করা বই তোমার কোন উপকারে আসবে না ।


যারা বইয়ের কোন ক্ষতি করবে না , তাদেরকে বই ধার দিতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে । তবে একদল জ্ঞানী আছেন যারা বই ধার দিতে মানা করেন । তবুও তা করবে , কেননা এর মধ্য দিয়ে জ্ঞান অর্জনে অন্যকে সাহায্য করা হয় । যে বই ধার নেয় , সে অবশ্যই বইয়ের মালিককে ধন্যবাদ দেবে ও তার কল্যাণ কামনা করবে ।

খুব দরকার না হলে ধার করা বই বেশিদিন নিজের কাছে রাখা ঠিক না । যা পড়ার জন্য বই ধার নিয়েছিলে , সেটা পড়া হয়ে গেলে বই ফেরত দিয়ে আসবে ।

তাছাড়া বইয়ের মালিক যখন ফেরত চাইবে , তখন তা ফিরিয়ে না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেয়া ঠিক না । মালিকের অনুমতি ছাড়া সে বইয়ের ভিতরে কোন টীকা লিখতে পারবে না । তাছাড়া বইয়ের শুরু বা শেষেও সে মালিককে না বলে কিছু লিখবে না ।

দরকার ছাড়া সে অন্যকে এই বই ধার দেবে না বা অন্যের কাছে রেখে আসবে না । যদি সে বইয়ের কোন অংশ অনুলিপি করতে চায় , তাহলে বইয়ের উপর বা বইয়ের মধ্যে কাগজ রেখে লিখবে না । বইয়ের উপর কলম খোলা রেখে দেবে না ও বইয়ের পাতার উপরে কিছু লিখবে না ।
 
:sl:



ওয়াকী বলেন , হাদীসের প্রথম রহমত হলো তুমি তোমার বই ধার দেবে (বর্ণনায় আল খাতিব র: ) । সুফিয়ান আস সাওরী র: বলেন , যে তার জ্ঞানকে নিজের মধ্যে সীমিত রাখে , সে নিচের তিন ধরনের পরীক্ষার যে কোন একটির মুখোমুখি হবে --

১. সে ভুলে যাবে ও কিছু মুখস্থ করতে পারবে না ,

২. সে এই জ্ঞান থেকে কোন উপকার পাবে না অথবা

৩. সে দেখবে তার সব বই একে একে হারিয়ে যাচ্ছে ।

এটা অপছন্দনীয় যে বইয়ের মালিকের কাছ থেকে বই বেশি দিন দূরে রেখে দেয়া হবে । তাই যে বই ধার নেয় , সে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বই ফেরত দেবে ।


আয যুহরী বলেন : ও ইউনুস , বইয়ের বিশ্বাসঘাতকতা থেকে সাবধান থাকবে । ইউনুস জানতে চান , সেটা কী ? তিনি বলেন , যার বই তার থেকে বই বেশিদিন দূরে সরিয়ে রাখা ।


আল ফুদায়েল বিন ইয়াদ র: বলেন , যারা সাবধানী বা জ্ঞানী , এটা তাদের কাজ না ; তারা কখনো অন্যের বই নিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন নি । যে এমন করে সে নিজের সাথে অন্যায় করলো ।

এসব জ্ঞানীদের অনেকেই কাউকে বই ধার দিতেন না এজন্য যে , মালিক থেকে বইকে বেশিদিন দূরে রাখা ঠিক না , যেমনটি সুফিয়ান র: বলতেন , তোমার কোন বই কাউকে ধার দেবে না । রাবী বিন সুলায়মান বলেন , আল বুতি আমাকে লিখেন , তোমার সব বই মুখস্থ করে ফেলো । কেননা যদি তুমি কোন বই হারিয়ে ফেলো , তাহলে কখনো সেই ক্ষতি পূরণ হবে না ।
 
:sl:


বই থেকে কিছু লেখার সময় বা অন্য কোন সময় মেঝেতে বই খোলা রাখা ঠিক না । বরং অন্য দুইটি বই বা কোন কিছুর মাঝখানে রাখবে বা বই রাখার জন্য যে ফোল্ডিং চেয়ার ব্যবহার হয় , তার মাঝখানে রাখবে যেন বইয়ের বাঁধাই নষ্ট না হয় ।

যদি সে বইটি কোন উঁচু জায়গায় রাখতে চায় , তাহলে বইয়ের তাকে বা চেয়ার ইত্যাদির উপর রাখবে । মাটিতে বই না রাখাই সবচেয়ে ভাল , কেননা মাটিতে বই রাখলে তা ময়লা হয়ে যায় বা পানি লেগে বই ভিজে যায় । যদি সে কাঠের উপর বই রাখতে চায় , তাহলে কাপড় পেতে তার উপর রাখবে যেন বইয়ের প্রচ্ছদ নষ্ট না হয় ।


বই কিভাবে গুছিয়ে রাখা হচ্ছে সে বিষয়ে একজন বিশেষভাবে মনোযোগী হবে । এটি করা হবে বইয়ের গূরুত্ব , মর্যাদা ও দরকার বুঝে । সবচেয়ে পবিত্র বই সবার উপরে রাখবে । যদি তার পাঠাগারে কুরআন শরীফ থাকে , তবে সব বইয়ের উপরে এটি থাকবে । সবচেয়ে ভাল হয় যদি কুরআন একটি কাপড়ের মধ্যে রেখে দেয়ালের কোন তাকে হাতের নাগালের ভিতরে রাখা হয় ।


এর পরে রাখতে হবে হাদীসের বইগুলি যেমন সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম । এরপর কুরআন তাফসীর , তারপর হাদীসের ব্যাখ্যা , এরপর ধর্মীয় নীতি ( উসুল ) , এরপর ফিকাহ বিষয়ক নীতি, তারপর ফিকাহ শাস্ত্র , তারপর আরবী ভাষা ও ব্যকরণ , তারপর আরবী কবিতা , পরে সাধারণ কবিতার বই ।
 
:sl:


যদি শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে একই বিষয়ের দু’টি বই একই মানের হয় , তবে যে বইতে কুরআন বা হাদীসের পরিমাণ বেশি আছে , তা রাখবে উপরে । যদি এই দুইয়ের পরিমাণও এক হয় , তবে দুই বইয়ের লেখকদের মধ্যে যার মর্যাদা বেশি তার বই উপরে রাখবে । যদি দুই লেখকই একই মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকেন , তবে বইয়ের মধ্যে যেটি বেশি পুরানো ও বহুল স্বীকৃত , সেটা রাখবে ।

যদি এই ক্ষেত্রেও দুই বই সমান হয় , তবে যেটি বেশি যথার্থ ও বিশ্বাসযোগ্য , সেই বই বেছে নিবে । যদি কেউ কোন বই ধার নেয় , তবে যার বই সে ফেরত চাওয়া মাত্র তাকে তা দিয়ে দিবে । যদি সে কোন বই কেনে ও তা ভালভাবে পড়ার সময় না থাকে , তবে সে অবশ্যই বইটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চোখ বুলাবে ও বইটির মূল্যায়ন করার চেষ্টা করবে ।
যদি যে কোন বই থেকে কিছু হাতে লিখে অনুলিপি করে , তবে সে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লিখে শুরু করবে ।

যদি বইটির শুরু হয় আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে বা আল্লাহর রাসূল صلى الله عليه وسلم এর উপর দুআ চেয়ে , তবে সে বিসমিল্লাহ লেখার পরে সেগুলি লিখবে । এরপর সে যা লিখতে চায় , বই থেকে তা লিখবে ।


যখনই কেউ আল্লাহর নাম লিখবে , আল্লাহ শব্দের সাথে সে উচ্চ মর্যাদাবাচক কিছু লিখবে ,
যেমন তাআলা ( যিনি উচ্চ মর্যাদাবান ) , সুবহানা ( তিনি মহিমান্বিত ) , আযযা ওয়া জাল ( যিনি সর্বশক্তিমান ও মহিমান্বিত ) , তাকাদদাস ( নিখুঁত ) ইত্যাদি ।
যখনই সে রাসূল صلى الله عليه وسلم এর নাম লিখবে , তার সাথে সে লিখবে - আস সালাতু ওয়াস সালামু আলাইহি ( তার উপর দরুদ ও সালাম ) । লেখার সময় সে মুখেও তা বলবে ।


সালাফ ও তার পরে যারা এসেছেন , তাদের রীতি ছিল এসব শব্দ পুরোপুরি লেখার - যদিও তা হয়তো বারবার একই বাক্যে লিখতে হতো । আজকালকার লেখকদের মতো তারা সংক্ষেপে কখনো স: বা দ: লিখতেন না । এভাবে লিখলে আমাদের উপর রাসূল صلى الله عليه وسلم এর যে অধিকার আছে , তা নষ্ট করা হয় ।
 
:sl:


লেখার সময় যদি কোন সাহাবীর প্রসঙ্গ আসে - বিখ্যাত বা গূরুত্বপূর্ণ সাহাবী হলে তো কথাই নেই , অন্যদের বেলাতেও সে অবশ্যই লিখবে রাযি আল্লাহু আনহু ( আল্লাহ তার প্রতি সন্ত্তষ্ট হোন ) - সে সালাম ও দরুদ পেশ করবে না যা নবী ও ফিরিশতাদের জন্য করা হয় ।


যদি কোন সালাফদের বিষয়ে লিখতে হয় , বিশেষ করে বিখ্যাত কেউ বা ইসলামের নেতৃস্থানীয় কেউ , তবে তার নামের পরে লিখতে হবে রাহিমাহু আল্লাহ ( আল্লাহ তাকে মাফ করুন ) ।


বই নিজের হলে সেখানে টীকা বা কোন গূরুত্বপূর্ণ তথ্য লিখতে কোন সমস্যা নেই । তবে যা লিখবে তা যেন দরকারী কথা হয় ও সেই বইয়ের বিষয় সংশ্লিষ্ট হয় । তবে অনেক কথা ও বিষয়ের সাথে সম্পর্ক নেই বা তেমন দরকারী না - এসব বিস্তারিত লিখে বইয়ের পাতা ভরে ফেলবে না ও জায়গা নষ্ট করবে না ।

বইয়ের দুই বাক্যের মাঝে লিখবে না । যদিও অনেকে কালো কালির মাঝে লাল রং ব্যবহার করে লিখে , তবে উত্তম হলো এটা একদমই না করা ।
 
:sl:


১০. যেভাবে পড়তে হবে

যে ছাত্র জ্ঞানের সন্ধানে আছে , সে অবশ্যই খুব ভোরে পড়াশোনা শুরু করবে । সালাফরা এই নিয়মটি গুরুত্বের সাথে মেনে চলতেন ।
আবদুল্লাহ বিন আহমদে বিন হাম্বাল বলেন , তার পিতা বলতেন – মাঝেমাঝে আমি শেষ রাতে উঠে হাদীস শোনার জন্য বাইরে যেতে চাইতাম । মা তখন আমার কাপড় টেনে ধরে বলতেন , অন্তত আজান হওয়া আর মানুষজনের ঘুম থেকে উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করো । আমি খুব ভোরেই আবু বকর বিন আইয়ামের হাদীসের আসরে যেতাম ।

একজন ছাত্র যখন ক্লাশে ঢুকবে , তখন সে পুরো মনোযোগ পড়াতে দেবে , তার মনকে অন্য সব চিন্তা থেকে সে দূরে রাখবে । সে তার সহপাঠীদেরকে সালাম জানাবে ও শেখকে আলাদাভাবে অত্যন্ত সম্মানের সাথে সালাম দেবে । এরপর সে আসরের এক কোনায় বসবে ও সহপাঠীদের মাঝখানে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করবে না , যদি না শেখ বা সহপাঠীরা তাকে সামনে এগিয়ে আসতে বলে যেমনটি আল বুখারী র: বলেন :

একবার রাসূল صلى الله عليه وسلم মসজিদে কিছু মানুষের সাথে বসেছিলেন । তিনজন মানুষ তখন আসে , দু’জন রাসূল صلى الله عليه وسلم এর সামনে এসে কিছু সময় ধরে দাঁড়িয়েছিল । এরপর একজন বসার জায়গা পেয়ে বৃত্তের মধ্যে বসে । অন্যজন বৃত্তের পিছনে গিয়ে বসে , তৃতীয়জন চলে যায় ।


রাসূল صلى الله عليه وسلم যখন তার কথা শেষ করলেন , তখন বললেন , আমি কি তোমাদেরকে এই তিনজন সম্পর্কে বলবো ? একজন নিজেকে আল্লাহর কাছে নিয়ে গেল , তাই আল্লাহ তাকে নিজের কাছে নিলেন । একজন আল্লাহকে লজ্জা পেল , তাই আল্লাহও তাকে শাস্তি দিতে লজ্জা পেলেন । তৃতীয়জন আল্লাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে গেল ; তাই আল্লাহও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন ( সহীহ বুখারী , সূত্র : আবু ওয়াকিদ আল লাইযী )।
 
:sl:


সে ছাত্র কাউকে জায়গা ছেড়ে উঠে যেতে বলবে না কেউ যদি কখনো তার জায়গায় বসে , তবে সে তাকে উঠতে বলবে না , যদি না তাতে তার কোন কল্যাণ থাকে

কোন দরকার ছাড়া সে আসরের মাঝখানে গিয়ে বসবে না সে অনুমতি ছাড়া দুজন ব্যক্তির মাঝে বসবে না সে শেখের কথা ভালভাবে বোঝার জন্য কাউকে বিরক্ত না করে যতদূর সম্ভব তার কাছে বসার চেষ্টা করবে

সে বন্ধু ও সহপাঠীদের সাথে খুব ভাল ব্যবহার করবে কেননা এর মধ্য দিয়ে শেখ ও তার ক্লাশের প্রতি সম্মান দেখানো হয় ক্লাশ ও সেখানকার জ্ঞান চর্চা হলো পবিত্র ও কোনভাবেই এসবের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করা যাবে না

সে শিক্ষকের মতো করে নয়বরং ছাত্রসুলভ নম্রতার সাথে আসরে বসবে কোন দরকার ছাড়া সে জোরে কথা বলবে না ,বরং শেখের সামনে সে পুরো মনোযোগী হয়ে বসে তার কথা শুনবে শেখের আগেই কোন প্রশ্নের জবাব দেবে না বা কিছু ব্যাখ্যা করা শুরু করবে না ।


সে তার পাঠ শুরু করবে এভাবে : আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি ক্ষমাশীল , সব প্রশংসা আল্লাহর ও তাঁর রাসূল صلىاللهعليهوسلم এর , তার পরিবারবর্গ ও সাহাবীদের প্রতি দরুদ ওসালাম

এরপর সে জ্ঞানী , শিক্ষকবৃন্দ , তার অভিভাবক ও মুসলিম উম্মাহর জন্য দুআ করবে



[TD="class: sura-arabic-text, align: right"][/TD]
 
:sl:


ক্লাশে একজন ছাত্রের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন তার শেখ । তার মনে যদি অন্য কোন চিন্তা থাকে বা সে যদি ক্লান্ত থাকে বা তার যদি একঘেয়েমি লাগে , তখন সে পড়বে না ।

সে কোন প্রশ্ন নিয়ে শেখকে পীড়াপীড়ি করবে না বরং ভদ্র , শান্ত , নরমভাবে জানতে চাইবে । সে সময় ও জায়গা বুঝে প্রশ্ন করবে । যথাসময়ে সঠিক প্রশ্ন করতে সে যেন লজ্জা না পায় । যদি শেখ তাকে প্রশ্ন করেন , তুমি কি বুঝেছ ? তাহলে যদি না বুঝে থাকে ,তবে সে হ্যাঁ বলবে না । আমি বুঝতে পারি না বা আমি জানি না - এটা বলতে সে লজ্জা পাবে না ।

মুহাজিদ র: বলেন , যে বেশি লাজুক বা উদ্ধত , সে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে না । আয়শা رضي الله عنهم বলেন , আনসার নারীরা কতই না ভাল । তারা তাদের লজ্জাকে ধর্ম সম্পর্কে জানতে চাওয়ার বেলায় বাধা হতে দেয় নি ।

আল খলিল বিন আহমদ رضي الله عنهم বলেন , অজ্ঞতার বাস হলো লজ্জা ও ঔদ্ধত্যের মাঝখানে ।
 
:sl:



শেষ কথা


জ্ঞানের পথের ছাত্রের আচরণ কেমন হবে , তা আল্লাহর করুণায় স্পষ্ট ব্যাখ্যা করা হলো । তাই জ্ঞান চর্চাকারীর জন্য এটা অপরিহার্য যে সে এসব গুণ ও বৈশিষ্ট্য অর্জনের জন্য সবরকম চেষ্টা করবে , এসব মেনে চলবে , ভাল আদবের মাধ্যমে অন্তর ও বাইরের দিককে সুন্দর করবে ।


আমি আল্লাহর একজন দীন - হীন - পাপী বান্দা ; আমার দোষের সীমা নেই ; সবসময়ই আমি নানা ফাঁদে পা দেই - আল্লাহর কাছে এই পাপী বান্দার আকুল আবেদন - এসব আদবকে যেন সেই সব ছাত্র ও জ্ঞান চর্চাকারীকে পুরস্কার হিসাবে দেয়া হোক যারা তাদের নিয়্যত শুধু আল্লাহর সন্ত্তষ্টির জন্য করে ।

আমি আল্লাহকে তাঁর মাহাত্ম্য ও নূরের উসীলায় আবেদন জানাই - এই আবেদন এমন একজনের যে দীন ,হীন , ভীত ও দুর্বল - আবেদনটি হলো তিনি যেন মুসলমানদেরকে কুরআন ও সুন্নাহর দিকে এমনভাবে পরিচালিত করেন যেন তার মধ্যে শিরক ও বেদাতের কোন জায়গা না থাকে - অবশ্যই তিনি এমনটি করতে সমর্থ । হে আল্লাহ , সব প্রশংসা আপনার , আপনি মহান । আমি সাক্ষ্য দেই যে আপনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই ।

আমি তওবা করছি , হে আল্লাহ , আপনি আমাকে মাফ করুন ।


শুরু ও শেষে সব প্রশংসা আল্লাহর , অসংখ্য ও পরিপূর্ণ দরুদ ও সালাম
রাসূল صلى الله عليه وسلم , তার পরিবার ও সাহাবীদের উপর । আমাদের চূড়ান্ত আহবান হলো সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি জগতসমূহের রব ।


যোগাযোগ / লেখা নিয়ে মতামত পাঠান : [email protected]
 
:sl:




আদব ( জ্ঞান চর্চাকারীর আদব-কায়দা )

আরবী : শেখ আবু আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মাদ সাঈদ রাসলান, সৌদি আরব।

ইংরেজী অনুবাদ: আবু সাবাইয়া

ইংরেজী থেকে অনুবাদ: জাবীন হামিদ, বাংলাদেশ।


"আমি ত্রিশ বছর ধরে আদব শিখেছি আর জ্ঞান চর্চায় সময় দিয়েছি বিশ বছর"


-আবদুল্লাহ বিন আল মুবারক।




সূচি :

ভূমিকা

১. জ্ঞানের সন্ধান করার সময় আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিয়ত পরিশুদ্ধ করতে হবে

২. শরীয়াহ বিরোধী সবকিছু থেকে মন ও আচরণকে শুদ্ধ করতে হবে

৩. জ্ঞানের দিকে পুরো মনোযোগ দিতে হবে ও সব বাধা দূর করতে হবে

৪. কম খাও , সাবধান হও ও সবসময় আল্লাহর যিকির করো

৫. খাওয়া , ঘুম ও কথা যত কম তত ভাল

৬. সঠিক বন্ধু বেছে নেয়া ও সামাজিকতা কমানো

৭. কী শিখবে ? কার কাছে শিখবে ?

৮ . শিক্ষকের সাথে সেরা আচরণ করতে হবে

৯ . বইয়ের যত্ন নেবে

১০ . যেভাবে পড়তে হবে


শেষ কথা
1500732554028.jpg


সালাম

বইটি সম্প্রতি ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে । দাম ৭৩ টাকা ।
 
Last edited:

Similar Threads

Back
Top