ইসলামী শিক্ষা মেনে চলছে কারা- মুসলিম না অমুসলিমরা?

Muslim Woman

Super Moderator
Messages
12,286
Reaction score
1,449
Gender
Female
Religion
Islam
বিসমিল্লাহ

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবনীর আয়নায় নিজেকে দেখুন...
......................
পাকিস্তানের বহুল প্রচারিত উর্দূ পত্রিকা ‘দৈনিক দুনিয়া’র বিখ্যাত সাংবাদিক ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদক মুহাম্মাদ ইযহারুল হক ১২ই রবীউল আউয়াল উপলক্ষে লেখা এক কলামে তার স্পেন সফর এবং সেখানকার ‘আল-হামরা’ প্রাসাদ দর্শনকালে সংঘটিত একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন।
...............
তিনি আল-হামরার ইমারতগুলো দেখার এক পর্যায়ে ‘আদালত চত্বর’ ঘুরে দেখছিলেন।
এসময় তার সামনে দন্ডায়মান এক শ্বেতাঙ্গিনী ইংরেজ মহিলার সাথে তার এক বড়ই চিত্তাকর্ষক কথোপকথন হয়।

কথার সূচনা ইংরেজ মহিলাই করেছিলেন। তিনি যখন দেখলেন, ইসলামে প্রাণীর খোদাইকৃত ভাস্কর্য বা প্রতিকৃতি হারাম হওয়া সত্ত্বেও গ্রানাডার মুসলিম শাসক সুলতান ৫ম মুহাম্মাদের আদেশে আদালত চত্বরে প্রাণীর খোদাইকৃত ভাস্কর্য বা প্রতিকৃতি নির্মিত হয়েছে, তখন স্বভাবতই তার মাঝে এ আলোচনার ইচ্ছা জাগে।

পুরো আলোচনার উপর আলোকপাত করতে গিয়ে মুহাম্মাদ ইযহারুল হক লিখেছেন-


আদালত চত্বরের চার পাশে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল। সিংহের ভাস্কর্যগুলোর মুখ দিয়ে পানির ফোয়ারা উপরের দিকে উৎক্ষিপ্ত হচ্ছিল। গ্রানাডার সুলতান ৫ম মুহাম্মাদ এই আদালত চত্বর নির্মাণ করেছিলেন।
শত শত বছর পেরিয়ে গেলেও আজ অবধি তা পূর্বের মতো অবিকৃত রয়েছে।

কিন্তু ইসলামে তো ভাস্কর্য ও মূর্তির কোন অনুমতি নেই, হঠাৎই আমার পাশে দাঁড়ানো শ্বেতাঙ্গিনী মহিলা আমাকে সম্বোধন করে বলল, তারপরও মুসলিম বাদশাহরা এগুলো কেন বানিয়েছেন? এক মুহূর্তের জন্য মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল। তারপর মার্ক্সিজমের ইতিহাস কাজ দিল। বললাম, এই বাদশাহ সংশোধনবাদী প্রগতিশীল ছিলেন!

সে হো হো করে হেসে উঠে ঠাট্টাচ্ছলে বলল, মুসলমান তো! তাই প্রত্যেক কথাতেই তোমাদের একটা না একটা যুৎসই উত্তর হাতের কাছে মজুদ থাকবেই! কিন্তু কথা এই যে, তোমাদের জীবনাচার তোমাদের রাসূলের বিধি-বিধানের ধার-কাছ দিয়েও চলছে না।

তার কথাটা কি চপেটাঘাত না দুঃখ প্রকাশ বুঝতে পারলাম না। কিন্তু কথাটা তীরের মতো বুকে এসে বিঁধল। পাশেই একটা ক্যাফে ছিল। আমরা কাঠের একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলাম।

‘ম্যাডাম, আমাদের রাসূলের বিধি-বিধানই বা কী, আর তার ধারে-কাছে আমাদের জীবন চলছে কি না- আপনি তার কী জানেন’?

তিনি কয়েক বছর ধরে রাসূলের পবিত্র জীবনী অধ্যয়ন করেছিলেন। মনে পড়ছে না যে, তিনি ফ্রান্সে ইংরেজীর প্রফেসর ছিলেন, না হল্যান্ডে। পাকিস্তানসহ কয়েকটি মুসলিম দেশে তিনি ভ্রমণ করেছেন। শুধু ভ্রমণই নয়; বরং আমাদের জীবনধারার গভীরে পর্যন্ত তার যাতায়াত ঘটেছিল।


তিনি বলতে লাগলেন, তোমাদের রাসূলকে আল্লাহ রাহমাতুল্লিল ‘আলামীন বা সকল সৃষ্টির জন্য রহমত আখ্যা দিয়েছেন। তিনি সারা জাহানের জন্য, সারা বিশ্বের জন্য রহমত, শুধু মুসলিমদের জন্য নন। তোমরা কি কখনও এর রহস্য নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করেছ?

আমি মাথা দুলিয়ে বললাম, না। আসলে চিন্তা করলে তো কিছু বলতে পারব!


একটু হ’লেও ভেবে দেখো, আজকের বিশ্বে কোটি কোটি মুসলিম আমাদের অমুসলিমদের দেশে এসে বসবাস করছে। কোটি কোটি মুসলিম এখানে আসার জন্য চেষ্টা করছে। তার বিপরীতে পাশ্চাত্যের কতজন লোক মুসলিম দেশগুলোতে বসবাসের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে? আমাদের দেশগুলোকে জান্নাত মনে করা হয়।

একটি মুসলিম দেশ থেকে যখন কোন নওজোয়ান আসে। তারপর সে তার ভাই-বোনদের নিয়ে আসে। খান্দানের পর খানদান এভাবে স্থানান্তরিত হয়ে আসছে।

আমরা পাশ্চাত্যবাসীরা মুখে স্বীকার করি বা না করি, এসব কিছু আমাদের এজন্য অর্জিত হয়েছে যে, আমরা তোমাদের রাসূলের শিক্ষা আমাদের মাঝে বাস্তবায়ন করেছি।

আমাদের এ দাবী তোমাদের কাছে আজব মনে হ’তে পারে। কেননা আমরা না মুসলমান, না আমরা মুসলমান হওয়ার দাবী করি। কিন্তু যেসব বিধি-বিধান তোমাদের রাসূল তোমাদের দিয়েছেন, সেগুলো কাজে লাগিয়ে আমরা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছি যে, মুসলমানরা আজ আমাদের দেশে ছুটে আসছে।
....................................
১) ইসলামের নবী বলেছেন, ‘যার মাঝে আমানতদারী নেই তার মধ্যে ঈমান নেই। আর যে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তৎপর নয় তার মধ্যে দ্বীন নেই’।

আমরা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করি, আমানতের হেফাযত করি। আমাদের শাসকদের নিকট সরকারী কোষাগার আমানত হিসাবে গণ্য। আমরা জনগণ তাদের থেকে তা পাই পাই করে হিসাব নিয়ে থাকি।

২) ইসলামের নবীকে জিজ্ঞেস করা হ’ল, মুসলিম কি মিথ্যুক হ’তে পারে? তিনি বলেছিলেন, মিথ্যা বলার অভ্যাস ঈমানের সাথে যুক্ত হ’তে পারে না। আমরা মিথ্যা বলি না। আমাদের বাচ্চাদের মধ্যে মিথ্যা বলার ধারণা চিন্তাও করা যায় না।

৩) ইসলামের নবী অভাবী, নিঃস্ব ও দরিদ্রদের খোঁজ-খবর ও তত্ত্বতালাশ রাখার কথা বলেছেন। আমাদের দেশগুলোতে প্রত্যেক নিঃস্ব ও প্রত্যেক আয়-রোযগারহীনকে রাষ্ট্র আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে থাকে। জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকেই এসব কিছুর বন্দোবস্ত হয়। এমনকি রাষ্ট্র গৃহহীনদের গৃহও দিয়ে থাকে। আজ ব্রিটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় মুসলমানসহ কত লোক সরকার প্রদত্ত বাসা-বাড়িতে বাস করছে।

৪) তোমাদের রাসূল উপদেশ দিয়েছেন, দুনিয়াতে যে লোক দেখানো ও খ্যাতির পোষাক পরবে ক্বিয়ামতের দিন তাকে লাঞ্ছনা ও অপমানকর পোষাক পরানো হবে।

৫) তোমাদের দেশের সাথে আমাদের দেশের তুলনা করে দেখ। আমাদের মন্ত্রী, অফিসার, বড় বড় কূটনীতিক, পার্লামেন্ট সদস্যরা খুব বিশেষ কোন অনুষ্ঠান না হ’লে সাদামাটা প্যান্ট, নিকার ও চপ্পল পরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে থাকে। শীতের দিন তারা জ্যাকেট ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু তোমাদের ওখানে এক এক জনের ডজন ডজন পোশাক রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিমদের লাইফ স্টাইল দেখো। তাদের বিলাসবহুল দামী গাড়ির মোকাবেলা আমাদের সবচেয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তিও করতে পারে না। আর তারা তা করতে চায়ও না। তোমাদের শাসকদের বাসভবনগুলোতে পানির ট্যাপ, দরজার হ্যাজবোল্ট ও তালা/অর্গল পর্যন্ত সোনা দিয়ে বানানো হয়ে থাকে।

৬) তোমাদের রাসূল বলেছেন, ‘নিজ হাতের মেহনতে উপার্জিত খাদ্য থেকে উত্তম খাবার কেউ কখনো খায়নি। আল্লাহর নবী দাঊদ নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন’। প্রত্যেক মুসলমানের তো এ কথা স্মরণ আছে যে,... ‘উপার্জনকারী আল্লাহর বন্ধু’। কিন্তু তোমাদের দেশে নিজ হাতে উপার্জনকারীকে ইতর ও ছোটলোক ভাবা হয়। আমাদের দেশে মালী, রাজমিস্ত্রী, ঝাড়ুদার, মুচী সেই সামাজিক মর্যাদা ভোগ করে যা অন্যান্যরা ভোগ করে। ধুলিমাটির ঘরে বসবাসকারী দীন-হীনও পার্লামেন্ট সদস্যের পড়শী হয়ে থাকে। রেস্তোরাঁর ম্যাটস যে মোছে সে যে কাতারে দাঁড়িয়ে খাদ্য খরিদ করে আমাদের মন্ত্রীরাও সেই কাতারে দাঁড়িয়েই খাদ্য খরিদ করে।

৭) তোমাদের রাসূল নিজের কাপড় নিজে ধুতেন, নিজের জুতা নিজে মেরামত করতেন। আমরাও এ কাজগুলো নিজেরা করি। আমাদের দেশে গৃহভৃত্য থাকে না। আমাদের দামী থেকে দামী লোকও নিজের জুতা নিজেই পালিশ করে, জামা-কাপড় নিজেই ইস্ত্রী করে, নিজের কামরা ও বাথরুম নিজেই পরিষ্কার করে।

8) তোমাদের রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ভেজাল দেয় সে আমাদের দলভুক্ত নয়’। নিউজিল্যান্ড থেকে নিয়ে আটলান্টিকের পশ্চিম তীর পর্যন্ত যত দেশ আছে তার কোনটিতে কি তুমি ভেজাল খাদ্য বেচা-কেনা হ’তে দেখতে পাবে? না। এটা কেবল তোমাদের ওখানেই হয়ে থাকে।

৯) তোমাদের রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে লোক কোন দোষযুক্ত জিনিস কারও কাছে বিক্রয় করল, কিন্তু ক্রেতাকে তার দোষ বলে দিল না, আল্লাহর ফেরেশতারা তাদের উপর হামেশা অভিশাপ দিতে থাকে’। তোমাদের ব্যবসায়ীদের এবং আমাদের ব্যবসায়ীদের তুলনা করো। আমাদের দেশে দোষযুক্ত জিনিসের দোষ না বলে বিক্রির কথা কেউ ভাবতেও পারে না। কেনা জিনিস ফিরিয়ে দিতে কিংবা বদলে নিতে চাইলে বিনা বাক্য ব্যয়ে তা করা যায়।

১০) তোমাদের রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক’। তোমরা পরিচ্ছন্নতায় তোমাদের বাজারগুলোকে আমাদের বাজারগুলোর সাথে, তোমাদের রাজপথগুলোকে আমাদের রাজপথগুলোর সাথে, তোমাদের টয়লেটগুলোকে আমাদের টয়লেটগুলোর সাথে, তোমাদের পার্ক ও চলাফেরার জায়গাগুলোকে আমাদের পার্ক ও চলাফেরার জায়গাগুলোর সাথে তুলনা করে দেখ, কোনগুলো ছাফ-সুতরা আর কোনগুলো ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধে ভরা?

১১) তোমাদের রাসূল (ছাঃ) বলে গেছেন, ‘তোমরা তোমাদের বৃদ্ধ ও দুর্বলদের প্রতি খেয়াল রেখো। তাদের খাতিরেই তোমরা জীবিকা পেয়ে থাকো’। আমরা আমাদের প্রবীণদের ফ্রি চিকিৎসা দেই। বাসে-ট্রেনে তারা ফ্রি ভ্রমণ করে। নেহায়েত কম মূল্যে তাদের গৃহের ব্যবস্থা করি। আমাদের ওল্ড হোম বা বৃদ্ধাশ্রমগুলো ফাইভ স্টার হোটেলের মানের। অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক সকাল-সন্ধ্যা তাদের বাড়ি গিয়ে তাদের কাজ করে দেয়।

১২) তোমাদের দোকান ও কারখানার সামনে কালেমা ও দরূদ লেখা থাকে। কিন্তু সেগুলোর ভিতরে থাকে মিথ্যা কথন, ওয়াদাখেলাপী, ভেজাল মিশ্রণ ও ট্যাক্স ফাঁকির কারবার। তোমাদের বাড়ির গেটে লেখা থাকে ‘হাযা মিন ফাযলি রববী’ এ গৃহ আমার রবের অনুগ্রহ। অথচ গৃহের অভ্যন্তরে চলে চাকর-নফরদের উপর যুলুম-নির্যাতন। তোমাদের গাড়িতে ঝুলানো থাকে সূরা ইয়াসীন। কিন্তু তোমরা ট্রাফিকের সকল আইন-কানূন লঙ্ঘন করে থাক।

১৩) তোমরা ১২ই রবীঊল আউয়াল পালনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় কর। অথচ রাসূলের শিক্ষাকে পুরো বছর পিছনে ফেলে রাখ। অথচ আমাদের প্রতিদিনই বারই রবীঊল আউয়াল। আমরা যা কিছু হয়েছি তা এজন্য যে, আমরা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর শিক্ষার উপর কঠিনভাবে আমল করি। যিনি এই জগতের জন্যও রহমত যে জগতে আমরা বসবাস করছি। আশা করি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আল্লাহ আমাদেরকে ঈমানের দৌলতও দান করবেন। তোমরা লক্ষ্য করো, আমাদের মধ্যে যারা মুসলমান হয়, তাদের মাঝে সেসব মন্দ কাজ ও গর্হিত আচরণ পাওয়া যায় না, যার মধ্যে তোমরা খান্দানী (বংশ পরম্পরায়) মুসলমানরা পা থেকে মাথা পর্যন্ত ডুবে আছ’।
.............................................................................
এ সন্ধ্যায় আমি (ইযহারুল হক) কল্পনার বাসে বসে কর্ডোভা চলে গেলাম। জানা নেই যে, সে মুসলমান ছিল কি না। জোর ধারণা করি যে, সে মুসলমান ছিল অথবা কিছুকাল পরে মুসলমান হয়ে গিয়ে থাকবে। কিন্তু প্রতি বছর ১২ই রবীঊল আউয়ালে আমি ভাবি, আমি কি মুসলমান পরিচয় দানের যোগ্য? নাকি নই?
সম্মানিত কলামিস্ট মুহাম্মাদ ইযহারুল হকের সাথে শ্বেতাঙ্গিনী মহিলা ইসলামী শিক্ষা ও রাসূলের সীরাত সম্পর্কে মুসলমানদের আচরণ নিয়ে যে মতামত তুলে ধরেছেন তা কি বর্তমান মুসলিম সমাজের প্রতিবিম্ব নয়? বাস্তবে কি রাসূলের সীরাতের সাথে আমাদের যোগ শুধুই বাগাড়ম্বর নয়? আমরা কি কিছু রসম-রেওয়াজ পালন করে তাকে রাসূলপ্রেম আখ্যা দিচ্ছি না?

মাওলানা আব্দুল মাজেদ দরিয়াবাদী বলেছেন, যদি আমরা আজ সেই শ্রেষ্ঠতম আমানতদার রাসূলের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলতাম, তাহ’লে আমাদের মাঝে খেয়ানত ও অধার্মিকতা স্থান পেত না। যদি আমরা আজ হেরা গুহায় উপবেশনকারীর কদমের নকশাকে চোখের সুরমা বানাতাম, তাহ’লে আমাদের হৃদয়-কন্দরে কোন দুর্গন্ধ থাকত না। যদি আমরা আজ রহমাতুল্লিল ‘আলামীনের বার্তাকে সাচ্চা দিলে বিশ্বাস করতাম, তাহ’লে আমাদেরই মতো অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর সঙ্গে আমাদের অনাত্মীয়তা ও বিরোধিতার জন্ম হ’ত না। যদি আমরা আজ সত্যবাদী ও সত্য আচরণকারী নবীর তরীকার উপর থাকতাম, তাহ’লে আমাদের মাঝে মিথ্যার লেশ মাত্র থাকত না। যদি আমরা আজ পবিত্র নাম আহমাদ-এর সম্মান করতাম, তাহ’লে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা থেকে আমরা এত বিমুখ হ’তাম না। যদি আমাদের আজ পবিত্র নাম মুহাম্মাদ-এর সাথে কার্যকর কোন সম্বন্ধ থাকত, তাহ’লে আমাদের বর্তমান অবনতি ও কুখ্যাতি থেকে আমরা বহু যোজন দূরে থাকতে পারতাম’।

শ্বেতাঙ্গিনী ইংরেজ মহিলা সত্যিই আমাদের মুসলমানদের নবী জীবনীর আয়না দেখিয়ে দিয়েছেন। এখন আমাদের দায়িত্ব ঐ আয়নায় নিজেদের ব্যক্তিগত ও জাতিগত দোষ-ত্রুটি কলুষ-কালিমা দেখে তা সংশোধনের চেষ্টা করা।
...................................................
[প্রিয় পাঠক! এই লেখাটি পড়ে একটু হ’লেও ভাবুন, কত দামী সম্পদ আল্লাহ আমাদের দিয়েছিলেন! কিন্তু আমরা তা পায়ে ঠেলে আজ দুনিয়াতে কি যিল্লতী ও অপমানের যিন্দেগী যাপন করছি! আখেরাতেও কি আমাদের বিরুদ্ধে মামলা উঠবে না? সময় ফুরিয়ে যায়
নি। আমাদের বিপথগামিতার খন্ডচিত্র শ্বেতাঙ্গিনী ইংরেজ অধ্যাপিকা তাঁর কথায় উল্লেখ করেছেন। আমরা রাসূলের শিক্ষা আরও যে কত উপেক্ষা করে চলেছি তার ইয়ত্তা নেই। আজ তাঁর শিক্ষা পশ্চিমারা মেনে যদি জাগতিক উন্নয়ন, শান্তি, নিরাপত্তা ও সুখ অর্জন করতে পারে, তবে আমরা প্রাচ্যের লোকেরা কেন তা পারব না? দরকার ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তঃরাষ্ট্রের সীমা-পরিসীমায় রাসূলের শিক্ষা বাস্তবায়নের সদিচ্ছা নিয়ে প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসা। অন্তত নিজের ও নিজের পরিবারে এ শিক্ষা বাস্তবায়নে তো কোন বাধা নেই। সেটুকু তো করি। তারপর প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের দাওয়াত দেই।

আর মালিকের কাছে আমাদের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য দিল থেকে সাহায্য চাই। মহান আল্লাহ আমাদের সার্বিক সহায়তা দান করুন-আমীন!

প্রসঙ্গত বিষয়টি বুঝার স্বার্থে আল-হামরার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বোধ করি এখানে সংযোজন করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ইউরোপ মহাদেশের বর্তমান স্পেন দেশটি ৭১১ থেকে ১৪৯২ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত মুসলিম শাসনাধীনে ছিল। তারা এদেশের নাম রেখেছিল আন্দালুস।


এই আন্দালুসের গ্রানাডাতে আল-হামরা প্রাসাদ অবস্থিত। এর পুরো নাম ‘আল-কাল‘আতুল হামরাউ’। বাংলায় লাল কিল্লা বা লোহিত প্রাসাদ বলা চলে। তবে প্রায় সকল ভাষাতে এটি ‘আল-হামরা’ নামে পরিচিত।


এটি একটি রাজপ্রাসাদ ও দুর্গ বা সেনাছাউনি সম্বলিত বড় আকারের কমপ্লেক্স। একসময় গ্রানাডা শহরের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে আস-সাবিকা পাহাড়ের উপরে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত রোমান দুর্গ ছিল। ৯ম শতাব্দীর শেষভাগে ৮৮৯ সালে সাওয়ার ইবনু হামদুন নামের এক সাহসী পুরুষ এখানে আশ্রয় নেন এবং দুর্গটি নতুন করে নির্মাণ করেন। দুর্গের পাশ দিয়ে বয়ে চলছে দারো নদী।



দুর্লভ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থানে অবস্থিত আল-হামরা এখনও অতীব দৃষ্টিনন্দন একটি প্রাসাদ। আল-হামরার জৌলুস শতগুণে বৃদ্ধি পায় নাছিরীয় সাম্রাজ্যের শাসকদের হাতে।


বিশেষ করে সুলতান প্রথম ইউসুফ ও পঞ্চম মুহাম্মাদ একে এক অনন্য স্থাপত্য হিসাবে গড়ে তোলেন। আল-হামরায় ১৭৩০ মিটার দেয়ালে ঘেরা শহরের ভিতরে রয়েছে ত্রিশটি টাওয়ার ও চারটি সদর দরজা। এর মূল তিনটি অংশ হ’ল- রাজকীয় সেনাবাহিনীর বাসস্থান আল-কাযাবা, শাসক পরিবারের বাসস্থান সিটাডেল, আর বাকী অংশ শহর। যেখানে রাজসভার কর্মকর্তারা বাস করতেন।

আল-হামরার সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপনা তিনটি হ’ল- কোমারেস প্যালেস, কোর্ট অব লায়নস ও পার্টাল প্যালেস। আলোচ্য প্রবন্ধে উল্লিখিত সিংহ চত্বরেরই ইংরেজি নাম কোর্ট অব লায়নস। প্রাসাদে পানি সরবরাহের জন্য মার্বেল বেসিনের ঝরনার মাধ্যমে দারো নদী থেকে যে সাপ্লাই ব্যবস্থা নির্মিত হয়েছিল তা ছিল পাথর খোদাই করে তৈরি ১২টি সিংহ মূর্তির পেছনে।
১২টি সিংহের মুখ দিয়ে ফোয়ারা আকারে পানি নির্গত হয়ে বেসিনে পড়ার কথা প্রবন্ধটিতে বলা হয়েছে

(সূত্র : ইন্টারনেট)।-অনুবাদক।


Cooy
 

Similar Threads

Back
Top