Muslim Woman
Super Moderator
- Messages
- 12,286
- Reaction score
- 1,449
- Gender
- Female
- Religion
- Islam
দেশে সম্প্রতি কয়েকজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হবার পর আমরা সবাই যে প্রচন্ড উদ্বেগ আর আতঙ্কের মধ্যে আছি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্তু, শুধু উদ্বিগ্ন আর আতঙ্কিত না হয়ে, আমরা সবাই নিজেদের, আমাদের ভালোবাসার মানুষগুলো এবং সমগ্র দেশকে রক্ষার জন্য ব্যক্তিগত পর্যায়ে কি কি পদক্ষেপ নিতে পারি সেটার দিকে বোধহয় আমাদের এখন নজর দেয়া উচিত।
মনে রাখবেন, একটি মহামারী প্রতিরোধ করা সরকার কিংবা স্বাহ্যকর্মীদের একার দায়িত্ব নয়। এ দায়িত্ব আমার, আপনার সবার। আপনি বাঁচলে, আপনার পরিবার বাঁচলে - দেশ বাঁচবে, এ দেশের ১৭ কোটি জনগণ বাঁচবে।
আমরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে কি কি করতে পারি?
· বাইরে থেকে আসার পর অবশ্যই খুব ভালো করে, ঘষে ঘষে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। মনে রাখবেন, কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড।
· যত সম্ভব বাইরে কম যাবেন, অর্থাৎ, মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। কারণ, এ রোগ মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে দ্রুত ছড়ায়।
· নিজেরা যদি (আল্লাহ না করুন) আক্রান্ত হন, অবশ্যই নিজেকে সঠিক পদ্ধতিতে -self-quarantine করে রাখুন। প্রয়োজনে হাসপাতালে যান।
পরিবারের সুরক্ষার জন্য কি কি করতে পারি?
· বিনা প্রয়োজনে সবাইকে বাড়ির বাইরে যেতে নিরুৎসাহিত করুন।
· বিশেষ করে বাড়ির বৃদ্ধ ও শিশুদের, কারণ, এরা সবচাইতে vulnerable. (যদিও এ রোগে শিশু মৃত্যুর হার প্রায় শূণ্যের কোঠায়)
· ব্যক্তিগত হাইজিন মানার বিষয়টি বাড়ির অধীনস্থ, দারোয়ান, ড্রাইভার – সকলকে বুঝিয়ে বলুন।
· তারা যেন সেটা পালন করে সেটা নিশ্চিত করুন।
· যেহেতু স্কুল-কলেজ বন্ধ, সম্ভব হলে আপনার ড্রাইভারকে ছুটি দিয়ে দিন। কারণ, এরা গণপরিবহনে চলাফেরা করে এবং যাওয়া-আসার পথে বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে আসে, যা আপনার, আপনার পরিবার কিংবা তাদের বিপদের কারণ হতে পারে।
· বাড়ির part timer বুয়াদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সম্ভব হলে বুয়াকে ছুটি দিয়ে নিজ সন্তানদের মধ্যে কাজ ভাগ করে দিন। এতে তারা ব্যস্ত থাকবে এবং কাজ শিখবে।
· বাচ্চারা যেন Private Tutor কিংবা Arabic Teacher এর কাছে online এ পড়তে পারে, সে ব্যবস্থা করে দিন। কারণ, তারা জীবানু নিয়ে আপনার বাসায় প্রবেশ করতে পারে।
· আত্নীয়-স্বজনের সাথে দেখা করা আপাতত বন্ধ করুন।
· ঘরের মেঝে প্রতিদিন সাবান দিয়ে পরিস্কার করুন।
পুরো এ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং এর সুরক্ষার জন্য আমরা কি কি করতে পারি?
· বাড়ির মেইন গেটের সামনে সাবান-পানি, হেক্সিসল কিংবা স্যানিটাইজার রেখে দিন।
· নিয়ম করে দিন, যে বা যারা প্রবেশ করবে (আপনি নিজে সহ), ঢোকার আগে হাত ভাল করে ধুঁয়ে প্রবেশ করবে। কারণ, এ রোগটি আক্রান্ত ব্যক্তি যা যা স্পর্শ করে (fomite borne) তার মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।
· বাড়ির লিফটের বাটনগুলো দিনে দুই/তিন বার হেক্সিসল দিয়ে মুছে ফেলতে পারলে ভালো।
· প্রতিরক্ষার দ্বিতীয় পর্যায় হিসেবে, প্রত্যেক অ্যাপার্টমেন্টের মূল দরজার সামনে আর একবার হাত জীবানুমুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে পারেন।
· প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে রাখুন, যেন আপনার বাড়ির কাজের লোক, ড্রাইভার বা দারোয়ানকে টুকিটাকি কেনার জন্য বার বার বাইরে পাঠাতে না হয়।
** মনে রাখবেন, আমাদের মূল লক্ষ্য, disease transmission cycle টাকে বন্ধ করার চেষ্টা করা।
কি কি খাবার আমরা খেতে পারি?
· মনে রাখবেন, যে কোন জীবানু বা রোগের বিরুদ্ধে আমাদের সবচাইতে বড় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হল, আমাদের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (immune system)। এজন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্র্রচুর পরিমান স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান।
ভিটামিন সি (citrus fruit) জাতীয় খাবার (কমলা, মালটা, লেবু, আমলকী), সবুজ শাকসব্জী, স্বাস্থ্যসম্মত ঘরে তৈরী স্যুপ – এগুলো আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াবে।
· কিছু মালটিভিটামিন বা ভিটামিন সি খেতে পারেন।
আমাদের দেশে তৈরী effervescent (যা পানিতে গুলে যায়) ভিটামিন সি আছে। সেগুলো খেতে পারেন। এগুলো আপনার immune system boost করতে সহায়তা করবে।
· রেসুস্টেরেন্টের খাবার, বিশেষ করে ফাস্ট ফুড, ডিপ ফ্রাইড খাবার বর্জন করুন। এগুলোর ফুড ভ্যালু বা খাদ্যমান খুবই নিম্ন পর্যায়ের।
শেষ কথা:
· আতঙ্কিত হবেন না কিংবা আতঙ্ক ছড়াবেন না।
· জীবনে বিপদ-আপদ আসবেই, এর পূর্বেও পৃথিবীর মানুষের উপর বিপদ এসেছে।
· আমাদের ধৈর্য্য ধরে, মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে তা মুকাবিলা করতে হবে।
· মহান আল্লাহর নিকটে সিজদায় বেশী বেশী দোয়া করুন। কারণ, তিনিই আমাদের একমাত্র বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারেন।
· মনে রাখবেন, বর্তমান পরিস্থিতি একটি “পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সী” – এর অর্থ হল, এখন ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকলকে একসাথে এই পরিস্থিতি মুকাবিলা করতে হবে।
· শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পর্যায়ে এই ছোট ছোট কিছু সর্তকতা অবলম্বন, আমাদের অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে।
· পাবলিক হেলথের ভাষায় একে বলে, “an ounce of prevention is worth a pound of cure” অর্থাৎ, আপনি এক আউন্স সুরক্ষা নেবেন, যা আপনাকে এক পাউন্ড সমপরিমান কার্যকারীতা দেবে।
আল্লাহ আমাদের বিপদে ধৈর্য্য ধারণ করার এবং সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করার তৌফিক দিন। আমীন। ।
লিখেছেন: Fahmida Farhana Khanam,
Student of Masters in Public Health,
Bangladesh University of Health Science.
Date: 17/03/2020
(যদি পোস্টটি উপকারী মনে হয়,তাহলে শেয়ার করুন)
কিন্তু, শুধু উদ্বিগ্ন আর আতঙ্কিত না হয়ে, আমরা সবাই নিজেদের, আমাদের ভালোবাসার মানুষগুলো এবং সমগ্র দেশকে রক্ষার জন্য ব্যক্তিগত পর্যায়ে কি কি পদক্ষেপ নিতে পারি সেটার দিকে বোধহয় আমাদের এখন নজর দেয়া উচিত।
মনে রাখবেন, একটি মহামারী প্রতিরোধ করা সরকার কিংবা স্বাহ্যকর্মীদের একার দায়িত্ব নয়। এ দায়িত্ব আমার, আপনার সবার। আপনি বাঁচলে, আপনার পরিবার বাঁচলে - দেশ বাঁচবে, এ দেশের ১৭ কোটি জনগণ বাঁচবে।
আমরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে কি কি করতে পারি?
· বাইরে থেকে আসার পর অবশ্যই খুব ভালো করে, ঘষে ঘষে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। মনে রাখবেন, কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড।
· যত সম্ভব বাইরে কম যাবেন, অর্থাৎ, মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। কারণ, এ রোগ মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে দ্রুত ছড়ায়।
· নিজেরা যদি (আল্লাহ না করুন) আক্রান্ত হন, অবশ্যই নিজেকে সঠিক পদ্ধতিতে -self-quarantine করে রাখুন। প্রয়োজনে হাসপাতালে যান।
পরিবারের সুরক্ষার জন্য কি কি করতে পারি?
· বিনা প্রয়োজনে সবাইকে বাড়ির বাইরে যেতে নিরুৎসাহিত করুন।
· বিশেষ করে বাড়ির বৃদ্ধ ও শিশুদের, কারণ, এরা সবচাইতে vulnerable. (যদিও এ রোগে শিশু মৃত্যুর হার প্রায় শূণ্যের কোঠায়)
· ব্যক্তিগত হাইজিন মানার বিষয়টি বাড়ির অধীনস্থ, দারোয়ান, ড্রাইভার – সকলকে বুঝিয়ে বলুন।
· তারা যেন সেটা পালন করে সেটা নিশ্চিত করুন।
· যেহেতু স্কুল-কলেজ বন্ধ, সম্ভব হলে আপনার ড্রাইভারকে ছুটি দিয়ে দিন। কারণ, এরা গণপরিবহনে চলাফেরা করে এবং যাওয়া-আসার পথে বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে আসে, যা আপনার, আপনার পরিবার কিংবা তাদের বিপদের কারণ হতে পারে।
· বাড়ির part timer বুয়াদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সম্ভব হলে বুয়াকে ছুটি দিয়ে নিজ সন্তানদের মধ্যে কাজ ভাগ করে দিন। এতে তারা ব্যস্ত থাকবে এবং কাজ শিখবে।
· বাচ্চারা যেন Private Tutor কিংবা Arabic Teacher এর কাছে online এ পড়তে পারে, সে ব্যবস্থা করে দিন। কারণ, তারা জীবানু নিয়ে আপনার বাসায় প্রবেশ করতে পারে।
· আত্নীয়-স্বজনের সাথে দেখা করা আপাতত বন্ধ করুন।
· ঘরের মেঝে প্রতিদিন সাবান দিয়ে পরিস্কার করুন।
পুরো এ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং এর সুরক্ষার জন্য আমরা কি কি করতে পারি?
· বাড়ির মেইন গেটের সামনে সাবান-পানি, হেক্সিসল কিংবা স্যানিটাইজার রেখে দিন।
· নিয়ম করে দিন, যে বা যারা প্রবেশ করবে (আপনি নিজে সহ), ঢোকার আগে হাত ভাল করে ধুঁয়ে প্রবেশ করবে। কারণ, এ রোগটি আক্রান্ত ব্যক্তি যা যা স্পর্শ করে (fomite borne) তার মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।
· বাড়ির লিফটের বাটনগুলো দিনে দুই/তিন বার হেক্সিসল দিয়ে মুছে ফেলতে পারলে ভালো।
· প্রতিরক্ষার দ্বিতীয় পর্যায় হিসেবে, প্রত্যেক অ্যাপার্টমেন্টের মূল দরজার সামনে আর একবার হাত জীবানুমুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে পারেন।
· প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে রাখুন, যেন আপনার বাড়ির কাজের লোক, ড্রাইভার বা দারোয়ানকে টুকিটাকি কেনার জন্য বার বার বাইরে পাঠাতে না হয়।
** মনে রাখবেন, আমাদের মূল লক্ষ্য, disease transmission cycle টাকে বন্ধ করার চেষ্টা করা।
কি কি খাবার আমরা খেতে পারি?
· মনে রাখবেন, যে কোন জীবানু বা রোগের বিরুদ্ধে আমাদের সবচাইতে বড় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হল, আমাদের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (immune system)। এজন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্র্রচুর পরিমান স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান।
ভিটামিন সি (citrus fruit) জাতীয় খাবার (কমলা, মালটা, লেবু, আমলকী), সবুজ শাকসব্জী, স্বাস্থ্যসম্মত ঘরে তৈরী স্যুপ – এগুলো আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াবে।
· কিছু মালটিভিটামিন বা ভিটামিন সি খেতে পারেন।
আমাদের দেশে তৈরী effervescent (যা পানিতে গুলে যায়) ভিটামিন সি আছে। সেগুলো খেতে পারেন। এগুলো আপনার immune system boost করতে সহায়তা করবে।
· রেসুস্টেরেন্টের খাবার, বিশেষ করে ফাস্ট ফুড, ডিপ ফ্রাইড খাবার বর্জন করুন। এগুলোর ফুড ভ্যালু বা খাদ্যমান খুবই নিম্ন পর্যায়ের।
শেষ কথা:
· আতঙ্কিত হবেন না কিংবা আতঙ্ক ছড়াবেন না।
· জীবনে বিপদ-আপদ আসবেই, এর পূর্বেও পৃথিবীর মানুষের উপর বিপদ এসেছে।
· আমাদের ধৈর্য্য ধরে, মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে তা মুকাবিলা করতে হবে।
· মহান আল্লাহর নিকটে সিজদায় বেশী বেশী দোয়া করুন। কারণ, তিনিই আমাদের একমাত্র বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারেন।
· মনে রাখবেন, বর্তমান পরিস্থিতি একটি “পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সী” – এর অর্থ হল, এখন ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকলকে একসাথে এই পরিস্থিতি মুকাবিলা করতে হবে।
· শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পর্যায়ে এই ছোট ছোট কিছু সর্তকতা অবলম্বন, আমাদের অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে।
· পাবলিক হেলথের ভাষায় একে বলে, “an ounce of prevention is worth a pound of cure” অর্থাৎ, আপনি এক আউন্স সুরক্ষা নেবেন, যা আপনাকে এক পাউন্ড সমপরিমান কার্যকারীতা দেবে।
আল্লাহ আমাদের বিপদে ধৈর্য্য ধারণ করার এবং সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করার তৌফিক দিন। আমীন। ।
লিখেছেন: Fahmida Farhana Khanam,
Student of Masters in Public Health,
Bangladesh University of Health Science.
Date: 17/03/2020
(যদি পোস্টটি উপকারী মনে হয়,তাহলে শেয়ার করুন)